যশোরে মানবপাচার চক্রের ৪ সদস্যের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা
Published: 26th, June 2025 GMT
যশোর সদরের বড়মেঘলা গ্রামের জাফর হোসেনসহ কয়েকজনকে মিথ্যা প্রলোভনে রাশিয়ায় নিয়ে যুদ্ধে ঠেলে দেওয়ার অভিযোগে মানবপাচার চক্রের চার সদস্যের বিরুদ্ধে বুধবার আদালতে মামলা হয়েছে। জাফরের ভাই বজলুর রহমান এ মামলাটি করেছেন। পাচারের শিকার জাফরসহ অনেককেই বর্তমানে রাশিয়ার পক্ষে ইউক্রেন যুদ্ধে জোরপূর্বক অবতীর্ণ করানো হচ্ছে এবং তাদেরকে যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়ার বাঙ্কারে আটকে রাখা হয়েছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।
বাদীর আইনজীবী ব্যারিস্টার কাজী রেফাত রেজওয়ান সেতু মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, অভিযোগ আমলে নিয়ে যশোরের মানবপাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক ড.
মামলায় আসামিরা হলেন, নড়াইলের কালিয়া উপজেলার কলাবাড়িয়া পশ্চিম পাড়ার আশরাফ মোল্যার ছেলে ও ড্রিম হোম ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস লিমিটেডের চেয়ারম্যান এস এম আবুল হাসান, তার পার্টনার ঢাকার দক্ষিণখান থানার আশকোনার শহিদুল ইসলামের মেয়ে ফাবিহা জেরিন তামান্না, চট্টগ্রামের লোহাগড়া থানার মাঝেরপাড়ার মো. ইসহাকের ছেলে আলমগীর হোসেন দেলোয়ার ও ঢাকার নয়া পল্টনের মাহাতাব সেন্টার ভবনের ভ্যাকেশন প্লানারের মালিক শফিকুর রহমান।
বাদী বজলুর রহমান মামলায় উল্লেখ করেছেন, আসামি এস এম আবুল হাসান এবং ফাবিহা জেরিন তামান্না তার ভাই জাফর হোসেনকে রাশিয়ায় ক্লিনার অথবা সেফের সহকারী পদে মাসিক এক লাখ ২০ হাজার টাকা বেতনে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মোট সাত লাখ ১০ হাজার টাকা নেন। বলা হয়, সরাসরি রাশিয়ায় যাওয়া সম্ভব না। তাই প্রথমে তাকে সৌদি আরবে নিয়ে যাওয়া হবে। এরপর সৌদি আরব থেকে ভিসা সংগ্রহ করে নেওয়া হবে রাশিয়ায়। ২০২৪ সালের ১৭ অক্টোবর উল্লেখিত আসামিদ্বয় জাফর হোসেনসহ চাকরি প্রত্যাশী ১০ জনকে প্রথমে সৌদি আরবে পাঠিয়ে দেয়। সেখান থেকে তাদেরকে গ্রহণ করেন আসামি শফিকুর রহমান। ২ মাস থাকার পর একই বছরের ২২ ডিসেম্বর জাফর হোসেনসহ ১০ জনকে রাশিয়ার সেইন্ট পিটার্সবার্গ শহরে নিয়ে যান শফিকুর রহমান। রাশিয়ায় যাবার পর অপর আসামি আলমগীর হোসেন দেলোয়ারসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা তাদেরকে গ্রহণ করে নিজেদের হেফাজতে রাখেন। এরপর আলমগীর হোসেন দেলোয়ার এবং তার সঙ্গীরা তাদেরকে জানান, আর্মি ক্যাম্পে ক্লিনার বা সেফের সহকারী হিসেবে কাজ করার আগে সকলকে আর্মি ক্যাম্পে ২০ দিনের ট্রেনিং সম্পন্ন করতে হবে। একথা বলে তারা জাফর হোসেনসহ ১০ জনকে রাশিয়ার একটি আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে যান।
সেখানে যাওয়ার পর জাফর হোসেনসহ অন্যরা জানতে পারেন, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে রাশিয়ার পক্ষে অংশগ্রহণ করাতে ২০২৬ সালের ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত ১ বছরের জন্য জনপ্রতি ১৪ হাজার ডলারে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন আসামি আলমগীর হোসেন দেলোয়ার ও শফিকুর রহমান। ফলে তারা রাশিয়ার পক্ষে যুদ্ধ করতে বাধ্য হন।
বিষয়টি জানতে পেরে নিজের জীবন রক্ষার্থে আকরাম হোসেন নামে এক যুবক কৌশলে আর্মি ক্যাম্প থেকে পালিয়ে যান এবং পরে তিনি বাংলাদেশে ফিরে আসেন। এরপর জাফর হোসেনসহ অন্যরা রাশিয়ার আর্মির নির্যাতনের কারণে যুদ্ধক্ষেত্রে যেতে বাধ্য হন। জাফর হোসেন বর্তমানে ইউক্রেনের ডোনেৎস্ক শহরের একটি যুদ্ধক্যাম্পের মাটির নিচের বাংকারে অবস্থান করছেন। সেখানে ইউক্রেনের ড্রোন হামলায় তার ডান পায়ের পাজর ও উরুতে বোমার স্প্লিন্টার বিদ্ধ হলে তিনি গুরুতর আহত হন। হাসপাতালে এক মাস চিকিৎসা শেষে পুনরায় তাকে যুদ্ধক্ষেত্রে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। সর্বশেষ জাফর হোসেনের সাথে সোহান মিয়া নামে এক যুবক গত ২০ জুন ড্রোন হামলায় নিহত হয়েছেন। বিষয়টি হোয়াটসঅ্যাপে ভয়েজ মেসেজের মাধ্যমে ভাই বজলুর রহমানকে জানিয়ে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্যে আকুতি জানান জাফর হোসেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আলমগ র হ স ন দ ল য় র ইউক র ন ত দ রক ব ষয়ট
এছাড়াও পড়ুন:
সেই অস্ট্রেলিয়াকে পেয়েই আবার খেপে উঠলেন শামার জোসেফ
শামার জোসেফ অস্ট্রেলিয়ানদের পছন্দ করেন। পছন্দ করেন বলতে তাদের বিপক্ষে বোলিংটা উপভোগ করেন। ছোট টেস্ট ক্যারিয়ারে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তিন টেস্ট ৫ ইনিংসে বোলিং করেছেন।
তাতে দুইবার ৫ উইকেট আর একবার নিয়েছেন ৪ উইকেট, ৯ টেস্টের ক্যারিয়ারের ৩৩ উইকেটের ১৭টিই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। আর পরিসংখ্যানের কথা রাখুন তো! শামার জোসেফ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেললে কিছু একটা হবে হবে বলে মনে হয়। ওটাই তো আসল!
এর বড় কারণ ১৮ মাস আগের ব্রিসবেন টেস্ট। ভাঙা আঙুল নিয়ে বোলিং করে ৬৮ রানে নেন ৭ উইকেট। এভাবেই তিনি অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ২৭ বছর পর জয় এনে দেন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। সেই ঐতিহাসিক ম্যাচের পর ব্রিজটাউনে কাল আবার অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হন শামার জোসেফ।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে কালও তিনি উপহার দিয়েছেন ব্লকবাষ্টার পারফরম্যান্স। স্যাম কনস্টাস, উসমান খাজা, ক্যামেরন গ্রিনকে ফিরিয়েছেন। এরপর বো ওয়েবস্টারকে যেভাবে (মিডল স্টাম্পে পড়া বল বেরিয়ে গিয়ে অফ স্টাম্প ভেঙেছে) বোল্ড করেছেন, তার মূল্য কয়েকটি উইকেটের সমান। নিজেই দিন শেষে বলেছেন—এটি তাঁর করা ক্যারিয়ারের সেরা বলের একটি।
জোসেফ কাদের আউট করেছেন, আরেকবার চোখ বোলান। ১০ বছর পর ওয়েস্ট ইন্ডিজে টেস্ট খেলতে যাওয়া এই দলটাতে চোটের কারণে নেই স্টিভ স্মিথ। বাদ পড়েছেন একসময় যাকে পরবর্তী স্মিথ হিসেবে ধরা হতো সেই মারনাস লাবুশেন।
স্মিথ-লাবুশেনহীন দলে টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যান কনস্টাস, খাজা ও গ্রিনের সঙ্গে তিনি অলরাউন্ডার ওয়েবস্টারকে ফিরিয়েছেন। মানে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিংয়ের ভিত্তিটা তিনি গড়তেই দেননি। সে কারণেই তো প্রথম ইনিংসে ১৮০ রানে দলটি গুটিয়ে গেছে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজে টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এমন ম্যাচে এটিই অস্ট্রেলিয়ার সর্বনিম্ন দলীয় স্কোর। কৃতিত্ব জেইডেন সিলসও পাবেন অনেকটা। ৫ উইকেট নিয়েছেন। এর মধ্যে জশ ইংলিশ, অ্যালেক্স ক্যারি, প্যাট কামিন্সের উইকেট আছে।
শুরু থেকেই কাল অস্ট্রেলিয়া দিশেহারা পথিক ছিল। দলে ফেরা কনস্টাসকে শুরুতেই বোকা বানান কনস্টাস। কয়েকটি আউট সুইং করার পর একটি বল ভেতরে ঢুকতেই এলবিডব্লুর শিকার হন এই ওপেনার। শামার জোসেফ তাঁকে কীভাবে আউট করেছেন তিনি বলেছেন এভাবে, ‘আমি মনে করি ওকে ঠিকঠাকভাবে ফাঁদে ফেলেছিলাম। কয়েকটা আউট সুইং দিয়ে শুরু করি, তারপর হঠাৎ বলটা ভেতরের দিকে ঢুকিয়ে দিই।’
গ্রিন তো উইকেটে বেশিক্ষণ থাকবেন না এটাই নিয়ম হয়ে গেছে। অস্ট্রেলিয়ার এই নতুন নম্বর তিন কাল করেছেন ৩ রান। এরপর ইংলিশকে আউট করেন সিলস। ২২ রানে ৩ উইকেট হারানো অস্ট্রেলিয়াকে খাজা ও হেড ৮৯ রানের জুটি গড়ে টেনে তোলেন। ৪৭ রানে খাজা আউট হলে পরের ৬৯ রানে ৭ উইকেট হারায় দলটি। দলে পক্ষে সর্বোচ্চ ৫৯ রান করেন হেড। তাঁকে আউট করেছেন জাস্টিন গ্রিভস।
ব্রিজটাউনে যে যন্ত্রণা অস্ট্রেলিয়া পেয়েছে, সেটি পাচ্ছে ওয়েস্ট ইন্ডিজও। দলটি ৫৭ রানেই হারিয়েছে ৪ উইকেট। প্রথম ইনিংসে এখনো পিছিয়ে ১২৩ রানে। মিচেল স্টার্ক দুটি, হ্যাজলউড ও কামিন্স একটি করে উইকেট নিয়েছেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোরঅস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস: ৫৬.৫ ওভারে ১৮০ (হেড ৫৯, খাজা ৪৭; সিলস ৫/৬০, শামার জোসেফ ৪/৪৬)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ম ইনিংস: ২০ ওভারে ৫৭/৪ (কিং ২৩*, কার্টি ২০; স্টার্ক ২/৩৫, কামিন্স ১/৮)।