পদ্মা নদীর একটি কাতলা ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি
Published: 26th, June 2025 GMT
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে পদ্মা নদীতে ২১ কেজি ৬০০ গ্রামের একটি কাতলা মাছ প্রায় ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার দৌলতদিয়া ঘাট বাজারে মাছটি নিলামে বিক্রি হয়। এর আগে আজ ভোরের দিকে পদ্মা নদীর মোহনায় জালে এটি ধরা পড়ে।
স্থানীয় মৎস্যজীবীরা জানান, আজ ভোরের দিকে দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের অদূরে পদ্মা নদীর মোহনায় জেলেরা জাল ফেলেন। অন্য জেলেদের সঙ্গে জেলে রবিন হালদারও ছিলেন। কিছুক্ষণ পরে জালে ঝাঁকি দিলে রবিন বুঝতে পারেন বড় কিছু একটা আটকা পড়েছে। জাল টেনে নৌকায় তুলেই দেখতে পান বড় এক কাতলা মাছ। তিনি মাছটি বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন দৌলতদিয়া ফেরিঘাট বাজারের রওশন মোল্লার আড়তে। ওজন দিয়ে দেখেন প্রায় ২১ কেজি ৬০০ গ্রাম হয়েছে। এত বড় কাতলা মাছ এ মৌসুমে তেমন ধরা পড়েনি। বিক্রির জন্য নিলামে তোলা হলে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে ফেরিঘাট এলাকার মৎস্য ব্যবসায়ী চান্দু মোল্লা কেনেন।
দৌলতদিয়া ৫ নম্বর ফেরিঘাট এলাকার মৎস্য ব্যবসায়ী চান্দু মোল্লা বলেন, সকালে বাজারের রওশন মোল্লার আড়তে বড় এক কাতলা মাছ দেখে নিলামে শরিক হন। সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে তিনি ১ হাজার ৮০০ টাকা কেজি দরে ৩৮ হাজার ৮৮০ টাকায় কাতলাটি কেনেন। এটি তিনি আড়তঘর–সংলগ্ন ফেরিঘাটের পন্টুনে রশি দিয়ে বেঁধে রাখেন। বিভিন্ন পরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করলে ঢাকার উত্তরা এলাকার এক ব্যবসায়ী মাছটি দেখে কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেন। কেজিপ্রতি ৫০ টাকা করে লাভে ১ হাজার ৮৫০ টাকা কেজি দরে ৩৯ হাজার ৯৬০ টাকায় কাতলাটি বিক্রি করেন। তাঁর দেওয়া ঠিকানায় আজ দুপুরে মাছটি ঢাকায় পাঠিয়ে দেন।
চান্দু মোল্লা বলেন, পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় মাঝেমধ্যে বড় পাঙাশ, রুই, কাতলা, ইলিশ ও বাগাড় ধরা পড়ছে। তবে এ মৌসুমে এত বড় কাতলা মাছ তেমন একটা ধরা পড়েনি। তিনি এত বড় কাতলা এ মৌসুমে প্রথম কিনেছেন। সাধারণত বড় মাছ বিক্রি করা কঠিন হয়ে পড়ে। স্থানীয়ভাবে কেটে ভাগ দিয়ে বিক্রি করতে হয়। অথবা অন্য বড় কোনো ব্যবসায়ী বা প্রবাসীরা কিনে থাকেন।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
‘চিন্তা করো না, ভালো আছি’ বলে পদ্মায় গোসলে গিয়ে ছেলের মৃত্যু, বাক্রুদ্ধ মা
বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ছেলের সঙ্গে শেষ কথা হয়েছিল মা রওশন আরার। তখনো ছেলে তাঁকে বলেছিলেন, ‘চিন্তা করো না, আমি ভালো আছি।’ এরপর বিকেলেই সেই ছেলের পদ্মা নদীতে গোসল করতে গিয়ে ডুবে মারা যাওয়া কিছুতেই মানতে পারছেন না মা। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে তাঁর কান্না থামছে না।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চাপাইর ইউনিয়নের মেদীআশুলাই গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, কলেজপড়ুয়া ছেলে রিয়াজে রাব্বি তামিমের (২১) জন্য বিলাপ করছেন আর বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন রওশন আরা। স্বজন ও প্রতিবেশীরা তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে রওশন আরা বলেন, ‘ছেলেকে সকালে ফোন দিয়ে কী করো, জানতে চেয়েছিলাম। তখন সে বলে, “মা, আমি সকালে নাশতা খেয়ে কলেজে এসেছি।” ওষুধ খেয়েছে কি না, জানতে চাইলে তখন সে বলে, “মা, আমি ওষুধ খেয়েছি চিন্তা করো না, আমি ভালো আছি।” এই বলে সংযোগ কেটে দেয়। এরপর আর ছেলের সঙ্গে কথা হয়নি। সে যে নদীতে যাবে, তা–ও কিছু বলে যায়নি।’
রিয়াজে রাব্বি ফরিদপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। গতকাল বুধবার ফরিদপুর সদরের শহরতলির ডিক্রির চর ইউনিয়নের ধলার মোড় এলাকায় পদ্মা নদীতে বন্ধুদের সঙ্গে গোসলে নেমে ফরিদপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। তাঁদের একজন তামিম। অন্যজন হলেন একই বিভাগের ছাত্র আবদুল্লাহ মারুফ (২১)। মারুফের বাড়ি নোয়াখালী সদরের উত্তর শরীফপুর গ্রামে। ফরিদপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ডুবুরিরা নদীর আনুমানিক ২০ ফুট নিচ থেকে ওই দুই ছাত্রকে উদ্ধার করেন। পরে পাশের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাঁদের মৃত ঘোষণা করেন।
স্বজনেরা জানান, আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় কালিয়াকৈরের মেদীআশুলাই গ্রামে বাড়ির পাশে একটি মাঠে রাব্বির জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়েছে। এক ভাই ও এক বোনের মধ্যে রাব্বি ছিলেন সবার ছোট। বাবা পল্লী বিদ্যুৎ কার্যালয়ে চাকরি করেন।
রিয়াজে রাব্বির ২৫ জুন থেকে পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল। এ কারণে ২৩ জুন গাজীপুর থেকে ফরিদপুরে যান উল্লেখ করে বাবা শওকত হোসেন বলেন, ‘আমার সঙ্গে কথা কম হতো। ওর আম্মু সময় সময় খোঁজ নিত, প্রতিদিন ছেলের সঙ্গে কথা বলত। ২৫ জুন বিকেলে তামিমের এক বন্ধু আমাকে ফোন দিয়ে বলে, “আঙ্কেল তামিম তো পানিতে পড়ছিল। হাসপাতালে ভর্তি আছে অবস্থা খুব একটা ভালো না।” এর কিছু সময় পর কলেজের এক শিক্ষক ফোন করে বলেন, “আপনি কি তামিমের আব্বু? আপনার ছেলে তো পানিতে পড়েছিল, সে তো আর নেই”।’
রিয়াজে রাব্বির বন্ধু রুমমেট মাহমুদুল হাসান বলেন, বুধবার ক্যাম্পাসে ফুটবল খেলা শেষে দুপুরে ধলা মোড়ে পদ্মা নদীতে গোসল করতে যান তাঁরা ছয় বন্ধু। গোসল শেষে সবাই তীরে উঠে আসেন। এ সময় আব্দুল্লাহ আল মারুফের জামাকাপড়ে ময়লা লাগে। পরে তিনি ওই ময়লা ধুতে আবার নদীতে থাকা ড্রেজারের পাইপের ওপর যান। এ সময় পা পিছলে নদীতে পড়ে গেলে তাঁকে বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়েন দুই বন্ধু তামিম ও আজমির হোসেন। কিন্তু অতিরিক্ত স্রোতের কারণে মারুফ ও তামিম পানিতে ডুবে যান। আজমির কোনোরকমে তীরে ওঠেন। পরে তাঁদের উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
আরও পড়ুনপদ্মায় গোসলে নেমে ফরিদপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু২০ ঘণ্টা আগে