দ্বাদশ শতাব্দীর শুরু থেকে জাপানের উত্তরাঞ্চলীয় দ্বীপের বাসিন্দারা আইনু ভাষায় কথা বলতেন। একসময় হাজারো মানুষ এই ভাষায় কথা বললেও এখন আইনুভাষীর সংখ্যা মাত্র কয়েকজন। আর তাই ইউনেসকো ভাষাটিকে বিপন্ন ভাষা হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া এই আইনু ভাষা সংরক্ষণের জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তিকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পুরোনো ধারণ করা অডিও শোনানো হচ্ছে। এরপর এআই কণ্ঠস্বরের মাধ্যমে আইনু ভাষা চর্চা করছেন বিজ্ঞানীরা।
১৮৭০ সাল নাগাদ জাপানের প্রায় ১৫ হাজার মানুষ আইনু ভাষায় কথা বলত। পরবর্তী সময় দেশটির বিদ্যালয়ে আইনু ভাষার ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়। এরপর সরকারি বিভিন্ন নীতিমালার কারণে ধীরে ধীরে এই ভাষা ও সংস্কৃতি প্রায় হারিয়ে যায়। সম্প্রতি আইনু ভাষা ও সংস্কৃতিকে পুনরুজ্জীবিত করার কাজ শুরু করেছেন বিজ্ঞানীরা। আর এ ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি।
আইনু ভাষা ও সংস্কৃতি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে গেলেও ভাষাটির বিভিন্ন তথ্য সংরক্ষণ করা রয়েছে। আর তাই বর্তমানে এআই স্পিচ রিকগনিশন প্রযুক্তি ব্যবহার করে তথ্যগুলো সংরক্ষণ করা হচ্ছে। এ প্রকল্পের নেতৃত্ব দেওয়া কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যবিজ্ঞানের অধ্যাপক তাতসুয়া কাওয়াহারা জানিয়েছেন, শব্দের মান খুব ভালো নয়। অনেক ভিডিও বাড়িতে অ্যানালগ যন্ত্রে ধারণ করায় বাড়তি শব্দ রয়েছে। কাজটি সত্যিই চ্যালেঞ্জিং।
বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, নতুন এ পদ্ধতিতে এআইয়ের জন্য বিশাল তথ্যভান্ডার তৈরি করা হচ্ছে। এআই নিজে ভাষার নিয়ম বুঝতে চেষ্টা করে প্রতিলিপি করতে পারলেও আইনুর মতো বিপন্ন ভাষার ক্ষেত্রে তা সম্ভব নয়। আর তাই এআই প্রযুক্তিকে আইনু ভাষার বিভিন্ন বক্তব্যকে পাঠ্যে রূপান্তরের পদ্ধতি শেখানো হচ্ছে। এরপর পাঠ্য থেকে বক্তৃতা তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে এআই।
সূত্র: বিবিসি
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবহ র
এছাড়াও পড়ুন:
ঘর থেকে তুলে নিয়ে চুরির অপবাদে নির্যাতনের শিকার জাকিরের চোখ হারানোর শঙ্কা
অন্য সব দিনের মতোই গত শনিবার রাতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নিজ ঘরে ঘুমিয়েছিলেন জাকির শেখ। গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ছয়টায় হঠাৎ স্থানীয় শতাধিক ব্যক্তি জাকিরের বাড়িতে প্রবেশ করেন। ঘর থেকে তাঁকে জোর করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় বাড়ির পাশের খোলা স্থানে। সেখানে চুরির অপবাদ দিয়ে অমানবিক নির্যাতন করেন কিছু উৎসুক জনতা। তাঁর দুই চোখ খেজুরের কাঁটা আর সুই দিয়ে খুঁচিয়ে নষ্ট করে ফেলার চেষ্টা করা হয় বলে অভিযোগ পরিবারের।
জাকির শেখের (৫০) বাড়ি মাদারীপুরের সদর উপজেলার শিরখাড়া ইউনিয়নের পশ্চিমমাঠ বাঘাবাড়ি এলাকায়। চিকিৎসকের বরাত দিয়ে তাঁর পরিবার জানিয়েছে, তাঁর দুটি চোখেই ভয়াবহ ক্ষত। চোখ দুটি পুরোপুরি হারানোর শঙ্কা রয়েছে। আজ সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জাকিরের চোখে অস্ত্রোপচার করেছেন চিকিৎসক।
একই ঘটনায় পিটুনির শিকার আরও দুজন মাদারীপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন।
জাকির শেখের বড় মেয়ে এনি আক্তার (২০) প্রথম আলোকে বলেন, ‘আব্বুর অবস্থা ভালো নয়। ডাক্তার বলেছেন, তাঁর চোখের ৮০ শতাংশ নষ্ট হয়ে গেছে। চোখে দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। আব্বুর চোখে বড় অপারেশন আজ হইছে। আব্বুর সঙ্গে আমি আছি। আমার আব্বুকে যারা চুরির মিথ্যে অপবাদ দিয়ে এই অবস্থা করেছে, তাদের বিচার চাই।’
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিরখাড়া ইউনিয়নের পশ্চিমমাঠ বাঘাবাড়ি এলাকার কয়েকটি বাড়িতে সম্প্রতি ছিঁচকে চুরির ঘটনা ঘটে। এরপর ‘স্থানীয় যুব সমাজের উদ্যোগে’ এলাকায় নিয়মিত পাহারায় বসেন স্থানীয় কয়েকজন যুবক। শনিবার দিবাগত রাত একটার দিকে বাবুল শিকদার (২৫) নামের এক যুবক তাঁর এক আত্মীয়ের বাড়ি যাওয়ার পথে চোর সন্দেহে স্থানীয় কয়েকজন যুবক তাঁকে আটক করেন। বাবুল একই ইউনিয়নের রায়েরকান্দি গ্রামের বাসিন্দা। খবর পেয়ে বাবুলকে উদ্ধারে তাঁর এক আত্মীয় ইস্রাফিল মাতুব্বর (৪০) গেলে তাঁকেও আটক করেন স্থানীয় লোকজন। এরপর চোর সন্দেহে দুজনকে রাতভর মারধর করা হয়। এরপর জাকির শেখের বাড়িতে গিয়ে তাঁকে তুলে নিয়ে পিটুনি ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটে।
জাকির শেখের পরিবারের অভিযোগ, পূর্বশত্রুতার জেরে চুরির মিথ্যা অপবাদ দিয়ে জাকিরকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন স্থায়ীয় কোহিনুর মাতুব্বর, কামাল, সজীব, ওমর, শফিকুলসহ বেশ কয়েকজন ব্যক্তি।
অভিযুক্ত কোহিনুর মাতুব্বর ও কামাল হোসেন বলেন, ‘চোর সন্দেহে প্রথম যাকে ধরা হইছে, তার স্বীকারোক্তিতে ছিল জাকির শেখের নাম। এখানে চোরদের সঙ্গে আমাদের কিসের শত্রুতা। এগুলো বলে ঘটনা আড়াল করা হচ্ছে। স্থানীয় লোকজন ছিঁচকে চোরের আতঙ্কে অতিষ্ঠ হয়ে গণপিটুনি দিয়েছে। এখানে ব্যক্তিগত শত্রুতা বা ক্ষোভ থেকে কাউকে আঘাত করা হয়নি।’
ফেরিওয়ালা জাকিরকে নির্যাতনে জড়িতদের বিচার চেয়ে সন্তানদের নিয়ে স্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন। আজ সকালে মাদারীপুর শহরের একটি বাসায়