‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’ বিভ্রান্তিকর
Published: 28th, June 2025 GMT
সফল জুলাই অভ্যুত্থানের পর এই আন্দোলনের উদ্দেশ্য ও সফলতা নিয়ে অনেক বক্তব্য দেওয়া হয়েছে। এই সফলতাকে অনেকভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। কেউ বলেছেন দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র, কেউ বলেছেন দ্বিতীয় স্বাধীনতা, আবার কেউ বলেছেন একাত্তরের স্বাধীনতার ‘রিসেট’। কিন্তু জনগণের আদালতে এর কোনোটাই টেকেনি। যেটা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তা হলো দেশের ছাত্রসমাজ ও জনগোষ্ঠী ১৫ বছর জগদ্দল পাথরের মতো বসে থাকা একটা ফ্যাসিবাদী সরকারকে হটিয়ে দিয়েছে। এখন চেষ্টা হচ্ছে একটা নিয়মতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার রূপরেখা নির্ণয়ন করতে। এ চেষ্টা কতটুকু সফল হবে কিংবা আদৌ সফল হবে কি না, তা নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে। তবু জনগণ আশান্বিত।
আশা করা হয়েছিল, এই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এ দেশের শাসকেরা নিজেদের মাথায় নিজেরা মুকুট দেওয়া বন্ধ করবেন। নিজেদের অভিষেককে অলংকৃত করতে আমরা বিগত সরকারগুলোতেও দেখেছি, এবার হওয়া উচিত ছিল তার ব্যতিক্রম। কিন্তু এ দেশে তা বোধ হয় হওয়ার নয়।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, ৮ আগস্ট তাদের শাসনভার গ্রহণ করার দিনকে ‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’ ঘোষণা করেছে। এটা দেশের সচেতন জনগণকে দারুণভাবে বিস্মিত করেছে এবং হতাশ করেছে। কেন হঠাৎ নিজেদের শাসনভার গ্রহণ করার দিনটিকে অলংকৃত করা হলো? কেন সরকারের অভিষেকের দিনকে আলাদাভাবে স্মরণ করতে হবে বা স্মরণ করিয়ে দিতে হবে?
জুলাই আন্দোলনের তিন ছাত্রনেতা হাসনাত আবদুল্লাহ, সারজিস আলম ও আখতার হোসেন এর প্রতিবাদ করেছেন এবং এ ঘোষণাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। ধন্যবাদ দিতে হয় তাঁদের তিনজনকে, তাঁরা প্রতিবাদ করেছেন বলেই আজ বিষয়টা নিয়ে অন্যরা সহজভাবে কথা বলতে পারছেন।
এর আগে বাংলাদেশে কত কত সরকারের আগমন নিয়ে আমরা কত বৈপ্লবিক বাণী শুনেছি—শেখ মুজিবের ‘সোনার বাংলা’ গঠনের সরকার, জিয়াউর রহমান ও এরশাদের ‘দেশ গড়ার’ সরকার, হাসিনার ‘স্বাধীনতার চেতনার’ সরকার। তাঁরা একেকজন দীর্ঘদিন ক্ষমতায় ছিলেন, কিন্তু তাঁদের অভিষেক ও অলংকৃত বাণী আমাদের দেশের জন্য সুফল আনতে পারেনি।
এই সরকার ক্ষমতা নিয়েছে প্রায় ১১ মাস হলো। তাঁরা সরকারি কনফারেন্স টেবিলে বসে কীভাবে ঠিক করলেন যে তাঁদের সরকার গঠনকে বা তার পরবর্তী সময়টাকে ‘নতুন বাংলাদেশ’ অভিহিত করতে হবে!
সরকার কিছু সাংবিধানিক পরিবর্তনের কথা বলছে ঠিকই, এখনো এসব নিয়ে বাগ্বিতণ্ডা চলছে। এই সরকার ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকারের অনেক হোমরাচোমরাকে জেলে নিয়েছে এবং বিচার করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তা-ও একটা ইতিবাচক উদ্যোগ। কিন্তু আমাদের আদালতগুলোয় যা চলছে, তাতে এই বিচারকাজকেও প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে।
পুরোনো বাংলাদেশটাকে যে কিছু কিছু মেরামত করার চেষ্টা হচ্ছে, না তা নয়। দেয়ালের যেসব ফাঁকফোকর দিয়ে টাকাকড়ি বেরিয়ে যেত, তা বন্ধ করার চেষ্টা হচ্ছে। মানুষের কথা বলার সুযোগ আগের চেয়েও বেশি। একটা ভালো নির্বাচন অনুষ্ঠানের অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতিশ্রুতি জনগণকে আশাবাদী করেছে। এই আশাবাদের পাশাপাশি বিফলতাও যোগ হয়েছে অনেক। চারদিকে সামাজিক অস্থিরতা ও ‘মব সংস্কৃতির’ বিস্তার জনগণের জীবনকে অস্থির করে তুলছে।
দেশের বড় একটা মিউনিসিপ্যালিটি এক মাস ধরে কোনো সেবা দিতে পারছে না, এনবিআরের মতো একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান অকেজো হয়ে পড়ে আছে। সরকারের পক্ষ থেকে একজন দায়িত্ববান কেউ সামনে এসে বলছেন না যে কেন এগুলো মেনে নেওয়া হচ্ছে? এসব ব্যাপার এত দৃশ্যমান যে এই প্রশ্নগুলো এখন সবার মনে দারুণভাবে তাড়া দিচ্ছে।
একটা সরকার ক্ষমতা নিয়েছে, কিছু কিছু পরিবর্তন করার চেষ্টা করছে, তাই বলে তাদের ক্ষমতা নেওয়ার তারিখকে ‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’ বলার কোনো সুযোগ নেই। এটা একটা খারাপ উদাহরণ সৃষ্টি করল। এই সরকার যদি পুরোনো বাংলাদেশের কিছু বিচ্যুতি মেরামত করে দিতে পারে, সেটাও একটা বড় কাজ হবে। নতুন নির্বাচন হওয়ার সম্ভবত মাত্র ৯ মাস বাকি। আশা করা যায়, তারপর নতুন সরকার আসবে। এই ৯ মাসে ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়ার সময় ও সুযোগ কোনোটাই বর্তমান সরকার পাবে না।
সরকার যদি সত্যি মনে করে, তারা নতুন বাংলাদেশ গড়ছে বা গড়তে সক্ষম হবে কিংবা তাদের শাসনক্ষমতা নেওয়ার দিনটা সত্যি ‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’ হিসেবে স্মরণীয় হওয়া উচিত, তাহলেও তাদের উচিত তাদের মেয়াদটা শেষ করা পর্যন্ত অপেক্ষা করা। ভবিষ্যৎই নির্ধারণ করবে তাদের সাফল্য ও ব্যর্থতাকে দেশের মানুষ কীভাবে স্মরণ করবে। আইয়ুব খানের তথাকথিত ‘উন্নয়নের দশ বছর’ কিংবা শেখ হাসিনার তথাকথিত ‘উন্নয়নের রাজনীতি’ তারা ক্ষমতা ছাড়ার পরে টেকেনি।
এই সরকারের ‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’ ঘোষণা মানুষকে দারুণভাবে বিভ্রান্ত করবে। একটা সরকার ইতিহাস গড়তে পারে, কিন্তু ইতিহাস লিখতে পারে না। বিগত দিনের কত সরকারের লিখিত ইতিহাস ও ‘মাইলস্টোন দিবস’ জনগণ ছুড়ে ফেলে দিয়েছ।
এটা সত্য, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্থিতিশীলতা ও গ্রহণযোগ্যতায় অধ্যাপক ইউনূসের বড় অবদান রয়েছে। সরকারের বাইরেও অধ্যাপক ইউনূসের ব্যক্তিগত সাফল্য রয়েছে। ৫ আগস্টের পর কে যে আমাদের দেশের হাল ধরবেন, তা ছিল অনিশ্চয়তার ব্যাপার। জুলাই আন্দোলনে যাঁরা নেতৃত্বে ছিলেন বা তাঁদের পরামর্শক ছিলেন, তাঁদের কারও এমন কোনো পরিচিতি ছিল না যে তাঁরা কেউ জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে দেশে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে পারতেন।
অধ্যাপক ইউনূস ওই সময় দেশের হাল ধরে জনগণকে আশ্বস্ত করেছেন। তিনি আসায় আন্তর্জাতিক বিশ্বেও দেশের স্থিতিশীলতা নিয়ে উদ্বেগ কমে গেছে। এটাও সেই সময়ে দেশের জন্য ছিল একটা বিরাট পাওনা। কিন্তু সরকারে সরকারে তাঁর অংশগ্রহণকে ‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’ বলা সঠিক নয়। একটা নতুন সরকার আসা অবশ্যই দেশের জন্য অনেক আশার, বিশেষত ১৫ বছরের একনায়ক সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর। কিন্তু নতুন সরকার আসা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ‘নতুন বাংলাদেশের’ আশ্বাস বহন করে না।
এই সরকারে যাঁরা উপদেষ্টা রয়েছেন, তাঁরা বেশির ভাগই খুব বিনয়ী ব্যক্তিত্ব। তাঁরা ৮ আগস্টকে ‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’ ঘোষণা করে নিজেদের অভিষেক উদ্যাপনের জন্য নতুন মুকুট বানালেন কেন, তা বোঝা দুষ্কর। জুলাই আন্দোলনের স্বীকৃতির যা অলংকার, তার পুরাটাই প্রাপ্য ৫ আগস্ট, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস’–এর এবং আন্দোলনের শহীদদের। এর বাইরে অধ্যাপক ইউনূসের বাংলাদেশ প্রত্যাবর্তন, নতুন সরকার গঠন এবং এই সরকারের শপথ গ্রহণ—এগুলো সবই ছিল শুধু আনুষ্ঠানিকতা।
সত্যি কথা হলো, আমরা এখনো সেই পুরোনো বাংলাদেশকে নিয়েই হিমশিম খাচ্ছি। ‘সোনার বাংলার’ মরীচিকায় বিশ্বাস করে আমরা অনেক সময় নষ্ট করেছি। যদি কোনো সরকার আমাদের জন্য সত্যি সত্যি ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়তে পারে, আমরা অবশ্যই পেছনে তাকিয়ে সেই সরকারের অভিষেককে অলংকৃত করব। তবে আগেভাগে অলংকৃত করা ঠিক হবে না। জুলাই মাসের আগমনী সময়ে আমাদের সব প্রশংসা ও স্মরণ শুধু ৫ আগস্টের, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস’–এর জন্য এবং যাঁরা এই অভ্যুত্থানকে সফল করতে নিজেদের প্রাণ দিয়েছেন, তাঁদের জন্য।
সালেহ উদ্দিন আহমদ শিক্ষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
[email protected]
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ল দ শ দ বস এই সরক র সরক র র ইউন স র সরক র ক ই সরক র র ক ষমত আম দ র র জন য নত ন ব কর ছ ন স মরণ আগস ট হওয় র
এছাড়াও পড়ুন:
প্রথম হিজরতকারী ৫ নারী সাহাবি
নবুওয়তলাভের পঞ্চম বছর, নবীজি (সা.) দেখলেন শুধুমাত্র ইসলামগ্রহণের ‘অপরাধে’ নিজ গোত্রের আপন লোকেরাই সাহাবিগণের ওপর অমানবিক নির্যাতন শুরু করেছে। দিন যত যায়, জুলুম-নিপীড়ন আর অবমাননা বাড়তে থাকে। যারা সমাজে খুব সম্মানের সাথে চলাফেরা করতেন, তাদেরই এখন আড়ালে-আবডালে থাকতে হয়।
সাহাবিগণের এই ‘পরাধীনতা’ নবীজির (সা.) মনে খুব কষ্ট দিল। তিনি তাদের বললেন, ‘তোমরা আল্লাহর জমিনের কোথাও হিজরত করে চলে যাও, আল্লাহ শীঘ্রই তোমাদের একত্রিত করবেন। সাহাবিগণ আরজ করলেন, কোথায় যাব? তিনি হাবশার দিকে ইঙ্গিত করেন।’ (সীরাতুল মুস্তফা, ইদরীস কান্ধলবী, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ২১১-২১২, ইফাবা)
আরেক বর্ণনায় আছে, নবীজি (সা.) বলেন, ‘তোমরা হাবশায় চলে যাও, এটাই তোমাদের জন্য ভালো। কারণ সেখানে একজন ন্যায়পরায়ণ বাদশাহ আছেন, যার রাজত্বে কেউ জুলুমে শিকার হয় না। সেই দেশটা সত্য ও ন্যায়ের দেশ। আল্লাহ যতদিন পর্যন্ত তোমাদের জন্য এই জুলুম থেকে বাঁচার পরিবেশ না করে দেন, ততদিন পর্যন্ত তোমরা সেখানে থাকতে পারো। (সীরাতুন নবী, ইবনে হিশাম, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ২৮৪, ইফাবা)
এই নির্দেশ পেয়ে ৬১৫ খ্রিষ্টাব্দে, হিজরিপূর্ব ৭ সালের রজব মাসে সাহাবিগণ মক্কা ছেড়ে সমুদ্রপথে আফ্রিকার দিকে রওনা দেন, যা ইতিহাসের কিতাবে ‘হাবশায় প্রথম হিজরত’ নামে প্রসিদ্ধ।
তারা খ্রিষ্টান রাজা নাজ্জাশি শাসিত আকসুম রাজ্যে (বর্তমান ইথিওপিয়া ও ইরিত্রিয়া) গিয়ে নোঙর ফেলেন, এবং সেখানে বেশ নিরাপত্তার সঙ্গে তিন থেকে চারমাস বসবাস করেন। এরপর এমন একটা গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে মক্কার সবাই ইসলামগ্রহণ করে ফেলেছে, তাই তারা ফিরে আসেন।
আরও পড়ুনআবিসিনিয়ায় নারী সাহাবিদের দ্বিতীয় হিজরত১৪ নভেম্বর ২০২৫সেই দুঃসাহসিক অভিযাত্রায় এগারোজন পুরুষের সাথে পাঁচজন নারী সাহাবিও ছিলেন, যাদের ত্যাগ ও কোরবানি পরবর্তীতে অন্য নারীদেরকেও ‘ধর্মপালনের স্বাধীনতার’ যুদ্ধে অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ করেছিল। আমরা এখানে সংক্ষেপে সেই পাঁচজন নারী সাহাবি সম্পর্কে জানব।
১. রুকাইয়া বিনতে মুহাম্মদ (রা.)তাঁর জন্ম ৬০১ খ্রিষ্টাব্দে। তিনি ছিলেন নবীজির (সা.) দ্বিতীয় মেয়ে। আবু লাহাবের ছেলে উতবাহর সাথে তাঁর বিয়ের চুক্তি (আকদ) হয়েছিল। কিন্তু নবীজি (সা.) নবুওয়তপ্রাপ্তির ঘোষণা দিলে আবু লাহাব সেই আকদ ভেঙে দেয়। এরপর রুকাইয়ার (রা.) বিয়ে হয় হযরত ওসমান ইবনে আফফানের (রা.) সাথে। তিনি স্বামীর সাথে হাবশায় হিজরত করেছিলেন, এই সময় তার বয়স ছিল ১৫।
তারা যখন হিজরত করার উদ্দেশ্যে রওনা দেন, নবীজি (সা.) তাদের কোনো খোঁজখবর পাচ্ছিলেন না। তিনি প্রতিদিন তাদের খবর নিতে বের হতেন। একদিন জনৈক মহিলা জানান তারা হাবশায় পৌঁছেছেন, নবীজি (সা.) এ খবর শুনে মন্তব্য করেন, ‘হজরত লুতের (আ) পর ওসমানই (রা.) প্রথম ব্যক্তি যিনি সপরিবারে হিজরত করেছেন। (মাজমাউয যাওয়ায়েদ, হাদিস: ১৪৯৯৮) হযরত রুকাইয়া (রা.) ৬২৪ খ্রিষ্টাব্দে ইন্তেকাল করেন।
২. উম্মে সালামাহ হিন্দ বিনতে আবু উমাইয়া (রা.)তাঁর জন্ম ৫৯৪ খ্রিষ্টাব্দে। তিনি ছিলেন নবীজির (সা.) ফুফাতো ভাই ও দুধভাই আবু সালামাহ আবদুল্লাহ ইবনে আবদুল আসাদের (রা.) স্ত্রী। স্বামীর সাথে তিনি হাবশায় হিজরত করেন, তখন তার বয়স ছিল ২১।
সে সময় তিনি সন্তানসম্ভাবা ছিলেন, হাবশায় তাদের প্রথম পুত্র সালামাহর জন্ম হয়। উহুদ যুদ্ধের পর আবু সালামাহ (রা.) শাহাদাতবরণ করলে নবীজির (সা.) সাথে উম্মে সালামাহর (রা.) বিয়ে হয়। তিনি ছিলেন খুবই সাহসী ও জ্ঞান অনুরাগী নারী। তার অনেক প্রশ্নের ওপর কোরআনের আয়াত নাজিল হয়েছিল।
জীবনের শেষদিকে তিনি একদম সবার আড়ালে চলে যান, এমনকি তার মৃত্যুর তারিখ সঠিকভাবে জানা যায় না।
আরও পড়ুনমদিনায় হিজরত: ইসলামের ৬টি মাইলফলক০২ জুলাই ২০২৫৩. উম্মে আবদুল্লাহ লায়লা বিনতে আবু হাসমা (রা.)তিনি ছিলেন হজরত আমির বিন রবিয়াহর (রা.) স্ত্রী। হাবশার হিজরতের ঘটনা নিয়ে তিনি দুটো হাদিস বর্ণনা করেন। এর একটি হাদিস থেকে জানা যায় হিজরতের সময় এক মুসলিম অপর মুসলিমের কতটা আপন হয়ে উঠেছিল। উম্মে আবদুল্লাহ বলেন:
সাহাবিগণ যখন হাবশার উদ্দেশ্যে বের হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের ঘরে এলেন এবং বললেন, ‘মুসআব ইবনে উমাইরকে (রা.) তার মা আটকে রেখেছে। তিনি আজ রাতেই বের হতে চান। যখন সবাই ঘুমিয়ে পড়বে, তখন তিনি চলে আসবেন।’
আমার স্বামী, আমির ইবনে রবিয়াহ (রা.) বললেন, ‘আমরা তার জন্য অপেক্ষা করব, দরজা বন্ধ করব না।’
রাত গভীর হলে মুসআব (রা.) আমাদের কাছে এসে পৌঁছালেন। সেদিন রাতটা আমাদের সঙ্গেই কাটালেন। পরদিনও ছিলেন, তারপর রাতে চুপিসারে বেরিয়ে পড়লেন। আমরা তার সঙ্গে দেখা করার অঙ্গীকার করেছিলাম—তিনি সেই জায়গায় এসে মিলিত হলেন, আর আমরা একত্রে রওনা হলাম। আমরা সবাই পায়ে হেঁটে চলছিলাম, কেবল একটি উট ছিল, তাতে আমি ছিলাম।
মুসআবের (রা.) শরীর ছিল খুবই নাজুক, তিনি পায়ের তলায় মাটি সহ্য করতে পারছিলেন না। আমি দেখেছি, তিনি কদম ফেলছেন আর তার পা থেকে রক্ত ঝরছে। আমির (রা.) তা দেখে নিজের জুতা খুলে তাকে দিয়ে দিলেন।
শেষ পর্যন্ত আমরা জাহাজে পৌঁছালাম। সেখানে একটি জাহাজ পাওয়া গেল, যা সদ্য ভুট্টা বোঝাই করে মাওর থেকে ফিরেছে। আমরা ভাড়া করে তাতে উঠলাম—সাগর পেরিয়ে প্রথমে মাওর, তারপর মাওর থেকে হাবশা।
লায়লা (রা.) আরও বলেন, ‘আমি দেখেছি, আমির (রা.) মুসআবের (রা.) প্রতি এমন মায়া দেখাচ্ছিলেন, এতটা মায়া নিজের সন্তানের প্রতিও দেখান না। অথচ মুসআবের (রা.) কাছে কানাকড়িও ছিল না, আর আমাদের কাছে ছিল সবমিলিয়ে পনের দিনার।’ (জামিউস সুন্নাতি ওয়া শুরুহিহা, হাদিস: ৩০৬৭)
৪. সাহলা বিনতে সুহায়ল (রা.)তিনি ছিলেন হযরত আবু হুযায়ফা ইবনে উতবার (রা.) স্ত্রী। হাবশায় হিজরতের সময় তিনিও সন্তানসম্ভাবা ছিলেন। সেখানে তাদের পুত্র মুহাম্মদ বিন আবু হুজায়ফার (রা.) জন্ম হয়।
৫. উম্মে কুলসুম বিনতে সুহায়ল (রা.)তিনি ছিলেন নবীজির (সা.) ফুফাতো ভাই হযরত আবু সাবরাহ ইবনে আবু রাহমের (রা.) স্ত্রী। তার স্বামী হাবশায় দুই-দুইবার হিজরত করেছিলেন।
কিন্তু তিনি প্রথমবার স্বামীর সাথে ছিলেন কিনা এই বিষয়ে মতবিরোধ আছে। হাফিজ ইবনে সাইয়িদুন নাস ‘উয়ুনুল আসার’-এ প্রথম হিজরতকারীদের তালিকায় তার নাম উল্লেখ করেছেন। তবে ইবনে ইসহাক তাকে দ্বিতীয় হিজরতকারীদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেন। (কিতাবুল ইসাবাহ ফি তাময়িজিস সাহাবাহ, খণ্ড ৮, পৃষ্ঠা ৪৬২, মাকতাবায়ে শামেলা)
[email protected]
মওলবি আশরাফ: আলেম, লেখক ও অনুবাদক।
আরও পড়ুনমহানবী (সা.)–এর হিজরত কেন মদিনায় হলো?১০ আগস্ট ২০২৪