স্থায়ী কোনো শিক্ষক নেই বিপাকে শিক্ষার্থীরা
Published: 28th, June 2025 GMT
শিক্ষক সংকট ও অব্যবস্থাপনায় ধুঁকছে ময়মনসিংহের ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি (আইএইচটি)। অধ্যক্ষ না থাকায় বকেয়া বিল না পেয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। পরে অবশ্য শিক্ষার্থীদের তদবিরে বিদ্যুৎ সংযোগ সচল হয়েছে। ঠিকমতো পাঠদানও হচ্ছে না। নানা সমস্যায় ভুগছেন তিনটি ব্যাচের ১৫৬ শিক্ষার্থী।
২০২২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় প্রতিষ্ঠানটি। ডা.
বিল বকেয়া থাকায় গত ২৫ জুন ক্যাম্পাসের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। ৯ লাখ টাকার বেশি বিল বকেয়া। কোনো অধ্যক্ষ না থাকায় বিদ্যুৎ অফিসের অসংখ্য চিঠির বিষয়ে কেউ ব্যবস্থা নেয়নি। পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীরা বিদ্যুৎ অফিস, সিভিল সার্জন ও জেলা প্রশাসকের সঙ্গে দেখা করে সমস্যার কথা জানালে বিদ্যুৎ সংযোগ সচল হয়।
কলেজ সূত্রে জানা গেছে, সরকারি কলেজটিতে তিনটি ব্যাচ চলমান। কিন্তু শিক্ষক সংকটের কারণে সেশনজটে পড়ে কোনো ব্যাচের শিক্ষার্থীরাই এখনও প্রথম বর্ষের গণ্ডি পার হতে পারেননি। প্রতিষ্ঠানটিতে দুটি বিভাগে কার্যক্রম চলমান। এগুলো হলো– ল্যাবরেটরি ও রেডিওলজি বিভাগ। ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষের পরীক্ষা গত ফেব্রুয়ারিতে শেষ হলেও ফলাফল পায়নি চার মাসেও।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের দু’জন শিক্ষক অতিথি শিক্ষক হিসেবে ক্লাস নিচ্ছেন। তারা হলেন– এনাটমি বিভাগের ডা. আতিকুর রহমান ও কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের ডা. জান্নাতুল ফেরদৌস।
তাছাড়া মাত্র একজন সিকিউরিটি গার্ড দিয়ে চলছে পুরো কলেজ ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ মামুন নামে গার্ড দিনের বেলায় কলেজ ক্যাম্পাসে উপস্থিত থাকেন না। তিনি শুধু রাতে এসে ঘুমান।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা দুর্বল থাকায় বহিরাগত ও চোরের উৎপাতে অতিষ্ঠ শিক্ষার্থীরা। নারী শিক্ষার্থীদের অনেকেই নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন, অনেকেই ক্যাম্পাসে না থেকে বাইরে ভাড়া বাসায় অবস্থান করছেন।
ল্যাবরেটরি বিভাগের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী তাজরিন আক্তার পলি সমকালকে বলেন, ‘এত সুন্দর একটি কলেজে ভর্তি হয়ে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করেছিলাম। পরে দেখি কলেজটি নানামুখী সমস্যায় জর্জরিত। পুরো ক্যাম্পাস ঘন জঙ্গলে আচ্ছাদিত। রাত-বিরাতে বহিরাগত ছেলেরা ক্যাম্পাসে এসে আনাগোনা করে।’
আবু বক্কর সিদ্দিক নামে আরেক শিক্ষার্থী জানান, আইএইচটিতে কোনো স্থায়ী বিভাগ ভিত্তিক শিক্ষক নেই। মাত্র দু’জন অতিথি শিক্ষক দিয়ে সপ্তাহে দু’দিন দ্বিতীয় ও তৃতীয় ব্যাচের একটি করে ক্লাস নেওয়া হয়। প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের কোনো ক্লাসই হয় না। এর ফলে ২০২২-২৩ সেশনের শিক্ষার্থীদের প্রায় ছয় মাস ধরে ক্লাস বন্ধ। এই অবস্থা তাদের শিক্ষাজীবনকে অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দিয়েছে।
অন্যান্য শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, শ্রেণিকক্ষ ও আবাসিক হলগুলোতে পর্যাপ্ত চেয়ার, টেবিল, বেঞ্চ, বিছানা নেই। ব্যবহারিক ক্লাসের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিও সরবরাহ করা হয়নি। আবাসিক হলগুলোতে শতাধিক ছাত্রছাত্রী নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। পর্যাপ্ত নিরাপত্তাকর্মী না থাকায় ক্যাম্পাসে দুইবার চুরিও হয়েছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, পুরো ক্যাম্পাস জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। এর ফলে সাপসহ অন্যান্য পোকামাকড়ের উপদ্রব বেড়েছে। জমে থাকা ময়লার স্তূপ ক্যাম্পাসকে অস্বাস্থ্যকর করে তুলেছে এবং কোনো পরিচ্ছন্নতাকর্মীও নেই।
সংকট নিরসনে প্রশাসনের কাছে বেশকিছু দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। দাবিগুলো হলো– অবিলম্বে অধ্যক্ষ নিয়োগ দিতে হবে। বিভাগ ভিত্তিক স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে সব ব্যাচের জন্য পর্যাপ্ত ক্লাসের ব্যবস্থা করতে হবে। একটি বিভাগীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে সব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। একাডেমিক ভবনের সব শ্রেণিকক্ষে পর্যাপ্ত আসবাব নিশ্চিত করতে হবে। ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে।
কথা হয় সাবেক অধ্যক্ষ ও ময়মনসিংহের সিভিল সার্জন মোহাম্মদ ছাইফুল ইসলামের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, কলেজটিতে কোনো পদ সৃষ্টি না করে, কোনো নিয়োগ না দিয়ে কোনো পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়াই সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে দিয়ে উদ্বোধন করানো হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি যতদিন অধ্যক্ষের দায়িত্বে ছিলাম, ততদিন ঢাকায় বিভিন্ন দপ্তরে দৌড়াদৌড়ি করে শিক্ষাকার্যক্রম চালিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছি।’
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মহিউদ্দিন মাতুব্বরের মতে, জনবল নিয়োগের ব্যাপারটি স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালকের নয়। এ বিষয়ে বলতে পারবেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের দপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন)।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: পর য প ত ল স র জন ব যবস থ প রথম ব
এছাড়াও পড়ুন:
দেশে প্রজনন হার হঠাৎ বাড়ছে
বাংলাদেশ কি উল্টো পথে হাঁটছে? দেশের নারীদের মোট প্রজনন হার বা টোটাল ফার্টিলিটি রেট (টিএফআর) এখন ২ দশমিক ৪। বাংলাদেশ অনেক চেষ্টা করে প্রজনন হার কমিয়ে ২ দশমিক ১৭ করতে পেরেছিল। এখন আবার তা বাড়তে শুরু করেছে। স্বাধীনতার পর ৫৪ বছরে এই উল্টো যাত্রা আগে কখনো দেখা যায়নি।
একজন নারী তাঁর প্রজনন বয়সে (১৫ থেকে ৪৯ বছর) যত সন্তানের জন্ম দেন, সেটাকে বলা হয় মোট প্রজনন। স্বাধীনতার সময় বাংলাদেশের নারীরা গড়ে ছয়টি বা তার বেশি সন্তানের জন্ম দিতেন। পাঁচ দশক ধরে বাংলাদেশ টিএফআর কমানোর চেষ্টা করেছে। অর্থনীতি ও স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশের বড় অর্জনের একটি এই জন্মহার কমানো।
গতকাল রোববার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এবং ইউনিসেফ যৌথভাবে মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভে (মিকস) ২০২৫ প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, ময়মনসিংহ বিভাগে প্রজনন হার সবচেয়ে বেশি, ২ দশমিক ৮। সবচেয়ে কম রাজশাহী বিভাগে, ২ দশমিক ২। সবচেয়ে দরিদ্র পরিবারের নারীদের মধ্যে এবং কম শিক্ষিত বা নিরক্ষর নারীদের মধ্যে টিএফআর বেশি।
টিএফআর বাড়ছে, এর অর্থ আমাদের পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম ঠিকভাবে চলছে না। এটা দেখে মনে হচ্ছে আমাদের জনসংখ্যাবিষয়ক নীতি ও কর্মকৌশল সঠিক পথে নেই। এমনিতেই দেশে বেকারত্ব বেশি। টিএফআর বৃদ্ধি দেশের সার্বিক উন্নয়নকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিতে পারেজনসংখ্যাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক মোহাম্মদ মঈনুল ইসলামস্বাধীনতার পর বাংলাদেশে টিএফআর ছিল ৬ বা তার বেশি। মিকস ও অন্যান্য উৎসের তথ্য ব্যবহার করে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৮২ সালে টিএফআর ছিল ৫ দশমিক শূন্য ৭। এরপর তা কমতে থাকে। ১৯৯৪ সালে টিএফআর কমে হয় ৩ দশমিক ৪। টিএফআর আরও কমতে থাকে, ২০০৪ সালে তা কমে হয় ৩। ২০১২ সালে ছিল ২ দশমিক ৩ এবং ২০২২ সালেও একই হার। ২০২৪ সালের দিকে তা ছিল ২ দশমিক ১৭ বা তার কাছাকাছি।
পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশের ইতিহাসে টিএফআর কখনো কমতে দেখা যায় না। হয় ক্রমাগত কমেছে, না হয় কয়েক বছর ধরে স্থির অবস্থায় ছিল। যেমন ১৯৯৬ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত টিএফআর ৩ দশমিক ৩ ছিল। আবার ২০১২ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত টিএফআর ২ দশমিক ৩ ছিল। অর্থাৎ এক দশক ধরে টিএফআর স্থির ছিল। টিএফআর কেন কমছে না, তা নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছে।
টিএফআর কীভাবে কমেছিলস্বাধীনতার পর জনসংখ্যাকে বাংলাদেশের জাতীয় সমস্যা হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল। ভাবা হয়েছিল অধিক জনসংখ্যা জাতীয় অর্থনীতির বাধা। সরকার জনসংখ্যা কমানোর নীতি গ্রহণ করে। পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচির ওপর জোর দেওয়া হয়। মানুষের হাতের কাছে জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার কর্মকৌশল দেওয়া হয়। পাশাপাশি ব্যাপক জনসচেতনতা কর্মকাণ্ড চালু করা হয়। রাষ্ট্র পরিচালিত টেলিভিশন ও বেতার এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখে। পরিবার পরিকল্পনা মাঠকর্মী ছাড়াও এনজিওরা এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখে।
গত কয়েক দশকে সক্ষম দম্পতিদের মধ্যে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের হার বেড়েছে। মানুষ সহজে হাতের কাছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বা দোকান থেকে জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী কিনতে পারে। এর পাশাপাশি নারী শিক্ষার হার বেড়েছে। কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে। এসব উপাদানও টিএফআর কমাতে সহায়তা করেছে।
১৯৯৬ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত টিএফআর ৩ দশমিক ৩ ছিল। আবার ২০১২ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত টিএফআর ২ দশমিক ৩ ছিল। অর্থাৎ এক দশক ধরে টিএফআর স্থির ছিল। টিএফআর কেন কমছে না, তা নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছে।বাংলাদেশের উদ্দেশ্য ছিল টিএফআর ২ দশমিক ১–এ নিয়ে যাওয়া; তা হয়নি। টিএফআর বেড়ে যাওয়ার অর্থ জনসংখ্যার চাপ বেড়ে যাওয়া। বাংলাদেশ এমনিতেই জনবহুল দেশ। তারপরও জনসংখ্যা বৃদ্ধির গতি বেড়ে গেলে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ার ঝুঁকি আছে অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ নানা ক্ষেত্রে।
জনসংখ্যাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘টিএফআর বাড়ছে, এর অর্থ আমাদের পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রম ঠিকভাবে চলছে না। এটা দেখে মনে হচ্ছে আমাদের জনসংখ্যাবিষয়ক নীতি ও কর্মকৌশল সঠিক পথে নেই। এমনিতেই দেশে বেকারত্ব বেশি। টিএফআর বৃদ্ধি দেশের সার্বিক উন্নয়নকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিতে পারে।’