নিপীড়নের ভিডিও ছড়ানো আরেক দফা নির্যাতনের শামিল
Published: 29th, June 2025 GMT
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায় নারীকে ধর্ষণ এবং নির্যাতনের ভিডিও ধারণ করে ছড়ানোর ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বিভিন্ন মানবাধিকার, সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন। বিবৃতি ও প্রতিবাদ কর্মসূচি থেকে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করা হয়েছে। পাশাপাশি ভুক্তভোগী ও তাঁর পরিবারের নিরাপত্তা, ক্ষতিপূরণ এবং প্রয়োজনীয় আইনি, মানসিক ও স্বাস্থ্য সহায়তার ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি দাবি জানানো হয়েছে।
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন রোববার এক বিবৃতিতে ঘটনার দ্রুত বিচার এবং আসামিদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, নিপীড়নের ভিডিও ধারণ করে ছড়িয়ে দেওয়া নারীর প্রতি আরেক দফা নির্যাতনের শামিল এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এটি ভুক্তভোগীর সামাজিক ও মানসিক স্থিতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
বিভিন্ন সংগঠনের বিবৃতি
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের এক বিবৃতিতে বলেছেন, মুরাদনগরের ঘটনা প্রমাণ করে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কতটা নাজুক। অভিযুক্ত ধর্ষক ও ভিডিও ছড়ানো ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের বিবৃতিতে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকার নিজেদের নারীবান্ধব বললেও নারীর প্রতি অবমাননাকর ঘটনায় সরকারের সদিচ্ছা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দেশে মব সন্ত্রাস, সংখ্যালঘুসহ সমাজের দুর্বল বিপন্ন অংশের বিপন্নতা মারাত্মকভাবে বেড়ে চলেছে।
সিপিবির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স পৃথক বিবৃতিতে বলেন, বিভিন্ন স্থানে নারীদের বিরুদ্ধে মব তৈরি, অনলাইনসহ নানাভাবে নিপীড়ন ও হেনস্তা করা হচ্ছে। সরকার ও প্রশাসনকে এসব ঘটনা প্রতিরোধে দৃষ্টান্তমূলক ভূমিকা নিতে দেখা যাচ্ছে না।
বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বিবৃতিতে বলেন, নারীর ওপর ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কারণে নিপীড়ন চলছে। বাসদের (মার্কসবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা বিবৃতিতে বলেন, নারী নির্যাতন প্রতিরোধ ও জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দিতে সরকার ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে।
গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদে জননিরাপত্তা ও সুরক্ষার বিষয়টি এখনও নিশ্চিত হয়নি। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের বিবৃতিতে বলা হয়, ঘটনাটি শুধু একটি ভয়াবহ অপরাধ নয়, বরং নারীর প্রতি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আক্রমণ ও বিদ্বেষের নগ্ন বহিঃপ্রকাশ। নারীমুক্তি কেন্দ্রের বিবৃতিতে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে রাষ্ট্রকে আরও কার্যকর ভূমিকা নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।
বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ
মুরাদনগরে নারীকে ধর্ষণ ও ভিডিও ছড়ানোর প্রতিবাদ এবং জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। রোববার কুমিল্লা নগরীর রাণীর বাজার রামঠাকুরের আশ্রম থেকে সংখ্যালঘু ঐক্য মোর্চার আয়োজনে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। এদিন চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের বিক্ষোভ সমাবেশে দলটির নেতারা বলেন, মুরাদনগরের ঘটনার দায়ভার রাষ্ট্র এড়াতে পারে না।
মুরাদনগরে নারীকে ধর্ষণের প্রতিবাদে শনিবার রাতে বিক্ষোভ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে আরেকটি বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। রোববার সন্ধ্যায় বামপন্থি ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতৃত্বে মশাল মিছিল হয়েছে। এদিকে রোববার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ফোরামের ব্যানারে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে।
(তথ্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যুরো ও প্রতিনিধি)
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: অপর ধ ম র দনগর র বব র র ঘটন সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
স্পর্শকাতর বিষয়, তদন্ত দ্রুত যেন হয় মনিটরিং করবেন
মুরাদনগরের একটি মামলার ঘটনায় কুমিল্লার পুলিশ সুপারকে (এসপি) হাইকোর্ট বলেছেন, সেনসেটিভ ম্যাটার (স্পর্শকাতর বিষয়)। অভিযোগপত্র হয়নি। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে তদন্তের সময়সীমা উল্লেখ আছে। দ্রুত যেন হয় মনিটরিং (তদারকি) করবেন। কমপ্লায়েন্স (অগ্রগতি প্রতিবেদন) দেবেন।
মুরাদনগরের ঘটনায় ভুক্তভোগী নারীর নিরাপত্তা–সুরক্ষা নিশ্চিতে পদক্ষেপ এবং মামলার তদন্তের অগ্রগতিবিষয়ক শুনানিতে মঙ্গলবার আদালত এ কথা বলেন। শুনানি নিয়ে বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি সৈয়দ জাহেদ মনসুরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আগামী ২২ অক্টোবর পরবর্তী কমপ্লায়েন্স দিতে বলেছেন।
ওই ঘটনা নিয়ে ‘দরজা ভেঙে এক নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ, মামলা’ শিরোনামে গত ২৯ জুন প্রথম আলোতে প্রতিবেদন ছাপা হয়। এটিসহ এ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মীর এ কে এম নূরুন্নবী রিট করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ২৯ জুন হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন।
আদেশে ভুক্তভোগী নারীর নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এবং সব ধরনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও অনলাইন থেকে ভুক্তভোগীর ভিডিও ও ছবি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সরাতে নির্দেশ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে কোনো ধরনের ব্যর্থতা ছাড়াই বিবাদীদের ১৪ জুলাই আদালতে প্রতিবেদন (হলফনামা আকারে কমপ্লায়েন্স) দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। ধার্য তারিখে প্রতিবেদন জমা পড়েনি। এর ধারাবাহিকতায় গত ২২ জুলাই আদালত কমপ্লায়েন্স বিষয়ে অবস্থান জানাতে কুমিল্লার পুলিশ সুপারকে ১২ আগস্ট বেলা ১১টায় আদালতে উপস্থিত হতে নির্দেশ দেন।
মঙ্গলবার সকালে আদালতে হাজির হন কুমিল্লার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাজির আহমেদ খান। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মুহাম্মদ শফিকুর রহমান শুনানিতে পুলিশ সুপারের নেওয়া পদক্ষেপ ও কার্যক্রমসংক্রান্ত তথ্যাদি–সংবলিত প্রতিবেদন তুলে ধরেন। শফিকুর রহমানের সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তানিম খান ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইকরামুল কবির। রিটের পক্ষে আইনজীবী মীর এ কে এম নূরুন্নবী নিজেই শুনানিতে অংশ নেন। শুনানি নিয়ে আদালত কুমিল্লার পুলিশ সুপারকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেন। পরবর্তী কমপ্লায়েন্স দাখিলের জন্য আগামী ২২ অক্টোবর তারিখ ধার্য করেন।
ডিএনএ পরীক্ষা, তদন্তসহ মামলা–সম্পর্কিত পরবর্তী অগ্রগতির তথ্যাদি দিতে বলা হয়েছে বলে জানান ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মুহাম্মদ শফিকুর রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এখনো অভিযোগপত্র হয়নি। যত দ্রুত সম্ভব কাজগুলো শেষ করতে বলেছেন আদালত। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের নির্দিষ্ট সময়সীমা যেন কোনোভাবেই অতিক্রম না করে। নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে কাজগুলো করে আগামী ২২ অক্টোবর অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
পুলিশ সুপারের পক্ষে মঙ্গলবার আদালতে তুলে ধরা প্রতিবেদনের বিষয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মুহাম্মদ শফিকুর রহমান বলেন, মামলার পর ভুক্তভোগী নারীর নিরাপত্তার জন্য সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) বলা হয়। বিষয়টি ওসি দেখভাল করছেন। ভুক্তভোগীর জন্য সার্বক্ষণিক যেন নিরাপত্তা থাকে এবং সময়ে সময়ে এসপি ওসিকে এবং ওসি এসপিকে ফলোআপ ও হালনাগাদ তথ্য জানিয়েছে।
গত ২৯ জুন প্রথম আলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, কুমিল্লার মুরাদনগরের একটি গ্রামে বসতঘরের দরজা ভেঙে এক নারীকে (২৫) ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় মুরাদনগর থানায় মামলা করেছেন ওই নারী।