Samakal:
2025-11-17@11:08:49 GMT

কেমন যাবে নতুন অর্থবছর

Published: 29th, June 2025 GMT

কেমন যাবে নতুন অর্থবছর

নতুন অর্থবছর শুরুর মুহূর্তে ভালো-মন্দ দু’রকম খবরই রয়েছে। সবচেয়ে ভালো খবর রিজার্ভ লাফিয়ে বাড়া। জুন শেষে মোট রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন ডলার ছাড়াচ্ছে। আইএমএফের হিসাব পদ্ধতি অনুযায়ী এবং এ মুহূর্তে ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ অবশ্য ৪-৫ বিলিয়ন ডলার করে কম হবে। তা সত্ত্বেও পরিস্থিতি স্বস্তির। বিগত সরকারের শেষ সময়টায় রিজার্ভ নিয়ে অস্বস্তি কাটছিলই না। তিন মাসের আমদানি বিল পরিশোধের মতো রিজার্ভ আছে কিনা– এমন প্রশ্ন উঠছিল থেকে থেকেই। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রায় ১১ মাসে রিজার্ভে উন্নতি হয়েছে ক্রমে। এর একটা কারণ ক্রমে শক্তিশালী রেমিট্যান্স প্রবাহ। আরেকটা কারণ অবশ্য আমদানি কমে যাওয়া। এ অবস্থায় রিজার্ভ থেকে ডলার জোগাতে হচ্ছে না। অর্থবছরের শেষ সময়ে আবার বড় অঙ্কের বিদেশি অর্থ এসে যুক্ত হচ্ছে রিজার্ভে। এর মধ্যে আইএমএফ ঋণের দুই কিস্তি লাভের ঘটনা তাৎপর্যবহ। এটা না পেলে অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগী নতুন করে ঋণ জোগাতে দ্বিধাগ্রস্ত হতো। আইএমএফের সঙ্গে বিশ্বব্যাংকসহ অন্যদেরও দেখা যাচ্ছে ঋণ সহায়তায় এগিয়ে আসতে। অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য এটা ইতিবাচক পরিস্থিতি, বিশেষত যখন তাদের আরও বেশ ক’মাস দেশটি চালাতে হবে। 

খারাপ খবরের মধ্যে আছে বোরো উত্তোলন সম্পন্নের পরও চালের দাম বৃদ্ধির ঘটনা। উত্তোলন শুরুর পর এর দাম হ্রাসে মানুষ খুশি হয়েছিল। গত রমজানেও চালের বাজারে ছিল এক ধরনের অস্থিরতা। বিগত বছর থেকে চলে আসা ‘ঘাটতি’ হ্রাস এবং মজুত স্বস্তিকর করতে চাল আমদানিতে উদ্যোগী ছিল সরকার। কর-শুল্ক প্রায় শূন্য করে দেওয়া হয়েছিল। এ অবস্থায় প্রধান উৎপাদন মৌসুমের ফলন হাতে আসার পরও চালের দাম বাড়লে সেটা দুর্ভাগ্যজনক। ধানের দাম বৃদ্ধির কারণে এমনটি ঘটলে সেটাকেও ইতিবাচক বলার সুযোগ কম। গরিব কৃষকের হাতে এ মুহূর্তে কতটা বিক্রয়যোগ্য ধান-চাল আছে, দেখতে হবে। অন্যান্য কারণের কথাই কিন্তু বেশি বলা হচ্ছে। যেমন ঈদের দীর্ঘ ছুটিতে চালকল বন্ধ থাকা। চাল পরিবহনে জটিলতা আর ব্যয় বৃদ্ধির কারণও দেখানো হচ্ছে। দেশে ডিজেলের দাম অল্প হলেও কমেছে। এ অবস্থায় চাঁদাবাজি ছাড়া অন্য কোনো কারণে পরিবহন ব্যয় বাড়ার কথা নয়। কিছুদিন আগে পুরান ঢাকার ব্যবসায়ীরা এক সভায় অভিযোগ করে বলছিলেন পণ্য পরিবহনে দস্যুতা বেড়ে যাওয়ার কথা। চালের বাজার অস্থির হওয়ার নেপথ্যে এসব কারণ আছে কিনা, কে জানে! 

বিদায়ী অর্থবছরের বাজেট শেখ হাসিনা সরকার দিলেও এর প্রায় পুরোটা বাস্তবায়ন করল ইউনূস সরকার। নতুন বাজেটও তাদের দিতে হলো। কাজটা সহজ ছিল না; প্রীতিকরও নয়। বিশেষত বিগত সরকারের রেখে যাওয়া পরিস্থিতিতে। সেটা নিয়ে নতুন করে আলোচনার প্রয়োজন অবশ্য নেই। অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মূল্যায়নে গঠিত টাস্কফোর্স ও কমিটি তাদের প্রতিবেদনে সেটা তুলে ধরেছে। এতে সংকটের স্বরূপ জানতে অসুবিধা হচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকও তৎপর। তার প্রধান কাজ আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা। 

শেখ হাসিনা সরকারের আমলে লুটপাট সবচেয়ে তীব্রভাবে হয় ব্যাংক খাতে। তাতে এক শ্রেণির ব্যাংক এখন বন্ধের পথে। সেগুলোকে টিকিয়ে রাখতে ঘোষিত নীতি বদলে টাকা ছাপিয়ে তহবিল জোগাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যেও কিছু ব্যাংক আছে ইতিবাচক ধারায়। উল্লেখযোগ্য মুনাফা করা ব্যাংকও রয়েছে। ব্যাংক মুনাফা করা মানেই কিন্তু সেটা বেসরকারি খাতের সচলতার প্রমাণ নয়। ব্যাংক মুনাফা করেছে প্রধানত সরকারকে ঋণ জুগিয়ে। এর মানে আবার– সরকার বিদায়ী অর্থবছরে ব্যাংক ঋণের ওপর বেশি নির্ভরশীল থেকেছে, রাজস্ব আহরণ যেহেতু খারাপ। শেষদিকে একযোগে বড় অঙ্কের অর্থ পেলেও ইউনূস সরকার দীর্ঘদিন কিন্তু ছিল বিদেশি ঋণের খরায়। দেশীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েই চলতে হয়েছে তাকে। ব্যাংকও এটা জোগাতে পেরেছে বেসরকারি খাতে ঋণের চাহিদা বেশি না থাকায়। 
বেসরকারি খাতে ঋণের চাহিদা কমে যাওয়া মোটেও ভালো কথা নয়। এর মানে হলো, উৎপাদন খাত ঝিমিয়ে পড়া। এমনটি ঘটলে বিশেষত শিল্পের মেশিনারিজ ও কাঁচামাল আমদানি কমে যায়। বিদায়ী অর্থবছরজুড়ে এ ধারা অব্যাহত থাকায় স্বস্তি ছিল না অর্থনীতি ব্যবস্থাপনায়। উৎপাদন না বাড়ার মানে কর্মসংস্থানে অবনতি। শ্রমবাজারে যোগদানকারীরা কাজ পাবে কীভাবে, কর্মে নিয়োজিতরা যখন কাজ হারায়! বিদায়ী অর্থবছরে এমন বেদনাদায়ক পরিস্থিতিই মোকাবিলা করতে হয়েছে জাতিকে। তার একটা বড় কারণ অবশ্য গণঅভ্যুত্থানে তছনছ হয়ে যাওয়া শিল্প-বাণিজ্যের একাংশ। বিশেষ রাষ্ট্রীয় আনুকূল্যে ব্যবসা করে যাওয়া একটি মহলের প্রতিষ্ঠানে কর্মরত অনেক মানুষ কাজ হারিয়েছে এমন এক সময়ে, যখন মূল্যস্ফীতি কোনোভাবেই ৯ শতাংশের নিচে নামছে না। এটা কমানোর চেষ্টায় সুদের হার বাড়ানোর ফলে আবার ব্যবসার পরিচালন ব্যয় বাড়ছে। এসএমইতেও বাড়ছে ব্যয়। এতে উল্টো ব্যয় বৃদ্ধিজনিত মূল্যস্ফীতি বাড়ছে।

এর মধ্যে অবশ্য সুখবর– আরও বেশি করে বাজারে ন্যস্ত হওয়ার পরও ডলারের দাম মোটামুটি স্থিতিশীল। এতে আমদানি ব্যয়জনিত মূল্যস্ফীতির চাপ থেকে রেহাই পাওয়া যাচ্ছে। বিদায়ী অর্থবছরের অনেকটা সময় আন্তর্জাতিক বাজারও শান্ত ছিল; এমনকি নিম্নগামী। আমাদের মতো আমদানিনির্ভর দেশের জন্য এটা বিশেষভাবে ইতিবাচক। 

নতুন অর্থবছর শুরুর আগ দিয়ে অবশ্য জ্বালানির বাজার অস্থির হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছিল ইরানে ইসরায়েলের হামলা ঘিরে। জ্বালানি পরিবহনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হরমুজ প্রণালি বন্ধের হুমকিও দিয়েছিল ইরান। এতে আমাদের এলএনজি আমদানি ঝুঁকিতে পড়তে পারত। যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়লে মধ্যপ্রাচ্যে সংকটে পড়ত আমাদের শ্রমবাজার। যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল যুক্তরাষ্ট্রও, যেটা আমাদের প্রধান রপ্তানিপণ্যের মূল বাজার। যা হোক, সে পরিস্থিতি কেটেছে বলে রক্ষা। ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবের কথা তো সবারই জানা। জ্বালানি থেকে খাদ্যপণ্যের বাজারও অশান্ত হয় সেই কারণে। বিগত সরকারের আমলে রিজার্ভের অব্যাহত ক্ষয়ও ঘটে ওই পরিস্থিতিতে। এখন প্রশ্ন, নতুন অর্থবছরে কেমন থাকবে আন্তর্জাতিক বাজার? 
জ্বালানির দাম আর না বেড়ে বর্তমান স্তরে থাকলেও আমরা নানামুখী সুবিধা পাব, সন্দেহ নেই। কৃষিপণ্যের উৎপাদন আশানুরূপ রাখা গেলে আমদানিও কম করতে হবে। ভুট্টার মতো পণ্যের আমদানি কমছে দেশে উৎপাদন বাড়ছে বলে। তবে ধানের বদলে ভুট্টা চাষ বাড়লে সেটা আবার খাদ্য নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। 

এসব দিকে গভীরভাবে দৃষ্টি দেওয়ার সুযোগ অবশ্য তেমন পাবে না অন্তর্বর্তী সরকার। নতুন অর্থবছরের মধ্যভাগেই তাদের বিদায় নেওয়ার কথা। এডিপি বাস্তবায়নের ‘পিক সিজন’ তারা পাবেও না। এর আকার ‘যৌক্তিক’ করে ফেলে ভালোই করেছে। ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার এডিপি বাস্তবায়ন করা গেলেও এতে পণ্যসামগ্রী সরবরাহকারীরা কম লাভবান হবে না। কর্মসংস্থানও কিছুটা হবে। তবে কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে প্রধানত বেসরকারি খাতে। উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে আর চলমান গ্যাস সংকটে সেটা কতখানি সম্ভব, কে জানে!
নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে বিনিয়োগ বাড়ার কারণ নেই। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাড়তি শুল্কের ঝুঁকিও যেভাবে হোক কাটাতে হবে। নতুন বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানি যতই বাড়ুক, পুরোনো বাজার হারানো চলবে না। 

হাসান মামুন: সাংবাদিক, কলাম লেখক

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পর স থ ত ত সরক র ব সরক র সরক র র পর বহন র জন য আম দ র স বস ত অবশ য আমদ ন ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

সাগর থেকে মাছ আহরণ বাংলাদেশের কমছে, ভারত-মিয়ানমারে বাড়ছে

বঙ্গোপসাগর থেকে গত তিন বছর বাংলাদেশের মাছ আহরণ ধারাবাহিকভাবে কমছে। ব্যাপকভাবে কমেছে সামুদ্রিক ইলিশ, কাঁকড়া ও চিংড়ি আহরণ। সাগর থেকে মাছ ধরার পরিমাণ কমতে থাকায় সার্বিকভাবে দেশের মাছের জোগানের গতিও কমে গেছে। যদিও ভিন্ন চিত্র প্রতিবেশী দেশগুলোর। বছর বছর সাগর থেকে মাছ ধরা বাড়িয়ে মাছ আহরণে বিশ্বের শীর্ষ দশ দেশের মধ্যে স্থান করে নিয়েছে ভারত। এমনকি গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত মিয়ানমারেও প্রতিবছর বাড়ছে সামুদ্রিক মাছ আহরণ।

সাগর থেকে বাংলাদেশের মাছ আহরণ কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সাগরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও ঘূর্ণিঝড়কে দায়ী করছেন এ দেশের মৎস্য কর্মকর্তারা। তা ছাড়া অতিরিক্ত মাছ আহরণের কারণেও মাছের মজুত কমে আসছে বলে জানান তাঁরা।

মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে মোট সামুদ্রিক মাছ আহরণের পরিমাণ ছিল ৭ লাখ ৬ হাজার টন। পরের অর্থবছরে তা কমে দাঁড়ায় ৬ লাখ ৭৯ হাজার টনে। সর্বশেষ গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা আরও কমে দাঁড়ায় ৬ লাখ ২৮ হাজার টনে। অর্থাৎ ২০২২–২৩ অর্থবছরের চেয়ে ২০২৩–২৪ অর্থবছরে সাগর থেকে মাছ আহরণ প্রায় সাড়ে ৭ শতাংশ কমেছে। গত জুনে শেষ হওয়া ২০২৪–২৫ অর্থবছরে এই পরিমাণ আরও কমেছে বলে জানিয়েছেন মৎস্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তবে এখনো অনুষ্ঠানিকভাবে গত অর্থবছরের তথ্য প্রকাশ করেনি সংস্থাটি।

সমুদ্র খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেশ কয়েক বছর ধরে সাগরে অতিরিক্ত মাছ আহরণের কারণে মাছের মজুত কমে গেছে। এ বিষয়ে মৎস্য অধিদপ্তরের সামুদ্রিক শাখার সহকারী পরিচালক মো. আবদুল্লাহ আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, ২০ বছর আগেও সাগরে বাণিজ্যিক ট্রলারের সংখ্যা ছিল এক শর কম। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬৫টিতে। তিনি জানান, সাগরের ৪০ মিটারের ভেতরে মাছ না ধরার কথা থাকলেও এসব নৌযান তা মানছে না। আবার ছোট নৌযানের সংখ্যা এখন ২৯ হাজার ছাড়িয়েছে। এসব নৌযানেও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে, যা তাদের ব্যবহার করার কথা নয়। পাশাপাশি অবৈধ জালও ব্যবহার করা হচ্ছে। এমনকি উপকূলের ৫ থেকে ১০ মিটারের মধ্যে মাছ ধরা হচ্ছে। এতে ডিম থেকে নতুন পোনা তৈরির সুযোগ নষ্ট হচ্ছে।

বিশ্বে সমুদ্র থেকে মাছ আহরণে নেতৃত্ব দিচ্ছে চীন। এ ছাড়া শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে ভারত ৬ষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে। ভারতের মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১–২২ সালে সাগর থেকে দেশটির মাছ আহরণের পরিমাণ ছিল ৪১ লাখ ২৭ হাজার টন, যা আগের বছরের তুলনায় ১৮ শতাংশ বেশি। সর্বশেষ ২০২৩–২৪ অর্থবছরে ৪৪ লাখ ৯৫ হাজার টন মাছ আহরণ করেছে ভারত।

মিয়ানমারের মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে ২০২০-২১ সালে সাগর থেকে মাছ আহরণের পরিমাণ ছিল ৩২ লাখ ৯৫ হাজার। সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই পরিমাণ আরও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৪ লাখ ১৪ হাজার টনে। অর্থাৎ গৃহযুদ্ধের মধ্যেও দেশটির সাগর থেকে মাছ আহরণ বাড়ছে।

এদিকে বাংলাদেশে সাগরে সবচেয়ে বেশি আহরণ কমছে ইলিশ ও চিংড়ির। মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩–২৪ অর্থবছরে সাগর থেকে ইলিশ আহরণ তার আগের অর্থবছরের চেয়ে প্রায় সাড়ে ৬ শতাংশ কমেছে। আর চিংড়ির আহরণ কমেছে প্রায় ৪৪ শতাংশ। কাঁকড়া আহরণও কমেছে ১৬ শতাংশের বেশি।

সাগর থেকে মাছ আহরণ কমে যাওয়া এবং এ বিষয়ে করণীয় প্রসঙ্গে সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্পের উপপরিচালক মোহাম্মদ শরিফুল আজম প্রথম আলোকে বলেন, ‘২০১৯ সাল থেকেই চিংড়ি আহরণ কমে যাওয়ার তথ্য পাচ্ছিলাম। তাই সামুদ্রিক মৎস্য বিধিমালায় চিংড়ি ধরার ট্রলারের লাইসেন্স আর না বাড়ানোর নীতি গ্রহণ করি। ২০২৮ সাল পর্যন্ত এসব ট্রলাররের লাইসেন্স নবায়ন করা হবে না।’

সাগর থেকে মাছ আহরণ বাড়াতে হলে বঙ্গোপসাগরের নিয়ন্ত্রণহীন মৎস্য আহরণকে নজরদারির মধ্যে আনার কথা বলছেন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। মৎস্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. জিয়া হায়দার চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, পরীক্ষামূলকভাবে পাঁচটি ট্রলারে স্যাটেলাইট ট্রেকার বসিয়ে নজরদারি করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে সব ট্রলার ডিজিটাল নজরদারির আওতায় আনার পরামর্শ তাঁর।

এদিকে মাছ আহরণ কমতে থাকায় সাগরের ওপর নির্ভরশীল জেলেরাও বিপাকে পড়ছেন। ঋণের দাদনের টাকা শোধ করে লাভের অঙ্ক মিলছে না তাঁদের। কক্সবাজারে পাঁচ হাজারের বেশি মাছ ধরার কাঠের নৌযান আছে। এসব নৌকায় এখন মাছ ধরা পড়ছে কম। কক্সবাজার ফিশিংবোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. দেলোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, টানা ছয় থেকে সাত মাস তেমন মাছ ধরা পড়ছে না। কয়েক বছর ধরেই মাছ কম পাওয়া যাচ্ছে। এক সপ্তাহের জন্য সাগরে গেলে দুই থেকে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। কিন্তু মাছ কম পাওয়ায় দাদন পরিশোধ করাই এখন কষ্টকর হয়ে গেছে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে মৎস্য অধিদপ্তরের ব্লু ইকোনমি সেলের পরিচালক মো. সাজদার রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সাগরে এখন ঘন ঘন ঘূর্ণিঝড় হচ্ছে। সাগরের তাপমাত্রাও বেড়ে গেছে। তা ছাড়া জেলিফিশের প্রকোপ বেড়েছে। আর অতিরিক্ত মৎস্য আহরণের কারণে মাছের মজুত কমছে। তাই মাছ আহরণ আরও কমিয়ে আনতে হবে।

এ বিষয়ে গত মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী জেলে সমিতির এক সভায় গণমাধ্যমে সঙ্গে কথা বলেন অন্তর্বর্তী সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। তিনি বলেন, ‘ভারতের জেলেরা যাতে বাংলাদেশে এসে মাছ ধরতে না পারেন, সেটা আমাদের বন্ধ করতে হবে।’

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে সারা বিশ্বে সাগর থেকে ৭ কোটি ৯৭ লাখ টন মাছ ধরা হয়। যার মধ্যে অর্ধেক মাছ আহরণ করেছে এশিয়ার দেশগুলো। ওই বছর বিশ্বের মোট সামুদ্রিক মাছের ১৪ দশমিক ৮ শতাংশই আহরণ করেছিল চীন, যার পরিমাণ ১ কোটি ১৮ লাখ ১৯ হাজার টন। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ইন্দোনেশিয়া ওই বছর আহরণ করেছে ৬৮ লাখ ৪৩ হাজার টন মাছ। আর ভারত আহরণ করেছে ৩৫ লাখ ৯৭ হাজার টন। যেখানে বাংলাদেশের হিস্যা ছিল বৈশ্বিক মাছ আহরণের মাত্র শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ওয়েস্টিন ও শেরাটনের ব্যবসা বেড়েছে 
  • নভেম্বরের ১৫ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে সাড়ে ১৮ হাজার কোটি টাকা 
  • সরবরাহ বাড়ছে শীতের আগাম ফুলকপি ও বাঁধাকপির, কমছে দাম
  • সামিট অ্যালায়েন্স পোর্টের ব্যবসা বেড়ে তিন গুণ
  • তিন মাসে ওয়ালটনের মুনাফা ২২১ কোটি টাকা
  • সাগর থেকে মাছ আহরণ বাংলাদেশের কমছে, ভারত-মিয়ানমারে বাড়ছে