কুমিল্লার মুরাদনগরে এক নারীকে ধর্ষণ ও নিগ্রহের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মশালমিছিল করেছে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট। রোববার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে মিছিল শুরু হয়ে শাহবাগ প্রদক্ষিণ করে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এসে শেষ হয়। অন্তর্বর্তী সরকার এ ঘটনার দায়ভার এড়াতে পারে না বলে মন্তব্য করেন গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের নেতারা।

সমাবেশে কেন্দ্রীয় ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি সালমান সিদ্দিকী বলেন, ‘বিগত আওয়ামী আমলে তনু, খাদিজাসহ অসংখ্য নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। কিন্তু তাদের বিচার হয়নি। আমরা আশা করেছিলাম, ৫ আগস্ট–পরবর্তী বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকার নারীদের সেই নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। কিন্তু এই সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পরেও দেখলাম নারীরা ঘরে-বাইরে কোথাও নিরাপদ নন। এই সরকারের আমলেও আছিয়া, লামিয়া এবং কুমিল্লার মুরাদনগরের ঘটনাসহ অসংখ্য ঘটনা ঘটছে।’  

তিনি আরও বলেন, ‘এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। ফলে নারীদের জন্য অনিরাপদ পরিবেশ দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা এসব ঘটনায় অবিলম্বে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।’

পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি অমল ত্রিপুরা বলেন, ‘মুরাদনগরের ঘটনা নতুন কোনো ঘটনা নয়। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের আমলেও কীভাবে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে, তা আমরা দেখেছি। কিছুদিন আগেও পার্বত্য চট্টগ্রামের মহালছড়ি এলাকায় মায়ের হাত থেকে শিশুকে কেড়ে নিয়ে দলবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়েছে। এটা বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। নতুন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে আমরা এমন ঘটনা প্রত্যাশা করি না।’

সমাবেশে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য মার্জিয়া প্রভা বলেন, ‘নারী প্রসঙ্গটি একটি লিটমাস পেপারের মতো। একটা রাষ্ট্র, সংগঠন, সমাজ কিংবা একটি পরিবার জনগণের পক্ষে কি না, জনবান্ধব কি না—তা নারী বিষয়ে তাদের অবস্থানের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়। ফ্যাসিবাদী সরকারকে উৎখাত করার পরেও আমরা বারবার নারীবিরোধী টোকেন পেয়েছি। তনু, মুনিয়া, আছিয়াসহ এমন অনেক ঘটনা আছে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম র দনগর সরক র র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

মুরাদনগরে ধর্ষণ: হঠাৎ কেন মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত ভুক্তভোগীর

কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার এক গ্রামে বসতঘরের দরজা ভেঙে এক নারীকে (২৫) ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলা প্রত্যাহার করে নেয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন ভুক্তভোগী নারী। গত শুক্রবার (২৭ জুন) দুপুরে ওই নারী বাদী হয়ে মুরাদনগর থানায় মামলা করেন।

রবিবার (২৯ জুন) সকাল ১১টায় সাংবাদিকদের ওই নারী মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের কথা জানান। এতে তিনি বলেন, “আমি নিজেই মামলা করেছি। কেউ চাপ দেয়নি। এখন আমি মামলা তুলে নিচ্ছি। কারণ আমার স্বামী আমাকে গ্রহণ করছেন না। আমার সঙ্গে কথা বলছেন না। ফোনও ধরছেন না।” ওই নারীর স্বামী দুবাই প্রবাসী।

তিনি আরো বলেন, ‘‘আমি বিচার চাই না। আমি শান্তি চাই না। গ্রেপ্তার সবাই মুক্তি পাক।’’

আরো পড়ুন:

ধর্ষণচেষ্টায় অভিযুক্তকে গণপিটুনি, হাসপাতালে মৃত্যু

উখিয়ায় বাসের ধাক্কায় মাদ্রাসাছাত্রী নিহত

ওই নারীকে নির্যাতন করার একটি ভিডিও শনিবার (২৮ জুন) রাতে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর এ নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা হয়।

মামলার এজাহার ও ভুক্তভোগী ওই নারীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হিন্দু সম্প্রদায়ের ওই নারী প্রায় ১৫ দিন আগে স্বামীর বাড়ি থেকে মুরাদনগর উপজেলার বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসেন। গত বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) রাতে বাবার বাড়ির পাশে পূজা হচ্ছিল। পরিবারের সদস্যরা সেখানে গিয়েছিলেন। তিনি বাড়িতে একা ছিলেন। আনুমানিক ১০টার দিকে ফজর আলী (৩৮) নামে এক ব্যক্তি তার বাবার বাড়ি গিয়ে ঘরের দরজা খুলতে বলেন। তিনি দরজা খুলতে অস্বীকৃতি জানান। একপর্যায়ে ওই ব্যক্তি ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে তাকে ধর্ষণ করেন।

ওই নারীর পাশের বাড়ির এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার রাতে ওই বাড়িতে অনেক শব্দ হচ্ছিল। আমি ভয়ে দৌড়ে গিয়ে লোকজন ডেকে নিয়ে আসি। লোকজন গিয়ে দেখেন দরজা ভাঙা। পরে আমরা ওই নারীকে উদ্ধার করি। এ সময় কিছু লোক তাকে মারধর ও ভিডিও করেন। পরে তারা বুঝতে পারেন ওই নারীর ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে। তখন লোকজন ফজর আলীকে মারধর করেন। পরে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।’’ ওই হাসপাতাল থেকে ফজর আলী পালিয়ে যান। 

এ মামলায় মূল অভিযুক্ত ফজর আলীসহ পাঁচজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রবিবার (২৯ জুন) ভোর ৫টার দিকে ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে ফজর আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়। অন্যদের মুরাদনগর উপজেলায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়। বাকি চারজন হলেন, সুমন, রমজান, আরিফ ও অনিক। তারা নির্যাতনের ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন। গ্রেপ্তার সকলের বাড়ি মুরাদনগর উপজেলায়।

দুই দিনের ব্যবধানে হঠাৎ করে ভুক্তভোগী নারীর মামলা তুলে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। তাদের প্রতিবেশী কয়েকজন জানান, ভুক্তভোগী নারী ও মূল অভিযুক্তের মধ্যে আগে থেকে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। তবে অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করে ওই নারী বলেন, “ফজর আলীর সঙ্গে আমার কোনো ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল না। ওর সঙ্গে শুধু টাকা-পয়সা নিয়ে কথা হতো। প্রয়োজনে ও আমাকে টাকা দিত, আমি ফিরিয়ে দিতাম।”

হঠাৎ করে মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের পেছনে কোনো চাপ আছে কি-না জানতে চাইলে তিনি জানান, তাকে কেউ ‘চাপ’ দেয়নি বা ‘অর্থের’ প্রলোভন দেখায়নি। 

মামলা দায়েরের কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘‘জিদ থেকে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে আমি মামলা করেছিলাম।’’
 

ঢাকা/রুবেল/বকুল 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মুরাদনগরে নারীকে ধর্ষণ-নিগ্রহের ঘটনায় অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি বাম গণতান্ত্রিক জোটের
  • কুমিল্লায় নারীকে ধর্ষণ-নিগ্রহের ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চায় বাসদ
  • মুরাদনগরে নারীকে ধর্ষণ-নিগ্রহের ঘটনায় দোষীদের শাস্তির দাবি হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের
  • মুরাদনগরে নারীকে নিগ্রহের ঘটনা নিয়ে ছড়ানো ভিডিও সরানোর দাবি জানিয়েছে ‘ধর্ষণ আইন সংস্কার জোট’
  • নিপীড়নের ভিডিও ছড়ানো আরেক দফা নির্যাতনের শামিল
  • চট্টগ্রামের চেরাগী পাহাড়ে বিক্ষোভ সমাবেশে দোষীদের বিচার দাবি
  • ভুক্তভোগীর নিরাপত্তা নিশ্চিত ও ভিডিও দ্রুত অপসারণের নির্দেশ
  • প্রকৃত অর্থেই ওই নারী পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন: পুলিশ
  • মুরাদনগরে ধর্ষণ: হঠাৎ কেন মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত ভুক্তভোগীর