সাড়ে পাঁচ মাস আগে শুরু হলেও জেলা প্রশাসক বা ডিসি নিয়োগের বাছাই প্রক্রিয়া এখনও শেষ হয়নি। পছন্দের কর্মকর্তা খুঁজতে ও ত্রিমুখী রাজনৈতিক চাপ সমন্বয় করতে গিয়ে ডিসি পদায়নে দেরি হচ্ছে বলে জনপ্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, সর্বশেষ গত বছরের ৮ সেপ্টেম্বর ডিসি নিয়োগের তালিকা তৈরি করা হয়। এ তালিকায় বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ২৪, ২৫ ও ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তা ছিলেন ১০৬ জন। এর মধ্যে ৬৪ জনকে ডিসি করার পর বাকি ৪২ কর্মকর্তা অপেক্ষমাণ তালিকায় থাকলেও তাদের নানা কারণে এখন গ্রহণযোগ্য মনে করছে না মন্ত্রণালয়। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এসব কর্মকর্তাকে ডিসি পদে পদায়ন না করার সিদ্ধান্ত হয়। ফলে চার মাস পর গত ১১ জানুয়ারি নতুন তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়। এখনও সেই সাক্ষাৎকার চলছে।

এ অবস্থায় ২১ জন ডিসি তিন মাস আগে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পেলেও তাদের জেলা থেকে প্রত্যাহার করা হয়নি। আবার সম্প্রতি শরীয়তপুরের ডিসিকে নারীবিষয়ক ঘটনায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ওএসডি করা হলেও সেখানে নতুন ডিসি পদায়ন করা হয়নি। 

ডিসি পদায়নে বিলম্ব হওয়ায় বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ২৫, ২৭, ২৮ ও ২৯তম ব্যাচের কর্মকর্তারা জটিলতার মধ্যে পড়েছেন। কারণ, ২৫ ও ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের ডিসি পদে উপযুক্তার তালিকা (ফিটলিস্ট) তৈরির জন্য সাক্ষাৎকার নেওয়া শেষ হয়েছে। কিন্তু চূড়ান্তভাবে বাছাই করে ডিসি পদে পদায়ন করতে পারছে না জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। 

২০০৬ সালের ২১ আগস্ট ২৫তম এবং ২০০৮ সালের ৩০ নভেম্বর ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তারা চাকরিতে যোগদান করেন। ২৪, ২৫ ও ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তারা এখন ডিসি হিসেবে মাঠে আছেন। ২০১০ সালের ১ ডিসেম্বর চাকরিতে যোগ দেন ২৮তম ব্যাচের কর্মকর্তারা। এই ব্যাচ এখন ডিসির ফিটলিস্টে যুক্ত হওয়ার কথা। সে অনুযায়ী, ২১ জুন সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে ২৮তম ব্যাচের ৪০ কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়।

২৯তম ব্যাচের কর্মকর্তারাও ডিসি ফিটলিস্টভুক্ত হওয়ার যোগ্য হয়েছেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন কর্মচারীদের পদায়ন নীতিমালা ২০২২-এ বলা হয়েছে, বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের কর্মচারীদের মধ্য থেকে উপসচিব পদে পদোন্নতি পাওয়ার এক বছর পর ডিসি পদে পদায়নের জন্য ফিটলিস্ট প্রণয়ন করা হবে। ২৯তম ব্যাচের কর্মকর্তারা ২০২৩ সালের ১১ নভেম্বর উপসচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন।

এ অবস্থায় গত ২০ মে জনপ্রশাসনবিষয়ক কমিটির সভায় উপদেষ্টাদের দেওয়া বক্তব্য সামনে আনা হয়েছে। সভার সূত্র অনুযায়ী, একজন উপদেষ্টা বলেছেন, ২৮তম ব্যাচের কর্মকর্তারা আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিয়োগ পেয়েছেন। তাই তাদের আগামী জাতীয় নির্বাচনের সময় ডিসি হিসেবে মাঠে রাখা ঠিক হবে না। একই সভায় একাধিক উপদেষ্টা বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনের সময় এক-এগারোর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় নিয়োগ পাওয়া ২৫ ও ২৭তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের ডিসি হিসেবে রাখলে ভালো হতে পারে।

তবে প্রশাসন সূত্র জানায়, ডিসি পদে পদায়নের ক্ষেত্রে দেরি হওয়ার মূল কারণ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের বিভিন্ন পক্ষের দেনদরবার ও চাপাচাপি। সেখানে বিএনপির পাশাপাশি জামায়াত ও নতুন দল এনসিপির অনুসারীরাও আছেন। মূলত তিন পক্ষের চাওয়ার সমন্বয় করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন কর্মকর্তারা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এ জন্য ২৫ ও ২৭তম ব্যাচের ১৭ কর্মকর্তাকে ডিসি পদে পদায়নের জন্য চূড়ান্ত করার পরও প্রজ্ঞাপন জারি করতে পারছে না জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। 

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ডিসি নিয়োগ নিয়ে নজিরবিহীন হট্টগোল হয় সচিবালয়ে। বঞ্চিত কর্মকর্তাদের তোপের মুখে ৯ ডিসির পদায়ন বাতিল করা হয়। রদবদল করা হয় চার জেলার ডিসিকে। ডিসি পদে পদায়ন করার পরও ২৪তম ব্যাচের পাঁচজন কর্মকর্তাকে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়নি। 

জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করা শর্তে একজন উপদেষ্টা সমকালকে বলেন, একটি রাজনৈতিক দলের পছন্দের ব্যক্তিদের দিয়ে সরকার পরিচালনা করা অনেক কঠিন। জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে হবে আমাদের; আর প্রশাসনে কাজ করবেন অন্যের পছন্দের কর্মকর্তারা– এটি স্বস্তিদায়ক নয়। 

সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সমকালকে বলেন, মাঠ প্রশাসনে কাজ করার অভিজ্ঞতা যাদের আছে, তারাই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করতে সক্ষম হবেন। তবে ডিসি হওয়ার জন্য ম্যাজিস্ট্রেসি, ভূমি প্রশাসন ও তথ্যপ্রযুক্তির জ্ঞান অবশ্যই থাকতে হবে। একই সঙ্গে ব্যক্তিত্ব, নেতৃত্ব ও পরিস্থিতি মোকাবিলার সক্ষমতা থাকতে হবে। 

ফিটলিস্ট প্রণয়ন কমিটির আগের সিদ্ধান্ত
গত ২৩ ডিসেম্বর ডিসি ফিটলিস্ট প্রণয়ন কমিটির প্রস্তুতিমূলক সভায় সিদ্ধান্ত হয়, এক দিন অন্তর সাক্ষাৎকার নিয়ে ৩০ জানুয়ারির মধ্যে এ কার্যক্রম শেষ করার। এ কার্যক্রম এক মাসের মধ্যে শেষ করার জন্য সম্ভাব্য সূচিও তৈরি করা হয়। প্রশাসন ক্যাডারের ২৫, ২৭ ও ২৮তম ব্যাচের যোগ্য কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে ডিসি নিয়োগের জন্য বাছাই করা হবে বলে সভায় ঠিক হয়। সেই কাজ সাড়ে পাঁচ মাস ধরে চলছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোখলেস উর রহমান সমকালকে বলেন, এবার বিতর্কহীন তালিকা তৈরির কাজ চলছে। নির্বাচনের আগে নিরপেক্ষ কর্মকর্তাদের ডিসি করা হবে। তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় দায়িত্ব পালন করা ডিসিদের বদলের জন্য সর্বশেষ তালিকা তৈরিতে সময় খুব কম পাওয়া গিয়েছিল। তাই ভালোভাবে তদন্ত প্রতিবেদন নেওয়া যায়নি। আগে সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছিল, এর পর তদন্ত প্রতিবেদন এসেছে। এ জন্য এখন সর্বশেষ তালিকার কিছু কর্মকর্তাকে ডিসি পদে পদায়ন না করে নতুন তালিকা করা হচ্ছে।

২৪তম ব্যাচ থেকে ডিসি হয়েছেন ৬১ জন
২০ থেকে ২৭তম– এই ছয়টি ব্যাচের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ডিসি হয়েছেন ২৪তম ব্যাচের কর্মকর্তারা। ২৪তম ব্যাচের ৩২২ কর্মকর্তার মধ্যে ডিসি হয়েছেন ৬১ জন। সবচেয়ে বেশি সময় ধরেও তারা ডিসি হিসেবে মাঠে রয়েছেন।

২০তম ব্যাচের ২৯৭ কর্মকর্তার মধ্যে ডিসি হয়েছেন ৪৫ জন, ২১তম ব্যাচের ১৮১ কর্মকর্তার মধ্যে ডিসি হয়েছেন ২৬ জন, ২২তম ব্যাচের ২৮২ কর্মকর্তার মধ্যে ডিসি হয়েছেন ৩৪ জন, ২৫তম ব্যাচের ১৯৫ কর্মকর্তার মধ্যে ডিসি হয়েছেন ৪৬ জন এবং ২৭তম ব্যাচের ২৭৭ কর্মকর্তার মধ্যে ডিসি হয়েছেন ৩৬ জন। তবে শতকরা হারে বেশি ডিসি হয়েছেন ২৫তম ব্যাচের কর্মকর্তারা। বর্তমানে ২৪তম বিসিএসের ২৬ জন, ২৫তম থেকে ২৫ জন ও ২৭তম ব্যাচের ১২ জন কর্মকর্তা ডিসি পদে কর্মরত আছেন। ২৬তম ব্যাচ ছিল বিশেষ বিসিএস।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের বিতর্কিত নির্বাচনে ডিসি হিসেবে যারা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেছেন– এমন ২২ কর্মকর্তাকে ফেব্রুয়ারিতে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। 

আবার ২০১৮ সালে রাতের ভোটের নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করা তৎকালীন ৪৩ ডিসিকে ওএসডি করা হয়েছে। একইভাবে যারা এসপির দায়িত্বে ছিলেন, তাদেরও বাধ্যতামূলক অবসর এবং ওএসডি করা হয়েছে। ফলে এবার নিরপেক্ষ ও সাহসী কর্মকর্তা খোঁজা হচ্ছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব য চ র কর মকর ত র কর মকর ত র ম কর মকর ত দ র ২৮তম ব য চ র ২৪তম ব য চ কর মকর ত ক উপদ ষ ট র জন য হয় ছ ন ব স এস হওয় র সরক র র সময়

এছাড়াও পড়ুন:

প্রথম হিজরতকারী ৫ নারী সাহাবি

নবুওয়তলাভের পঞ্চম বছর, নবীজি (সা.) দেখলেন শুধুমাত্র ইসলামগ্রহণের ‘অপরাধে’ নিজ গোত্রের আপন লোকেরাই সাহাবিগণের ওপর অমানবিক নির্যাতন শুরু করেছে। দিন যত যায়, জুলুম-নিপীড়ন আর অবমাননা বাড়তে থাকে। যারা সমাজে খুব সম্মানের সাথে চলাফেরা করতেন, তাদেরই এখন আড়ালে-আবডালে থাকতে হয়।

সাহাবিগণের এই ‘পরাধীনতা’ নবীজির (সা.) মনে খুব কষ্ট দিল। তিনি তাদের বললেন, ‘তোমরা আল্লাহর জমিনের কোথাও হিজরত করে চলে যাও, আল্লাহ শীঘ্রই তোমাদের একত্রিত করবেন। সাহাবিগণ আরজ করলেন, কোথায় যাব? তিনি হাবশার দিকে ইঙ্গিত করেন।’ (সীরাতুল মুস্তফা, ইদরীস কান্ধলবী, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ২১১-২১২, ইফাবা)

আরেক বর্ণনায় আছে, নবীজি (সা.) বলেন, ‘তোমরা হাবশায় চলে যাও, এটাই তোমাদের জন্য ভালো। কারণ সেখানে একজন ন্যায়পরায়ণ বাদশাহ আছেন, যার রাজত্বে কেউ জুলুমে শিকার হয় না। সেই দেশটা সত্য ও ন্যায়ের দেশ। আল্লাহ যতদিন পর্যন্ত তোমাদের জন্য এই জুলুম থেকে বাঁচার পরিবেশ না করে দেন, ততদিন পর্যন্ত তোমরা সেখানে থাকতে পারো। (সীরাতুন নবী, ইবনে হিশাম, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ২৮৪, ইফাবা)

এই নির্দেশ পেয়ে ৬১৫ খ্রিষ্টাব্দে, হিজরিপূর্ব ৭ সালের রজব মাসে সাহাবিগণ মক্কা ছেড়ে সমুদ্রপথে আফ্রিকার দিকে রওনা দেন, যা ইতিহাসের কিতাবে ‘হাবশায় প্রথম হিজরত’ নামে প্রসিদ্ধ।

তারা খ্রিষ্টান রাজা নাজ্জাশি শাসিত আকসুম রাজ্যে (বর্তমান ইথিওপিয়া ও ইরিত্রিয়া) গিয়ে নোঙর ফেলেন, এবং সেখানে বেশ নিরাপত্তার সঙ্গে তিন থেকে চারমাস বসবাস করেন। এরপর এমন একটা গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে মক্কার সবাই ইসলামগ্রহণ করে ফেলেছে, তাই তারা ফিরে আসেন।

আরও পড়ুনআবিসিনিয়ায় নারী সাহাবিদের দ্বিতীয় হিজরত১৪ নভেম্বর ২০২৫

সেই দুঃসাহসিক অভিযাত্রায় এগারোজন পুরুষের সাথে পাঁচজন নারী সাহাবিও ছিলেন, যাদের ত্যাগ ও কোরবানি পরবর্তীতে অন্য নারীদেরকেও ‘ধর্মপালনের স্বাধীনতার’ যুদ্ধে অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ করেছিল। আমরা এখানে সংক্ষেপে সেই পাঁচজন নারী সাহাবি সম্পর্কে জানব।

১. রুকাইয়া বিনতে মুহাম্মদ (রা.)

তাঁর জন্ম ৬০১ খ্রিষ্টাব্দে। তিনি ছিলেন নবীজির (সা.) দ্বিতীয় মেয়ে। আবু লাহাবের ছেলে উতবাহর সাথে তাঁর বিয়ের চুক্তি (আকদ) হয়েছিল। কিন্তু নবীজি (সা.) নবুওয়তপ্রাপ্তির ঘোষণা দিলে আবু লাহাব সেই আকদ ভেঙে দেয়। এরপর রুকাইয়ার (রা.) বিয়ে হয় হযরত ওসমান ইবনে আফফানের (রা.) সাথে। তিনি স্বামীর সাথে হাবশায় হিজরত করেছিলেন, এই সময় তার বয়স ছিল ১৫।

তারা যখন হিজরত করার উদ্দেশ্যে রওনা দেন, নবীজি (সা.) তাদের কোনো খোঁজখবর পাচ্ছিলেন না। তিনি প্রতিদিন তাদের খবর নিতে বের হতেন। একদিন জনৈক মহিলা জানান তারা হাবশায় পৌঁছেছেন, নবীজি (সা.) এ খবর শুনে মন্তব্য করেন, ‘হজরত লুতের (আ) পর ওসমানই (রা.) প্রথম ব্যক্তি যিনি সপরিবারে হিজরত করেছেন। (মাজমাউয যাওয়ায়েদ, হাদিস: ১৪৯৯৮) হযরত রুকাইয়া (রা.) ৬২৪ খ্রিষ্টাব্দে ইন্তেকাল করেন।

২. উম্মে সালামাহ হিন্দ বিনতে আবু উমাইয়া (রা.)

তাঁর জন্ম ৫৯৪ খ্রিষ্টাব্দে। তিনি ছিলেন নবীজির (সা.) ফুফাতো ভাই ও দুধভাই আবু সালামাহ আবদুল্লাহ ইবনে আবদুল আসাদের (রা.) স্ত্রী। স্বামীর সাথে তিনি হাবশায় হিজরত করেন, তখন তার বয়স ছিল ২১।

সে সময় তিনি সন্তানসম্ভাবা ছিলেন, হাবশায় তাদের প্রথম পুত্র সালামাহর জন্ম হয়। উহুদ যুদ্ধের পর আবু সালামাহ (রা.) শাহাদাতবরণ করলে নবীজির (সা.) সাথে উম্মে সালামাহর (রা.) বিয়ে হয়। তিনি ছিলেন খুবই সাহসী ও জ্ঞান অনুরাগী নারী। তার অনেক প্রশ্নের ওপর কোরআনের আয়াত নাজিল হয়েছিল।

জীবনের শেষদিকে তিনি একদম সবার আড়ালে চলে যান, এমনকি তার মৃত্যুর তারিখ সঠিকভাবে জানা যায় না।

আরও পড়ুনমদিনায় হিজরত: ইসলামের ৬টি মাইলফলক০২ জুলাই ২০২৫৩. উম্মে আবদুল্লাহ লায়লা বিনতে আবু হাসমা (রা.)

তিনি ছিলেন হজরত আমির বিন রবিয়াহর (রা.) স্ত্রী। হাবশার হিজরতের ঘটনা নিয়ে তিনি দুটো হাদিস বর্ণনা করেন। এর একটি হাদিস থেকে জানা যায় হিজরতের সময় এক মুসলিম অপর মুসলিমের কতটা আপন হয়ে উঠেছিল। উম্মে আবদুল্লাহ বলেন:

সাহাবিগণ যখন হাবশার উদ্দেশ্যে বের হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের ঘরে এলেন এবং বললেন, ‘মুসআব ইবনে উমাইরকে (রা.) তার মা আটকে রেখেছে। তিনি আজ রাতেই বের হতে চান। যখন সবাই ঘুমিয়ে পড়বে, তখন তিনি চলে আসবেন।’

আমার স্বামী, আমির ইবনে রবিয়াহ (রা.) বললেন, ‘আমরা তার জন্য অপেক্ষা করব, দরজা বন্ধ করব না।’

রাত গভীর হলে মুসআব (রা.) আমাদের কাছে এসে পৌঁছালেন। সেদিন রাতটা আমাদের সঙ্গেই কাটালেন। পরদিনও ছিলেন, তারপর রাতে চুপিসারে বেরিয়ে পড়লেন। আমরা তার সঙ্গে দেখা করার অঙ্গীকার করেছিলাম—তিনি সেই জায়গায় এসে মিলিত হলেন, আর আমরা একত্রে রওনা হলাম। আমরা সবাই পায়ে হেঁটে চলছিলাম, কেবল একটি উট ছিল, তাতে আমি ছিলাম।

মুসআবের (রা.) শরীর ছিল খুবই নাজুক, তিনি পায়ের তলায় মাটি সহ্য করতে পারছিলেন না। আমি দেখেছি, তিনি কদম ফেলছেন আর তার পা থেকে রক্ত ঝরছে। আমির (রা.) তা দেখে নিজের জুতা খুলে তাকে দিয়ে দিলেন।

শেষ পর্যন্ত আমরা জাহাজে পৌঁছালাম। সেখানে একটি জাহাজ পাওয়া গেল, যা সদ্য ভুট্টা বোঝাই করে মাওর থেকে ফিরেছে। আমরা ভাড়া করে তাতে উঠলাম—সাগর পেরিয়ে প্রথমে মাওর, তারপর মাওর থেকে হাবশা।

লায়লা (রা.) আরও বলেন, ‘আমি দেখেছি, আমির (রা.) মুসআবের (রা.) প্রতি এমন মায়া দেখাচ্ছিলেন, এতটা মায়া নিজের সন্তানের প্রতিও দেখান না। অথচ মুসআবের (রা.) কাছে কানাকড়িও ছিল না, আর আমাদের কাছে ছিল সবমিলিয়ে পনের দিনার।’ (জামিউস সুন্নাতি ওয়া শুরুহিহা, হাদিস: ৩০৬৭)

৪. সাহলা বিনতে সুহায়ল (রা.)

তিনি ছিলেন হযরত আবু হুযায়ফা ইবনে উতবার (রা.) স্ত্রী। হাবশায় হিজরতের সময় তিনিও সন্তানসম্ভাবা ছিলেন। সেখানে তাদের পুত্র মুহাম্মদ বিন আবু হুজায়ফার (রা.) জন্ম হয়।

৫. উম্মে কুলসুম বিনতে সুহায়ল (রা.)

তিনি ছিলেন নবীজির (সা.) ফুফাতো ভাই হযরত আবু সাবরাহ ইবনে আবু রাহমের (রা.) স্ত্রী। তার স্বামী হাবশায় দুই-দুইবার হিজরত করেছিলেন।

কিন্তু তিনি প্রথমবার স্বামীর সাথে ছিলেন কিনা এই বিষয়ে মতবিরোধ আছে। হাফিজ ইবনে সাইয়িদুন নাস ‘উয়ুনুল আসার’-এ প্রথম হিজরতকারীদের তালিকায় তার নাম উল্লেখ করেছেন। তবে ইবনে ইসহাক তাকে দ্বিতীয় হিজরতকারীদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেন। (কিতাবুল ইসাবাহ ফি তাময়িজিস সাহাবাহ, খণ্ড ৮, পৃষ্ঠা ৪৬২, মাকতাবায়ে শামেলা)

[email protected]

মওলবি আশরাফ: আলেম, লেখক ও অনুবাদক।

আরও পড়ুনমহানবী (সা.)–এর হিজরত কেন মদিনায় হলো?১০ আগস্ট ২০২৪

সম্পর্কিত নিবন্ধ