ভিটামিন ডি–স্বল্পতার যে ৫ লক্ষণ আপনার ত্বক ও পায়ে ফুটে ওঠে
Published: 30th, June 2025 GMT
ক্ষত শুকাতে দীর্ঘ সময়
ভিটামিন ডির ঘাটতি আছে, এমন ব্যক্তিদের শরীরের ক্ষত শুকাতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় লাগতে পারে। ভিটামিন ডি ত্বকের কোষগুলোর পুনরুৎপাদন ও ক্ষত সারানোর ক্ষেত্রে খুবই জরুরি।
গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব যৌগ ত্বকের নতুন কোষ সৃষ্টি করে, ভিটামিন ডি সেসব যৌগের উৎপাদন ত্বরান্বিত করে। ত্বকের কোথাও কেটে গেলে, ছড়ে গেলে কিংবা আঁচড় লাগলে ক্ষতস্থানটি যদি সহজে না শুকায় কিংবা খুব সহজেই ত্বকে সংক্রমণের সৃষ্টি হয়, তাহলে এসব মূলত শরীরে ভিটামিন ডির ঘাটতির লক্ষণ।
ত্বকে চুলকানিএমনও হতে পারে যে আপনার ত্বক চুলকাচ্ছে তো চুলকাচ্ছেই। ভেবে নিলেন নতুন কোনো স্ক্রিম বা লোশন ব্যবহারের কারণেই এ রকম হচ্ছে। তা না-ও হতে পারে। সব সময় ত্বক শুষ্ক হয়ে থাকা, ক্রমাগত ত্বক চুলকানো ইত্যাদি ভিটামিন ডির অভাবের লক্ষণ।
ভিটামিন ডি ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে, ত্বককে বাইরের ধুলাবালু থেকে রক্ষা করে। ভিটামিন ডির মাত্রা কমে গেলে ত্বক রুক্ষ্ম হয়ে যায়, ত্বক দেখতে লাগে মাছের আঁশের মতো, একজিমা–জাতীয় রোগে সহজে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। এ ছাড়া ত্বক নিজে থেকে সেরে ওঠার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। বিশেষ করে শরীরের যেসব স্থানের ত্বক পাতলা এবং যেসব স্থান সব সময় শুষ্ক হয়ে থাকে। তাই চুলকানি কয়েক দিন ধরে চলতে থাকে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
মলিন ত্বকভিটামিন ডির অভাবে ত্বক মলিন ও ফ্যাকাশে হয়ে যায়। স্বাভাবিক গায়ের রং ও ত্বকের সামগ্রিক সুস্থতা বজায় রাখার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন ডি খুবই জরুরি। ভিটামিন ডি মেলানিন উৎপন্ন করে, ত্বকের স্বাভাবিক রং ধরে রাখে, ত্বককে রাখে প্রাণবন্ত।
ত্বক মলিন হয়ে যাওয়ার লক্ষণটি সাধারণত খুবই সূক্ষ্মভাবে খেয়াল করলে চোখে পড়ে। বিশেষ করে যাঁরা সূর্যের আলোতে কম যান কিংবা যাঁদের গায়ের রং চাপা, তাঁদের ক্ষেত্রে এসব পরিবর্তন তুলনামূলকভাবে দ্রুত চোখে পড়ে।
আরও পড়ুনঅতিরিক্ত ভিটামিন ডি গ্রহণ করলে যে ক্ষতি হয়২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫পায়ে ব্যথাআপনার যদি সিঁড়ি বেয়ে কিংবা চেয়ার ছেড়ে উঠতে কষ্ট হয়, তাহলে আপনার রক্তে ভিটামিন ডির মাত্রা পরীক্ষা করানো উচিত। ভিটামিন ডির অভাব পায়ের বিভিন্ন সমস্যার মধ্য দিয়ে প্রকাশ পায়। যেমন পায়ের হাড়ে ব্যথা, পায়ের পেশি দুর্বল হয়ে যাওয়া। ভিটামিন ডির তীব্র ঘাটতি দেখা দিলে পা বেঁকে যাওয়া (শিশুদের ক্ষেত্রে রিকেটস), হাড়ের গঠন বিকৃত হয়ে যাওয়াও অন্যতম সমস্যা।
পেশি দুর্বল হয়ে যাওয়ার কারণে সিঁড়ি বেয়ে ওঠানামা ও চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ানো কষ্টকর হয়ে উঠতে পারে। পায়ের হাড়ে, বিশেষ করে পায়ের লম্বা হাড়ে চাপ অনুভূত হতে পারে।
আরও পড়ুনদিনের কোন সময়ের রোদে সবচেয়ে ভালো ভিটামিন ডি পাওয়া যায়১১ জুলাই ২০২৪অতিরিক্ত ঘামভিটামিন ডির ঘাটতির প্রাথমিক একটি লক্ষণ হলো অতিরিক্ত ঘাম। লক্ষণটি আমরা বেশির ভাগ সময় খেয়ালই করি না। বেশির ভাগ সময়ই আমরা মনে করি, ক্লান্তির কারণে ঘাম হচ্ছে। বিশেষ করে মাথা ও হাত অতিরিক্ত ঘেমে যাওয়া ভিটামিন ডির অন্যতম লক্ষণ। ঘর্মগ্রন্থিগুলোর কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণ করে বলে ভিটামিন ডির অভাবে ঘর্মগ্রন্থিগুলো ঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। এতে অতিরিক্ত ঘাম হয়। ঘাম হওয়া খুবই স্বাভাবিক; কিন্তু অতিরিক্ত ঘামতে থাকা, বিশেষ করে শীতের দিনেও ঘেমে যাওয়া স্বাভাবিক নয়। অন্যান্য লক্ষণের সঙ্গে অতিরিক্ত ঘামও হলে বিষয়টি ভিটামিন ডির ঘাটতি বলে আশঙ্কা করা যায়।
কী করবেনপ্রতিদিন সূর্যের আলো গায়ে মাখুন ও নিয়মিত ভিটামিন ডি–যুক্ত খাবার খান। তারপরও ভিটামিন ডির অভাবজনিত লক্ষণগুলো শরীরে দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
সূত্র: এমএসএন
আরও পড়ুনপর্যাপ্ত ভিটামিন ডি পেতে সপ্তাহে কত দিন ও কতক্ষণ গায়ে রোদ লাগাতে হবে০৯ নভেম্বর ২০২৪.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব শ ষ কর ত বক র আপন র
এছাড়াও পড়ুন:
প্রথম হিজরতকারী ৫ নারী সাহাবি
নবুওয়তলাভের পঞ্চম বছর, নবীজি (সা.) দেখলেন শুধুমাত্র ইসলামগ্রহণের ‘অপরাধে’ নিজ গোত্রের আপন লোকেরাই সাহাবিগণের ওপর অমানবিক নির্যাতন শুরু করেছে। দিন যত যায়, জুলুম-নিপীড়ন আর অবমাননা বাড়তে থাকে। যারা সমাজে খুব সম্মানের সাথে চলাফেরা করতেন, তাদেরই এখন আড়ালে-আবডালে থাকতে হয়।
সাহাবিগণের এই ‘পরাধীনতা’ নবীজির (সা.) মনে খুব কষ্ট দিল। তিনি তাদের বললেন, ‘তোমরা আল্লাহর জমিনের কোথাও হিজরত করে চলে যাও, আল্লাহ শীঘ্রই তোমাদের একত্রিত করবেন। সাহাবিগণ আরজ করলেন, কোথায় যাব? তিনি হাবশার দিকে ইঙ্গিত করেন।’ (সীরাতুল মুস্তফা, ইদরীস কান্ধলবী, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ২১১-২১২, ইফাবা)
আরেক বর্ণনায় আছে, নবীজি (সা.) বলেন, ‘তোমরা হাবশায় চলে যাও, এটাই তোমাদের জন্য ভালো। কারণ সেখানে একজন ন্যায়পরায়ণ বাদশাহ আছেন, যার রাজত্বে কেউ জুলুমে শিকার হয় না। সেই দেশটা সত্য ও ন্যায়ের দেশ। আল্লাহ যতদিন পর্যন্ত তোমাদের জন্য এই জুলুম থেকে বাঁচার পরিবেশ না করে দেন, ততদিন পর্যন্ত তোমরা সেখানে থাকতে পারো। (সীরাতুন নবী, ইবনে হিশাম, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ২৮৪, ইফাবা)
এই নির্দেশ পেয়ে ৬১৫ খ্রিষ্টাব্দে, হিজরিপূর্ব ৭ সালের রজব মাসে সাহাবিগণ মক্কা ছেড়ে সমুদ্রপথে আফ্রিকার দিকে রওনা দেন, যা ইতিহাসের কিতাবে ‘হাবশায় প্রথম হিজরত’ নামে প্রসিদ্ধ।
তারা খ্রিষ্টান রাজা নাজ্জাশি শাসিত আকসুম রাজ্যে (বর্তমান ইথিওপিয়া ও ইরিত্রিয়া) গিয়ে নোঙর ফেলেন, এবং সেখানে বেশ নিরাপত্তার সঙ্গে তিন থেকে চারমাস বসবাস করেন। এরপর এমন একটা গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে মক্কার সবাই ইসলামগ্রহণ করে ফেলেছে, তাই তারা ফিরে আসেন।
আরও পড়ুনআবিসিনিয়ায় নারী সাহাবিদের দ্বিতীয় হিজরত১৪ নভেম্বর ২০২৫সেই দুঃসাহসিক অভিযাত্রায় এগারোজন পুরুষের সাথে পাঁচজন নারী সাহাবিও ছিলেন, যাদের ত্যাগ ও কোরবানি পরবর্তীতে অন্য নারীদেরকেও ‘ধর্মপালনের স্বাধীনতার’ যুদ্ধে অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ করেছিল। আমরা এখানে সংক্ষেপে সেই পাঁচজন নারী সাহাবি সম্পর্কে জানব।
১. রুকাইয়া বিনতে মুহাম্মদ (রা.)তাঁর জন্ম ৬০১ খ্রিষ্টাব্দে। তিনি ছিলেন নবীজির (সা.) দ্বিতীয় মেয়ে। আবু লাহাবের ছেলে উতবাহর সাথে তাঁর বিয়ের চুক্তি (আকদ) হয়েছিল। কিন্তু নবীজি (সা.) নবুওয়তপ্রাপ্তির ঘোষণা দিলে আবু লাহাব সেই আকদ ভেঙে দেয়। এরপর রুকাইয়ার (রা.) বিয়ে হয় হযরত ওসমান ইবনে আফফানের (রা.) সাথে। তিনি স্বামীর সাথে হাবশায় হিজরত করেছিলেন, এই সময় তার বয়স ছিল ১৫।
তারা যখন হিজরত করার উদ্দেশ্যে রওনা দেন, নবীজি (সা.) তাদের কোনো খোঁজখবর পাচ্ছিলেন না। তিনি প্রতিদিন তাদের খবর নিতে বের হতেন। একদিন জনৈক মহিলা জানান তারা হাবশায় পৌঁছেছেন, নবীজি (সা.) এ খবর শুনে মন্তব্য করেন, ‘হজরত লুতের (আ) পর ওসমানই (রা.) প্রথম ব্যক্তি যিনি সপরিবারে হিজরত করেছেন। (মাজমাউয যাওয়ায়েদ, হাদিস: ১৪৯৯৮) হযরত রুকাইয়া (রা.) ৬২৪ খ্রিষ্টাব্দে ইন্তেকাল করেন।
২. উম্মে সালামাহ হিন্দ বিনতে আবু উমাইয়া (রা.)তাঁর জন্ম ৫৯৪ খ্রিষ্টাব্দে। তিনি ছিলেন নবীজির (সা.) ফুফাতো ভাই ও দুধভাই আবু সালামাহ আবদুল্লাহ ইবনে আবদুল আসাদের (রা.) স্ত্রী। স্বামীর সাথে তিনি হাবশায় হিজরত করেন, তখন তার বয়স ছিল ২১।
সে সময় তিনি সন্তানসম্ভাবা ছিলেন, হাবশায় তাদের প্রথম পুত্র সালামাহর জন্ম হয়। উহুদ যুদ্ধের পর আবু সালামাহ (রা.) শাহাদাতবরণ করলে নবীজির (সা.) সাথে উম্মে সালামাহর (রা.) বিয়ে হয়। তিনি ছিলেন খুবই সাহসী ও জ্ঞান অনুরাগী নারী। তার অনেক প্রশ্নের ওপর কোরআনের আয়াত নাজিল হয়েছিল।
জীবনের শেষদিকে তিনি একদম সবার আড়ালে চলে যান, এমনকি তার মৃত্যুর তারিখ সঠিকভাবে জানা যায় না।
আরও পড়ুনমদিনায় হিজরত: ইসলামের ৬টি মাইলফলক০২ জুলাই ২০২৫৩. উম্মে আবদুল্লাহ লায়লা বিনতে আবু হাসমা (রা.)তিনি ছিলেন হজরত আমির বিন রবিয়াহর (রা.) স্ত্রী। হাবশার হিজরতের ঘটনা নিয়ে তিনি দুটো হাদিস বর্ণনা করেন। এর একটি হাদিস থেকে জানা যায় হিজরতের সময় এক মুসলিম অপর মুসলিমের কতটা আপন হয়ে উঠেছিল। উম্মে আবদুল্লাহ বলেন:
সাহাবিগণ যখন হাবশার উদ্দেশ্যে বের হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের ঘরে এলেন এবং বললেন, ‘মুসআব ইবনে উমাইরকে (রা.) তার মা আটকে রেখেছে। তিনি আজ রাতেই বের হতে চান। যখন সবাই ঘুমিয়ে পড়বে, তখন তিনি চলে আসবেন।’
আমার স্বামী, আমির ইবনে রবিয়াহ (রা.) বললেন, ‘আমরা তার জন্য অপেক্ষা করব, দরজা বন্ধ করব না।’
রাত গভীর হলে মুসআব (রা.) আমাদের কাছে এসে পৌঁছালেন। সেদিন রাতটা আমাদের সঙ্গেই কাটালেন। পরদিনও ছিলেন, তারপর রাতে চুপিসারে বেরিয়ে পড়লেন। আমরা তার সঙ্গে দেখা করার অঙ্গীকার করেছিলাম—তিনি সেই জায়গায় এসে মিলিত হলেন, আর আমরা একত্রে রওনা হলাম। আমরা সবাই পায়ে হেঁটে চলছিলাম, কেবল একটি উট ছিল, তাতে আমি ছিলাম।
মুসআবের (রা.) শরীর ছিল খুবই নাজুক, তিনি পায়ের তলায় মাটি সহ্য করতে পারছিলেন না। আমি দেখেছি, তিনি কদম ফেলছেন আর তার পা থেকে রক্ত ঝরছে। আমির (রা.) তা দেখে নিজের জুতা খুলে তাকে দিয়ে দিলেন।
শেষ পর্যন্ত আমরা জাহাজে পৌঁছালাম। সেখানে একটি জাহাজ পাওয়া গেল, যা সদ্য ভুট্টা বোঝাই করে মাওর থেকে ফিরেছে। আমরা ভাড়া করে তাতে উঠলাম—সাগর পেরিয়ে প্রথমে মাওর, তারপর মাওর থেকে হাবশা।
লায়লা (রা.) আরও বলেন, ‘আমি দেখেছি, আমির (রা.) মুসআবের (রা.) প্রতি এমন মায়া দেখাচ্ছিলেন, এতটা মায়া নিজের সন্তানের প্রতিও দেখান না। অথচ মুসআবের (রা.) কাছে কানাকড়িও ছিল না, আর আমাদের কাছে ছিল সবমিলিয়ে পনের দিনার।’ (জামিউস সুন্নাতি ওয়া শুরুহিহা, হাদিস: ৩০৬৭)
৪. সাহলা বিনতে সুহায়ল (রা.)তিনি ছিলেন হযরত আবু হুযায়ফা ইবনে উতবার (রা.) স্ত্রী। হাবশায় হিজরতের সময় তিনিও সন্তানসম্ভাবা ছিলেন। সেখানে তাদের পুত্র মুহাম্মদ বিন আবু হুজায়ফার (রা.) জন্ম হয়।
৫. উম্মে কুলসুম বিনতে সুহায়ল (রা.)তিনি ছিলেন নবীজির (সা.) ফুফাতো ভাই হযরত আবু সাবরাহ ইবনে আবু রাহমের (রা.) স্ত্রী। তার স্বামী হাবশায় দুই-দুইবার হিজরত করেছিলেন।
কিন্তু তিনি প্রথমবার স্বামীর সাথে ছিলেন কিনা এই বিষয়ে মতবিরোধ আছে। হাফিজ ইবনে সাইয়িদুন নাস ‘উয়ুনুল আসার’-এ প্রথম হিজরতকারীদের তালিকায় তার নাম উল্লেখ করেছেন। তবে ইবনে ইসহাক তাকে দ্বিতীয় হিজরতকারীদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেন। (কিতাবুল ইসাবাহ ফি তাময়িজিস সাহাবাহ, খণ্ড ৮, পৃষ্ঠা ৪৬২, মাকতাবায়ে শামেলা)
[email protected]
মওলবি আশরাফ: আলেম, লেখক ও অনুবাদক।
আরও পড়ুনমহানবী (সা.)–এর হিজরত কেন মদিনায় হলো?১০ আগস্ট ২০২৪