জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মরণে ৩ দাবি ও কর্মসূচি ঘোষণা করেছে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা)। সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি ও কর্মসূচির কথা জানান জাগপার সহ-সভাপতি ও দলীয় মুখপাত্র রাশেদ প্রধান।

জাগপার সহ-সভাপতি ও দলীয় মুখপাত্র রাশেদ প্রধান বলেন, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়তে নির্বাচন যেমন প্রয়োজন, তেমনি পূর্ববর্তী সব গণহত্যার বিচারও অপরিহার্য। অথচ আমরা ক্রমাগত ভুলে যাচ্ছি পিলখানা, শাপলা চত্বর, মোদী বিরোধী আন্দোলন এবং লগি-বৈঠাসহ অসংখ্য রক্তক্ষয়ী ঘটনার কথা।

জাগপা নেতারা এ সময় দাবি করেন, বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকার শুধু গণতন্ত্র ও মানবাধিকারেরই নয়, জাতীয় সার্বভৌমত্বেরও পরিপন্থি।

রাশেদ প্রধান বলেন, শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নন, তিনি ভারতীয় আধিপত্যবাদের প্রতিনিধি হয়ে উঠেছেন।

তিনি আরও বলেন, সীমান্তে হত্যা, পানির ন্যায্য হিস্যা না দেওয়া, নির্বাচনে হস্তক্ষেপ এবং শেখ হাসিনাকে এক বছর ধরে দিল্লিতে আশ্রয় দেওয়ার মাধ্যমে ভারত তাদের আগ্রাসী অবস্থান স্পষ্ট করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে জাগপা তিন দফা দাবি পেশ করে। সেগুলো হলো-

১.

গণহত্যাকারী শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়াসহ সীমান্ত হত্যা, ভূমি দখল, পানির বণ্টনে বৈষম্য ও নির্বাচনে হস্তক্ষেপ ইত্যাদি ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে হবে।

২. জুলাই, পিলখানা, শাপলা চত্বর, মোদী বিরোধী আন্দোলন এবং লগি-বৈঠা গণহত্যার জন্য শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।

৩. গুম, খুন, হামলা, মামলা, অর্থপাচার ও লুটপাটে জড়িত সন্ত্রাসী সংগঠন আওয়ামী লীগ-এর বিচার করতে হবে।

এছাড়া জুলাইয়ে যেসব কর্মসূচি ঘোষণা করেছে দলটি-

১ জুলাই: জুলাই শহীদদের স্মরণে দেশব্যাপী দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।

২ জুলাই-৩০ জুলাই: ভারতীয় আগ্রাসন, গণহত্যা এবং ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে ৮ বিভাগীয় শহর এবং ২০ সাংগঠনিক জেলায় গণসংযোগ, লিফলেট বিতরণ ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি।

৩১ জুলাই: আহতদের স্মরণে দোয়া মাহফিল।

৫ আগস্ট: বাংলাদেশের নাজাত দিবস পালন এবং শোকরানা নামাজ।

৬ আগস্ট: গণহত্যাকারী শেখ হাসিনাকে ভারতে আশ্রয় দেওয়ার প্রতিবাদে ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশন ঘেরাও কর্মসূচি।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, আমরা সংস্কার চাই, ভারতীয় প্রভাবমুক্ত একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চাই। কিন্তু তার আগে চাই ন্যায়বিচার ও জাতীয় মুক্তি।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গণহত য স মরণ

এছাড়াও পড়ুন:

নতুন কুঁড়ির শিশুশিল্পীরা বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে খ্যাতি অর্জ

তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম বলেছেন, “নতুন কুঁড়ি প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিশুশিল্পীরা পরিশ্রমের মাধ্যমে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে খ্যাতি অর্জন করবে।”

শনিবার ঢাকার রামপুরায় বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) অডিটোরিয়ামে ‘নতুন কুঁড়ি ২০২৫’ প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিশু-কিশোরদের পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।

নতুন কুঁড়ি প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিশু-কিশোরদের অভিনন্দন জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, “দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম হিসেবে নতুন কুঁড়ির শিশু শিল্পীদের সংস্কৃতিচর্চা চালিয়ে যেতে হবে। একইসঙ্গে অন্যান্য বিষয়েও শিশু শিল্পীদের প্রতিভা বিকশিত করতে হবে।”

শিশু-কিশোরদের প্রতিভা বিকাশে অভিভাবক ও শিক্ষকদের ভূমিকা তুলে ধরে তিনি বলেন, “নতুন কুঁড়ি প্রতিযোগিতায় শিশু শিল্পীরা যে সাফল্য দেখিয়েছে, তার মূলে রয়েছে অভিভাবক ও শিক্ষকদের অবদান।” 

তিনি প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিশু শিল্পীদের অভিভাবক ও শিক্ষকদের অভিনন্দন জানান।

শিশু-কিশোরদের উদ্দেশে উপদেষ্টা বলেন, “তোমরা অনেকেই জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সাক্ষী হয়েছ। গণঅভ্যুত্থানে শহীদ অনেকেই হয়তো তোমাদের পরিচিত। গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতরা যে বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেই স্বপ্নের পথে হাঁটার জন্য আমরা এই আয়োজনটা (নতুন কুঁড়ি) করেছি।”

২০ বছর পর নতুন কুঁড়ি প্রতিযোগিতা শুরুর প্রেক্ষাপট তুলে ধরে তিনি বলেন, “গত জুলাই মাসে এই প্রতিযোগিতা চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়। দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে বিজয়ী শিশুশিল্পীদের পুরস্কার প্রদানের মাধ্যমে এই প্রতিযোগিতা আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হলো।”

নতুন কুঁড়ি প্রতিযোগিতা সফলভাবে আয়োজনের জন্য তিনি বিটিভির মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান।

মাহফুজ আলম বলেন, “নতুন কুঁড়ি প্রতিযোগিতার মাধ্যমে একটা আশার সঞ্চার হয়েছে যে, বাংলাদেশের সংস্কৃতি টিকে থাকবে এবং সারা দুনিয়ায় মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে।”

তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, “আগামী সরকারও নতুন কুঁড়ি প্রতিযোগিতার ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে।”

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবা ফারজানা বলেন, “নতুন কুঁড়ি প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিশু শিল্পীরা শিল্প-সাহিত্য অঙ্গনে নেতৃত্ব দেবে। এই শিশু শিল্পীরা বাংলাদেশের শিল্প-সাহিত্যকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবে।”

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তৃতায় বিটিভির মহাপরিচালক মো. মাহবুবুল আলম বলেন, “তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টার প্রত্যক্ষ নির্দেশনা ও আন্তরিক পদক্ষেপের কারণে মাত্র দেড় মাসের মধ্যে নতুন কুঁড়ি প্রতিযোগিতা সম্পন্ন হয়েছে।”

প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিশুশিল্পীদের নিয়ে বিটিভির পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “নতুন কুঁড়ি প্রতিযোগিতার সব শাখার সেরা দশ জন সরাসরি বিটিভির শিল্পী তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবে। এছাড়া বিটিভি আয়োজিত ‘শিশুপ্রহর’ অনুষ্ঠানে শুধু নতুন কুঁড়ির সেরা দশের শিল্পীরা অংশগ্রহণ করবে। অনুষ্ঠানটি প্রতি শুক্রবার প্রচারিত হবে।”

বাংলাদেশ টেলিভিশন আয়োজিত পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে ‘নতুন কুঁড়ি ২০২৫’ প্রতিযোগিতায় ‘ক’ ও ‘খ’ বিভাগের প্রতি বিষয়ে ১ম, ২য় ও ৩য় স্থান অর্জনকারী মোট ৭৩ জন শিশুশিল্পী পুরস্কৃত হয়। 

পুরস্কারপ্রাপ্ত শিশুশিল্পীরা হলো
‘ক’ বিভাগ :
অভিনয়ে ১ম আরহাম হাসান আরিয়ান; ২য় রুফাইদা আফরা; ৩য় মুগ্ধতা মল্লিক। আধুনিক গানে ১ম প্রিয়সী চক্রবর্তী; ২য় স্মিতা বাড়ই; ৩য় শেখ রোদসী রায়ান। আবৃত্তিতে ১ম আরিশা দানীন মাহা; ২য় মো. ইছা আল মাহিম; ৩য় নাভীদ হাসান। উচ্চাঙ্গ নৃত্যে ১ম মোছা. আদৃতা তাসনিম লাবণ্য; ২য় শৌনক কুন্ডু; ৩য় আর্যশ্রী বিশ্বাস পৃথা। কৌতুকে ১ম সাবিক সাদত; ২য় জেরাল্ড বিশ্বাস; ৩য় মাহিরা। গল্প বলায় ১ম রোহিনী হাসান হৃদ্ধি; ২য় আয়েশা সিদ্দিকা; ৩য় নুসরাত তাসনিম। দেশাত্মবোধক গানে ১ম অংকিতা সরকার; ২য় মো. ইহানুর রহমান; ৩য় তোজো মণ্ডল। নজরুল সংগীতে ১ম অরিত্রা বসাক; ২য় শ্রেয়া রায়; ৩য় অংকিতা সরকার। রবীন্দ্রসংগীতে ১ম প্রিয়সী চক্রবর্তী; ২য় আরিশা দানীন মাহা; ৩য় শুভশ্রী সরকার। লোকসংগীতে ১ম চিশতি রহমতুল্লাহ সাফীন মন্ডল; ২য় আইয়ান রেজা; ৩য় মো. ইহানুর রহমান। সাধারণ নৃত্যে ১ম ঐশ্বর্য্য জিতা স্পর্শ; ২য় নাজিফা হোসেন (স্বাধিকা); ৩য় দীপশিখা দে। হামদ-নাতে ১ম সুরাইয়া আক্তার; ২য় তাসবিহা আয়ান তানহা; ৩য় শুহাদা।

খ বিভাগ:
অভিনয়ে ১ম হুমায়রা আসিফা; ২য় মাহিমা জামান কথা; ৩য় মুরাদুস সালিহীন। আধুনিক গানে ১ম রোদসী নূর সিদ্দিকী; ২য় তুষ্মি দাস; ৩য় শ্রীতমা রায়। আবৃত্তিতে ১ম সাবিলা সুলতান বাণী; ২য় আফিয়া সাইয়ারা ত্বাহা; ৩য় নাহিনা বিনতে জামান। উচ্চাঙ্গ নৃত্যে ১ম মৃনময়া পাল ও তুলি মল্লিক (যৌথভাবে); ২য় তনুশ্রী মন্ডল; ৩য় কায়নাত বিনতে মোর্শেদ রাই। কৌতুকে ১ম দিশান রায় দুর্জয়; ২য় এহসানুল হক; ৩য় তাসফিয়া মুনতাহা। গল্প বলায় ১ম ফাইরুজ বারী মালিহা; ২য় সমহৃদ্ধি সূচনা স্বর্গ; ৩য় মাহিমা জামান কথা। দেশাত্মবোধক গানে ১ম শ্রেয়া সাহা; ২য় শ্রদ্ধা কর্মকার; ৩য় অন্বেষা বর্মন।

নজরুল সংগীতে ১ম আজমাইন আরহাম; ২য় শুভমিতা তালুকদার; ৩য় অন্বেষা বর্মন। রবীন্দ্র সংগীতে ১ম শুভমিতা তালুকদার; ২য় শ্রীতমা রায়; ৩য় অন্বেষা বর্মন। লোক সংগীতে ১ম কুমারী রিয়া ব্যাধ; ২য় মো. বাইজিদ আহমেদ; ৩য় তানিশা ইসলাম হিয়া। সাধারণ নৃত্যে ১ম রাওজা করিম রোজা; ২য় রাধিকা তাছাল্লুম রিয়ন্তি; ৩য় ইউশা শাহিরা আনুভা। হামদ-নাতে ১ম আহনাফ আদিল; ২য় তাসনিম জাহান; ৩য় রোদসী নূর সিদ্দিকী।

অনুষ্ঠানে ১ম স্থান অর্জনকারীকে ২ লাখ টাকা, ২য় স্থান অর্জনকারীকে ১ লাখ টাকা এবং ৩য় স্থান অর্জনকারীকে ৫০ হাজার টাকার চেকসহ ট্রফি ও সনদ প্রদান করা হয়।

নতুন কুঁড়ি প্রতিযোগিতার ‘ক’ বিভাগের চ্যাম্পিয়ন প্রিয়সী চক্রবর্তী এবং ‘খ’ বিভাগের চ্যাম্পিয়ন শুভমিতা তালুকদার গত ১৩ নভেম্বর প্রধান উপদেষ্টার কাছ থেকে ৩ লাখ টাকার চেক ও ট্রফি গ্রহণ করে।

ঢাকা/আসাদ/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মৃত্যুদণ্ড শেখ হাসিনার উপযুক্ত বিচার: আখতার হোসেন
  • শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডে সন্তুষ্ট আইন উপদেষ্টা 
  • এবারের নির্বাচনের মাধ্যমে জাতি নবজন্ম লাভ করবে: প্রধান উপদেষ্টা
  • হৃদয় থেকে বলছি, শেখ হাসিনা খালাস পেলে খুশি হব: রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী
  • রায় শুনতে ট্রাইব্যুনালে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত যোদ্ধারা 
  • ঢাকায় বড় পর্দায় দেখা যাবে শেখ হাসিনার মামলার রায়
  • শেখ হাসিনার মামলার রায়: ন্যায়বিচার ও স্বচ্ছতার দাবি ফখরুলের
  • বেওয়ারিশ জুলাই শহীদদের শনাক্তে আসছে বিদেশি ফরেনসিক টিম
  • নতুন কুঁড়ির শিশুশিল্পীরা বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে খ্যাতি অর্জ