কয়েকদিনের অচলাবস্থার পর গতকাল সোমবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরেছে। এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ডাকে  ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি প্রত্যাহার হচ্ছে খবর পেয়ে রোববার বিকেলেই বিভিন্ন বন্দরে কাস্টমস কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। গতকাল সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবিআরের প্রধান কার্যালয়সহ এর অধীন দেশের সব কর কার্যালয় এবং বন্দর, কাস্টমস ও শুল্ক ষ্টেশনে  কর্মকর্তা-কর্মচারীরা স্বাভাবিক সময়ে কাজে যোগ দেন।

এদিকে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান জানান, কাস্টম হাউসগুলো রোববার বিকেল থেকে স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু করে। সোমবার সকালেই সব দপ্তরে কাজ শুরু হয়েছে। এর ফলে ব্যবসায়ী ও নীতিনির্ধারকসহ সবার মধ্যে স্বস্তি বিরাজ করছে। তিনি আশা করেন, ভবিষ্যতে এনবিআরকে আর এ ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে না। 
এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে এনবিআরে যৌক্তিক সংস্কার ও এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবিতে সংস্থাটির কর্মকর্তারা প্রায় দুই মাস আন্দোলন করেছেন। এতে রাজস্ব আদায় কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়ে। গত শনিবার থেকে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’-এর পাশাপাশি ‘মার্চ টু ঢাকা’ ঘোষণার পর কাস্টমসসহ পুরো এনবিআরের কার্যক্রম স্থগিত হলে বিভিন্ন বন্দরে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। পরে সরকারের কঠোর অবস্থান ঘোষণা এবং ব্যবসায়ী নেতাদের মধ্যস্থতার কারণে আন্দোলন কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয়। 
এনবিআর চেয়ারম্যান জানান, গত প্রায় দুই মাসের আন্দোলনে রাজস্ব আদায় ব্যাহত হলেও আগের অর্থবছরের তুলনায় সমাপ্ত অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ে কিছুটা হলেও প্রবৃদ্ধি থাকবে। তিনি জানান, গতকাল ১০টা পর্যন্ত ৩ লাখ ৬০ হাজার ৯২২ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয়। সকালে এ তথ্য জানানোর সময় তিনি আশা প্রকাশ করেন, সোমবার ভালো অঙ্কের রাজস্ব সরকারের কোষাগারে জমা হবে। সরকারি বিলগুলো সমন্বয় হলে আগের অর্থবছরের চেয়ে রাজস্ব আয় বেশি হবে।

সচল সব বন্দর
‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি প্রত্যাহারের পর দেশের প্রধান দুই সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম ও মোংলায় স্বাভাবিক কার্যক্রম পুরোদমে সচল হয়েছে। পাশাপাশি বেনাপোলসহ সব স্থলবন্দরেও আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। রোববার রাতেই চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে রপ্তানি চালানের শুল্কায়ন শুরু হয়। এর পর সোমবার সকাল থেকে আমদানি পণ্যের শুল্কায়নসহ বিল অব এন্ট্রি, বিল অব এক্সপোর্ট, শুল্ক পরিশোধ, পরীক্ষণ, ডেলিভারিসহ সব ধরনের কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে চলছে।
চট্টগ্রাম বন্দর সচিব মো.

ওমর ফারুক জানান,  সব কার্যক্রম স্বাভাবিক হয়েছে। রপ্তানি পণ্য নিয়ে চারটি জাহাজ ইতোমধ্যে বন্দর ত্যাগ করেছে। সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এসএম সাইফুল আলম জানান, সোমবার সকাল থেকে আমদানি শুল্কায়নও পুরোদমে শুরু হয়েছে। বিকডার মহাসচিব মোহাম্মদ রুহুল আমিন সিকদার জানান, সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ১ হাজার ৯১৫টি রপ্তানি কনটেইনার জাহাজীকরণের জন্য পাঠানো হয়েছে।
বেনাপোল প্রতিনিধি জানিয়েছেন, দু’দিনের কর্মবিরতিতে স্থবির হওয়া বেনাপোল স্থলবন্দরে সোমবার সকাল থেকে আমদানি-রপ্তানি ফের শুরু হয়েছে। কাস্টমস অফিসে শুল্কায়ন, পরীক্ষণ ও ডেলিভারির কাজ নিয়ে কর্মকর্তারা হিমশিম খাচ্ছেন। বেনাপোল আমদানি রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি আলহাজ মহসিন মিলন বলেন, প্রায় দুই হাজার পণ্যবাহী ট্রাক বন্দরে প্রবেশের অপেক্ষায় আছে। 
মোংলা কাস্টমস হাউসের কমিশনার ম. সফিউজ্জামান জানান, গত কয়েকদিনে কাস্টমসের লোকসান হয়নি, কারণ জাহাজ ছিল না।  সকাল থেকে পণ্য ছাড় হচ্ছে। বন্দর কর্তৃপক্ষের উপপরিচালক মো. মাকরুজ্জামান বলেন, আন্দোলনের সময়ও বন্দরের কার্যক্রম স্বাভাবিক ছিল। এখন ব্যবহারকারীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: এনব আর কর মকর ত ক স টমস আমদ ন

এছাড়াও পড়ুন:

সাগর থেকে মাছ আহরণ বাংলাদেশের কমছে, ভারত-মিয়ানমারে বাড়ছে

বঙ্গোপসাগর থেকে গত তিন বছর বাংলাদেশের মাছ আহরণ ধারাবাহিকভাবে কমছে। ব্যাপকভাবে কমেছে সামুদ্রিক ইলিশ, কাঁকড়া ও চিংড়ি আহরণ। সাগর থেকে মাছ ধরার পরিমাণ কমতে থাকায় সার্বিকভাবে দেশের মাছের জোগানের গতিও কমে গেছে। যদিও ভিন্ন চিত্র প্রতিবেশী দেশগুলোর। বছর বছর সাগর থেকে মাছ ধরা বাড়িয়ে মাছ আহরণে বিশ্বের শীর্ষ দশ দেশের মধ্যে স্থান করে নিয়েছে ভারত। এমনকি গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত মিয়ানমারেও প্রতিবছর বাড়ছে সামুদ্রিক মাছ আহরণ।

সাগর থেকে বাংলাদেশের মাছ আহরণ কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সাগরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও ঘূর্ণিঝড়কে দায়ী করছেন এ দেশের মৎস্য কর্মকর্তারা। তা ছাড়া অতিরিক্ত মাছ আহরণের কারণেও মাছের মজুত কমে আসছে বলে জানান তাঁরা।

মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে মোট সামুদ্রিক মাছ আহরণের পরিমাণ ছিল ৭ লাখ ৬ হাজার টন। পরের অর্থবছরে তা কমে দাঁড়ায় ৬ লাখ ৭৯ হাজার টনে। সর্বশেষ গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা আরও কমে দাঁড়ায় ৬ লাখ ২৮ হাজার টনে। অর্থাৎ ২০২২–২৩ অর্থবছরের চেয়ে ২০২৩–২৪ অর্থবছরে সাগর থেকে মাছ আহরণ প্রায় সাড়ে ৭ শতাংশ কমেছে। গত জুনে শেষ হওয়া ২০২৪–২৫ অর্থবছরে এই পরিমাণ আরও কমেছে বলে জানিয়েছেন মৎস্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তবে এখনো অনুষ্ঠানিকভাবে গত অর্থবছরের তথ্য প্রকাশ করেনি সংস্থাটি।

সমুদ্র খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেশ কয়েক বছর ধরে সাগরে অতিরিক্ত মাছ আহরণের কারণে মাছের মজুত কমে গেছে। এ বিষয়ে মৎস্য অধিদপ্তরের সামুদ্রিক শাখার সহকারী পরিচালক মো. আবদুল্লাহ আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, ২০ বছর আগেও সাগরে বাণিজ্যিক ট্রলারের সংখ্যা ছিল এক শর কম। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬৫টিতে। তিনি জানান, সাগরের ৪০ মিটারের ভেতরে মাছ না ধরার কথা থাকলেও এসব নৌযান তা মানছে না। আবার ছোট নৌযানের সংখ্যা এখন ২৯ হাজার ছাড়িয়েছে। এসব নৌযানেও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে, যা তাদের ব্যবহার করার কথা নয়। পাশাপাশি অবৈধ জালও ব্যবহার করা হচ্ছে। এমনকি উপকূলের ৫ থেকে ১০ মিটারের মধ্যে মাছ ধরা হচ্ছে। এতে ডিম থেকে নতুন পোনা তৈরির সুযোগ নষ্ট হচ্ছে।

বিশ্বে সমুদ্র থেকে মাছ আহরণে নেতৃত্ব দিচ্ছে চীন। এ ছাড়া শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে ভারত ৬ষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে। ভারতের মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১–২২ সালে সাগর থেকে দেশটির মাছ আহরণের পরিমাণ ছিল ৪১ লাখ ২৭ হাজার টন, যা আগের বছরের তুলনায় ১৮ শতাংশ বেশি। সর্বশেষ ২০২৩–২৪ অর্থবছরে ৪৪ লাখ ৯৫ হাজার টন মাছ আহরণ করেছে ভারত।

মিয়ানমারের মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে ২০২০-২১ সালে সাগর থেকে মাছ আহরণের পরিমাণ ছিল ৩২ লাখ ৯৫ হাজার। সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই পরিমাণ আরও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৪ লাখ ১৪ হাজার টনে। অর্থাৎ গৃহযুদ্ধের মধ্যেও দেশটির সাগর থেকে মাছ আহরণ বাড়ছে।

এদিকে বাংলাদেশে সাগরে সবচেয়ে বেশি আহরণ কমছে ইলিশ ও চিংড়ির। মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩–২৪ অর্থবছরে সাগর থেকে ইলিশ আহরণ তার আগের অর্থবছরের চেয়ে প্রায় সাড়ে ৬ শতাংশ কমেছে। আর চিংড়ির আহরণ কমেছে প্রায় ৪৪ শতাংশ। কাঁকড়া আহরণও কমেছে ১৬ শতাংশের বেশি।

সাগর থেকে মাছ আহরণ কমে যাওয়া এবং এ বিষয়ে করণীয় প্রসঙ্গে সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্পের উপপরিচালক মোহাম্মদ শরিফুল আজম প্রথম আলোকে বলেন, ‘২০১৯ সাল থেকেই চিংড়ি আহরণ কমে যাওয়ার তথ্য পাচ্ছিলাম। তাই সামুদ্রিক মৎস্য বিধিমালায় চিংড়ি ধরার ট্রলারের লাইসেন্স আর না বাড়ানোর নীতি গ্রহণ করি। ২০২৮ সাল পর্যন্ত এসব ট্রলাররের লাইসেন্স নবায়ন করা হবে না।’

সাগর থেকে মাছ আহরণ বাড়াতে হলে বঙ্গোপসাগরের নিয়ন্ত্রণহীন মৎস্য আহরণকে নজরদারির মধ্যে আনার কথা বলছেন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। মৎস্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. জিয়া হায়দার চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, পরীক্ষামূলকভাবে পাঁচটি ট্রলারে স্যাটেলাইট ট্রেকার বসিয়ে নজরদারি করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে সব ট্রলার ডিজিটাল নজরদারির আওতায় আনার পরামর্শ তাঁর।

এদিকে মাছ আহরণ কমতে থাকায় সাগরের ওপর নির্ভরশীল জেলেরাও বিপাকে পড়ছেন। ঋণের দাদনের টাকা শোধ করে লাভের অঙ্ক মিলছে না তাঁদের। কক্সবাজারে পাঁচ হাজারের বেশি মাছ ধরার কাঠের নৌযান আছে। এসব নৌকায় এখন মাছ ধরা পড়ছে কম। কক্সবাজার ফিশিংবোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. দেলোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, টানা ছয় থেকে সাত মাস তেমন মাছ ধরা পড়ছে না। কয়েক বছর ধরেই মাছ কম পাওয়া যাচ্ছে। এক সপ্তাহের জন্য সাগরে গেলে দুই থেকে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। কিন্তু মাছ কম পাওয়ায় দাদন পরিশোধ করাই এখন কষ্টকর হয়ে গেছে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে মৎস্য অধিদপ্তরের ব্লু ইকোনমি সেলের পরিচালক মো. সাজদার রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সাগরে এখন ঘন ঘন ঘূর্ণিঝড় হচ্ছে। সাগরের তাপমাত্রাও বেড়ে গেছে। তা ছাড়া জেলিফিশের প্রকোপ বেড়েছে। আর অতিরিক্ত মৎস্য আহরণের কারণে মাছের মজুত কমছে। তাই মাছ আহরণ আরও কমিয়ে আনতে হবে।

এ বিষয়ে গত মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী জেলে সমিতির এক সভায় গণমাধ্যমে সঙ্গে কথা বলেন অন্তর্বর্তী সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। তিনি বলেন, ‘ভারতের জেলেরা যাতে বাংলাদেশে এসে মাছ ধরতে না পারেন, সেটা আমাদের বন্ধ করতে হবে।’

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে সারা বিশ্বে সাগর থেকে ৭ কোটি ৯৭ লাখ টন মাছ ধরা হয়। যার মধ্যে অর্ধেক মাছ আহরণ করেছে এশিয়ার দেশগুলো। ওই বছর বিশ্বের মোট সামুদ্রিক মাছের ১৪ দশমিক ৮ শতাংশই আহরণ করেছিল চীন, যার পরিমাণ ১ কোটি ১৮ লাখ ১৯ হাজার টন। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ইন্দোনেশিয়া ওই বছর আহরণ করেছে ৬৮ লাখ ৪৩ হাজার টন মাছ। আর ভারত আহরণ করেছে ৩৫ লাখ ৯৭ হাজার টন। যেখানে বাংলাদেশের হিস্যা ছিল বৈশ্বিক মাছ আহরণের মাত্র শূন্য দশমিক ৯ শতাংশ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ওয়েস্টিন ও শেরাটনের ব্যবসা বেড়েছে 
  • নভেম্বরের ১৫ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে সাড়ে ১৮ হাজার কোটি টাকা 
  • সরবরাহ বাড়ছে শীতের আগাম ফুলকপি ও বাঁধাকপির, কমছে দাম
  • সামিট অ্যালায়েন্স পোর্টের ব্যবসা বেড়ে তিন গুণ
  • তিন মাসে ওয়ালটনের মুনাফা ২২১ কোটি টাকা
  • সাগর থেকে মাছ আহরণ বাংলাদেশের কমছে, ভারত-মিয়ানমারে বাড়ছে