প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেছেন, “যদি প্রকৃত গণতন্ত্র নিশ্চিত হয়, তাহলেই বৈষম্য নিরসন হয়।”

মঙ্গলবার (১ জুলাই) রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আলোচনা সভা ও প্রার্থনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

উপদেষ্টা বলেন, “রাষ্ট্র কখনো তার নাগরিককে বিভিন্ন ক্যাটেগরিতে ভাগ করে তাদের অধিকারকে আলাদা করে না। একটি আধুনিক রাষ্ট্রের চোখে প্রতিটি নাগরিক সমান, গণতন্ত্রেরও মূল কথা সেটাই।”

আরো পড়ুন:

জাবির গণিত বিভাগের ভবন নির্মাণ কাজ দ্রুত শুরুর দাবি শিক্ষার্থীদের

খুবিতে নবীনদের বরণে ব্যতিক্রমধর্মী আয়োজন

উপদেষ্টা আরো বলেন, “জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদরা যে কারণে আত্মত্যাগ করেছিলেন, আমাদের সেই স্পিরিট ধারণ করতে হবে। আমরা যদি বৈষম্যহীন একটি রাষ্ট্র গঠনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাই, তাহলেই তাদের প্রতি প্রকৃত সম্মান জানানো হবে।”

মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের বাসুদেব ধর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের অধ্যাপক চন্দ্রনাথ পোদ্দার বক্তব্য রাখেন।

ঢাকা/এএএম/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

স্বৈরতন্ত্র উত্থানের দায় আসলে কাদের

প্রাচীন গ্রিসে ক্ষুদ্র অসংখ্য নগররাষ্ট্র ছিল। সেখানে নগরের অধিবাসীকেই বলা হতো নাগরিক, যাঁরা প্রত্যক্ষভাবে রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক অ্যারিস্টটল নাগরিকের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন, ‘আমরা সেই সব ব্যক্তিকে নাগরিক বলব, যাদের আইন প্রণয়ন ও বিচারিক কার্যাবলিতে অংশগ্রহণের ক্ষমতা আছে।’ তাঁর মতে, যে ব্যক্তি নগররাষ্ট্রের শাসনকাজে সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে অক্ষম, তিনি প্রকৃত নাগরিক নন।

আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা নাগরিককে সংজ্ঞায়িত করেছেন এভাবে—যেকোনো রাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন, রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন, রাষ্ট্র প্রদত্ত সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার ভোগ করেন এবং দায়িত্ব ও কর্তব্য ন্যায়ের সঙ্গে পালন করেন, তাঁকেই নাগরিক বলা যায়। একই সঙ্গে নাগরিককে অবশ্যই অন্য মানুষের অধিকার ক্ষুণ্ন না করার ব্যাপারেও সজাগ থাকতে হবে।

প্রতিটি রাষ্ট্রের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হলো সৎ, যোগ্য ও নীতিবান নাগরিক। রাষ্ট্রের কাঠামো ও ভবিষ্যৎ নির্ভর করে নাগরিকের চরিত্র ও আচরণের ওপর। তাই রাষ্ট্রের অগ্রগতির জন্য প্রয়োজন সচেতন নাগরিক—যিনি নিজের অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে অবহিত। এ জ্ঞান ও সচেতনতাই রাষ্ট্রকে তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে পারে। আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় গণতন্ত্রকে বলা হয় জনগণের অংশগ্রহণে, জনগণের দ্বারা এবং জনগণের কল্যাণে পরিচালিত শাসনব্যবস্থা; কিন্তু প্রশ্ন হলো যদি জনগণ নিজেদের অধিকার সম্পর্কে অসচেতন থাকেন, তবে কি গণতন্ত্রের প্রকৃত স্বরূপ অক্ষুণ্ণ থাকে? বাস্তবতা হলো নাগরিকের অজ্ঞতা ও উদাসীনতাই স্বৈরতন্ত্রকে জন্ম দেয়।

প্রথমত, যেখানে মানুষ নিজের মৌলিক অধিকার সম্পর্কে অজ্ঞ, সেখানে শাসকগোষ্ঠী সহজেই ক্ষমতার অপব্যবহার করতে পারে। ভোটাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, আইনের শাসন—এসব বিষয়ে নাগরিক উদাসীন থাকলে শাসকের জবাবদিহি বিলীন হয়ে যায়, তখন গণতান্ত্রিক কাঠামো টিকে থাকলেও এর প্রাণশক্তি নিঃশেষ হয়ে যায়।

দ্বিতীয়ত, নাগরিকেরা ভয়, অজ্ঞতা বা উদাসীনতার কারণে যখন অন্যায় ও অনিয়ম মেনে নেন, তখনই স্বৈরতন্ত্র শিকড় গাড়ে। শাসকের চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত তারা অন্ধভাবে মেনে নিলে সরকার জবাবদিহি এড়িয়ে স্বেচ্ছাচারী হয়ে ওঠে; কিন্তু ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়—শক্তিশালী শাসকের শাসন দীর্ঘস্থায়ী হয় কেবল তখনই, যখন জনগণ ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়। জার্মানি থেকে পাকিস্তান কিংবা বাংলাদেশের অতীত—সবখানেই দেখা যায়, নাগরিক–সচেতনতার অভাবেই স্বৈরতন্ত্রের বিস্তার ঘটেছিল।

তৃতীয়ত, নাগরিক সমাজ দুর্বল হলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেমন গণমাধ্যম, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শ্রমিক সংগঠন কিংবা নাগরিক সংগঠনগুলোও কার্যকর ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়। তখন শাসকেরা সহজেই বিকল্প কণ্ঠরোধ করে ‘নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠা করতে পারে। অর্থাৎ, নাগরিকের নীরবতাই শাসকের জন্য সবচেয়ে কার্যকর অস্ত্রে পরিণত হয়।

অতএব, স্বৈরতন্ত্রের কবল থেকে দেশকে রক্ষা করতে হলে সর্বাগ্রে প্রয়োজন নাগরিক শিক্ষা ও রাজনৈতিক সচেতনতা। পরিবার থেকে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে মানুষকে জানতে হবে তাদের অধিকার, কর্তব্য ও রাষ্ট্রের কাছে দাবি করার উপায়। গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হতে হবে সত্য প্রকাশের প্ল্যাটফর্ম, তোষণ বা প্রোপাগান্ডার যন্ত্র নয়। মনে রাখতে হবে—অধিকার চর্চা না করলে অধিকার হারিয়ে যায়। তাই প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য হলো নিজের অধিকার সম্পর্কে জানা ও তা প্রয়োগ করা।

সবশেষে বলা যায়, নাগরিকের অধিকার বিষয়ে অসচেতনতা কোনো ব্যক্তিগত দুর্বলতা নয়; বরং তা রাষ্ট্রের জন্য ভয়ংকর। সচেতন নাগরিক সমাজই পারে জবাবদিহিমূলক গণতন্ত্র গড়ে তুলতে আর অসচেতন নাগরিক সমাজই সৃষ্টি করে স্বৈরতন্ত্রের জন্মভূমি।

ইসরাত জাহান

শিক্ষার্থী, লোকপ্রশাসন বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মনোযোগ জুলাই সনদে, আছে নির্বাচনী ঐক্যের চিন্তাও
  • সক্ষমতাহীন ও নামসর্বস্ব সংস্থাগুলো বাদ দিন
  • গণঅভ্যুত্থানে হত্যায় বিএনপি নেতাকর্মীদের আসামি করার প্রতিবাদে বিক
  • এমন মানুষও আছে, যারা বলছে ৫ বছর থাকুন, ১০ বছর থাকুন, ৫০ বছর থাকুন
  • স্বৈরতন্ত্র উত্থানের দায় আসলে কাদের
  • পিআরের নামে জামায়াত ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টির অপপ্রয়াস চালাচ্ছে: কায়সার কামাল
  • গ্রামীণ ব্যাংক ও রাষ্ট্র চালানো এক জিনিস না: ফরহাদ মজহার
  • জুলাই গণঅভ্যুত্থান সাংস্কৃতিক ভিন্নতাকে শক্তিতে রূপান্তর করেছে: সংস্কৃতি উপদেষ্টা