জন্ম থেকেই দুই হাত ও দুই পা বাঁকা। স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে পারতেন না। শৈশবে স্কুলে যেতেন বাবার কোলে চড়ে। সহপাঠীরা মাঠে খেলতেন, তিনি পাশে দাঁড়িয়ে দেখতেন। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা যেন বারবার পথরোধ করেছে তাঁর। তবু দমে যাননি উল্লাস পাল। অধ্যবসায়, আত্মবিশ্বাস আর স্বপ্নকে সঙ্গী করে অবশেষে ছুঁয়ে ফেলেছেন কাঙ্ক্ষিত সাফল্য, ৪৪তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন এই জীবনযোদ্ধা। এর আগে ৪৩তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে প্রভাষক হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছিলেন।
উল্লাস পালের বাড়ি শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার রামভদ্রপুর ইউনিয়নের কার্তিকপুর গ্রামে। মৃৎশিল্পী উত্তম কুমার পাল ও আন্না রানী দম্পতির তিন সন্তানের মধ্যে তিনি সবার বড়।
জন্মগ্রহণের পর দুই পায়ে স্বাভাবিকভাবে হাঁটা শেখা হয়নি। দুই হাত দিয়েও স্বাভাবিক কাজ করতে পারতেন না। পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতায় ধীরে ধীরে হাঁটতে শুরু করেন উল্লাস। ভারতে গিয়ে অস্ত্রোপচারের পর ডান পায়ের কিছুটা উন্নতি হয়। তাহলেও স্বাভাবিক হাঁটাচলা করতে পারেননি কখনোই।
উল্লাসের প্রাথমিক শিক্ষার শুরু ১৯৯৯ সালে, কার্তিকপুর পালপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। বাবা প্রতিদিন তাঁকে কোলে করে স্কুলে পৌঁছে দিতেন। লেখার কাজ করতেন বাম হাতে। এসএসসি পাস করেন ২০১০ সালে কার্তিকপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে, পান জিপিএ ৫। এরপর যান ঢাকায়। ইচ্ছা ছিল ঢাকা কলেজে পড়ার। শারীরিক প্রতিবন্ধিতার কারণে সুযোগ পাননি। ঢাকা নর্দান কলেজ থেকে ২০১২ সালে জিপিএ ৫ পেয়ে এইচএসসি পাস করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে ২০১৬ সালে বিবিএ এবং পরে এমবিএ সম্পন্ন করেন। এরপর ৪০তম ও ৪১তম বিসিএসে অংশগ্রহণ করেন। ৪০তম বিসিএসে পাস করলেও কোনো পদে সুপারিশ পাননি। তবে ৪১তম বিসিএসে জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর পদে সুপারিশপ্রাপ্ত হন। ৪৩তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে নড়িয়া সরকারি কলেজে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। লক্ষ্য ছিল প্রশাসন ক্যাডার। ৪৪তম বিসিএসে সেই স্বপ্ন পূরণ হলো।
উল্লাস পাল বলেন, ‘আমি রেজাল্ট দেওয়ার কথা শুনে প্রশাসন ক্যাডারে আমার রেজিস্ট্রেশন নাম্বার মিলাচ্ছিলাম। যখনই আমার নম্বরটি মিলে যায়, আনন্দে চোখ দিয়ে জল বের হয়ে যায়। আমার পরিবারের সবাই দারুণ খুশি হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী হওয়ায় সমাজের অনেকেই ঠাট্টা-মশকরা করেছে। আবার অনেকেই প্রচণ্ড ভালোবেসেছে। আমি কখনও দমে যাইনি। লক্ষ্য স্থির রেখে পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছি।’
যারা শারীরিক বা মানসিকভাবে ত্রুটি নিয়ে জন্মগ্রহণ করেন, সমাজ চাইলেই তাদের জন্য সুন্দর একটি পরিবেশ তৈরি করে দিতে পারে বলে মন্তব্য করেন উল্লাস। তিনি বলেন, ‘আমি চাই, যারা প্রতিবন্ধিতা নিয়ে জন্ম নিয়েছে, সমাজের কেউ যেন তাদের প্রতি বিরূপ মনোভাব না দেখায়।’
উল্লাসের মা আন্না রানী পাল বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই উল্লাস অনেক সংগ্রাম করে বড় হয়েছে। সে পড়াশোনায় খুবই মনোযোগী ছিল। সবাই ওকে নিয়ে গর্বিত।’
ছেলেকে বড় করে তুলতে চেষ্টার ত্রুটি রাখেননি জানিয়ে উত্তম কুমার পাল বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই উল্লাসকে বিশেষভাবে যত্ন করে বড় করেছি। লেখাপড়ার প্রতি উৎসাহের জন্য আজ সে এই সাফল্য অর্জন করেছে।’
উল্লাসের মেধাবী। তাঁর মতো সৎ, আত্মমর্যাদাশীল ছেলে সত্যিই কম দেখেছেন মন্তব্য করে কার্তিকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ বলেন, ‘আমি চাই, ও (উল্লাস) ওর দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে আরও এগিয়ে যাক।’
উল্লাস পালের বন্ধু অসীম পাল। একসঙ্গে স্কুলে যেতেন। বললেন, উল্লাসের চলাফেরায় যে প্রতিবন্ধিতা ছিল, সেটি কখনোই তার মনের জোরকে দুর্বল করতে পারেনি। ক্লাসে সবসময় সবার আগে থাকত। কেউ একটি বিষয় এক ঘণ্টা পড়লে উল্লাস সেটি তিন ঘণ্টা পড়ত।
অসীম বলেন, ‘আমি কাছ থেকে দেখেছি, ওর (উল্লাস) জেদ, স্বপ্ন, আর লড়াই। আমি গর্ব করে বলি, উল্লাস শুধু আমার বন্ধু না, ও আমাদের সময়ের এক জীবন্ত অনুপ্রেরণা।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: উল ল স প ল উল ল স র ব স এস
এছাড়াও পড়ুন:
স্ত্রীর কথা মনোযোগ দিয়ে শোনার উপকারিতা
স্ত্রীর সাথে যোগাযোগ উন্নত করার প্রথম টিপস হলো, তিনি কী বলছেন তা শুনতে শেখা। তিনি যে চিন্তাভাবনা এবং অনুভূতি প্রকাশ করছেন তার প্রতি মনোযোগ দেওয়া, তার কথা এবং তার শারীরিক ভাষা উভয়ই বোঝার চেষ্টা করা। কারণ মনোযোগ দিয়ে কথা শোনার অভ্যাস শুধুমাত্র আপনার স্ত্রীর সাথে সংযোগ উন্নত করতে সাহায্য করবে না বরং আপনার চারপাশের অন্যদের প্রতি আরও কীভাবে সহমর্মী ও ধৈর্যশীল হতে হয়, তা শিখতেও সাহায্য করবে।
সমস্যা সমাধানের উপায় খুঁজে পাবেন
অনেক সময় কথা বলতে বলতে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়ে যায়। এমন কয়েকটি শব্দ বেছে নিন যা কঠিন মুহূর্তে বিরতি নিয়ে সহায়তা দেবে। যেমন একটু পরে কথা বলি, ঠান্ডা হও ইত্যাদি। সচেতনভাবে কথার মাঝে অন্য কথা নিয়ে আসুন। যাতে আলোচনা ঘুরে যায়। স্ত্রী যদি চিৎকার করে বা কঠিন কথা বলতে শুরু করে তাহলে সে কথা বলা থামানো না পর্যন্ত আপনি চুপ থাকুন, বিরতি নিন। এই অভ্যাস আপনার অভিসে মানিয়ে নিতেও সহায়তা দেবে।
সম্পর্কে থাকা মানে সীমানাহীন হওয়া নয়
স্ত্রীকে আপনি যা বলতে চান, তা আপনার বক্তব্যের প্রথমভাগে রাখুন। তবে একবার ভেবে নেবেন ওই কথা দুইজনের আলোচনা এগিয়ে নেবে নাকি আঘাত করবে। আঘাত করার আশঙ্কা থাকলে আলোচনার শেষ দিকে আপনার মূল বক্তব্য বলুন। ধরা যাক, তিনি কঠিন কোনো কথা আপনাকে শুনিয়েছেন, সন্দেহ প্রকাশ করেছেন—তাকে প্রশ্ন করুন সম্পর্ক বাঁচিয়ে রাখার জন্য যা মনে আসে তাই বলা কতটা বিপদজনক হতে পারে?
আরো পড়ুন:
১০ বছরের ছেলেকে বিমানবন্দরে রেখেই বেড়াতে যাচ্ছিলেন বাবা-মা, এরপর
রেগে জীবিত স্ত্রীর শ্রাদ্ধ করলেন স্বামী
আপনার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ খণ্ডানোর উপায় খুঁজে পাবেন
ধরা যাক আপনার স্ত্রী আপনাকে কোনো অভিযোগ দিয়েছে। আপনি সময় নিন, কিছুক্ষণ ভাবুন। এরপর আপনি আসলেই দোষী কিনা বুঝবেন। যদি দোষ না থাকে তাহলে আপনার যুক্তি উপস্থাপনের আগে বলুন যে, ‘তুমি যা বুঝেছো তা হলো…’। এবার তাকে বলতে দিন। সে তার ভুল বুঝতে পারলে সহমর্মীতা দেখান। আপনার ভুল থাকলে ক্ষমা চেয়ে নিন।
অন্যকে বুঝতে পারবেন
যে কাউকে ঠিকঠাক বোঝার উপায় হলো তার জায়গায় নিজেকে, নিজের অবস্থানকে ভাবা। দুইজনের সম্পর্কে কখন জটিলতা তৈরি হচ্ছে, কখন স্বাভাবিক থাকছে এগুলো বুঝুন। এতে যোগাযোগ সহজ হবে।
যত্নশীল হতে পারবেন
স্ত্রীর ভালোলাগা মন্দলাগাগুলো বুঝে ওঠার চেষ্টা করুন। তার ভালোলাগা বিষয়গুলোর যত্ন নিন। এতে দেখবেন দৃষ্টিভঙ্গি বদলাচ্ছে,অন্যদের সঙ্গেও সহজে মানিয়ে নিতে পারছেন।
সূত্র: দ্যা ম্যারেজ অবলম্বনে
ঢাকা/লিপি