শিক্ষাজীবনে কোটা নেননি শারীরিক প্রতিবন্ধী উল্লাস, বিসিএসে পেলেন প্রশাসন ক্যাডার
Published: 1st, July 2025 GMT
৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফলাফলে নিজের পছন্দের প্রশাসন ক্যাডার পেয়েছেন শারীরিক প্রতিবন্ধী উল্লাস পাল। অন্য সাধারণ প্রার্থীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে কাঙ্ক্ষিত সফলতা পেয়ে আনন্দিত শিক্ষাজীবনে কখনো শারীরিক প্রতিবন্ধী কোটা না নেওয়া উল্লাস।
উল্লাস পাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও চাকরিক্ষেত্রে স্বাভাবিক ও সুস্থ প্রার্থীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে এত দূর এসেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় শারীরিক প্রতিবন্ধী কোটা নেওয়ার সুযোগ থাকলেও কোটা নিইনি। সাধারণ প্রার্থীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করেই টিকেছি।’
উল্লাস পালের হাত ও পা বাঁকা। ডান হাতে কোনো শক্তি পান না। তাই লিখতে সমস্যা হয়। পা বাঁকা হওয়ায় হাঁটতেও সমস্যা হয়। তিনি বলেন, ‘শারীরিক বাধা সত্ত্বেও কখনো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় প্রতিবন্ধী কোটা নেওয়ার কথা চিন্তাও করিনি। মানসিকভাবে নিজেকে অন্য আর দশজনের মতো সুস্থ মনে করি।’
জন্মের পর শিশুরা যে বয়সে স্বাভাবিক নিয়মে হাঁটা শেখে, উল্লাস পাল সেভাবে হাঁটতে পারতেন না। জন্মগতভাবেই তাঁর দুই হাত–পা বাঁকা। তবে মা-বাবা তাঁর চিকিৎসার কমতি রাখেননি। চিকিৎসার জন্য ভারতেও নেওয়া হয়েছিল তাঁকে।
উল্লাস পাল বলেন, ‘চিকিৎসকদের শত চেষ্টার পরও হাত-পা স্বাভাবিক হয়নি। তবে দেরিতে হাঁটতে শিখেছি। স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে পারি না। বাড়ির পাশেই কার্তিকপুর পালপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষাজীবন শুরু হয়। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাইনি।’
৪৪তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডার পেয়েছেন শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী উল্লাস পাল.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উল ল স প ল
এছাড়াও পড়ুন:
৪৪তম বিসিএস : ফল নিয়ে দীর্ঘসূত্রতা, অনিশ্চয়তায় ১,৩১৮ প্রার্থী
বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) ৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল গত ৩০ জুন প্রকাশ করে। ১ হাজার ৭১০টি শূন্য পদের বিপরীতে সুপারিশ করা হয় ১ হাজার ৬৯০ জনকে। তবে তাঁদের মধ্যে ৩৭২ জন আগেই একই বা সমতুল্য ক্যাডারে নিয়োগপ্রাপ্ত ছিলেন (রিপিট ক্যাডার)। এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ, সমালোচনা ও বিতর্কের পর পিএসসি বিধি সংশোধনের সিদ্ধান্ত নেয়, যাতে রিপিট ক্যাডারের জায়গায় মেধাক্রম অনুযায়ী পরবর্তী প্রার্থীদের সুপারিশ করা যায়।
কিন্তু বিধি সংশোধনের প্রশাসনিক জটিলতায় প্রায় দেড় মাস পেরিয়ে গেলেও প্রক্রিয়ায় অগ্রগতি হয়নি। ফলে রিপিট ক্যাডার–সম্পর্কিত নয়, এমন ১ হাজার ৩১৮ জন প্রার্থীর নিয়োগও শুরু হয়নি। সাধারণত ফল প্রকাশের পরপরই ফাইল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা, ভেরিফিকেশনসহ পরবর্তী ধাপ শুরু হয়। এবার ফল প্রকাশের পরও ফাইল পিএসসিতেই আটকে আছে।
৪৪তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হয়েছিল ২৭ মে ২০২২। প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হন ১৫ হাজার ৭০৮ জন। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ১১ হাজার ৭৩২ জন। দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে ১ হাজার ৬৯০ জনকে সুপারিশ করা হয়।
প্রার্থীদের অভিযোগ, রিপিট ক্যাডার–সংক্রান্ত বিধি সংশোধনে দেরি হওয়ায় নিয়োগ কার্যক্রম স্থবির হয়ে আছে। অনেকের বয়সসীমা শেষ হয়ে যাচ্ছে, কেউ মানসিক চাপে ভুগছেন।
৪৪তম বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশ পাওয়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রার্থী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এত দিনে ৪৪তম বিসিএসে সুপারিশপ্রাপ্তদের ফাইল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে যাওয়ার কথা, নিয়োগ কার্যক্রম শুরুর নিমিত্তে ভেরিফিকেশন কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা সেখানে ফাইল এখনো পিএসতিতেই আটকে রয়েছে। কবে ভেরিফিকেশন কার্যক্রম শুরু হবে, কবে আমরা জয়েন করব, জানি না। বিধি সংশোধন–সংক্রান্ত জটিলতায় নিয়োগ কার্যক্রম আটকে থাকায় সবকিছুই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।’
বিসিএসে পিএসসি সুপারিশ পাওয়া প্রার্থীরা দ্রুত রিপিট ক্যাডারবিহীন ১ হাজার ৩১৮ জনের ফাইল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর দাবি জানিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোবাশ্বের মোনেম প্রথম আলোকে বলেন, ‘রিপিট ক্যাডার পরিহার করার লক্ষ্যে বিধি সংশোধনের জন্য আমরা প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। ইতিমধ্যে কাজ অনেকটা এগিয়েছে। সেখান থেকে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। তবে আমরা আশা করছি শিগগিরই বিধি সংশোধন হবে। বিধি সংশোধিত হলে রিপিট ক্যাডার সংকটের সমাধান হবে। তাই আমরা বিধি সংশোধনের অপেক্ষায় আছি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় যত দ্রুত বিধি সংশোধন করে দেবে, আমরা তত দ্রুত মনোনয়ন পাঠাতে পারব।’