বছরে জলবায়ুজনিত অর্থনৈতিক ক্ষতি ২ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলার
Published: 26th, July 2025 GMT
প্রতি বছর জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ২ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বিপুল ক্ষতির সবচেয়ে বড় বোঝা বইতে হচ্ছে গ্লোবাল সাউথ বা দক্ষিণাঞ্চলের দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে, যাদের অভিযোজন সক্ষমতা অত্যন্ত সীমিত।
এই বাস্তবতাকে সামনে রেখেই ঢাকার সাভারে শুরু হয়েছে অষ্টম ফ্রুগাল ইনোভেশন ফোরাম (ফিফ) ২০২৫। ‘কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা ও জীবিকায় জলবায়ু অভিযোজন’ প্রতিপাদ্য নিয়ে শুক্রবার (২৫ জুলাই) ব্র্যাক সিডিএম-এ শুরু হওয়া এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন দেশি-বিদেশি ২০০ জনেরও বেশি গবেষক, উন্নয়নকর্মী ও নীতিনির্ধারক।
গতকাল শুরু হওয়া দুইদিনব্যাপী এই সম্মেলন শনিবার (২৬ জুলাই) শেষ হবে।
অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ্ এবং অনলাইনে যুক্ত হয়ে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জোট ‘ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম’-এর মহাসচিব ও মালদ্বীপের সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদ।
তিনি বলেন, “বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক কাঠামো জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর স্বার্থ রক্ষা করছে না। এই কাঠামো জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্যও সহায়ক নয়। উন্নয়নশীল দেশগুলো পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ও টেকসই অবকাঠামো নির্মাণে বিনিয়োগ করতে পারছে না, কারণ ঋণগ্রহণ এখনও তাদের জন্য অনেক বেশি ব্যয়বহুল। অভিযোজনের প্রয়োজনীয়তার তুলনায় অর্থায়ন অত্যন্ত সীমিত।”
এ সময় অর্থবহ পরিবর্তনের জন্য যুক্তিসঙ্গত সুলভ অর্থায়নের সুযোগকে একটি জরুরি বৈশ্বিক অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচনা করতে হবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন তিনি।
ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ্ বলেন, “বর্তমানে প্রতি বছর জলবায়ুজনিত অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলার, যার প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ছে বিশ্বের এই প্রান্তের মানুষগুলোর ওপর, যাদের পক্ষে এ ধরনের ক্ষতি সামাল দেওয়া খুবই কঠিন।”
তিনি বলেন, “জলবায়ু অভিযোজন নিয়ে আলোচনাগুলো যেন শুধু আমাদের টিকে থাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে জীবিকা, মানুষের মর্যাদা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নকেও অন্তর্ভুক্ত করে।”
আসিফ সালেহ্ বলেন, “জলবায়ু সংকট আর ভবিষ্যতের কোনো হুমকি নয়; দীর্ঘতর তাপপ্রবাহ, অনিয়মিত বৃষ্টিপাত এবং তীব্র বন্যা ও খরার কারণে আগামী ২৫ বছরের মধ্যে খাদ্যব্যবস্থায় ব্যাপক বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে। শুধু বাংলাদেশেই নয় বরং বিশ্বের এই প্রন্তজুড়েই এটি ঘটতে পারে। এসব বিবেচনায় রেখেই এবারের ফোরামের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা ও জীবিকায় জলবায়ু অভিযোজন’।”
সম্মেলনের প্রথম দিনে ব্র্যাক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার বিশেষজ্ঞদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত হয় একাধিক সেশন, যার মধ্যে ছিল ‘ট্রান্সফরমেশনাল অ্যাডাপটেশন ইন এগ্রিকালচার’, ‘নেভিগেটিং আনসার্টেনটি থ্রু ক্লাইমেট ইনফরমেশন সার্ভিসেস’, ‘ইউজ কেইসেস ফর গভর্নমেন্ট অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি’, ‘ফার্মিং ফর দ্য ফিউচার’ এবং ‘নেচার বেইজড সল্যুশনস’। এসব সেশনে স্থানীয় উদ্ভাবন, প্রকৃতিভিত্তিক সমাধান, জলবায়ু তথ্য, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ও বাজার সংযোগসহ বাস্তবভিত্তিক সমাধান নিয়ে আলোচনা হয়।
ব্র্যাকের ‘ফ্রুগাল ইনোভেশন ফেলোদের’ উদ্ভাবনও ফোরামে বিশেষভাবে তুলে ধরা হয়। কেনিয়ার এসথার কিমানি, রুয়ান্ডার ঘিসলেইন ইরাকোজে এবং বাংলাদেশের মুবাসসির তাহমিদের উদ্ভাবনগুলো দেখিয়েছে কীভাবে সীমিত সম্পদ দিয়ে জলবায়ু সহনশীলতা অর্জন সম্ভব।
এছাড়া, ফোরামে ব্র্যাক, উইগ্রো, ইনসোরকাউ, গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স, আইফার্মারসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান জলবায়ু সহনশীল কৃষিভিত্তিক উদ্ভাবনের প্রদর্শনী উপস্থাপন করে। এতে তুলে ধরা হয় কীভাবে প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন প্রান্তিক কৃষকদের অনিশ্চিত আবহাওয়া, ফসলের ক্ষয়ক্ষতি ও উৎপাদন হ্রাস মোকাবিলায় সহায়তা করছে।
সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে বক্তব্য রাখবেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং সমাপনী ভাষণ দেবেন ব্র্যাকের চেয়ারপারসন ড.
২০১৩ সালে যাত্রা শুরুর পর থেকে ফ্রুগাল ইনোভেশন ফোরাম (ফিফ) গ্লোবাল সাউথ ভিত্তিক উদ্ভাবন ও সম্ভাব্য সমাধান নিয়ে আলোচনার জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফরম হিসেবে কাজ করছে।
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র জন য জলব য় জলব য
এছাড়াও পড়ুন:
ফরিদপুরে মন্দিরে কালীপ্রতিমা ভাঙচুর
ফরিদপুর সদর উপজেলার কানাইপুর ইউনিয়নের একটি মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে উপজেলার খাসকান্দি এলাকার এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মন্দিরটি প্রায় ৫০ থেকে ৬০ বছরের পুরোনো। এখানে কালী ও দুর্গাপূজা করা হয়। এটি কানাইপুর-রণকাইল সড়কের পাশে, ছয় নম্বর ওয়ার্ডের খাসকান্দি এলাকায় অবস্থিত। পাশেই রয়েছে একটি হোমিও ফার্মেসি।
মন্দির কমিটির সভাপতি বাসুদেব বিশ্বাস বলেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রদীপ জ্বালিয়ে রাত ১০টার দিকে পূজারিরা বাড়ি চলে যান। আজ বুধবার সকাল ৬টার দিকে এলাকার ভজন শীল নামের একজন মন্দির প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখেন, বিভিন্ন প্রতিমার অংশবিশেষ ভাঙা। বাসুদেব বিশ্বাস জানান, দুর্বৃত্তরা কালীর ডান হাতের কবজি, বাঘের মাথার চুলসহ চারটি দাঁত, শিবের গলায় প্যাঁচানো সাপের লেজ, যোগিনীর বাঁ হাতের অংশ, ডাকিনীর দুটি দাঁত এবং পরনের কাপড়ের নিচের অংশ কিছুটা ভেঙে ফেলেছে।
পাকা ইমারত হলেও মন্দিরটির সামনের দিক খোলা। নেই কোনো ফটক, গ্রিল বা ছাউনির ব্যবস্থা। সিসিটিভি ক্যামেরাও নেই। কে বা কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে, তা জানতে পারেননি আশপাশের কেউ। খবর পেয়ে আজ বুধবার সকালে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা মন্দির পরিদর্শন করেন।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদউজ্জামান বলেন, আজ বিকেলের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিমাগুলো মেরামত করে দেওয়ার জন্য প্রতিমা নির্মাণশিল্পীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এর খরচ বহন করবে জেলা পুলিশ। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। যারা এর সঙ্গে জড়িত, তাদের দ্রুত শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।
ফরিদপুর পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বিধান সাহা ও সহসভাপতি সুকেশ সাহা বলেন, তাঁরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। মন্দিরের সামনে কোনো ফটক না থাকায় দুর্বৃত্তরা নির্বিঘ্নে তাদের অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে পেরেছে। তাঁরা সিসি ক্যামেরা স্থাপনসহ মন্দিরের নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করার দাবি জানিয়েছেন।
কানাইপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শাহ্ মোহাম্মদ আলতাফ হুসাইন বলেন, আগামী শুক্রবার এলাকাবাসীকে নিয়ে ওই মন্দির প্রাঙ্গণে মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়েছে। মন্দিরের নিরাপত্তা কীভাবে বাড়ানো যায়, সে বিষয়ে ওই সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।