৮ দফা না মানলে ১২ আগস্ট থেকে ৭২ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘটের হুমকি
Published: 27th, July 2025 GMT
বাণিজ্যিক মোটরযানের অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল ২০ ও ২৫ বছর থেকে বাড়িয়ে ৩০ বছর করাসহ আট দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক–শ্রমিক সমন্বয় পরিষদ। ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে এসব দাবি মানতে সরকারকে সময় বেঁধে দিয়েছে সংগঠনটি। এ সময়ের মধ্যে দাবি মানা না হলে আগামী ১২ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে ৭২ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘটের হুমকি দিয়েছে তারা।
আজ রোববার সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন থেকে এ দাবি জানানো হয়। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক–শ্রমিক সমন্বয় পরিষদ এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
আট দফা দাবি হলো সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮–এর ৯৮ ও ১০৫ নম্বর ধারা সংশোধন করা। পুরোনো বাণিজ্যিক যানবাহনের অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল (ইকোনমিক লাইফ) ২০ ও ২৫ বছর থেকে বাড়িয়ে ৩০ বছর করা, সেটা না হওয়া পর্যন্ত পুরোনো গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান স্থগিত রাখা। বাজেটে বাণিজ্যিক যানবাহনের ওপর আরোপিত দ্বিগুণ অগ্রিম আয়কর কমিয়ে আগের মতো বহাল করা। মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন রাস্তা থেকে সরানোর জন্য সহায়ক হিসেবে বাণিজ্যিক রিকন্ডিশন যানবাহন আমদানির সময়সীমা ৫ থেকে বাড়িয়ে ১২ বছর করা। দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ি ৭২ ঘণ্টার মধ্যে মালিকের জিম্মায় দেওয়ার বিধান কার্যকর করা। মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহনের জন্য স্ক্র্যাপ নীতিমালা প্রণয়ন করা। মহাসড়কে তিন চাকার যানবাহন ও অনুমোদনহীন হালকা যানবাহনের জন্য আলাদা লেন তৈরি করা। ড্রাইভিং লাইসেন্স ও নবায়ন দ্রুত দেওয়া এবং শ্রমিক ফেডারেশনের ১২ দফা বাস্তবায়ন করা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব সাইফুল আলম। তিনি বলেন, সম্প্রতি সরকার ২০ ও ২৫ বছর বয়সের পুরোনো বাস ও ট্রাক সড়ক থেকে অপসারণের জন্য বিআরটিএকে নির্দেশ দিয়েছে। এতে পরিবহন খাতে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। জেলায় জেলায় ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে পরিবহন খাতের মালিক-শ্রমিক নেতারা ২০ জুলাই যৌথ সভা করেন। সেখানে আট দফা দাবি বাস্তবায়নে সরকারকে ১৫ কার্যদিবস সময় বেঁধে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
সাইফুল আলম বলেন, সড়কপথে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন ব্যবস্থাপনা সচল রাখার স্বার্থে আগামী ১৫ কার্যদিবস, অর্থাৎ ১১ আগস্টের মধ্যে বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য সরকারকে অনুরোধ করছেন তাঁরা। তা নাহলে দেশের পরিবহন মালিক–শ্রমিকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ১২ আগস্ট সকাল ছয়টা থেকে ১৫ আগস্ট সকাল ছয়টা পর্যন্ত ৭২ ঘণ্টার জন্য সব বাস, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, পণ্যবাহী পরিবহন ও হালকা যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, যেসব গাড়ির ফিটনেস নেই বা পরিবেশদূষণ করে বলে প্রমাণিত হয়, সেগুলো নতুন বা পুরোনো যাই হোক না কেন, চলাচলের অযোগ্য ঘোষণা করতে হবে। আগে নিয়ম ছিল মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি মেট্রোপলিটন এলাকায় চলতে পারবে না, কিন্তু জেলায় চলতে পারবে—এই নিয়ম বহাল রাখতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি কফিল উদ্দিন আহমেদ, কার্যকরী সভাপতি এম এ বাতেন, সহসভাপতি তোফাজ্জল হোসেন মজুমদার, বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান রমেশ চন্দ্র ঘোষসহ পরিবহন মালিক–শ্রমিক সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ল দ শ সড়ক পর বহন ম ল ক র জন য স আগস ট সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি ট্রাম্পের
ভারত চলতি সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত করতে ব্যর্থ হলে দেশটির ওপর ২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ট্রাম্প বলেন, “তারা (ভারত) ২৫ শতাংশ শুল্ক দেবে।”
বুধবার (৩০ জুলাই) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এক সাংবাদিক ট্রাম্পকে প্রশ্ন করেন, চুক্তিতে পৌঁছালে ব্যর্থ হলে ভারত কি উচ্চ শুল্কের মুখোমুখি হবে? উত্তরে ট্রাম্প বলেন, “হ্যাঁ, আমার তাই মনে হয়।”
ভারতসহ আরো বেশ কয়েকটি দেশকে বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য ১ আগস্ট পর্যন্ত সময়সীমা নির্ধারণ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। নতুবা বর্ধিত শুল্কের মুখোমুখি হতে হবে।
আরো পড়ুন:
পুতিনকে এবার ১০ দিনের আল্টিমেটাম দিলেন ট্রাম্প
নিউ ইয়র্কে গুলিতে নিহত রতনের কুলাউড়ার বাড়িতে শোকের ছায়া
ভারতীয় ও আমেরিকান কর্মকর্তারা গত কয়েক মাস ধরে একটি বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা করছেন, তবে এখনও কাঙ্ক্ষিত বাণিজ্যচুক্তি সম্পাদিত হয়নি। সোমবার মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিয়ার সিএনবিসি-কে বলেন, “ভারত তাদের বাজারের কিছু অংশ খুলে দিতে চাচ্ছে, আমরা আলোচনায় আগ্রহী। তবে কতটা অগ্রসর হতে তারা প্রস্তুত- সেটি আরো আলোচনা দরকার।’
ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরেই ভারতের উচ্চ শুল্ক নীতির সমালোচনা করে আসছেন। তার অভিযোগ, ভারত যুক্তরাষ্ট্রের ভালো বন্ধু, কিন্তু বিশ্বের অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় ভারত মার্কিন পণ্যে সবচেয়ে বেশি শুল্ক আরোপ করে।
ট্রাম্প বলেন, “এখন আমি দায়িত্বে আছি, তাই ভারত তা করতে পারবে না।” তিনি ভারতকে ‘শুল্কের রাজা’ ও বাণিজ্য সম্পর্কের ‘বড় অপব্যবহারকারী’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
চলতি বছরের এপ্রিল মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভারতীয় পণ্যে ২৭ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছিলেন ট্রাম্প, যা পরে স্থগিত করা হয়। তবে নতুন করে তিনি আবারো কড়া অবস্থান নিচ্ছেন।
উভয় পক্ষই বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনার জন্য দৌড়ঝাঁপ করছে, কর্মকর্তারা আলোচনাকে কখনো ‘ইতিবাচক’, আবার কখনোবা ‘পরিমিত’ বলে বলে মনে করছেন।
মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিয়ার স্বীকার করেছেন যে- যদিও তিনি আগে বলেছিলেন ভারতের সঙ্গে একটি চুক্তি ‘আসন্ন’, কিন্তু “এটি বোঝা উচিত যে, দিল্লির বাণিজ্য নীতি ‘অনেক দিন ধরেই সুরক্ষাবাদী’ এবং তাদের অভ্যন্তরীণ বাজারকে দৃঢ়ভাবে রক্ষা করার’ ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে।”
গ্রিয়ার জানান, ট্রাম্প এমন চুক্তি নিশ্চিত করার দিকে মনোনিবেশ করছেন, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অন্যান্য দেশের বাজারকে উল্লেখযোগ্যভাবে উন্মুক্ত করবে।
উভয় দেশের জন্যই কৃষি ও দুগ্ধ খাত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ওয়াশিংটন ভারতের কৃষি খাতে আরো বেশি প্রবেশাধিকারের জন্য চাপ দিচ্ছে। কিন্তু ভারত দুগ্ধ ও কৃষিখাতে বড় পরিসরে বাজার উন্মুক্ত করতে অনাগ্রহী। আমদানির ওপর কঠোর বিধিনিষেধ দিয়ে মোদি সরকার সংবেদনশীল কৃষি খাত রক্ষায় বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে, কারণ এই খাতে বিপুলসংখ্যক ভারতীয়ের জীবিকা জড়িত।
গত সপ্তাহে ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল সিএনবিসিকে বলেন, কৃষিক্ষেত্র ভারতের জন্য সংবেদনশীল এবং সরকার কৃষকদের স্বার্থ ‘ভালোভাবে সুরক্ষিত’ নিশ্চিত করবে।
গোয়েল আরো বলেন, ভারত শিগগির ওয়াশিংটনের সঙ্গে একটি চুক্তি করার বিষয়ে আশাবাদী।
যুক্তরাষ্ট্র ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার। ২০২৪ সালে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১৯০ বিলিয়ন ডলার। ট্রাম্প এবং মোদি এই সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি করে ৫০০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন।
ভারত ইতিমধ্যেই বোর্বন হুইস্কি ও মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন পণ্যের ওপর শুল্ক কমিয়েছে, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এখনও ভারতের সঙ্গে ৪৫ বিলিয়ন ডলার বাণিজ্য ঘাটতি চালিয়ে যাচ্ছে, যা ট্রাম্প কমাতে আগ্রহী।
ঢাকা/ফিরোজ