‘ঘুষের’ ৯১ লাখ টাকার চেকসহ দুদকের হাতে ধরা পড়া নজরুলের বিচার শুরু
Published: 29th, July 2025 GMT
ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ শাখার (এলএ) সাবেক চেইনম্যান (শিকলবাহক) নজরুল ইসলামসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছেন আদালত। আজ মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মিজানুর রহমান শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
নজরুল ছাড়া অন্য চার আসামি হলেন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সাবেক অফিস সহকারী তছলিম উদ্দিন, এলএ শাখার সাবেক সার্ভেয়ার মো.
দুদকের আইনজীবী মাহমুদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, চেকের মাধ্যমে ঘুষ নেওয়ার ঘটনায় দুদকের করা মামলায় সাবেক চেইনম্যান নজরুলসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছেন আদালত। আগামী ধার্য তারিখে সাক্ষ্য শুরু হবে।
দুদক জানায়, ২০১৯ সালের ৭ নভেম্বর চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সাবেক চেইনম্যান (শিকলবাহক) নজরুল ইসলাম ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অফিস সহকারী তছলিম উদ্দিন নগরের চিটাগাং শপিং কমপ্লেক্সের একটি দোকানে দুদকের হাতে ধরা পড়েন। দোকানটি নজরুলের স্ত্রীর মালিকানাধীন। ওই সময় নজরুলের কাছে ঘুষের নগদ ৮ লাখ ৭ হাজার টাকা ও ঘুষ বাবদ বিভিন্ন জমির মালিকদের কাছ থেকে নেওয়া ৯১ লাখ ৮৩ হাজার টাকার চেক পাওয়া যায়। এ ঘটনায় দুদক মামলা করে। ধরা পড়ার পর নজরুল ও তছলিমকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়।
সাড়ে চার বছর তদন্ত শেষে দুদক গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর এ মামলার অভিযোগপত্র দেয়। অভিযোগপত্রে নজরুল ও তছলিম ছাড়াও এলএ শাখার সাবেক সার্ভেয়ার মো. সেলিম, দালাল নাসির আহমেদ এবং ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবিএল) নগরের মুরাদপুর শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক (অপারেশন) ইব্রাহিম মিয়াকে আসামি করা হয়।
আরও পড়ুনশিকলবাহকের ‘হাতের মুঠোয়’ ছিল এলএ শাখা ০২ অক্টোবর ২০২৪দুদক জানায়, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের চেইনম্যান নজরুল ইসলাম ঘুষের টাকা অগ্রিম নিতেন, তা-ও চেকের মাধ্যমে। চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী হয়েও ভূমি অধিগ্রহণ (এলএ) শাখা অনেকটা তাঁর হাতের মুঠোয় ছিল। সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পে অধিগ্রহণ করা জমির ক্ষতিপূরণের টাকা নিতে আসা লোকজনকে ঘিরে চলত তাঁর এ ঘুষ-বাণিজ্য। ক্ষতিপূরণের টাকার ১০ থেকে ২০ শতাংশ এবং কোনো ক্ষেত্রে আরও বেশি ঘুষ নেওয়া হতো। সার্ভেয়ার সেলিম ছিলেন নজরুলের সহযোগী।
নজরুলের কোটিপতি স্ত্রীএদিকে নজরুল ইসলাম, তাঁর স্ত্রী আনোয়ারা বেগম, শ্যালিকা কোহিনুর আক্তার, দোকান কর্মচারী জামাল উদ্দিন, শামসুন নাহার চৌধুরীসহ সাতজনের বিরুদ্ধে দুদকের আরেক মামলায় ১৭ জুলাই বিচার শুরু করেছেন আদালত। এ মামলায় নজরুল ও তাঁর স্ত্রীর ১১ কোটি ২১ লাখ ৬৮ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে করা হয়। দুদকের অভিযোগপত্রে বলা হয়, নজরুল তাঁর স্ত্রী আনোয়ারা বেগমের নামে নগরের জিইসি ওআর নিজাম রোড এলাকায় ২ হাজার ৭০ বর্গফুটের ১ কোটি ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকার একটি এবং একই এলাকায় ১ হাজার ৬২০ বর্গফুটের ১ কোটি ২ লাখ ৩৪ হাজার টাকার একটিসহ মোট দুটি ফ্ল্যাট রয়েছে। নজরুলের নামে গ্রামের বাড়ি হাটহাজারীতে রয়েছে ৮২ লাখ ৪৯ হাজার টাকা দামের একটি তিনতলা বাড়ি। নগরের ষোলশহর এলাকার চিটাগাং শপিং কমপ্লেক্সের দ্বিতীয় তলায় ৮৫ লাখ টাকা দামের একটি, একই তলায় ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকার আরেকটি, একই মার্কেটের প্রথম তলায় ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকার আরেকটিসহ তিনটি দোকান রয়েছে নজরুল ও তাঁর স্ত্রীর নামে। এ ছাড়া স্ত্রীর নামে সাড়ে ২২ লাখ টাকার একটি প্রাইভেট কার রয়েছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: নজর ল ইসল ম চ ইনম য ন নজর ল ও ত নজর ল র ন নজর ল নগর র র একট তছল ম
এছাড়াও পড়ুন:
ফরিদপুরে মন্দিরে কালীপ্রতিমা ভাঙচুর
ফরিদপুর সদর উপজেলার কানাইপুর ইউনিয়নের একটি মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে উপজেলার খাসকান্দি এলাকার এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মন্দিরটি প্রায় ৫০ থেকে ৬০ বছরের পুরোনো। এখানে কালী ও দুর্গাপূজা করা হয়। এটি কানাইপুর-রণকাইল সড়কের পাশে, ছয় নম্বর ওয়ার্ডের খাসকান্দি এলাকায় অবস্থিত। পাশেই রয়েছে একটি হোমিও ফার্মেসি।
মন্দির কমিটির সভাপতি বাসুদেব বিশ্বাস বলেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রদীপ জ্বালিয়ে রাত ১০টার দিকে পূজারিরা বাড়ি চলে যান। আজ বুধবার সকাল ৬টার দিকে এলাকার ভজন শীল নামের একজন মন্দির প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখেন, বিভিন্ন প্রতিমার অংশবিশেষ ভাঙা। বাসুদেব বিশ্বাস জানান, দুর্বৃত্তরা কালীর ডান হাতের কবজি, বাঘের মাথার চুলসহ চারটি দাঁত, শিবের গলায় প্যাঁচানো সাপের লেজ, যোগিনীর বাঁ হাতের অংশ, ডাকিনীর দুটি দাঁত এবং পরনের কাপড়ের নিচের অংশ কিছুটা ভেঙে ফেলেছে।
পাকা ইমারত হলেও মন্দিরটির সামনের দিক খোলা। নেই কোনো ফটক, গ্রিল বা ছাউনির ব্যবস্থা। সিসিটিভি ক্যামেরাও নেই। কে বা কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে, তা জানতে পারেননি আশপাশের কেউ। খবর পেয়ে আজ বুধবার সকালে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা মন্দির পরিদর্শন করেন।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদউজ্জামান বলেন, আজ বিকেলের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিমাগুলো মেরামত করে দেওয়ার জন্য প্রতিমা নির্মাণশিল্পীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এর খরচ বহন করবে জেলা পুলিশ। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। যারা এর সঙ্গে জড়িত, তাদের দ্রুত শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।
ফরিদপুর পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বিধান সাহা ও সহসভাপতি সুকেশ সাহা বলেন, তাঁরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। মন্দিরের সামনে কোনো ফটক না থাকায় দুর্বৃত্তরা নির্বিঘ্নে তাদের অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে পেরেছে। তাঁরা সিসি ক্যামেরা স্থাপনসহ মন্দিরের নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করার দাবি জানিয়েছেন।
কানাইপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শাহ্ মোহাম্মদ আলতাফ হুসাইন বলেন, আগামী শুক্রবার এলাকাবাসীকে নিয়ে ওই মন্দির প্রাঙ্গণে মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়েছে। মন্দিরের নিরাপত্তা কীভাবে বাড়ানো যায়, সে বিষয়ে ওই সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।