রাজশাহীতে আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে বৃষ্টি ঝরছে। বেলা দুইটায় এ প্রতিবেদন লেখার সময়ও বৃষ্টি হচ্ছিল। কখনো মুষলধারে, কখনো ইলশেগুঁড়ি হয়ে ঝরছে। গতকাল সোমবার রাতেও বৃষ্টি হয়েছে। দিনভর বৃষ্টিতে ভোগান্তিতে পড়েছেন অনেকে। মৌসুমি লঘুচাপের কারণে এই বৃষ্টি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদেরা।

রাজশাহী আবহাওয়া কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীতে এবার আষাঢ়ে প্রায় প্রতিদিনই বৃষ্টি হয়েছে। তবে শেষ আষাঢ়ের দিনে সবচেয়ে বেশি ৯১ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হয়। শ্রাবণেও সেই বৃষ্টি অব্যাহত আছে। তবে সেই বৃষ্টি কিছুক্ষণ হয়ে থেমে যেত। গতকাল রাত থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টি ধারাবাহিকভাবে ঝরছে। কখনো মুষলধারে, কখনো ইলশেগুঁড়ি হয়ে। গতকাল রাত থেকে আজ সকাল ছয়টা পর্যন্ত ৩০ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়। সকাল ছয়টার পর থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ৩৫ দশমিক ৬ মিলিমিটার।

রাজশাহী আবহাওয়া কার্যালয়ের পর্যবেক্ষক লতিফা হেলেন বলেন, গতকাল রাত থেকে যে বৃষ্টি হচ্ছে, এটা মৌসুমি লঘুচাপের কারণে। এই লঘুচাপ কেটে না যাওয়া পর্যন্ত বৃষ্টি হবে। বৃষ্টির পরিমাণ কখনো কম, কখনো বেশি।

এদিকে দিনভর বৃষ্টিতে ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরবাসী। শিক্ষার্থীদের অনেককে ভিজে ভিজে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে দেখা গেছে। নগরের দরগাপাড়া এলাকায় বৃষ্টিতে দৌড়ে এসে একটি ভবনের নিচে দাঁড়ান রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থী নাহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, কলেজের পাশেই তাঁর মেস। ভেবেছিলেন বৃষ্টি কম। কিন্তু বাইরে বের হতেই বৃষ্টি বেড়ে গেছে। এখানে দাঁড়িয়ে আবার দৌড় দিয়ে কলেজে চলে যাবেন।

নগরের নিউমার্কেট এলাকায় এক যাত্রী ও রিকশাচালকের মধ্যে কথা-কাটাকাটি করতে দেখা গেল। কাছে গিয়ে জানা গেল, ভাড়া বেশি নিয়ে। বৃষ্টিতে ভাড়া বেড়ে গেছে। ওই যাত্রী জানালেন, ভাড়া ২০ টাকার জায়গায় ৩০ টাকা দাবি করছেন। জবাবে রিকশাচালক বলছেন, ‘এই বৃষ্টিতে পলিথিন দিয়ে মুড়িয়ে এনেছি। উনি ভেজেননি। খুব বেশি টাকা চাইছি না।’

অব্যাহত বৃষ্টিতে অনেকের সমস্যা হলেও পাটচাষিদের জন্য ভালো হয়েছে। তাঁরা পাট কেটে সহজেই পানিতে জাগ দিতে পারছেন। পবার মদনহাটি গ্রামের কৃষক আজিজুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, এবার পাটের ফলন ভালো হয়েছে। বৃষ্টি হচ্ছে বলে এবার পাট জাগ দেওয়ার পানির অভাব হবে না। গতবার তেমন বৃষ্টি হয়নি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

থমথমে পরিস্থিতিতে এক পক্ষের বিক্ষোভের ডাক

চট্টগ্রামের রাউজানে গতকাল মঙ্গলবার বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ-গোলাগুলিতে অর্ধশত নেতা-কর্মী আহত হওয়ার ২২ ঘণ্টা পরও মামলা করেনি কোনো পক্ষ। ঘটনার পর থেকে পুরো উপজেলায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এ অবস্থায় বিএনপি নেতা গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারীরা বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে। আজ বুধবার বিকেল চারটায় উপজেলা সদরের মুন্সির ঘাটায় এই বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

এর আগে মঙ্গলবার বিকেলে রাউজানের সত্তারঘাট এলাকায় চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সদ্য বিলুপ্ত কমিটির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খোন্দকার ও বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান (পদ স্থগিত) গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ছররা গুলিতে আহত হন গোলাম আকবর খন্দকার নিজেও। তিনি দাবি করেন, তাঁর গাড়িবহরে হামলা করা হয়েছে গিয়াস উদ্দিন কাদেরের নির্দেশে। এতে দুই পক্ষের অর্ধশত নেতা-কর্মী আহত হন।

সংঘর্ষের পর গতকাল রাতে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল রাত আটটার দিকে কেন্দ্রীয় বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সই করা এক চিঠিতে কমিটি বিলুপ্তির ঘোষণা দেওয়া হয়। জানতে চাইলে বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন উত্তর জেলা বিএনপির বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক বেলায়েত হোসেন। এ ছাড়া আরেকটি চিঠিতে স্থগিত করা হয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর পদও।
এ ঘটনার পর গোলাম আকবর খোন্দকার পক্ষের লোকজন মঙ্গলবার রাতে চট্টগ্রাম নগরের চকবাজার এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে। দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা অব্যাহত থাকায় নতুন করে সহিংসতার আশঙ্কা করছেন উপজেলার বাসিন্দারা।

গোলাম আকবর খোন্দকারের অনুসারী রাউজান উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন আজ দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, তিনি নিজেও আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাঁর পা ভেঙে দিয়েছেন গিয়াস কাদেরের লোকজন। গোলাম আকবরকেও তাঁরা গুলি করেছেন। তিনি বলেন, তাঁরা মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আজকের মধ্যে মামলার এজাহার দেওয়া হবে। পাশাপাশি সংবাদ সম্মেলন করে হামলার বিস্তারিত তুলে ধরবেন।

গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারী এবং উপজেলা বিএনপির প্রচার বিভাগের আহ্বায়ক কাজী সরোয়ার খান প্রথম আলোকে বলেন, হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় আজ বিকেলে তাঁরা বিক্ষোভ মিছিল করবেন। সেখান থেকে অপপ্রচারের জবাব দেওয়া হবে।

ঘটনার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক পক্ষ অপর পক্ষকে দোষারোপ করে স্ট্যাটাস, ছবি ও ভিডিও শেয়ার করছেন বিএনপির দুই পক্ষের নেতা-কর্মীরা। এতে পাল্টা উত্তেজনা ও পুনরায় সহিংস ঘটনা ঘটার পরিবেশ তৈরি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির তৃণমূলের নেতা–কর্মীরা।

রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া আজ বেলা একটায় প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির দুই পক্ষের হামলা সংঘর্ষের ঘটনায় কোনো পক্ষ মামলা করেনি। কাউকে গ্রেপ্তারও করা যায়নি। মামলা করলে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হবে।

উল্লেখ্য, রাউজানে গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত সহিংসতায় মোট ১৩টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ১০টি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয় অন্তত শতাধিকবার। তিন শতাধিক মানুষ এসব ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ