যাচ্ছিলেন বিয়ের দিন ঠিক করতে, পথে ২ জনকে পিটিয়ে হত্যা
Published: 10th, August 2025 GMT
রংপুরের তারাগঞ্জে ভ্যানচোর সন্দেহে দুই ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। শনিবার (৯ আগস্ট) রাতে ৯টার দিকে উপজেলার সয়ার ইউনিয়নের বুড়িরহাট বটতলা এলাকায় ঘটনাটি ঘটে।
রবিবার (১০ আগস্ট) তারাগঞ্জ থানার ওসি এমএ ফারুক বলেন, “গণপিটুনিতে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। মামলা প্রস্তুতি চলছে।”
নিহতরা হলেন, তারাগঞ্জ উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের ঘনিরামপুরের রুপলাল দাস (৪০) এবং মিঠাপুকুরের বালুয়াভাটা গ্রামের প্রদীপ দাস (৩৫)। সম্পর্কে তারা আত্মীয়।
আরো পড়ুন:
সিলেটে ছুরিকাঘাতে যুবক নিহত
সাংবাদিক তুহিন হত্যা: আরো একজন গ্রেপ্তার
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী জানান, নিহত রুপলাল দাসের মেয়ে নুপুর দাসের বিয়ের কথা চলছিল মিঠাপুকুরের শ্যামপুর এলাকার লালচাদ দাসের ছেলে ডিপজল দাসের সঙ্গে। রবিবার বিয়ের দিনতারিখ ঠিক করার কথা ছিল।
মিঠাপুকুর থেকে নিজের ভ্যান চালিয়ের প্রদীপ দাস আত্মীয় রুপলাল দাসের বাড়ির দিকে রওনা হন। গ্রামের ভেতর দিয়ে রাস্তা না চেনায় প্রদীপ দাস তারাগঞ্জের সয়ার ইউনিয়নের কাজীরহাট এলাকায় গিয়ে রুপলালকে ফোন করেন। রুপালাল গেলে তারা দুইজনে ভ্যানে করে ঘনিরামপুর গ্রামের দিকে রওনা হন।
রাত ৯টার দিকে তারাগঞ্জ-কাজীরহাট সড়কের বটতলা এলাকায় পৌঁছালে ভ্যান চোর সন্দেহে তাদের কয়েকজন আটক করেন। এরপর সেখানে লোক জড়ো হতে থাকে। এক পর্যায়ে প্রদীপ দাসের ভ্যানে থাকা বস্তা থেকে চারটি প্লাস্টিকের ছোট বোতল বের করেন লোকজন। এর একটি বোতল খুললে ভেতরে থাকা তরলের ঘ্রাণে অসুস্থ হয়ে পড়েন পাশারিপাড়া গ্রামের ভ্যান চালক আলমগীর হোসেন ও বুড়িরহাটের মেহেদী হাসান। ফলে লোকজনের সন্দেহ আরো বেড়ে যায়।
এরপর ভ্যান চোর সন্দেহে তাদের মারধর শুরু করেন এলাকাবাসী। বটতলা থেকে মারতে মারতে বুড়িরহাট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে নিয়ে আসা হয় তাদের। মারধরের একপর্যায়ে অচেতন হলে সেখানে ফেলে রাখা হয় তাদের। রাত ১১টায় আহতদের উদ্ধার করে পুলিশ তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান।
তারাগঞ্জ হাসপাতালের চিকিৎসক রুপলাল দাসকে মৃত্য ঘোষণা করেন। প্রদীপ দাসকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে। আজ রবিবার ভোরে তিনিও মারা যান বলে নিশ্চিত করেছেন নিহত রুপলাল দাসের ভাই খোকন দাস।
ঢাকা/আমিরুল/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর হত য ম রধর র পল ল দ স
এছাড়াও পড়ুন:
পাকিস্তানের টিটিপির হয়ে যুদ্ধ করতে গিয়ে নিহত গোপালগঞ্জের রতন
পাকিস্তানের তেহরিক-ই-তালেবানের (টিটিপি) হয়ে যুদ্ধ করতে গিয়ে নিহত হয়েছেন গোপালগঞ্জের বাসিন্দা রতন ঢালী (২৯) নামে এক যুবক। গত ২৬ সেপ্টেম্বর দেশটির খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে তিনি এবং ফয়সাল হোসেন (২২) নামে অপর এক বাংলাদেশি নিহত হন। বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) রতনের বাবা জানান, দেড় বছর ধরে ছেলের সঙ্গে পরিবারের কোনো যোগাযোগ নেই। ছেলে নিহত হয়েছে এ খবর জানে না তার মা।
গোপালগঞ্জের মকুসুদপুর উপজেলার হরিশ্চর গ্রামের আনোয়ার ঢালী এবং সেলিনা বেগম দম্পতির চার সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয় ছিলেন রতন। বর্তমানে তার বাবা-মা এক মেয়েকে নিয়ে গ্রামের একটি টিনের ঘরে বসবাস করছেন। এর আগে তারা ঢাকায় থাকতেন।
আরো পড়ুন:
কক্সবাজারে বেড়াতে গিয়ে নিহত ৫ নারীর দাফন সম্পন্ন
মনিরামপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় স্বামী-স্ত্রী নিহত
রতন ঢাকার খিলগাঁওয়ের একটি মেডিকেল সেন্টারে কাজ করতেন, তার বাবা আনোয়ার ঢালী ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চালাতেন। আনোয়ার ঢালী স্ত্রীকে নিয়ে মকুসুদপুর চলে আসলেও ছেলে রতন আসেননি। সবশেষ ২০২৪ সালের ১০ এপ্রিল ফোনে কথা হয় রতনের সঙ্গে তার বাবার।
সে সময় রতন তার বাবাকে জানান, তিনি ভারতে আছেন। সেখান থেকে দুবাই যাওয়ার কথা বলেছিলেন তিনি। এরপর আর তাদের যোগাযোগ হয়নি।
মেডিকেল সেন্টারে কাজ করা ফয়সাল হোসেনকে নিয়ে রতন গত বছরের ২৭ মার্চ বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন। সেখান থেকে তারা অবৈধভাবে আফগানিস্তান হয়ে পাকিস্তানে যান এবং তারা টিটিপিতে যোগ দেন। গত ২৬ সেপ্টেম্বর খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে রতন ও ফয়সাল নিহত হন।
রতনের বাবা আনোয়ার ঢালী বলেন, “রতন শেষবার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে ২০২৪ সালের ১০ এপ্রিল। সে বলেছিল, ভারতে আছে, শিগগিরই দুবাই যাবে। এরপর রতনের সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি পরিবারের। কয়েকদিন আগে পুলিশ বাসায় এসে রতনের নিহত হওয়ার খবর জানায়। সে কীভাবে পাকিস্তান গেল আর কীভাবে টিটিপিতে যোগ দিল তা জানা নেই।”
মকুসুদপুর উপজেলার হরিশ্চর গ্রামের একটি টিনের ঘরে বসবাস করেন রতনের বাবা-মা
তিনি জানান, রতন যে কাজ করেছে এ কারণে তাদের কোনো শোক নেই। যারা রতনকে এমন কাজে জড়িয়েছেন তাদের বিচারের দাবি করেন আনোয়ার ঢালী।
রতনের মা সেলিনা বেগম বলেন, “২০২৪ সালের ১০ এপ্রিল শেষবার রতনের সঙ্গে কথা হয়েছিল। তখন সে বলেছিল, মা আমি দুবাই যাচ্ছি, এখন দিল্লিতে আছি। আমি জানতে চাই, দুবাই যেতে এত টাকা কিভাবে পেলি। তখন রতন বলে, যেখানে কাজ করছি তারাই টাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। এরপর আর কথা হয়নি।”
তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের (টিটিপি) হয়ে যুদ্ধ করতে গিয়ে নিহত ফয়সাল হোসেনের ঠিকানা এখনো জানা যায়নি।
ঢাকা/মাসুদ