এবার পঞ্চম শ্রেণিতে বৃত্তি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাবে না কিন্ডারগার্টেন ও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সরকার থেকে পাওয়া বইয়ে তারা পড়াশোনা করলেও প্রতিযোগিতামূলক এ পরীক্ষা থেকে তাদের দূরে রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এমন হঠকারী সিদ্ধান্ত নেওয়ার মাধ্যমে অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারকে বিব্রত করার ষড়যন্ত্র দেখছেন শিক্ষকেরা।

নির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক গত ১৭ জুলাই প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এক পরিপত্রে এবার বৃত্তি পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। কিন্তু কিন্ডারগার্টেন ও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রতিযোগিতামূলক এ পরীক্ষার বাইরে রাখার সিদ্ধান্ত হয়। মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১০টায় রাজশাহী সিটি প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানায় বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের রাজশাহী মহানগর শাখা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের রাজশাহী মহানগরের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক রিপন বলেন, “সারাদেশে প্রায় ৪০ হাজার কিন্ডারগার্টেন ও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৭০ লাখ শিক্ষার্থী রয়েছে। এরমধ্যে পঞ্চম শ্রেণির প্রায় ৮ লাখ শিক্ষার্থী এবার বৃত্তি পরীক্ষা থেকে বঞ্চিত হতে যাচ্ছে। অথচ ২০০৯ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা ও ২০২২ সালের বৃত্তি পরীক্ষায় কিন্ডারগার্টেন ও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করে সাফল্য অর্জন করেছে।”

তিনি আরো বলেন, “এই শিক্ষার্থীরা একই বই পড়াশোনা করে। বই সরকারই দেয়। অথচ এবার তাদের বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত বৈষম্যমূলক। বৃত্তি শুধু আর্থিক সহায়তা নয়, এটি একটি শিক্ষার্থীর আত্মমর্যাদা ও অনুপ্রেরণার প্রতীক। কোনো শিশু শুধুমাত্র বিদ্যালয়ের ধরন ভিন্ন হওয়ার কারণে বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে না পারলে তা মানসিক আঘাত ও হতাশার সৃষ্টি করবে। এটি জাতীয় শিক্ষানীতির সাম্যের নীতির পরিপন্থী। আমি অবিলম্বে পরিপত্রটি বাতিল করে সবাইকে বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।”

সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির আইন বিষয়ক সম্পাদক মিজানুর রহমান।

তিনি বলেন, ‘‘২০২৩ ও ২০২৪ সালে বৃত্তি পরীক্ষা হয়নি। তার আগের পরীক্ষাগুলোতে অংশ নিয়ে কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষার্থীদের বৃত্তি অর্জনের হার প্রায় শতভাগ। এই কারণে এবার তাদের পরীক্ষায় সুযোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে একটি পক্ষ। কারণ, কিন্ডারগার্টেনে ভাল পড়াশোনা হয় বলে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী কমে যাচ্ছে। শিক্ষার্থী টানতে কিন্ডারগার্টেনকে বাদ দিয়ে শুধু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তির সুযোগ দেওয়ার হঠকারী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”

তিনি বলেন, ‘‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নানা বিষয়ে আন্দোলন লেগেই আছে। আমার মনে হয়, এটাও একটা ষড়যন্ত্রের অংশ। কারণ, কিন্ডারগার্টেনে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে। তাদের বাদ দিলে আন্দোলন হতে পারে। সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলতে আমলাদের একটি গোষ্ঠী এ ষড়যন্ত্র করেছে বলে আমাদের ধারণা।’’

সংবাদ সম্মেলনের পর বিভাগীয় কমিশনারের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা ও প্রাথমিক শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়। এতে সব শিক্ষার্থীকেই বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে। আর আগামী ২০ আগস্টের মধ্যে দাবি বাস্তবায়ন না হলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ও বিভাগীয় উপপরিচালকের কার্যালয় ঘেরাও এবং ‘মার্চ ফর ঢাকা’সহ কঠোর কর্মসূচি পালন করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কমিটির পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক শাহজাহান আলী, রাজশাহী মহানগর সভাপতি রফিকুল আলম, সহ-সভাপতি ড.

ইব্রাহিম হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশিদ, সাংগাঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসান, অর্থ সম্পাদক এম এম রহমান, শিক্ষা সম্পাদক মনোয়ার হোসেন, প্রচার সম্পাদক শিহাব উদ্দিন প্রমুখ।

ঢাকা/কেয়া/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পর ক ষ য় গ রহণ

এছাড়াও পড়ুন:

আগামী নির্বাচন ও বাংলাদেশকে নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে: আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও বাংলাদেশকে নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের।

আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়ন জামায়াতের আয়োজনে চৌমুহনী বাজার মুজিবুল হক উচ্চবিদ্যালয় মাঠে নির্বাচনী জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের এ কথা বলেন। আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের কুমিল্লা-১১ (চৌদ্দগ্রাম) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য।

আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, ‘পত্রিকায় দেখলাম, নিরাপত্তা উপদেষ্টা ভারতে গিয়েছেন। সেখানে কী আলোচনা হয়েছে—সংবাদ সম্মেলন করে সরকারকে তা জাতির কাছে পরিষ্কার করতে হবে। জীবন দিয়ে, রক্ত দিয়ে ভারতের আধিপত্যবাদকে বাংলার মানুষ এই দেশ থেকে তাড়িয়েছে। ভারতের আধিপত্যবাদ ও বশ্যতা বাংলার মানুষ আর কখনোই গ্রহণ করবে না। এই অন্তর্বর্তী সরকার যদি ভারতের অন্যায় কোনো আবদারে এবং অন্যায় সিদ্ধান্তের প্রতি নতি স্বীকার করতে চায়, তাহলে আপনাদের পরিণতিও শুভ হবে না। জনগণ আপনাদের ক্ষমা করবে না।’

অন্তর্বর্তী সরকার বিএনপির ফাঁদে পা দিয়েছে উল্লেখ করে জামায়াতের নায়েবে আমির বলেন, ‘একটি দল সংস্কার চাচ্ছে না। তারা পুরোনো বস্তাপচা নিয়মে নির্বাচন করতে পাঁয়তারা করছে। অন্তর্বর্তী সরকারও ওই দলের ফাঁদে পা দিয়েছে। সরকারের সিদ্ধান্তে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটেনি। যদি সংস্কার না হয়, শহীদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করা হবে। সে জন্য আমরা গণভোটের কথা বলেছি। সরকার গণভোট দেবে বলেছে, কিন্তু প্যাঁচ লাগিয়ে দিয়েছে। সেটা হচ্ছে, গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন একসঙ্গে হবে। তাদের বুঝতে হবে, এই দুটো নির্বাচন এক জিনিস নয়। কিন্তু ওই দলটি আলাদা গণভোট চায় না। কারণ, ডাকসু, চাকসু, জাকসু ও রাকসুর নির্বাচনের ফলাফল। জনগণ সংস্কারের পক্ষে। জাতীয় নির্বাচনের আগে যদি গণভোট হয়, তাহলে শতকরা ৮০ ভাগ লোক আমাদের পক্ষে রায় দেবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’

চৌদ্দগ্রামের শ্রীপুর ইউনিয়ন জামায়াতের আমির মাওলানা আবদুল হাকিমের সভাপতিত্বে জনসভায় প্রধান বক্তা ছিলেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম। বিশেষ অতিথি কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা জামায়াতের আমির মুহাম্মদ শাহজাহান। আরও উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের ঢাকা মহানগরী উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য শাহাব উদ্দিন, চৌদ্দগ্রাম উপজেলা জামায়াতের আমির মাহফুজুর রহমান, সেক্রেটারি বেলাল হোসাইন, চৌদ্দগ্রাম পৌর আমির মাওলানা মু. ইব্রাহীম, ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় মাদ্রাসাবিষয়ক সম্পাদক আলাউদ্দিন, কুমিল্লা জেলা শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সেক্রেটারি খায়রুল ইসলাম প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নির্বাচন ঘিরে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র চলছে: খন্দকার মোশাররফ
  • ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত জেনে একটি দল ষড়যন্ত্র শুরু করেছে: দুলু
  • রাজনীতিতে ফ্যাসিবাদ প্রত্যাবর্তনের ষড়যন্ত্র নস্যাত করে দিতে হবে
  • আগামী নির্বাচন ও বাংলাদেশকে নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে: আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের