বাংলালিংকের ডিজিটাল সেবা ব্যবহারে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে
Published: 14th, August 2025 GMT
মোবাইল অপারেটর বাংলালিংকের মূল তিনটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম মাইবিএল, টফি ও রাইজের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ প্রবৃদ্ধির পেছনে মূল ভূমিকা রেখেছে মাইবিএল। এ বছরের প্রথম ছয় মাসে অ্যাপটির মাসিক সক্রিয় ব্যবহারকারী বেড়েছে ৬ শতাংশ, যা বর্তমানে ৮৩ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। আজ বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি এ তথ্য জানিয়েছে বাংলালিংক।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, শুধু সেলফ-কেয়ার টুল হিসেবেই নয়, বরং ব্যবহারকারীদের প্রতিদিনের জীবনযাত্রাকে সমৃদ্ধ করতে পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল লাইফস্টাইল প্ল্যাটফর্ম হিসেবে সেবা দিচ্ছে মাইবিএল। অ্যাপটির মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা প্রয়োজনীয় সব সেবা পাওয়ার পাশাপাশি এক প্ল্যাটফর্মেই ব্যবহার করছেন বিনোদন, মিউজিক, গেমিং, অনলাইন এডুকেশন, অনলাইন হেলথ কেয়ার, বিল পেমেন্ট, টিকিট বুকিংসহ বিভিন্ন সেবা। অ্যাপটির মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির বিল পরিশোধ, ট্রেন ও বিমান টিকিট কেনা এবং অনলাইন মার্কেটপ্লেস সুবিধাসহ স্বাচ্ছন্দ্যে ২৪/৭ ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করতে পারছেন।
মাইবিএলের পাশাপাশি বাংলালিংকের ডিজিটাল প্রবৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে টফি প্ল্যাটফর্ম। বিনা মূল্যে ব্যবহারের সুবিধা এবং সহজ ইন্টারফেসের কারণে গত ছয় মাসে টফি অ্যাপের ব্যবহারকারী বেড়েছে ৩৮ শতাংশ। লাইভ টিভি, জনপ্রিয় নাটক, বিভিন্ন কনটেন্ট ও খেলা সম্প্রচারের কারণে এই প্ল্যাটফর্ম শহর ও গ্রামে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।
মাইবিএল ও টফির পাশাপাশি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তিনির্ভর ডিজিটাল লাইফস্টাইল ব্র্যান্ড ‘রাইজ’ প্ল্যাটফর্মের জনপ্রিয়তাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্ল্যাটফর্মটিতে যোগাযোগ দক্ষতা, পেশা প্রস্তুতি ও উদ্যোক্তাভিত্তিক শিক্ষার ওপর বিভিন্ন কোর্স রয়েছে, যা শিল্প খাত ও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ব্যবধান কমিয়ে আনতে এবং তরুণদের ভবিষ্যতের কর্মক্ষেত্রের জন্য প্রস্তুত করতে ভূমিকা রাখছে।
ব্যবসায়িক উদ্যোগগুলোর জন্য বাংলালিংকের রয়েছে ‘বিক্লাইউড’। এর মাধ্যমে যেকোনো আকারের ব্যবসা এখন নিরাপদে, সহজে ও প্রযুক্তিনির্ভর উপায়ে নিজেদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে। এর পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির নেটওয়ার্ক আধুনিকায়ন, দুর্যোগ-পরবর্তী পুনরুদ্ধার ব্যবস্থা এবং ভবিষ্যৎ উপযোগী অবকাঠামো দেশব্যাপী শক্তিশালী ডিজিটাল সেবার সুবিধা নিশ্চিতে ভূমিকা রাখছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প ল য টফর ম ব যবহ র
এছাড়াও পড়ুন:
প্রথম হিজরতকারী ৫ নারী সাহাবি
নবুওয়তলাভের পঞ্চম বছর, নবীজি (সা.) দেখলেন শুধুমাত্র ইসলামগ্রহণের ‘অপরাধে’ নিজ গোত্রের আপন লোকেরাই সাহাবিগণের ওপর অমানবিক নির্যাতন শুরু করেছে। দিন যত যায়, জুলুম-নিপীড়ন আর অবমাননা বাড়তে থাকে। যারা সমাজে খুব সম্মানের সাথে চলাফেরা করতেন, তাদেরই এখন আড়ালে-আবডালে থাকতে হয়।
সাহাবিগণের এই ‘পরাধীনতা’ নবীজির (সা.) মনে খুব কষ্ট দিল। তিনি তাদের বললেন, ‘তোমরা আল্লাহর জমিনের কোথাও হিজরত করে চলে যাও, আল্লাহ শীঘ্রই তোমাদের একত্রিত করবেন। সাহাবিগণ আরজ করলেন, কোথায় যাব? তিনি হাবশার দিকে ইঙ্গিত করেন।’ (সীরাতুল মুস্তফা, ইদরীস কান্ধলবী, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ২১১-২১২, ইফাবা)
আরেক বর্ণনায় আছে, নবীজি (সা.) বলেন, ‘তোমরা হাবশায় চলে যাও, এটাই তোমাদের জন্য ভালো। কারণ সেখানে একজন ন্যায়পরায়ণ বাদশাহ আছেন, যার রাজত্বে কেউ জুলুমে শিকার হয় না। সেই দেশটা সত্য ও ন্যায়ের দেশ। আল্লাহ যতদিন পর্যন্ত তোমাদের জন্য এই জুলুম থেকে বাঁচার পরিবেশ না করে দেন, ততদিন পর্যন্ত তোমরা সেখানে থাকতে পারো। (সীরাতুন নবী, ইবনে হিশাম, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ২৮৪, ইফাবা)
এই নির্দেশ পেয়ে ৬১৫ খ্রিষ্টাব্দে, হিজরিপূর্ব ৭ সালের রজব মাসে সাহাবিগণ মক্কা ছেড়ে সমুদ্রপথে আফ্রিকার দিকে রওনা দেন, যা ইতিহাসের কিতাবে ‘হাবশায় প্রথম হিজরত’ নামে প্রসিদ্ধ।
তারা খ্রিষ্টান রাজা নাজ্জাশি শাসিত আকসুম রাজ্যে (বর্তমান ইথিওপিয়া ও ইরিত্রিয়া) গিয়ে নোঙর ফেলেন, এবং সেখানে বেশ নিরাপত্তার সঙ্গে তিন থেকে চারমাস বসবাস করেন। এরপর এমন একটা গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে মক্কার সবাই ইসলামগ্রহণ করে ফেলেছে, তাই তারা ফিরে আসেন।
আরও পড়ুনআবিসিনিয়ায় নারী সাহাবিদের দ্বিতীয় হিজরত১৪ নভেম্বর ২০২৫সেই দুঃসাহসিক অভিযাত্রায় এগারোজন পুরুষের সাথে পাঁচজন নারী সাহাবিও ছিলেন, যাদের ত্যাগ ও কোরবানি পরবর্তীতে অন্য নারীদেরকেও ‘ধর্মপালনের স্বাধীনতার’ যুদ্ধে অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ করেছিল। আমরা এখানে সংক্ষেপে সেই পাঁচজন নারী সাহাবি সম্পর্কে জানব।
১. রুকাইয়া বিনতে মুহাম্মদ (রা.)তাঁর জন্ম ৬০১ খ্রিষ্টাব্দে। তিনি ছিলেন নবীজির (সা.) দ্বিতীয় মেয়ে। আবু লাহাবের ছেলে উতবাহর সাথে তাঁর বিয়ের চুক্তি (আকদ) হয়েছিল। কিন্তু নবীজি (সা.) নবুওয়তপ্রাপ্তির ঘোষণা দিলে আবু লাহাব সেই আকদ ভেঙে দেয়। এরপর রুকাইয়ার (রা.) বিয়ে হয় হযরত ওসমান ইবনে আফফানের (রা.) সাথে। তিনি স্বামীর সাথে হাবশায় হিজরত করেছিলেন, এই সময় তার বয়স ছিল ১৫।
তারা যখন হিজরত করার উদ্দেশ্যে রওনা দেন, নবীজি (সা.) তাদের কোনো খোঁজখবর পাচ্ছিলেন না। তিনি প্রতিদিন তাদের খবর নিতে বের হতেন। একদিন জনৈক মহিলা জানান তারা হাবশায় পৌঁছেছেন, নবীজি (সা.) এ খবর শুনে মন্তব্য করেন, ‘হজরত লুতের (আ) পর ওসমানই (রা.) প্রথম ব্যক্তি যিনি সপরিবারে হিজরত করেছেন। (মাজমাউয যাওয়ায়েদ, হাদিস: ১৪৯৯৮) হযরত রুকাইয়া (রা.) ৬২৪ খ্রিষ্টাব্দে ইন্তেকাল করেন।
২. উম্মে সালামাহ হিন্দ বিনতে আবু উমাইয়া (রা.)তাঁর জন্ম ৫৯৪ খ্রিষ্টাব্দে। তিনি ছিলেন নবীজির (সা.) ফুফাতো ভাই ও দুধভাই আবু সালামাহ আবদুল্লাহ ইবনে আবদুল আসাদের (রা.) স্ত্রী। স্বামীর সাথে তিনি হাবশায় হিজরত করেন, তখন তার বয়স ছিল ২১।
সে সময় তিনি সন্তানসম্ভাবা ছিলেন, হাবশায় তাদের প্রথম পুত্র সালামাহর জন্ম হয়। উহুদ যুদ্ধের পর আবু সালামাহ (রা.) শাহাদাতবরণ করলে নবীজির (সা.) সাথে উম্মে সালামাহর (রা.) বিয়ে হয়। তিনি ছিলেন খুবই সাহসী ও জ্ঞান অনুরাগী নারী। তার অনেক প্রশ্নের ওপর কোরআনের আয়াত নাজিল হয়েছিল।
জীবনের শেষদিকে তিনি একদম সবার আড়ালে চলে যান, এমনকি তার মৃত্যুর তারিখ সঠিকভাবে জানা যায় না।
আরও পড়ুনমদিনায় হিজরত: ইসলামের ৬টি মাইলফলক০২ জুলাই ২০২৫৩. উম্মে আবদুল্লাহ লায়লা বিনতে আবু হাসমা (রা.)তিনি ছিলেন হজরত আমির বিন রবিয়াহর (রা.) স্ত্রী। হাবশার হিজরতের ঘটনা নিয়ে তিনি দুটো হাদিস বর্ণনা করেন। এর একটি হাদিস থেকে জানা যায় হিজরতের সময় এক মুসলিম অপর মুসলিমের কতটা আপন হয়ে উঠেছিল। উম্মে আবদুল্লাহ বলেন:
সাহাবিগণ যখন হাবশার উদ্দেশ্যে বের হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের ঘরে এলেন এবং বললেন, ‘মুসআব ইবনে উমাইরকে (রা.) তার মা আটকে রেখেছে। তিনি আজ রাতেই বের হতে চান। যখন সবাই ঘুমিয়ে পড়বে, তখন তিনি চলে আসবেন।’
আমার স্বামী, আমির ইবনে রবিয়াহ (রা.) বললেন, ‘আমরা তার জন্য অপেক্ষা করব, দরজা বন্ধ করব না।’
রাত গভীর হলে মুসআব (রা.) আমাদের কাছে এসে পৌঁছালেন। সেদিন রাতটা আমাদের সঙ্গেই কাটালেন। পরদিনও ছিলেন, তারপর রাতে চুপিসারে বেরিয়ে পড়লেন। আমরা তার সঙ্গে দেখা করার অঙ্গীকার করেছিলাম—তিনি সেই জায়গায় এসে মিলিত হলেন, আর আমরা একত্রে রওনা হলাম। আমরা সবাই পায়ে হেঁটে চলছিলাম, কেবল একটি উট ছিল, তাতে আমি ছিলাম।
মুসআবের (রা.) শরীর ছিল খুবই নাজুক, তিনি পায়ের তলায় মাটি সহ্য করতে পারছিলেন না। আমি দেখেছি, তিনি কদম ফেলছেন আর তার পা থেকে রক্ত ঝরছে। আমির (রা.) তা দেখে নিজের জুতা খুলে তাকে দিয়ে দিলেন।
শেষ পর্যন্ত আমরা জাহাজে পৌঁছালাম। সেখানে একটি জাহাজ পাওয়া গেল, যা সদ্য ভুট্টা বোঝাই করে মাওর থেকে ফিরেছে। আমরা ভাড়া করে তাতে উঠলাম—সাগর পেরিয়ে প্রথমে মাওর, তারপর মাওর থেকে হাবশা।
লায়লা (রা.) আরও বলেন, ‘আমি দেখেছি, আমির (রা.) মুসআবের (রা.) প্রতি এমন মায়া দেখাচ্ছিলেন, এতটা মায়া নিজের সন্তানের প্রতিও দেখান না। অথচ মুসআবের (রা.) কাছে কানাকড়িও ছিল না, আর আমাদের কাছে ছিল সবমিলিয়ে পনের দিনার।’ (জামিউস সুন্নাতি ওয়া শুরুহিহা, হাদিস: ৩০৬৭)
৪. সাহলা বিনতে সুহায়ল (রা.)তিনি ছিলেন হযরত আবু হুযায়ফা ইবনে উতবার (রা.) স্ত্রী। হাবশায় হিজরতের সময় তিনিও সন্তানসম্ভাবা ছিলেন। সেখানে তাদের পুত্র মুহাম্মদ বিন আবু হুজায়ফার (রা.) জন্ম হয়।
৫. উম্মে কুলসুম বিনতে সুহায়ল (রা.)তিনি ছিলেন নবীজির (সা.) ফুফাতো ভাই হযরত আবু সাবরাহ ইবনে আবু রাহমের (রা.) স্ত্রী। তার স্বামী হাবশায় দুই-দুইবার হিজরত করেছিলেন।
কিন্তু তিনি প্রথমবার স্বামীর সাথে ছিলেন কিনা এই বিষয়ে মতবিরোধ আছে। হাফিজ ইবনে সাইয়িদুন নাস ‘উয়ুনুল আসার’-এ প্রথম হিজরতকারীদের তালিকায় তার নাম উল্লেখ করেছেন। তবে ইবনে ইসহাক তাকে দ্বিতীয় হিজরতকারীদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেন। (কিতাবুল ইসাবাহ ফি তাময়িজিস সাহাবাহ, খণ্ড ৮, পৃষ্ঠা ৪৬২, মাকতাবায়ে শামেলা)
[email protected]
মওলবি আশরাফ: আলেম, লেখক ও অনুবাদক।
আরও পড়ুনমহানবী (সা.)–এর হিজরত কেন মদিনায় হলো?১০ আগস্ট ২০২৪