আগের মতোই দুর্নীতিপূর্ণ ও পরিবেশবিধ্বংসী প্রকল্পগুলো চলছে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের হাতিরঝিল ও পান্থকুঞ্জ অংশটি জনস্বার্থবিরোধী হলেও অন্তর্বর্তী সরকার জনমত উপেক্ষা করে এ অংশের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। প্রকল্পের নামে ব্যয়ের যে আগ্রহ আওয়ামী লীগ সরকারের মধ্যে ছিল, সেই ব্যয়ের আগ্রহ থেকে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারও সরেনি।

পান্থকুঞ্জ পার্ক ও হাতিরঝিল জলাধার ধ্বংস করে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের জনবিরোধী ও প্রকৃতি ধ্বংসকারী উড়ালসড়ক বাতিলের দাবিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এ কথাগুলো বলেন। আজ শনিবার বিকেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলন এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।

সংবাদ সম্মেলনে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, এক বছর আগেই বন উজাড়, নদী-খাল দখল, পাহাড় কাটা, দুর্নীতি ও দমন-পীড়নে দমবন্ধের মতো পরিস্থিতির বিরুদ্ধে দেশের মানুষ গণ-অভ্যুত্থান করেছিল। আশা ছিল স্বচ্ছতা, আইনের শাসন ও বিশেষজ্ঞদের মতামতের প্রতিফলন ঘটবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, আগের মতোই দুর্নীতিপূর্ণ ও পরিবেশবিধ্বংসী প্রকল্প চলছে।

আনু মুহাম্মদ বলেন, এক্সপ্রেসওয়ের হাতিরঝিল ও পান্থকুঞ্জ অংশটি জনস্বার্থবিরোধী হলেও অন্তর্বর্তী সরকার জনমত উপেক্ষা করে এ অংশের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, উন্নয়ন প্রকল্পের নামে জনগণের জীবন যদি দুর্বিষহ করা হয়, তাহলে জনগণ কেন কথা বলতে পারবে না? আদালতে কেন যেতে পারবে না? আদালত কেন জনগণের পক্ষ হয়ে রায় দিতে পারবেন না?

সরকার আদালতকেও প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে অভিযোগ করে আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘সরকারকে বলতে চাই, সজ্ঞানে ফিরে আসেন। যে কথাবার্তা আগে বলেছেন, সেটা স্মরণ করেন। আপনাদের যে দায়িত্ব, সেই দায়িত্ব উপলব্ধি করতে চেষ্টা করেন। শেখ হাসিনার ভূমিকা পুনরাবৃত্তি করলে জনগণের ক্রোধ, ক্ষোভ আপনাদের ওপরও পড়বে।’

‘খোলা জায়গা হারিয়ে গেছে’

সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে উন্নয়নের কথা শুনলেও বাস্তবে নাগরিক জীবনের মান খারাপ হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার উদাহরণই যথেষ্ট। অল্প দূরত্বে শাহবাগ ও টিএসসিতে দুটি মেট্রো স্টেশন নির্মাণে খোলা জায়গা হারিয়ে গেছে, হাঁটার ও বসার স্থান সংকুচিত হয়েছে। এক্সপ্রেসওয়ের নতুন র‍্যাম্প বিশ্ববিদ্যালয় ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকাকে আরও জটিল ও বিপজ্জনক করবে।

গীতি আরা নাসরীন আরও বলেন, উন্নয়নের নামে গাছপালা ও খোলা জায়গা নষ্ট করে মানুষের জীবনকে নরক বানানো হচ্ছে। এ ধরনের প্রকল্পে জনগণের মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ন হচ্ছে। প্রকৃত উন্নয়নের বদলে কেবল কিছু গোষ্ঠীর আর্থিক স্বার্থ রক্ষা করা হচ্ছে। উন্নয়ন পরিকল্পনায় নগর পরিকল্পনাবিদ, স্থপতি বা পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া হয় না বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ঢাকা এক্সপ্রেসওয়ের মূল লক্ষ্যই ছিল বাইপাস তৈরি করে দ্রুতগতিতে যানবাহন চলাচল নিশ্চিত করা। কিন্তু বিভিন্ন স্থানে র‍্যাম্প নির্মাণের মাধ্যমে এটি এখন ফ্লাইওভারের মতো লোকাল রোডে পরিণত হয়েছে, যার মূল উদ্দেশ্য টোল আদায়।

এই স্থপতি বলেন, বিশেষজ্ঞদের মতে, এই এক্সটেনশন মাত্র ৫ শতাংশ প্রাইভেট কার মালিককে সুবিধা দেবে। এতে নিচের রাস্তাগুলোর কার্যকারিতা কমপক্ষে ৩০ শতাংশ হ্রাস পাবে। আলো-বাতাসসহ পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত করবে। ডিটিসিএর (ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ) গবেষণায়ও এই প্রকল্পকে অপ্রয়োজনীয় ও ক্ষতিকর বলা হয়েছিল। কারণ, এতে যানজট বাড়বে, ভবিষ্যতের গণপরিবহন প্রকল্প বাধাগ্রস্ত হবে।

‘ঢাকার উন্নয়নে জনস্বার্থ উপেক্ষা’

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের আইনগত ও পরিবেশগত ব্যত্যয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের অধ্যাপক শায়ের গফুর বলেন, ঢাকার উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় জনগণের স্বার্থ উপেক্ষা করে ব্যবসায়ীদের স্বার্থে কাজ করা হচ্ছে। এতে ঢাকা শহরকে মানুষের বাসযোগ্য স্থান না ভেবে পণ্য হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। হাতিরঝিল-পান্থকুঞ্জ প্রকল্পে প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংসের মাধ্যমে জনগণের অধিকার ক্ষুণ্ন করা হচ্ছে।

সংবিধান সংস্কার কমিশনের সদস্য ফিরোজ আহমেদ বলেন, পান্থকুঞ্জ আর হাতিরঝিলে শুধু ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে, মূল কাজটা হয়নি। ফলে এ কাজটা বন্ধ করলে জনগণের বিপুল পরিমাণ অর্থ বাঁচবে। কিন্তু সরকারের তরফ থেকে কেউ কেউ বলছেন চুক্তি বাতিল করা যাবে না, কথাটা সত্য নয়। এ ধরনের চুক্তিগুলোকে দর-কষাকষি করে বাতিল করা সম্ভব। তাঁর প্রশ্ন, সেই উদ্যোগটা কেন অন্তর্বর্তী সরকার নিচ্ছে না?

আরও পড়ুনপান্থকুঞ্জ পার্ক ও হাতিরঝিল অংশে নির্মাণকাজে স্থিতাবস্থা আপাতত বহাল, চলবে না কার্যক্রম১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ফিরোজ আহমেদ আরও বলেন, প্রকল্পের নামে ব্যয়ের যে আগ্রহ আওয়ামী লীগ সরকারের মধ্যে ছিল, যে কারণে জনগণ তাদের উৎখাত করেছে; সেই ব্যয়ের আগ্রহ থেকে এ অন্তর্বর্তী সরকারও সরেনি। বরং বিশেষজ্ঞ মত উপেক্ষা করে, আদালতের স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে হাতিরঝিল-পান্থকুঞ্জ প্রকল্পে কাজ চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ, পান্থকুঞ্জ প্রভাতি সংঘের সাধারণ সম্পাদক সিরাজ উদ্দীন, বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক আমিরুল রাজিব ও নাঈম উল হাসান। উপস্থিত ছিলেন কলাবাগানে তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষায় আন্দোলনকারী সৈয়দা রত্নাসহ পরিবেশ আন্দোলনকর্মীরা।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব শ বব দ য প রকল প র ম হ ম মদ জনগণ র ও পর ব উপ ক ষ পর ব শ দ বল ন সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

চট্টগ্রামে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র বিমান বাহিনীর যৌথ মহড়ায় ‘ইনক্যাপ সিরিমনি’

চট্টগ্রামের আনোয়ারায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ও যুক্তরাষ্ট্রের প্যাসিফিক এয়ার ফোর্সের সাত দিনব্যাপী যৌথ মহড়া ‘অপারেশন প্যাসিফিক এঞ্জেল ২৫-৩’-এর অংশ হিসেবে ইনক্যাপ সেরেমনী অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এই মহড়া অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিমান বাহিনী ঘাঁটি জহুরুল হকের অধিনায়ক এয়ার ভাইস মার্শাল হায়দার আব্দুল্লাহ।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন,‘‘বাংলাদেশ বিমান বাহিনী প্রতিবছর দেশের ভেতরে ও বাইরে বিভিন্ন মহড়ায় অংশগ্রহণ করে। এ বছর বিদেশে বেশ কয়েকটি মহড়া সম্পন্ন হয়েছে। চলতি বছরের শেষ মহড়া ছিল এটা। এ মহড়ার মূল উদ্দেশ্য দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতি অর্জন করা। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় স্বাস্থ্যসেবা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটিকে গুরুত্ব দিয়ে আমেরিকান বিমান বাহিনী অত্যাধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম দিয়েছে। এগুলো আনোয়ারা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মাধ্যমে স্থানীয় জনগণের সরাসরি উপকারে আসবে।’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘এ ধরনের মহড়া শুধু মানবিক সহায়তা নয়, বরং দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে আস্থা ও সহযোগিতার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণ উপকৃত হওয়ার পাশাপাশি দুই দেশের সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ ও বন্ধুত্বপূর্ণ হবে। ইনক্যাপ প্রোগ্রামের আওতায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অবকাঠামো সংস্কার, ভবন মেরামত, স্যানিটেশন উন্নয়ন এবং আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম সংযোজন করা হয়েছে। সরঞ্জামের মধ্যে রয়েছে অপারেশন থিয়েটারের টেবিল, অপারেশন লাইট, এয়ার কন্ডিশন, জেনারেটর, বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্র এবং অপারেশন থিয়েটারের অন্যান্য আনুষঙ্গিক সামগ্রী।’’

যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনীর মিশন কমান্ডার মেজর জুদাহ বলেন, ‘‘আমরা এ কার্যক্রমে বিশেষভাবে নারী ও শিশু স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দিয়েছি। এ অঞ্চলের মাতৃস্বাস্থ্য ও শিশুসেবা আরো উন্নত করতে এসব সরঞ্জাম গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘আমরা বিশ্বাস করি, এ ধরনের মানবিক উদ্যোগের মাধ্যমে শুধু স্বাস্থ্যসেবা নয়, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক আরো দৃঢ় হবে।’’

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাহতাবউদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘‘বাংলাদেশের মধ্যে আনোয়ারার মতো একটি প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে বেছে নেওয়া নিঃসন্দেহে স্থানীয় মানুষের জন্য সৌভাগ্যের বিষয়। এখানে স্বাস্থ্য অবকাঠামো উন্নয়ন ও আধুনিক সরঞ্জাম সংযোজনের মাধ্যমে চিকিৎসাসেবার মান উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে সাধারণ মানুষ দ্রুত ও কার্যকর চিকিৎসা সুবিধা পাবেন।’’

অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্র টিমের সিনিয়র সদস্য কার্নেল অ্যান্ড্রু ব্রি, যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের প্রতিনিধি মেজর গ্রিন, বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক, সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রতিনিধি ও স্থানীয় প্রশাসনের সদস্যসহ দুই দেশের বিমান বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

অপারেশন প্যাসিফিক এঞ্জেলের লক্ষ্য- মানবিক সহায়তা, চিকিৎসা কার্যক্রম, অবকাঠামো উন্নয়ন ও আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদার করা। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে সমন্বয় ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ঢাকা/রেজাউল/রাজীব

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অন্তর্বর্তী সরকারকে জনগণের মনের ভাষা বুজতে হবে: গয়েশ্বর রায়
  • যেকোনো মূল্যে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে: তারেক 
  • পিআর পদ্ধতি চাইলে জনগণের কাছে যান: ডা. জাহিদ
  • বরগুনার পূর্বের তিনটি আসন পুনর্বহাল দাবি 
  • ‘৭০ ভাগ জনগণ পিআর পদ্ধতির পক্ষে সমর্থন জানিয়েছে’
  • ‘জনগণ এবারও তাদের পিআর বোঝাবে, পিআর ছাড়া নির্বাচন হবে না’
  • রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছা জরুরি
  • জুলাই সনদের আইনি ভিত্তিসহ কয়েকটি দাবিতে রাজধানীতে সাত দলের বিক্ষোভ-সমাবেশ
  • চট্টগ্রামে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র বিমান বাহিনীর যৌথ মহড়ায় ‘ইনক্যাপ সিরিমনি’