আফগানিস্তান বাগরাম বিমান ঘাঁটি ফিরিয়ে না দিলে ‘খারাপ কিছু’ ঘটবে: ট্রাম্প
Published: 21st, September 2025 GMT
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হুমকি দিয়ে বলেছেন, আফগানিস্তান যদি বাগরাম বিমান ঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে না দেয়, তাহলে দেশটির সঙ্গে ‘খারাপ কিছু’ ঘটবে। এমনকি তিনি ঘাঁটিটি উদ্ধারের জন্য সেনা পাঠানোর সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেননি।
রবিবার (২১ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
আরো পড়ুন:
সিরিয়ান অভিবাসীদের ৬০ দিনের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়তে হবে
আজই ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে পারে যুক্তরাজ্য
প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল মিডিয়ায় এক পোস্টে বলেন, “যদি আফগানিস্তান বাগরাম বিমান ঘাঁটি যারা এটি তৈরি করেছিল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, তাদের কাছে ফিরিয়ে না দেয়, তাহলে খারাপ কিছু ঘটতে চলেছে।”
এর আগে গত বৃহস্পতিবার ট্রাম্প প্রথমবারের মতো জানান যে, ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার পর মার্কিন বাহিনী যে ঘাঁটিটি ব্যবহার করেছিল, তার নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে যুক্তরাষ্ট্র চেষ্টা চালাচ্ছে। শুক্রবার তিনি সাংবাদিকদের বলেন যে, তিনি এ বিষয়ে আফগানিস্তানের সাথে কথা বলছেন।
২০২১ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রশাসন আফগানিস্তান থেকে আমেরিকান সেনা প্রত্যাহারের ফলে মার্কিন ঘাঁটিগুলো দখল হয়ে যায় এবং ইসলামপন্থি তালেবান আন্দোলন কাবুলে মার্কিন-সমর্থিত সরকারের পতন ঘটায়।
আফগান কর্মকর্তারা পুনরায় দেশটিতে মার্কিন সেনা উপস্থিতির বিরোধিতা করেছেন।
বর্তমান এবং সাবেক মার্কিন সামরিক কর্মকর্তারা ব্যক্তিগতভাবে সতর্ক করে বলেছেন যে, আফগানিস্তানের বাগরাম বিমান ঘাঁটি পুনরায় দখল করলে দেশটিতে মার্কিন বাহিনীর ওপর ফের হামলার ঝুঁকি দেখা দিতে পারে, যার জন্য ১০ হাজারেও বেশি সেনার পাশাপাশি উন্নত বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েনের প্রয়োজন হবে।
ট্রাম্প চলতি বছরের জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকে বলে আসছেন যে, তিনি চান যুক্তরাষ্ট্র পানামা খাল থেকে গ্রিনল্যান্ড পর্যন্ত অঞ্চল ও স্থানগুলো অধিগ্রহণ করুক। এ তালিকায় সর্বশেষ তিনি বাগরাম বিমান ঘাঁটিকে যুক্ত করলেন।
শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) ট্রাম্পের কাছে সাংবাদিকরা জানতে চেয়েছিলেন যে, তিনি ঘাঁটি পুনরুদ্ধারের জন্য মার্কিন সেনা পাঠাবেন কিনা। ট্রাম্প এই প্রশ্নের উত্তর দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
তিনি হোয়াইট হাউজে সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা এখন আফগানিস্তানের সাথে কথা বলছি এবং আমরা এটি (বাগরাম বিমান ঘাঁটি) ফিরে পেতে চাই, খুব শিগগির ফিরে পেতে চাই। যদি আফগানিস্তান তা না করে, তাহলে আপনারা জানতে পারবেন আমি কী করব।”
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্ক এবং ওয়াশিংটনে আল কায়েদার হামলার পর দুই দশক ধরে চলা যুদ্ধের সময় আফগানিস্তানে আমেরিকান বাহিনীর প্রধান ঘাঁটি ছিল এই বিশাল বিমানঘাঁটি।
এই ঘাঁটিতে একসময় বার্গার কিং এবং পিৎজা হাটের মতো ফাস্ট-ফুড রেস্তোরাঁ ছিল, যেখানে মার্কিন সেনাদের খাবার সরবরাহ করা হতো এবং ইলেকট্রনিক্স থেকে শুরু করে আফগান গালিচা পর্যন্ত সবকিছু বিক্রি করার দোকানও ছিল। এখানে একটি বিশাল কারাগার কমপ্লেক্সও স্থাপন করা হয়েছিল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশাল বিমানঘাঁটিটির প্রাথমিকভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কঠিন হবে এবং পরিচালনা ও সুরক্ষার জন্য বিশাল জনবলের প্রয়োজন হবে।
আলোচনার পর তালেবানরা যদি যুক্তরাষ্ট্রের বাগরাম পুনঃদখল মেনে নেয়, তবুও আফগানিস্তানের অভ্যন্তরে ইসলামিক স্টেট ও আল কায়েদা জঙ্গিদের মতো বিভিন্ন হুমকি থেকে ঘাঁটি রক্ষা করতে হবে।
ইরানের কাছ থেকে উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র হুমকির ঝুঁকিতেও থাকতে পারে। গত জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানোর পর কাতারে একটি প্রধান মার্কিন বিমান ঘাঁটিতে আক্রমণ করেছিল ইরান।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর য ক তর ষ ট র আফগ ন স ত ন আফগ ন স ত ন র য ক তর ষ ট র স প ট ম বর র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
আফগানিস্তানের বাগরাম ঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে চান ট্রাম্প, আছে যেসব সমস্যা
আফগানিস্তানের বাগরাম বিমানঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ আবার নিতে চান যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনকে মোকাবিলার জন্য এমন পদক্ষেপ নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন তিনি। তবে সাবেক ও বর্তমান মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, বাগরাম পুনরায় নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার লক্ষ্য শেষ পর্যন্ত আফগানিস্তানে নতুন করে মার্কিন অভিযানের মতো দেখাতে পারে। এ কাজের জন্য ১০ হাজারের বেশি সেনা এবং অত্যাধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার প্রয়োজন পড়বে।
গতকাল বৃহস্পতিবার লন্ডন সফরে ছিলেন ট্রাম্প। সেখানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘আমরা বাগরাম ঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে চাই।’ এই ঘাঁটিটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ চীনের কাছে কৌশলগত স্থানে অবস্থিত উল্লেখ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘চীন যেখানে নিজেদের পরমাণু অস্ত্র তৈরি করে, সেখান থেকে বাগরামের দূরত্ব মাত্র এক ঘণ্টার।’
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর দুই দশক ধরে আফগানিস্তানে অভিযান চালায় মার্কিন বাহিনী। তখন দেশটিতে মার্কিন সেনাদের প্রধান ঘাঁটি ছিল বাগরাম। ২০২১ সালে তালেবানের অগ্রযাত্রার মুখে বাগরামসহ আফগানিস্তানের অন্যান্য এলাকা থেকে সেনা প্রত্যাহার করে যুক্তরাষ্ট্র। সে সময় এই সেনা প্রত্যাহার ঘিরে সৃষ্টি হওয়া বিশৃঙ্খলা বেশ আলোচিত হয়েছিল।
বাগরামে দুটি রানওয়ে রয়েছে। এর একটিতে কার্গো ও বোমারু বিমান ওঠানামা করতে পারে। ঘাঁটিটিতে মার্কিন বাহিনীর একটি কারাগারও ছিল। সেটি পরিচিতি পেয়েছিল আফগানিস্তানের গুয়ান্তানামো হিসেবে।এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে বাগরাম থেকে সব সেনা প্রত্যাহারের জন্য সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ওপর দোষারোপ করেছিলেন ট্রাম্প। তিনি বলেছিলেন, সেখানে অন্তত কিছু মার্কিন সেনা মোতায়েন রাখা উচিত ছিল। যদিও ২০২০ সালে নিজের প্রথম মেয়াদে তালেবানের সঙ্গে ট্রাম্প যে চুক্তি করেছিলেন, তাতে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন সব সেনা প্রত্যাহারের কথা উল্লেখ ছিল।
আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার নিয়ে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনের একটি চলমান পর্যালোচনার মধ্যেই বাগরাম নিয়ে এই মন্তব্য করলেন ট্রাম্প। তাঁর প্রশাসনের অনেক নীতিনির্ধারকের মতে, চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বড় একটি চ্যালেঞ্জ। এ থেকে মনোযোগ সরানোর জন্য ট্রাম্প হয়তো বাগরামের বিষয়টি সামনে এনেছেন।
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, বাগরামে বিমানঘাঁটিটি প্রথম নির্মাণ করেছিল তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন। আশির দশকে আফগান যুদ্ধের সময় দেশটিতে সোভিয়েতদের প্রধান ঘাঁটি ছিল এটি। ২০০১ সালে তালেবানকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর বাগরামের দখল নেয় যুক্তরাষ্ট্র। পুনর্নির্মাণ করে সেখানে তারা ৭৭ বর্গকিলোমিটারের একটি ঘাঁটি গড়ে তোলে।
বাগরাম ঘাঁটির একটি রানওয়ে