রাতভর উত্তেজনার পর সকালে ক্যাম্পাস শান্ত, কর্মরিবতির মধ্যে সিন্ডিকেট সভা আজ
Published: 21st, September 2025 GMT
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটা নিয়ে গতকাল শনিবার বিকেল থেকে উত্তেজনা শুরু হয়, চলে গভীর রাত পর্যন্ত।। তবে আজ রোববার সকালে ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি অনেকটাই শান্ত। উপাচার্যের বাসভবনের সামনে শিক্ষার্থীদের কাউকে দেখ যায়নি।
এদিকে আজ দিনভর পূর্ণ দিবস কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। তবে সকালে ক্যাম্পাসে সব একাডেমিক ভবনের ফটকের তালা খুলে দেওয়া হয়েছে। প্রশাসন ভবনও খুলেছে। শিক্ষার্থীদেরও বাসে করে ক্যাম্পাসে আসতে দেখা গেছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পৌনে নয়টার দিকে ক্যাম্পাসে আসা শুরু করেছেন। কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে করে, কেউ নিজস্ব বাহনে করে ক্যাম্পাসে আসছেন। তবে তাঁরা জানেন না আজ কীভাবে কর্মবিরতি পালন করা হবে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসার সমিতির সভাপতি মুক্তার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী সবাই আজ কাজ থেকে বিরতি থাকবেন। কোনো ধরনের কাজে তাঁরা যুক্ত হবেন না। আর ক্লাস-পরীক্ষাও বন্ধ থাকবে। তবে ক্যাম্পাসে তাঁরা দৃশ্যমান (জমায়েত) কোনো কর্মসূচি পালন করবেন না। সিন্ডিকেট সভার দিকে তাঁদেরও নজর থাকবে। কখন সিন্ডিকেট সভা হবে জানেন না তাঁরা। তবে এই সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তে কী ফল আসে তার ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
আজ সকালে গিয়ে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাস ভবনের সামনেও কেউ নেই। সেখানে গতকাল রাতে পড়ে থাকা আবর্জনা ঝাড়ু দেওয়া হয়েছে। সেখানকার একজন নিরাপত্তা প্রহরী বলেন, শনিবার রাত সাড়ে তিনটা থেকে আজ ভোর চারটার মধ্যে শিক্ষার্থীরা চলে যান। শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের ভবনের ভেতরে প্রবেশ করেছিলেন বলে তিনি জানান। গেটের তালা দেখিয়ে বলেন, এই তালা ইট দিয়ে ভাঙার চেষ্টা করা হয়েছে। উপাচার্য রাতভর জেগে ছিলেন। এখন তিনি ঘুমাচ্ছেন।
আরও পড়ুনমধ্যরাতে উপাচার্যের বক্তব্য, শিক্ষার্থীদের ‘ভুয়া, ভুয়া’ স্লোগানে ফিরলেন তিনি৭ ঘণ্টা আগেএর আগে গতকাল বেলা তিনটার দিকে সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন প্রশাসনিক ভবন থেকে বের হলে পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীরা তাঁর গাড়ি আটকে দেন। পরে তিনি হেঁটে তাঁর বাসভবনের দিকে যেতে থাকেন। শিক্ষার্থীরা তাঁর বাসভবনের ফটকে তালা লাগিয়ে দিলে তিনি জুবেরী ভবনের দিকে যান। তাঁর সঙ্গে প্রক্টর মাহবুবর রহমানও ছিলেন। বিকেল সোয়া চারটার দিকে জুবেরী ভবনে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সঙ্গে ছাত্রদের হাতাহাতি ও ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। বিকেল সাড়ে চারটার দিক থেকে জুবেরী ভবনে সহ-উপাচার্যসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মকর্তাকে আটকে রাখেন শিক্ষার্থীরা।
এমন পরিস্থিতিতে রাত পৌনে ১০টার দিকে সহ-উপাচার্যসহ অন্য শিক্ষকদের ‘লাঞ্ছিত’ করার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আজ কর্মবিরতির ডাক দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সভাপতি আবদুল আলিম। সিনেট ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীও কর্মবিরতিতে থাকবেন বলে উল্লেখ করেন।
আরও পড়ুনপোষ্য কোটা পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত স্থগিত, তবে বাতিলের দাবিতে অনড় শিক্ষার্থীরা৯ ঘণ্টা আগেরাত সোয়া ১১টার দিকে শিক্ষার্থীরা জুবেরী ভবন ছেড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডসংলগ্ন উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন। সেখানে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী জড়ো হয়ে পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে স্লোগান দেন। এতে সহ-উপাচার্যসহ কয়েকজন শিক্ষক প্রায় সাত ঘণ্টা পর অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্তি পান। এ সময় বিভিন্ন হল থেকে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী এসে জড়ো হন প্যারিস রোডসংলগ্ন উপাচার্যের বাসভবনের সামনে। তাঁদের মধ্যে নারী শিক্ষার্থীরাও ছিলেন।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে পোষ্য কোটা পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। শনিবার দিবাগত রাত একটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে এক পোস্টে এ তথ্য জানানো হয়। সেখানে বলা হয়, রোববার (আজ) এ নিয়ে জরুরি সিন্ডিকেট সভার আহ্বান করা হয়েছে।
তবে এ সিদ্ধান্ত মেনে নেননি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তাঁরা উপাচার্যের নির্বাহী ক্ষমতাবলে এ সিদ্ধান্ত বাতিল ঘোষণার দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রাখেন। পরে রাত গভীর হওয়ায় ধীরে ধীরে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে থেকে চলে যেতে শুরু করেন।
এর আগে রাত দেড়টার দিকে নিজ বাসভবনের ফটকের কাছে আসেন উপাচার্য সালেহ হাসান নকীব। মাইকে তিনি বলেন, ‘শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সন্তানদের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা স্থগিত করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভুত পরিস্থিতিতে রোববার জরুরি সিন্ডিকেট সভার আহ্বান করা হয়েছে। আশা করছি, প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা বন্ধ হয়ে যাবে।’
উপাচার্যের এমন বক্তব্য শুনে ফটকের বাইরে থাকা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ‘ভুয়া, ভুয়া’ স্লোগান দিতে থাকেন। তখন উপাচার্য বাসভবনের ভেতরে চলে যান।
গত বৃহস্পতিবার ভর্তি উপকমিটির সভায় ১০ শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য পোষ্য কোটা ফিরিয়ে আনা হয়। ওই দিন রাতে এটি বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশের পর শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করেন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উপ চ র য র ব স ন উপ চ র য
এছাড়াও পড়ুন:
সহ-উপাচার্যকে আটকে বিক্ষোভ, শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের হাতাহাতি
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটা ফেরানোর প্রতিবাদে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের হাতাহাতি ও ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটেছে। আজ শনিবার বিকেল সোয়া চারটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরী ভবনে এ ঘটনা ঘটে।
বিকেল চারটার দিকে সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন, প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমানসহ কয়েকজন শিক্ষক-কর্মকর্তা জুবেরী ভবনে ঢুকতে চাইলে সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মারসহ শিক্ষার্থীরা তাঁদের সামনে দু-হাত প্রসারিত করে বাধা হয়ে দাঁড়ান। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা শুরু হয়। একপর্যায়ে ধাক্কাধাক্কি ও ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে।
এরপর সহ-উপাচার্যসহ কর্মকর্তারা জুবেরী ভবনের দোতলায় একটি কক্ষে যান। বিকেল সাড়ে পাঁচটায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা জুবেরী ভবনের সিঁড়ি ও বারান্দায় অবস্থান নিয়ে সহ-উপাচার্যকে আটকে রেখে বিক্ষোভ করছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীর ভাষ্য ও সরেজমিনে দেখা যায়, আজ বেলা তিনটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবন থেকে গাড়ি নিয়ে বের হচ্ছিলেন সহ-উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন। এ সময় শিক্ষার্থীরা তাঁর গাড়ি আটকে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এরপর শিক্ষার্থীরা সহ-উপাচার্যের গাড়ির ইঞ্জিনের ওপর প্রতীকী ‘ভিক্ষা’ হিসেবে খুচরা টাকা দেন। প্রায় ২০ মিনিট সেখানে সহ–উপাচার্যকে গাড়িতে আটকে বিক্ষোভ করা হয়। এরপর গাড়িচালকের কাছ থেকে শিক্ষার্থীরা গাড়ির চাবি কেড়ে নিলে সহ-উপাচার্য গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে তাঁর বাসভবনের দিকে যেতে থাকেন। তখন শিক্ষার্থীরা তাঁর পিছু নেন। একপর্যায়ে দৌড়ে গিয়ে শিক্ষার্থীরা তাঁর বাসভবনের ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন। এতে সেখানে আটকা পড়েন সহ-উপাচার্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরসহ প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা।
আরও পড়ুনরাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০ শর্তে ফিরল পোষ্য কোটা, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সহ-উপাচার্যের গাড়ি আটকে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ। শনিবার বেলা তিনটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে