এআইয়ের কারণে অনেক চাকরি হারিয়ে যাওয়া অবশ্যম্ভাবী
Published: 24th, September 2025 GMT
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) কর্মক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন আনবে বলে মনে করেন ওপেনএআইয়ের প্রধান নির্বাহী স্যাম অল্টম্যান। তাঁর মতে, এ পরিবর্তনের প্রথম ধাক্কা আসবে গ্রাহকসেবা খাতে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের টেলিভিশন অনুষ্ঠান ‘দ্য টুকার কার্লসন শো’তে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অল্টম্যান বলেন, ‘আমি নিশ্চিত, বর্তমানে ফোন বা কম্পিউটারের মাধ্যমে যে বিপুল গ্রাহকসেবা দেওয়া হয়, তার একটি বড় অংশ শিগগিরই এআই আরও ভালোভাবে সম্পন্ন করবে। ফলে এ খাতের অনেক কর্মী চাকরি হারাবেন।’
অল্টম্যান মনে করেন, গ্রাহকসেবার পর প্রোগ্রামাররাও এআইয়ের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। তিনি বলেন, ‘ইতিহাস বলছে, গড়ে প্রতি ৭৫ বছরে চাকরির ধরনে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটে, প্রায় অর্ধেক চাকরি নতুনভাবে রূপান্তরিত হয়। তবে আমার ধারণা, এবার পরিবর্তনটা অনেক দ্রুত ঘটবে। একধরনের আকস্মিক ভারসাম্য বদলের মতো।’ তবে এই পরিবর্তন মানে মানুষের সম্পূর্ণ অনুপস্থিতি নয়। অল্টম্যানের মতে, কলসেন্টারের মতো খাতের কাঠামোয় দ্রুত পরিবর্তন আসবে, যদিও আগের ধারণা ছিল, মানুষ একসময় পুরোপুরি প্রতিস্থাপিত হবেন। তবে অল্টম্যান মনে করেন, যেসব পেশায় মানুষের আবেগ, সহমর্মিতা ও প্রত্যক্ষ সংযোগ অপরিহার্য, সেসব জায়গায় মানুষকে সরানো সম্ভব নয়। নার্সিং তেমন একটি পেশা। তিনি বলেন, ‘এআই বা রোবট যতই উন্নত হোক না কেন, রোগী বা দুর্বল অবস্থায় থাকা কেউ শেষ পর্যন্ত মানুষের কাছ থেকেই আশ্বাস চাইবেন।’
অল্টম্যানের এ মন্তব্য অবশ্য নতুন কিছু নয়। গত বছর ওরাকল ঘোষণা দিয়েছিল, তারা গ্রাহকসেবার ‘সবকিছু’ স্বয়ংক্রিয় করতে চায়। একইভাবে সেলসফোর্সের প্রধান নির্বাহী মার্ক বেনিওফ জানিয়েছেন, তাঁদের প্রতিষ্ঠানে ইতিমধ্যে চার হাজার গ্রাহকসেবাকর্মী কমানো হয়েছে। তবে এআইয়ের অগ্রগতির সম্ভাবনা নিয়েও অনেকে সংশয়ে আছেন। গবেষণাপ্রতিষ্ঠান গার্টনারের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৭ সালের মধ্যে অর্ধেক প্রতিষ্ঠান আবারও গ্রাহকসেবা খাতে কর্মী কমানোর পরিকল্পনা থেকে সরে আসবে। ফলে সতর্কতার বার্তাটি এখন বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে।
একই সাক্ষাৎকারে অল্টম্যান বলেন, ওপেনএআই পরিচালনার নৈতিক ও সামাজিক দায় তাঁকে গভীরভাবে ভাবিয়ে তোলে। প্রতিদিন শতকোটি মানুষ তাঁদের তৈরি চ্যাটবট ব্যবহার করছেন। এ বাস্তবতা তাঁর জন্য বাড়তি চাপের কারণ। অল্টম্যান বলেন, ‘আমি ভালোভাবে ঘুমাতে পারি না। প্রতিদিন শতকোটি মানুষ আমাদের মডেলের সঙ্গে কথা বলেন। এ বাস্তবতা আমাকে প্রচণ্ডভাবে দায়িত্বশীল করে তোলে। বড় নৈতিক সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে আমি তেমন ভয় পাই না, যদিও সেখানে ভুল হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তবে আসল উদ্বেগ তৈরি করে ছোট ছোট সিদ্ধান্ত, যেগুলো বাস্তব জীবনে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।’
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ র হকস ব
এছাড়াও পড়ুন:
সামাজিক সমস্যা সমাধানে এআইয়ের ব্যবহার
সমাজের অনেক মানুষ সাধারণ মানুষের মতো ভাষা ব্যবহার করেন না। তাঁরা হয়তো শুনতে পান না কিংবা কথা বলতে পারেন না। বিশেষ ইশারা ভাষা ব্যবহার করেন। এসব মানুষ প্রযুক্তিগত বিভিন্ন সেবা থেকে বঞ্চিত হন। তাঁদের কথা বিবেচনা করে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটারবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী ফিরোজা মেহজাবিন বাংলা সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ ট্রান্সলেটর প্রকল্প তৈরি করেন।
মেহজাবিন বলেন, ‘অনেকেই ইশারা ভাষা ব্যবহার করেন। তাঁদের কথা বিবেচনা করে আমি এই ভাবনা নিয়ে কাজ করছি। বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেখা যায়, অনেকেই ভাষা–জড়তার কারণে যোগাযোগ করতে পারেন না। আবার অনেক প্রতিষ্ঠান—যেমন হাসপাতাল বা করপোরেট—থেকে তাদের গ্রাহকসেবা দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তির অভাব রয়েছে। আমার এই উদ্ভাবনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই ব্যবহার করে ইশারা ভাষাকে লেখা ও বাক্যে পরিণত করা যাবে, যেন তাঁদের সঙ্গে আমরা সাধারণ মানুষ যোগাযোগ করতে পারি। একইভাবে এআই ব্যবহার করে আমাদের ভাষাকে বাক্য ও ইশারা ভাষায় পরিণত করার মাধ্যমে তাঁরা আমাদের কথা সহজেই বুঝতে পারবেন।’
ফিরোজা মেহজাবিনের টিম ওয়াটারমেলন গ্রামীণফোনের এআইভিত্তিক ফিউচারমেকার্স প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। নারী হিসেবে এআই প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ান হওয়াকে বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন মেহজাবিন। প্রযুক্তি খাতে নারীদের উপস্থিতি এমনিতেই কম, সেখানে এমন আয়োজন নারীদের আরও উৎসাহ দেবে।
গ্রামীণফোনের আয়োজনে গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি হোটেলে ফিউচারমেকার্স নামের প্রতিযোগিতার গ্র্যান্ড ফিনালে আয়োজন করা হয়। দেশের প্রথম জাতীয় পর্যায়ের এআইভিত্তিক আইডিয়া প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষার্থী ৭৮২টি আইডিয়ার মাধ্যমে তাঁদের সৃজনশীলতা, উদ্ভাবন ও সমস্যা সমাধানের দক্ষতা প্রদর্শন করেন।
প্রতিযোগিতায় প্রথম রানার্সআপ হয়েছে টিম ওপিয়ন। তাদের প্রকল্প এআই-ড্রিভেন নিউজ ক্রেডিবিলিটি প্ল্যাটফর্ম। টিম সিন্যাপজ তাদের এআই ইনক্লুশন ফর ডিফারেন্টলি-এবলড লার্নারস প্রকল্প এবং টিম লাস্তা তাদের দিশা: ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন থ্রো এআই প্রকল্পের জন্য যৌথভাবে দ্বিতীয় রানার্সআপ হয়েছে।
দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে গত সেপ্টেম্বর মাসে শুরু হয়েছিল ফিউচারমেকার্স প্রতিযোগিতা। প্রাথমিক বাছাইপর্ব শেষে নির্বাচিত দল বিচারক প্যানেলের সামনে তাদের এআইভিত্তিক ধারণাগুলো উপস্থাপন করে।
অনুষ্ঠানে গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসির (সিইও) আজমান বলেন, ‘আমরা যখন এআইনির্ভর ভবিষ্যতের দিকে অগ্রসর হচ্ছি, তখন তরুণ প্রজন্মকে সেই পরিবর্তনের নেতৃত্ব দিতে প্রয়োজনীয় দক্ষতা ও মানসিকতা অর্জনে সহায়তা করাটাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গ্রামীণফোনে আমরা এআইকে দেখি উদ্ভাবন, উৎপাদনশীলতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির নিয়ামক হিসেবে। ফিউচারমেকার্সের মাধ্যমে আমরা এমন তরুণ উদ্ভাবকদের গড়ে তুলতে চাই, যারা ভবিষ্যতের কর্মশক্তিকে নেতৃত্ব দেবে এবং দেশের ডিজিটাল অর্থনীতিতে অবদান রাখবে।’ প্রতিযোগিতার বিজয়ীরা পুরস্কারের পাশাপাশি গ্রামীণফোনের শীর্ষ প্রতিভা উন্নয়ন কর্মসূচিগুলোতে দ্রুত অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন। প্রাইজ মানির পাশাপাশি বাস্তব উদ্ভাবনী পরিবেশে কাজের অভিজ্ঞতা অর্জন ও নিজেদের ধারণা আরও পরিমার্জন করার সুযোগ পাবেন, যা তাঁদের প্রযুক্তি খাতের ভবিষ্যত নেতৃত্ব হিসেবে গড়ে তুলবে।
বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন বিচারকের দায়িত্বে থাকা গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইয়াসির আজমান, চিফ হিউম্যান রিসোর্সেস অফিসার সৈয়দা তাহিয়া হোসেন, চিফ বিজনেস অফিসার আসিফ নাইমুর রশীদ ও চিফ ইনফরমেশন অফিসার ড. নিরঞ্জন শ্রীনিবাসন।