জোবাইদ নয়, তিনি নুর মোহাম্মদ—কুমিল্লায় ধরা পড়ল ‘আয়নাবাজি’
Published: 24th, September 2025 GMT
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের একটি মামলায় কুমিল্লার আদালতে হাজির হয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে জামিনের আবেদন করেন এক ব্যক্তি। আদালত জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে তাঁকে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। কিন্তু কারাগারে নেওয়ার পর আসামির আঙুলের ছাপ নিতেই সামনে আসে ভিন্ন এক গল্প। আঙুলের ছাপে দেখা যায়, ওই ব্যক্তি আসামি জোবাইদ পুতিয়া নন, তাঁর নাম নুর মোহাম্মদ।
ঘটনাটি ‘আয়নাবাজি’ চলচ্চিত্রের কাহিনির মতো। বাস্তবে কুমিল্লায় ঘটনাটি ঘটেছে গত ১২ আগস্ট। তবে বিষয়টি জানাজানি হয় গত সোমবার। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মো.
৩৩ বছর বয়সী নুর মোহাম্মদের বাড়ি কক্সবাজারের টেকনাফ পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডে। আর মূল আসামি জোবাইদ পুতিয়ার বাড়ি টেকনাফের নাইট্যমপাড়া গ্রামে। গত ১২ আগস্ট আইনজীবী এ এইচ এম আবাদের মাধ্যমে কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে জোবাইদ পুতিয়া নামে আত্মসমর্পণ করেন নুর মোহাম্মদ।
জানতে চাইলে আইনজীবী এ এইচ এম আবাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই ব্যক্তি আমার কাছে এসে দাবি করেন, তিনি জোবাইদ পুতিয়া। বিদেশে থাকায় তাঁর জাতীয় পরিচয়পত্র হয়নি বলে জানান। আমি তাঁকে বিশ্বাস করি আদালতে হাজির করি। পরে এই ঘটনা সামনে আসে। ইতিমধ্যে এই ঘটনায় আমাকে আদালত থেকে শোকজ করা হয়েছে। প্রতারকের বিরুদ্ধে আদালত থেকে মামলা করার কথা শুনেছি। আমি আদালতে পুরো ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়েছি। আমি তাঁকে বিশ্বাস করে জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাই করা ছাড়াই আদালতে হাজির করি, এটা আমার বড় ধরনের ভুল হয়েছে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১১ সালে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানার একটি মাদক মামলায় জোবাইদ পুতিয়া নামের এক ব্যক্তিকে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। ওই বছরের ৯ আগস্ট থেকে ২০১২ সালের ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত কারাগারে ছিলেন তিনি। এরপর জামিনে মুক্ত হলেও নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিতেন। অভিযোগপত্র দাখিলসহ দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া শেষে মামলাটি জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে ২০১৮ সালে কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে স্থানান্তর হয়।
কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মো. আব্দুল্ল্যাহেল আল-আমিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আদালত থেকে আসা যেকোনো আসামিকে কারাগারে প্রবেশ করানোর আগে ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেওয়া হয়। এতে আসামির নাম-পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়। আমরা ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিতেই দেখি, ওই ব্যক্তির নাম-পরিচয় আর আদালত থেকে আসা নাম-পরিচয়ের সঙ্গে মিল নেই। পরে ওই দিনই বিষয়টি আমাদের পক্ষ থেকে আদালতে জানানো হয়। এখন আদালত যে সিদ্ধান্ত দেবেন, সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বর্তমানে আসামি কারাগারে আছেন।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নুর মোহাম্মদ ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে জেল খাটতে এসেছেন। তাঁকে মূল আসামির পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, কারাগারে যাওয়ার তিন থেকে পাঁচ দিনের মধ্যেই জামিন করানো হবে।
কুমিল্লার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি (পিপি) মুহাম্মদ বদিউল আলম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা চান, এ ঘটনার পর যেন সবাই বিশেষ করে আইনজীবীরা আরও সতর্ক হন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন র ম হ ম মদ প রথম আল ক আইনজ ব
এছাড়াও পড়ুন:
নিউজিল্যান্ডে সন্তানদের হত্যা করে স্যুটকেসে লুকিয়ে রাখার ঘটনায় মা দোষী সাব্যস্ত
নিউজিল্যান্ডে দুই সন্তানকে হত্যা করে তাদের মৃতদেহ স্যুটকেসে লুকিয়ে রাখার ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন এক নারী। প্রায় দুই সপ্তাহ বিচারকাজ চলার পর আজ মঙ্গলবার অকল্যান্ড হাইকোর্টে তিনি দোষী সাব্যস্ত হন।
৪৪ বছর বয়সী ওই নারীর নাম হাকইয়ুং লি। তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন।
আদালতে লির আইনজীবীরা যুক্তি দেখিয়েছিলেন, হত্যাকাণ্ডের সময় তাঁদের মক্কেল মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন। তাঁর স্বামীর ক্যানসারে মৃত্যু হওয়ার কয়েক মাস পর এ ঘটনা ঘটেছিল। তবে সরকারি কৌঁসুলি দাবি করেন, লির কর্মকাণ্ড পরিকল্পিত ছিল।
২০২২ সালে অকল্যান্ডের একটি পরিবার লির সন্তানদের মরদেহগুলো খুঁজে পায়। পরিবারটি অকল্যান্ডের নিলাম থেকে একটি পরিত্যক্ত গুদামের জিনিসপত্র কিনেছিল। সেখানকারই একটি স্যুটকেসে দেহাবশেষগুলো খুঁজে পায় তারা। ধারণা করা হয়, কয়েক বছর ধরে দেহাবশেষগুলো গুদামে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছিল।
লি ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে দক্ষিণ কোরিয়ার উলসান থেকে গ্রেপ্তার হন। সে বছরের শেষদিকে তাঁকে নিউজিল্যান্ডে ফেরত পাঠানো হয়।
মামলা চলাকালে আদালতে বলা হয়, লির সন্তানদের মৃতদেহে কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল না। তবে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিল যে তাদের হত্যা করা হয়েছে।
ময়না তদন্তকারী চিকিৎসকের বরাতে কৌঁসুলিরা বলেছেন, ওই শিশুদের হত্যা করা হয়েছে। তবে ঠিক কী পদ্ধতিতে করা হয়েছে, তা নিশ্চিত নয়। তাদের বিষণ্নতারোধী একটি ওষুধ দেওয়া হয়েছে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
কৌঁসুলিরা বলছেন, লি যথেষ্ট বুঝেশুনেই কাজ করেছেন। সন্তানদের মৃতদেহ লুকিয়ে রাখা, নিজের নাম পাল্টানো এবং দক্ষিণ কোরিয়ায় ফিরে যাওয়ার মতো সিদ্ধান্তগুলো তিনি সুচিন্তিতভাবেই নিয়েছিলেন।আদালতে বলা হয়েছে, লি ২০১৭ সালের আগস্টে একটি ফার্মেসি থেকে ওই ওষুধ কেনার জন্য প্রেসক্রিপশন নিয়ে গিয়েছিলেন। তাঁর স্বামী ইয়ান জোর ক্যানসার ধরা পড়ার পাঁচ মাস পরের ঘটনা এটি।
লির আইনজীবীর দাবি, স্বামীর মৃত্যুর পরে তাঁর মানসিক স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে যায় এবং তিনি মনে করতে শুরু করেন যে সবার একসঙ্গে মরে যাওয়াটাই ভালো। আর সে ভাবনা থেকেই তিনি নিজেকে ও সন্তানদের মেরে ফেলার চেষ্টা করেছিলেন। তবে তিনি ওই ওষুধের ভুল ডোজ নেওয়ায় প্রাণে বেঁচে যান। ঘুম ভাঙার পর তিনি দেখেন তাঁর সন্তানেরা মারা গেছে।
নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ডের একটি পরিত্যক্ত গুদাম থেকে ২০২২ সালে লির সন্তানদের মরদেহ উদ্ধার হয়