কুমিল্লা কারাগারে হাজতির প্রক্সি দিতে এসে যুবক ধরা
Published: 24th, September 2025 GMT
কুমিল্লায় অন্যের হয়ে হাজতবাসের জন্য এসে ধরা পড়েছেন নুর মোহাম্মদ নামে এক যুবক। পরে ১৪ আগস্ট থেকে তাকে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়েছে। নুর মোহাম্মদ স্বীকার করেছেন, ৩০ হাজার টাকা নিয়ে তিনি অন্যের হয়ে মাদক মামলায় জেল খাটতে চেয়েছিলেন।
নুর মোহাম্মদের বাড়ি কক্সবাজারের টেকনাফ পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডে। বাবার নাম ফকির আহাম্মদ। প্রায় ১৪ বছর আগে দায়ের মাদক মামলার প্রকৃত আসামি জোবাইদ পুতিয়ার বাড়িও কক্সবাজারের টেকনাফের নাইট্যমপাড়ায়। বাবার নাম আবদুর রহমান।
আরো পড়ুন:
আদালতে বাদীকে মারপিট করায় ২ আসামির কারাদণ্ড
বগুড়ায় আদালত চত্বর থেকে পালানো আসামি গ্রেপ্তার
কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার হালিমা আক্তার বলেন, ‘‘আমরা গত ১৪ আগস্ট ফিঙ্গার প্রিন্ট রিডারে আসামির প্রকৃত পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হই। নকল আসামি টাকার লোভে এমন করেছেন বলে জানান। বিধি অনুযায়ী, আমরা বিষয়টি কারা কর্তৃপক্ষ ও আদালতকে জানিয়েছি। আদালতের নির্দেশনা পেলে প্রকৃত আসামিকে গ্রেপ্তারসহ নুর মোহাম্মদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
আদালত ও কারা সূত্র জানায়, ২০১১ সালে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানার মাদক মামলায় গ্রেপ্তার হন জোবাইদ পুতিয়া। ওই বছরের ৯ আগস্ট থেকে ২০১২ সালের ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত তিনি কুমিল্লা কারাগারে ছিলেন। এরপর জামিনে মুক্ত হয়ে পলাতক জোবাইদ।
এরই মধ্যে ২০১৮ সালে মামলাটি বিচারের জন্য জেলা ও দায়রা আদালতে স্থানান্তর করা হয়। শুনানির পর মামলাটি এখন রায়ের অপেক্ষায়। হঠাৎ করে গত আগস্টে এ মামলায় নতুন মোড় নেয়। গত ১২ আগস্ট কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আইনজীবী এ এইচ এম আবাদের মাধ্যমে আত্মসমর্পণ করেন জোবাইদ পুতিয়া পরিচয় দেওয়া এক যুবক। আদালতের আদেশের পরে তাকে কারাগারে নিলে বিপত্তি দেখা দেয়।
কারা সূত্র জানায়, কারাগারে আসামির ফিঙ্গার প্রিন্ট রিডারে (এনআইডি) নুর মোহাম্মদ নাম আসে। তখন কারা কর্মকর্তারা জোবাইদ পুতিয়া পরিচয় দেওয়া যুবককে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এক পর্যায়ে নুর মোহাম্মদ স্বীকার করেন, তিনি ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে জোবাইদ পুতিয়ার হাজতবাসের জন্য কারাগারে এসেছেন। প্রকৃত আসামি তাকে আশ্বাস দিয়েছিলেন, কারাগারে যাওয়ার তিন দিনের মধ্যে তাকে জামিনে মুক্ত করবেন।
আইনজীবী এ এইচ এম আবাদ বলেন, ‘‘আত্মসমর্পণের দিন আমি আসামির নাম জিজ্ঞেস করলে তিনি জুবাইদ পুতিয়া বলেন। আগে তাকে দেখিনি। এনআইডি চেয়েছিলাম। তিনি বলেছিলেন, প্রবাস থেকে আসায় তাৎক্ষণিকভাবে সঙ্গে নেই। পরে দেবেন। কিন্তু কারাগারে গিয়ে তো সব ফাঁস হয়ে গেছে। পেশাগত জীবনে আমি এমন প্রতারণা দেখিনি। এক ব্যক্তির অনুরোধে আমার এক সহকারী নুর মোহাম্মদকে এনেছিলেন।’’
ঢাকা/রুবেল/বকুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন র ম হ ম মদ আস ম র প রক ত আগস ট
এছাড়াও পড়ুন:
জামিনে মুক্তির পর কাঁদলেন মা শাহাজাদী, বাদীর কাছে চাইলেন ক্ষমা
১৩ দিন বয়সী নবজাতকসহ খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রিজন সেলে থাকা মা শাহাজাদীর জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত। মঙ্গলবার দুপুরে খুলনা মহানগর দায়রা জজ আদালত এ আদেশ দেন। একই দিন শাহাজাদীর মা নার্গিস বেগমেরও জামিন মঞ্জুর করেন আদালত।
বেলা তিনটার দিকে হাসপাতালের প্রিজন সেল থেকে বের করে শাহাজাদীকে তাঁর ভাই ও আইনজীবীর জিম্মায় দেওয়া হয়। পাশাপাশি জামিনের আদেশ হাতে পাওয়ার পর নার্গিস বেগমকেও খুলনা জেলা কারাগার থেকে হাসপাতালের প্রিজন সেলে থাকা মেয়ে শাহাজাদীর কাছে নিয়ে যায় কারা কর্তৃপক্ষ।
শাহাজাদী হাসপাতাল থেকে বের হলে সেখানে এক হৃদয়বিদারক পরিবেশ তৈরি হয়। শাহাজাদীর আইনজীবী, মা ও ভাইয়ের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন মামলার বাদী মো. মির্জা সুজনও।
চুরি যাওয়া নবজাতকের বাবা মির্জা সুজনকে দেখে ক্ষমা চেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন শাহাজাদী। তিনি বলতে থাকেন, ‘ভাই বিশ্বাস করো, আমি এ রকম না। আমি পরিস্থিতির কাছে অসহায় ছিলাম। আমাকে ক্ষমা করে দিও।’ মির্জা সুজন তাঁকে ভেঙে না পড়তে সান্ত্বনা দেন। সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় সব স্বাভাবিক হবে বলে বোঝাতে থাকেন। পরে মা, ভাই ও নবজাতক কন্যাকে নিয়ে বাবার বাড়ির পথে রওনা দেন শাহাজাদী।
শাহাজাদীর আইনজীবী শেখ রফিকুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘গতকাল সোমবার নিম্ন আদালতে জামিন আবেদন নামঞ্জুর হয়েছিল। মঙ্গলবার সকালে আমরা মহানগর দায়রা জজ আদালতে জামিনের আবেদন করার পরিকল্পনা করি। কিন্তু আসামি শাহাজাদী হাসপাতালে থাকায় ওকালতনামা প্রস্তুত ছিল না। এদিকে আদালতের সময় পেরিয়ে যাচ্ছিল। তখন আমি খুলনা মেডিকেলে গিয়ে পুলিশের মাধ্যমে তাঁর স্বাক্ষর এনে দুপুর ১২টার দিকে আদালতে হাজির হই। মহানগর দায়রা জজ মো. শরীফ হোসেন হায়দার বিশেষ সহানুভূতিতে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে শুনানি করেন। শুনানিতে আদালত বলেন, নিম্ন আদালতের উচিত ছিল “ডকট্রিন অব নেসেসিটি” বা প্রয়োজনীয়তার নীতি বিবেচনা করে জামিন দেওয়া। এরপর আদালত অন্তর্বর্তীকালীন জামিন মঞ্জুর করেন এবং আগামী ২০ অক্টোবর পরবর্তী দিন ধার্য করেন।’
নবজাতক চুরির অভিযোগে হওয়া একটি মামলায় রোববার শাহাজাদীকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই রাতেই অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁকে নবজাতক কন্যাসহ খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রিজন সেলে পাঠানো হয়। সোমবার খুলনার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তাঁর জামিন নামঞ্জুর করেন।
পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, ১৫ সেপ্টেম্বর শাহাজাদী যে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন, সেখান থেকে আরেক প্রসূতির চার দিন বয়সী ছেলে নবজাতক চুরি হয়। শাহাজাদীর মা নার্গিস বেগমের কাছ থেকে নবজাতক উদ্ধার করা হয় এবং তখনই তিনি আটক হন। নার্গিস বেগম পুলিশকে জানিয়েছিলেন, মেয়ের সংসার টিকিয়ে রাখতে তিনি এ কাজ করেছিলেন।
আইনজীবী শেখ রফিকুজ্জামান বলেন, শাহাজাদী পঞ্চমবারের মতো কন্যাসন্তানের জন্ম দিয়েছেন। পরিবার ও স্বামীর পক্ষ থেকে ছেলেসন্তানের জন্য চাপ ছিল। কন্যা হলে তাঁকে বিবাহবিচ্ছেদের হুমকি দেওয়া হয়েছিল। সন্তান জন্মের পর স্বামী শাহাজাদীকে আর ঘরে নিতে চাননি, এমনকি হাসপাতাল থেকেও ছাড়াবেন না বলে হুমকি দেন। শাহাজাদীর মা একজন বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী এবং কড়া মাত্রার ওষুধ সেবন করেন। তিনি হাসপাতাল থেকে ছেলে নবজাতককে চুরি করে গ্রামের বাড়িতে যান। পরে বাড়ির লোকজন বুঝতে পেরে শিশুটিকে আবার হাসপাতালে ফিরিয়ে আনেন।
চুরি হওয়া শিশুর বাবা মির্জা সুজন মানব পাচার আইনে মামলা করেন। তবে তিনি আজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘যা হওয়ার তা তো হয়ে গেছে। শাহাজাদী আজ আমার কাছে ক্ষমাও চেয়েছেন। আমার আর কোনো অভিযোগ নেই। আমি মামলা চালাতে চাই না। বিষয়টা মিটে যাক—এটাই এখন চাওয়া।’