একমুহূর্তের জন্য আসুন গভীরভাবে শ্বাস নিই। আর সেই মুহূর্তের জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্প, জিমি কিমেল, জাতিসংঘ, চার্লি কার্ক, গাজা, সরকারি অচলাবস্থা এবং অন্য আর যেসব সংকটের মুখোমুখি আমাদের হতে হচ্ছে, সেগুলো ভুলে যাই। এর বদলে আসুন আমরা কথা বলি এমন এক বাস্তবতা নিয়ে, যেটা করপোরেট নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যম আর করপোরেট নিয়ন্ত্রিত রাজনৈতিক ব্যবস্থা খুব একটা আলোচনায় আনে না। আমরা এখন দুই ধরনের আমেরিকার উত্থান দেখছি। একটি হলো শতকোটিপতি শ্রেণির আমেরিকা। অন্যটি বাদবাকি সবার আমেরিকা।

প্রথম আমেরিকায় ধনীরা নির্লজ্জভাবে আরও ধনী হচ্ছেন, তাঁদের জন্য এত ভালো সময় আর কখনো আসেনি। অন্যদিকে দ্বিতীয় আমেরিকায় সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মাসিক বেতনের ওপর নির্ভর করে কোনোভাবে বেঁচেবর্তে আছেন। জীবনের সবচেয়ে মৌলিক চাহিদা—খাদ্য, স্বাস্থ্যসেবা, বাসস্থান আর শিক্ষার ব্যয় মেটাতে তাঁদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।

আরও পড়ুনসন্ধিক্ষণে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ, গড়ে উঠছে নতুন বিশ্বব্যবস্থা২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

সাধারণ সত্যটা হলো আমেরিকার ইতিহাসে আগে কখনো এত অল্পসংখ্যক মানুষের হাতে এত বিপুল পরিমাণ সম্পদ ও ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হয়নি, আর একই সঙ্গে এত বিপুলসংখ্যক মানুষকে অর্থনৈতিক হতাশায় দিন কাটাতে হয়নি। প্রথম আমেরিকায়, একজন মানুষ ইলন মাস্ক, যিনি বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি, তিনি ৪৮০ বিলিয়ন ডলারের বেশি সম্পদের মালিক। একাই তাঁর কাছে আমেরিকান সমাজের নিম্ন স্তরের ৫২ শতাংশ পরিবারের সম্পদের চেয়েও বেশি সম্পদ রয়েছে। ট্রাম্পকে হোয়াইট হাউসে ফেরাতে তিনি ২৯০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছেন। আর নির্বাচনের দিন থেকে এ পর্যন্ত মাস্কের সম্পদ বেড়েছে ১৮০ বিলিয়ন ডলার। বিনিয়োগের এমন ‘রিটার্ন’ বেশ চমকপ্রদ।

বিশ্বের চতুর্থ ধনী ব্যক্তি জেফ বেজোস, যাঁর সম্পদের পরিমাণ ২৩৩ বিলিয়ন ডলার। তিনি ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বিলাসবহুল ইয়টে চেপে ভেনিসে গিয়ে ৫০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করে বিয়ে করতে পারেন। তাঁর স্ত্রীকে উপহার দিতে পারেন ৩০–৫০ লাখ ডলারের আংটি। এটা তিনি করতে পারেন, তার কারণ হলো অন্যান্য কিছুর পাশাপাশি তাঁর কার্যকর করহার মাত্র ১ দশমিক ১ শতাংশ।

বিশ্বের তৃতীয় ধনী ব্যক্তি মার্ক জাকারবার্গের সম্পদ ২৫৮ বিলিয়ন ডলার। তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার পালো আল্টোতে ১১টি বাড়ি কিনে ব্যক্তিগত সংরক্ষিত এলাকা গড়তে ১১০ মিলিয়ন ডলার খরচ করেছেন। এ ছাড়া হাওয়াইতে ২ হাজার ৩০০ একরের বেশি জমি কেনার জন্য তিনি ২৭০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছেন। সেখানে পাঁচ হাজার বর্গফুটের ভূগর্ভস্থ বাংকার রয়েছে। তিনটি বিলাসবহুল ইয়টও রয়েছে, যার দাম ৫৩০ মিলিয়ন ডলারের বেশি।

বিশ্বের দ্বিতীয় ধনী ল্যারি এলিসনের সম্পদ ৩৭৭ বিলিয়ন ডলারের বেশি। সম্প্রতি মাত্র এক দিনের মধ্যে তিনি প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার সম্পদের মালিক হয়েছেন। হাওয়াইতে তাঁর একটি ব্যক্তিগত দ্বীপ এবং একটি বিমানবহর রয়েছে। এখন তিনি ওয়ার্নার ব্রোস ও সিএনএনের মতো বড় মিডিয়া কোম্পানি কিনতে চাইছেন।

এই চারজনই ১ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি সম্পদের মালিক; কিন্তু তাঁরা শুধু একা নন। আমেরিকার ওপরের ১ শতাংশের হাতে এখন নিচের ৯৩ শতাংশ মানুষের চেয়ে বেশি সম্পদ কেন্দ্রীভূত। এই ১ শতাংশ মানুষ সাধারণ আমেরিকানদের জীবন থেকে সম্পূর্ণ আলাদা জগতে বসবাস করেন। তাঁরা কাজের জন্য ভিড়যুক্ত মেট্রোতে যাত্রা করেন না বা বাড়ি ফেরার জন্য যানজটে আটকে থাকেন না। তাঁরা নিজেদের মালিকানাধীন প্রাইভেট জেট ও হেলিকপ্টারে যাতায়াত করেন। বিশ্বজুড়ে বিশাল ম্যানশনগুলোতে থাকেন, সন্তানদের সবচেয়ে বিখ্যাত প্রাইভেট স্কুলে পড়তে পাঠান এবং নিজেদের ব্যক্তিগত দ্বীপে ছুটি কাটান। বিনোদনের জন্য কেউ কেউ নিজেদের রকেটযানে মহাকাশ ভ্রমণে কোটি কোটি ডলার ব্যয় করেন।

আমেরিকা ইতিহাসের এখন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। আমাদের এমন একটি সরকার ও অর্থনীতি তৈরি করতে হবে, যা সবার জন্য কাজ করবে। না হলে ক্রমেই আমরা অলিগার্কির ব্যবস্থার দিকে এগিয়ে যাব—যেখানে শতকোটিপতি শ্রেণি আমাদের সরকার, অর্থনীতি ও ভবিষ্যৎ নিয়ন্ত্রণ করবে।

এরপর দ্বিতীয় আমেরিকা, যেখানে আমাদের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের মানুষ বসবাস করেন। তাঁদের জন্য অর্থনীতি শুধু ভেঙে পড়েনি; বরং ধ্বংসের পথে। এই আমেরিকায়, শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতা বিপুল পরিমাণ বৃদ্ধি হওয়া সত্ত্বেও সাধারণ আমেরিকান শ্রমিকদের প্রকৃত সাপ্তাহিক মজুরি ৫২ বছরের বেশি সময় আগে যে স্তরে ছিল, তার তুলনায় কম।

এই আমেরিকায় মানুষ ডাক্তার দেখানোর খরচ বহন করতে পারেন না (যদি ভাগ্যক্রমে ডাক্তার খুঁজে পান)। তাঁদের সীমিত আয়ের অর্ধেকের বেশি খরচ হয় বাসাভাড়া কিংবা বন্ধকের টাকা পরিশোধ করতে। শিশুদের বিদ্যালয়ে পাঠানোর যে মাত্রাতিরিক্ত ব্যয়, সেটি তাঁরা বহন করতে পারেন না। এই আমেরিকায় শাকসবজি, ফলমূল এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর খাবারের দাম অনেকের সামর্থ্যের বাইরে।

অধিকাংশ আমেরিকানের জন্য ব্যবস্থাটি শুধু ভাঙাচোরা নয়, এটি ধসে পড়ছে আর সেটি ক্রমে তৃতীয় বিশ্বের জীবনযাত্রার সঙ্গে গিয়ে মিলছে।

আরও পড়ুনট্রাম্পের আমেরিকা এখন এক বারুদের বাক্স২৩ জুলাই ২০২৫

প্রত্যেকেরই স্বাস্থ্যসেবা প্রয়োজন। অথচ আজ সাড়ে আট কোটির বেশি আমেরিকানের কাছে স্বাস্থ্যবিমা নেই, থাকলেও সেটি যথেষ্ট নয়। ট্রাম্পের তথাকথিত ‘বড়, সুন্দর বিল’ কার্যকর হলে এই তালিকায় আরও দেড় কোটি মানুষ যুক্ত হবে। প্রত্যেকেরই বাসস্থান প্রয়োজন। আজ প্রায় আট লাখ আমেরিকান গৃহহীন।

প্রত্যেকেরই একটি মানসম্মত শিক্ষার সুযোগ থাকা উচিত। আজ আমাদের শিশুসেবাব্যবস্থাটি ভেঙে পড়েছে, আর সেটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল। অনেক পাবলিক স্কুল এখন ভীষণ দৈন্য অবস্থায়। শিক্ষকেরা ঠিকমতো বেতন পান না, তাঁদের যথাযথ মর্যাদাও নেই। সবকিছুর একটা শেষ থাকা দরকার।

সুপ্রিম কোর্টের বিচারক লুই ব্র্যান্ডেইস ১৯৩৩ সালে বলেছিলেন, ‘আমাদের দেশে আমরা গণতন্ত্র রাখতে পারি অথবা আমরা অল্পসংখ্যক মানুষের হাতে বিপুল সম্পদ কেন্দ্রীভূত হতে দিতে পারি; কিন্তু আমরা দুটিই একসঙ্গে হতে দিতে পারি না।’ আজকের দিনে সেই সতর্কবার্তা আরও প্রাসঙ্গিক।

আরও পড়ুনআমেরিকা-পরবর্তী বৈশ্বিক অর্থনীতি কে চালাবে১৪ এপ্রিল ২০২৫

আমেরিকা ইতিহাসের এখন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। আমাদের এমন একটি সরকার ও অর্থনীতি তৈরি করতে হবে, যা সবার জন্য কাজ করবে। না হলে ক্রমেই আমরা অলিগার্কির ব্যবস্থার দিকে এগিয়ে যাব—যেখানে শতকোটিপতি শ্রেণি আমাদের সরকার, অর্থনীতি ও ভবিষ্যৎ নিয়ন্ত্রণ করবে। যদি আমরা নিজেদের ট্রাম্প এবং তাঁর অলিগার্ক বন্ধুদের দিয়ে বিভক্ত হতে না দিই, তাহলে আমরা যে পথে যাচ্ছি, সেই পথটা বদলে দিতে পারি। এখানে আপনার পছন্দটা স্পষ্ট। চলুন, একসঙ্গে দাঁড়াই গণতন্ত্র ও ন্যায়ের পক্ষে।

বার্নি স্যান্ডার্স যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর

দ্য গার্ডিয়ান থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনুবাদ মনোজ দে

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আম র ক ন আম র ক য় র আম র ক ব যবস থ আম দ র র জন য সরক র আরও প

এছাড়াও পড়ুন:

প্রথম হিজরতকারী ৫ নারী সাহাবি

নবুওয়তলাভের পঞ্চম বছর, নবীজি (সা.) দেখলেন শুধুমাত্র ইসলামগ্রহণের ‘অপরাধে’ নিজ গোত্রের আপন লোকেরাই সাহাবিগণের ওপর অমানবিক নির্যাতন শুরু করেছে। দিন যত যায়, জুলুম-নিপীড়ন আর অবমাননা বাড়তে থাকে। যারা সমাজে খুব সম্মানের সাথে চলাফেরা করতেন, তাদেরই এখন আড়ালে-আবডালে থাকতে হয়।

সাহাবিগণের এই ‘পরাধীনতা’ নবীজির (সা.) মনে খুব কষ্ট দিল। তিনি তাদের বললেন, ‘তোমরা আল্লাহর জমিনের কোথাও হিজরত করে চলে যাও, আল্লাহ শীঘ্রই তোমাদের একত্রিত করবেন। সাহাবিগণ আরজ করলেন, কোথায় যাব? তিনি হাবশার দিকে ইঙ্গিত করেন।’ (সীরাতুল মুস্তফা, ইদরীস কান্ধলবী, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ২১১-২১২, ইফাবা)

আরেক বর্ণনায় আছে, নবীজি (সা.) বলেন, ‘তোমরা হাবশায় চলে যাও, এটাই তোমাদের জন্য ভালো। কারণ সেখানে একজন ন্যায়পরায়ণ বাদশাহ আছেন, যার রাজত্বে কেউ জুলুমে শিকার হয় না। সেই দেশটা সত্য ও ন্যায়ের দেশ। আল্লাহ যতদিন পর্যন্ত তোমাদের জন্য এই জুলুম থেকে বাঁচার পরিবেশ না করে দেন, ততদিন পর্যন্ত তোমরা সেখানে থাকতে পারো। (সীরাতুন নবী, ইবনে হিশাম, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ২৮৪, ইফাবা)

এই নির্দেশ পেয়ে ৬১৫ খ্রিষ্টাব্দে, হিজরিপূর্ব ৭ সালের রজব মাসে সাহাবিগণ মক্কা ছেড়ে সমুদ্রপথে আফ্রিকার দিকে রওনা দেন, যা ইতিহাসের কিতাবে ‘হাবশায় প্রথম হিজরত’ নামে প্রসিদ্ধ।

তারা খ্রিষ্টান রাজা নাজ্জাশি শাসিত আকসুম রাজ্যে (বর্তমান ইথিওপিয়া ও ইরিত্রিয়া) গিয়ে নোঙর ফেলেন, এবং সেখানে বেশ নিরাপত্তার সঙ্গে তিন থেকে চারমাস বসবাস করেন। এরপর এমন একটা গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে মক্কার সবাই ইসলামগ্রহণ করে ফেলেছে, তাই তারা ফিরে আসেন।

আরও পড়ুনআবিসিনিয়ায় নারী সাহাবিদের দ্বিতীয় হিজরত১৪ নভেম্বর ২০২৫

সেই দুঃসাহসিক অভিযাত্রায় এগারোজন পুরুষের সাথে পাঁচজন নারী সাহাবিও ছিলেন, যাদের ত্যাগ ও কোরবানি পরবর্তীতে অন্য নারীদেরকেও ‘ধর্মপালনের স্বাধীনতার’ যুদ্ধে অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ করেছিল। আমরা এখানে সংক্ষেপে সেই পাঁচজন নারী সাহাবি সম্পর্কে জানব।

১. রুকাইয়া বিনতে মুহাম্মদ (রা.)

তাঁর জন্ম ৬০১ খ্রিষ্টাব্দে। তিনি ছিলেন নবীজির (সা.) দ্বিতীয় মেয়ে। আবু লাহাবের ছেলে উতবাহর সাথে তাঁর বিয়ের চুক্তি (আকদ) হয়েছিল। কিন্তু নবীজি (সা.) নবুওয়তপ্রাপ্তির ঘোষণা দিলে আবু লাহাব সেই আকদ ভেঙে দেয়। এরপর রুকাইয়ার (রা.) বিয়ে হয় হযরত ওসমান ইবনে আফফানের (রা.) সাথে। তিনি স্বামীর সাথে হাবশায় হিজরত করেছিলেন, এই সময় তার বয়স ছিল ১৫।

তারা যখন হিজরত করার উদ্দেশ্যে রওনা দেন, নবীজি (সা.) তাদের কোনো খোঁজখবর পাচ্ছিলেন না। তিনি প্রতিদিন তাদের খবর নিতে বের হতেন। একদিন জনৈক মহিলা জানান তারা হাবশায় পৌঁছেছেন, নবীজি (সা.) এ খবর শুনে মন্তব্য করেন, ‘হজরত লুতের (আ) পর ওসমানই (রা.) প্রথম ব্যক্তি যিনি সপরিবারে হিজরত করেছেন। (মাজমাউয যাওয়ায়েদ, হাদিস: ১৪৯৯৮) হযরত রুকাইয়া (রা.) ৬২৪ খ্রিষ্টাব্দে ইন্তেকাল করেন।

২. উম্মে সালামাহ হিন্দ বিনতে আবু উমাইয়া (রা.)

তাঁর জন্ম ৫৯৪ খ্রিষ্টাব্দে। তিনি ছিলেন নবীজির (সা.) ফুফাতো ভাই ও দুধভাই আবু সালামাহ আবদুল্লাহ ইবনে আবদুল আসাদের (রা.) স্ত্রী। স্বামীর সাথে তিনি হাবশায় হিজরত করেন, তখন তার বয়স ছিল ২১।

সে সময় তিনি সন্তানসম্ভাবা ছিলেন, হাবশায় তাদের প্রথম পুত্র সালামাহর জন্ম হয়। উহুদ যুদ্ধের পর আবু সালামাহ (রা.) শাহাদাতবরণ করলে নবীজির (সা.) সাথে উম্মে সালামাহর (রা.) বিয়ে হয়। তিনি ছিলেন খুবই সাহসী ও জ্ঞান অনুরাগী নারী। তার অনেক প্রশ্নের ওপর কোরআনের আয়াত নাজিল হয়েছিল।

জীবনের শেষদিকে তিনি একদম সবার আড়ালে চলে যান, এমনকি তার মৃত্যুর তারিখ সঠিকভাবে জানা যায় না।

আরও পড়ুনমদিনায় হিজরত: ইসলামের ৬টি মাইলফলক০২ জুলাই ২০২৫৩. উম্মে আবদুল্লাহ লায়লা বিনতে আবু হাসমা (রা.)

তিনি ছিলেন হজরত আমির বিন রবিয়াহর (রা.) স্ত্রী। হাবশার হিজরতের ঘটনা নিয়ে তিনি দুটো হাদিস বর্ণনা করেন। এর একটি হাদিস থেকে জানা যায় হিজরতের সময় এক মুসলিম অপর মুসলিমের কতটা আপন হয়ে উঠেছিল। উম্মে আবদুল্লাহ বলেন:

সাহাবিগণ যখন হাবশার উদ্দেশ্যে বের হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের ঘরে এলেন এবং বললেন, ‘মুসআব ইবনে উমাইরকে (রা.) তার মা আটকে রেখেছে। তিনি আজ রাতেই বের হতে চান। যখন সবাই ঘুমিয়ে পড়বে, তখন তিনি চলে আসবেন।’

আমার স্বামী, আমির ইবনে রবিয়াহ (রা.) বললেন, ‘আমরা তার জন্য অপেক্ষা করব, দরজা বন্ধ করব না।’

রাত গভীর হলে মুসআব (রা.) আমাদের কাছে এসে পৌঁছালেন। সেদিন রাতটা আমাদের সঙ্গেই কাটালেন। পরদিনও ছিলেন, তারপর রাতে চুপিসারে বেরিয়ে পড়লেন। আমরা তার সঙ্গে দেখা করার অঙ্গীকার করেছিলাম—তিনি সেই জায়গায় এসে মিলিত হলেন, আর আমরা একত্রে রওনা হলাম। আমরা সবাই পায়ে হেঁটে চলছিলাম, কেবল একটি উট ছিল, তাতে আমি ছিলাম।

মুসআবের (রা.) শরীর ছিল খুবই নাজুক, তিনি পায়ের তলায় মাটি সহ্য করতে পারছিলেন না। আমি দেখেছি, তিনি কদম ফেলছেন আর তার পা থেকে রক্ত ঝরছে। আমির (রা.) তা দেখে নিজের জুতা খুলে তাকে দিয়ে দিলেন।

শেষ পর্যন্ত আমরা জাহাজে পৌঁছালাম। সেখানে একটি জাহাজ পাওয়া গেল, যা সদ্য ভুট্টা বোঝাই করে মাওর থেকে ফিরেছে। আমরা ভাড়া করে তাতে উঠলাম—সাগর পেরিয়ে প্রথমে মাওর, তারপর মাওর থেকে হাবশা।

লায়লা (রা.) আরও বলেন, ‘আমি দেখেছি, আমির (রা.) মুসআবের (রা.) প্রতি এমন মায়া দেখাচ্ছিলেন, এতটা মায়া নিজের সন্তানের প্রতিও দেখান না। অথচ মুসআবের (রা.) কাছে কানাকড়িও ছিল না, আর আমাদের কাছে ছিল সবমিলিয়ে পনের দিনার।’ (জামিউস সুন্নাতি ওয়া শুরুহিহা, হাদিস: ৩০৬৭)

৪. সাহলা বিনতে সুহায়ল (রা.)

তিনি ছিলেন হযরত আবু হুযায়ফা ইবনে উতবার (রা.) স্ত্রী। হাবশায় হিজরতের সময় তিনিও সন্তানসম্ভাবা ছিলেন। সেখানে তাদের পুত্র মুহাম্মদ বিন আবু হুজায়ফার (রা.) জন্ম হয়।

৫. উম্মে কুলসুম বিনতে সুহায়ল (রা.)

তিনি ছিলেন নবীজির (সা.) ফুফাতো ভাই হযরত আবু সাবরাহ ইবনে আবু রাহমের (রা.) স্ত্রী। তার স্বামী হাবশায় দুই-দুইবার হিজরত করেছিলেন।

কিন্তু তিনি প্রথমবার স্বামীর সাথে ছিলেন কিনা এই বিষয়ে মতবিরোধ আছে। হাফিজ ইবনে সাইয়িদুন নাস ‘উয়ুনুল আসার’-এ প্রথম হিজরতকারীদের তালিকায় তার নাম উল্লেখ করেছেন। তবে ইবনে ইসহাক তাকে দ্বিতীয় হিজরতকারীদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেন। (কিতাবুল ইসাবাহ ফি তাময়িজিস সাহাবাহ, খণ্ড ৮, পৃষ্ঠা ৪৬২, মাকতাবায়ে শামেলা)

[email protected]

মওলবি আশরাফ: আলেম, লেখক ও অনুবাদক।

আরও পড়ুনমহানবী (সা.)–এর হিজরত কেন মদিনায় হলো?১০ আগস্ট ২০২৪

সম্পর্কিত নিবন্ধ