শিক্ষাবিদ আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্কুলে পড়ার সময় তাঁদের একজন প্রধান শিক্ষককে আড়ালে ডাকতেন ‘ওইখানেই নিলডাউন’ নামে। কারণ, একটু এদিক–ওদিক হলেই যে যেখানে থাকে, তাকে সেখানেই নিলডাউন করিয়ে রাখতেন। ছাদের কার্নিশে, গাছের ডালে, ক্লাসের বেঞ্চে, দরজার মুখে—সবখানেই দেখা যেত কেউ না কেউ নিলডাউনরত অবস্থায়। এমনকি ৬ ফুটের বিশালদেহী স্কুলের দারোয়ানও বাদ যাননি।

এই গল্পের শেষটায় এসে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বললেন, ‘আমাদের সবকিছু কিন্তু ওইখানেই নিলডাউন হয়ে গেছে। এখন আশা হচ্ছ তোমরা। তোমরা যদি নিলডাউন থেকে উঠে দাঁড়াতে পারো, যদি হাঁটতে পারো, দৌড়াতে পারো, দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারো, তাহলে আমরা ওই প্রধান শিক্ষকের কবল থেকে মুক্তি পাব।

তা না হলে বাংলাদেশের অবস্থা ওইখানেই নিলডাউন হয়ে থাকবে।’ গতকাল বুধবার ছিল কিশোর আলোর ১২তম জন্মবার্ষিকী। অর্থাৎ শিশুকাল থেকে এবার কিশোর আলো নিজেই কৈশোরে পা দিয়েছে। আর এদিনেই দেশের তরুণতম মানুষটি কিশোর আলোকে শুভেচ্ছা জানাতে এসে একঝাঁক শিশু–কিশোর–তরুণকে নিজের ছোটবেলার গল্প শোনান আর ভবিষ্যতের আশাবাদ ব্যক্ত করেন। গতকাল ঢাকার কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ের সভাকক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

যেসব দেশ সবচেয়ে বেশি বই পড়ায় এগিয়ে, তারা প্রযুক্তিগতভাবেও অনেক এগিয়ে। এমনকি এই পাঠকদের বেশির ভাগই তরুণ। অর্থাৎ বই না পড়লে এগোনো যায় না। তাই সবাইকে বই পড়ার, সিনেমা দেখার ও গান শোনার আহ্বান জানান প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ।

ছাড়াকার ও চিকিৎসক রোমেন রায়হান কিছুটা আফসোসের সুরেই বলেন, সবাই কবি হতে চায়, কিন্তু ছড়াকার হতে চায় না। এরপর তিনি তাৎক্ষণিকভাবে একটি ছড়া শোনান, ‘কিশোর আলোর বয়স হলো বারো, সামনে তোমরা আরও বাড়ো।’

কমিকস আঁকার নিয়মকানুন তুলে ধরেন উন্মাদ সম্পাদক আহসান হাবীব। উপস্থিত খুদে পাঠকদের উদ্দেশে বলেন, বিদেশি কার্টুন, কমিকস থেকে ধারণা নেওয়া যাবে। কিন্তু নিজস্ব সংস্কৃতির চরিত্র দাঁড় করাতে হবে।

কার্টুনিস্ট মেহেদী হক বলেন, সৃষ্টিশীল কিছু করতেই হবে, বিষয়টি এমন নয়। যা ভালো লাগে, যেটা আনন্দ দেয়, সেটাই করতে হবে।

মেয়েদের কার্টুন আঁকা দরকার বলে মত দিলেন কার্টুনিস্ট নাসরিন সুলতানা মিতু। তাঁর কথায়, প্রতিদিন মেয়েরা যেসব ঘটনার মুখোমুখি হয়, তা কার্টুনে প্রকাশ করা যায়।

নানাজনের কথা বলার মধ্যে ফাঁকে ফাঁকে গানও ছিল। গায়ক ঈশান মজুমদার তাঁর জনপ্রিয় দুটি গান ‘গুলবাহার’ ও ‘নিঠুর মনোহর’ গেয়ে শোনান। লোকসংগীতভিত্তিক ব্যান্ড আপনঘরও কয়েকটি গান শোনায়। প্রথম আলো ট্রাস্টের সমন্বয়ক মাহবুবা সুলতানার সঙ্গে গলা মিলিয়ে কিশোরেরা গায় ‘আমরা সবাই রাজা’। এ ছাড়া কিশোর আলোর পাঠক আরিফা দেওয়ানও গান শোনান।

নিজের লেখা রহস্যগল্পের মতো করেই কিশোর আলোর পাঠকদের পাঁচটি গল্প খুঁজে বের করার মিশন দেন কথাসাহিত্যিক শিবব্রত বর্মন।

বয়স যখন তিন কি চার, তখন থেকেই আরিয়েত্তি ইসলাম রোবোটিকস নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি শুরু করে। যার ফল আট বছর বয়সেই সে ২৬তম আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডে স্বর্ণপদক জিতে নেয়। তৃতীয় শ্রেণির এই শিক্ষার্থী কিশোর আলোর পাঠকদের কাছে নিজের রোবট অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণের গল্প শোনায়।

কিশোর আলোর প্রথম কি–আড্ডার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন কিশোর আলোর সহসম্পাদক আহমাদ মুদ্দাসসের।

কিশোর আলোর সহকারী সম্পাদক আদনান মুকিত নবম শ্রেণিতে থাকতেই তিন বন্ধুসহ পত্রিকা বের করতেন। কারণ, তাঁদের কথা তো কেউ শুনবে না, লিখবে না। তাই নিজেদের সেই খুদে পত্রিকায় আবার উন্মাদ–এর মতো জনপ্রিয় ম্যাগাজিনের সম্পাদক আহসান হাবীবের লেখাও চেয়ে বসেন। আহসান হাবীব লেখা দিলে সেই লেখা ওইটুকু বয়সে সম্পাদনা করারও সাহস করেছিলেন তাঁরা। আদনান জানান, কিশোর আলো বের করতে গিয়ে এখনো তিনি আহসান হাবীবের কাছে লেখা চান।

নিজের গল্প বলতে গিয়ে কিশোর আলোর পাঠকদের উদ্দেশে বলেন, ‘তোমাদের যা ভালো লাগে করো। তাহলে “যত দূর যেতে চাও, তত দূর তোমার” কিশোর আলোর এই স্লোগানের মতো তোমরাও তত দূর যাবে।’

জন্মদিনের আয়োজনে কিশোর আলোকে শুভেচ্ছা জানান শিশুসাহিত্যিক আখতার হুসেন, চিকিৎসক ও কার্টুনিস্ট নাইমুর রহমান, বন্ধুসভার নির্বাহী সভাপতি মৌসুমী মৌ, বিজ্ঞানচিন্তার সহসম্পাদক উচ্ছ্বাস তৌফিক। আয়োজনটি উপস্থাপনা করেন জাহিন যাঈমাহ্ কবির ও আবু তালেব রাফি। সবাইকে নিয়ে কেক কাটার মধ্য দিয়ে শেষ হয় কিশোর আলোর ১২তম জন্মবার্ষিকীর আয়োজন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক শ র আল র প আহস ন হ ব ব প ঠকদ র প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

গান-গল্পে কিশোর আলোর কৈশোর উদ্‌যাপন

শিক্ষাবিদ আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্কুলে পড়ার সময় তাঁদের একজন প্রধান শিক্ষককে আড়ালে ডাকতেন ‘ওইখানেই নিলডাউন’ নামে। কারণ, একটু এদিক–ওদিক হলেই যে যেখানে থাকে, তাকে সেখানেই নিলডাউন করিয়ে রাখতেন। ছাদের কার্নিশে, গাছের ডালে, ক্লাসের বেঞ্চে, দরজার মুখে—সবখানেই দেখা যেত কেউ না কেউ নিলডাউনরত অবস্থায়। এমনকি ৬ ফুটের বিশালদেহী স্কুলের দারোয়ানও বাদ যাননি।

এই গল্পের শেষটায় এসে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বললেন, ‘আমাদের সবকিছু কিন্তু ওইখানেই নিলডাউন হয়ে গেছে। এখন আশা হচ্ছ তোমরা। তোমরা যদি নিলডাউন থেকে উঠে দাঁড়াতে পারো, যদি হাঁটতে পারো, দৌড়াতে পারো, দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারো, তাহলে আমরা ওই প্রধান শিক্ষকের কবল থেকে মুক্তি পাব।

তা না হলে বাংলাদেশের অবস্থা ওইখানেই নিলডাউন হয়ে থাকবে।’ গতকাল বুধবার ছিল কিশোর আলোর ১২তম জন্মবার্ষিকী। অর্থাৎ শিশুকাল থেকে এবার কিশোর আলো নিজেই কৈশোরে পা দিয়েছে। আর এদিনেই দেশের তরুণতম মানুষটি কিশোর আলোকে শুভেচ্ছা জানাতে এসে একঝাঁক শিশু–কিশোর–তরুণকে নিজের ছোটবেলার গল্প শোনান আর ভবিষ্যতের আশাবাদ ব্যক্ত করেন। গতকাল ঢাকার কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ের সভাকক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

যেসব দেশ সবচেয়ে বেশি বই পড়ায় এগিয়ে, তারা প্রযুক্তিগতভাবেও অনেক এগিয়ে। এমনকি এই পাঠকদের বেশির ভাগই তরুণ। অর্থাৎ বই না পড়লে এগোনো যায় না। তাই সবাইকে বই পড়ার, সিনেমা দেখার ও গান শোনার আহ্বান জানান প্রথম আলোর নির্বাহী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ।

ছাড়াকার ও চিকিৎসক রোমেন রায়হান কিছুটা আফসোসের সুরেই বলেন, সবাই কবি হতে চায়, কিন্তু ছড়াকার হতে চায় না। এরপর তিনি তাৎক্ষণিকভাবে একটি ছড়া শোনান, ‘কিশোর আলোর বয়স হলো বারো, সামনে তোমরা আরও বাড়ো।’

কমিকস আঁকার নিয়মকানুন তুলে ধরেন উন্মাদ সম্পাদক আহসান হাবীব। উপস্থিত খুদে পাঠকদের উদ্দেশে বলেন, বিদেশি কার্টুন, কমিকস থেকে ধারণা নেওয়া যাবে। কিন্তু নিজস্ব সংস্কৃতির চরিত্র দাঁড় করাতে হবে।

কার্টুনিস্ট মেহেদী হক বলেন, সৃষ্টিশীল কিছু করতেই হবে, বিষয়টি এমন নয়। যা ভালো লাগে, যেটা আনন্দ দেয়, সেটাই করতে হবে।

মেয়েদের কার্টুন আঁকা দরকার বলে মত দিলেন কার্টুনিস্ট নাসরিন সুলতানা মিতু। তাঁর কথায়, প্রতিদিন মেয়েরা যেসব ঘটনার মুখোমুখি হয়, তা কার্টুনে প্রকাশ করা যায়।

নানাজনের কথা বলার মধ্যে ফাঁকে ফাঁকে গানও ছিল। গায়ক ঈশান মজুমদার তাঁর জনপ্রিয় দুটি গান ‘গুলবাহার’ ও ‘নিঠুর মনোহর’ গেয়ে শোনান। লোকসংগীতভিত্তিক ব্যান্ড আপনঘরও কয়েকটি গান শোনায়। প্রথম আলো ট্রাস্টের সমন্বয়ক মাহবুবা সুলতানার সঙ্গে গলা মিলিয়ে কিশোরেরা গায় ‘আমরা সবাই রাজা’। এ ছাড়া কিশোর আলোর পাঠক আরিফা দেওয়ানও গান শোনান।

নিজের লেখা রহস্যগল্পের মতো করেই কিশোর আলোর পাঠকদের পাঁচটি গল্প খুঁজে বের করার মিশন দেন কথাসাহিত্যিক শিবব্রত বর্মন।

বয়স যখন তিন কি চার, তখন থেকেই আরিয়েত্তি ইসলাম রোবোটিকস নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি শুরু করে। যার ফল আট বছর বয়সেই সে ২৬তম আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডে স্বর্ণপদক জিতে নেয়। তৃতীয় শ্রেণির এই শিক্ষার্থী কিশোর আলোর পাঠকদের কাছে নিজের রোবট অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণের গল্প শোনায়।

কিশোর আলোর প্রথম কি–আড্ডার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন কিশোর আলোর সহসম্পাদক আহমাদ মুদ্দাসসের।

কিশোর আলোর সহকারী সম্পাদক আদনান মুকিত নবম শ্রেণিতে থাকতেই তিন বন্ধুসহ পত্রিকা বের করতেন। কারণ, তাঁদের কথা তো কেউ শুনবে না, লিখবে না। তাই নিজেদের সেই খুদে পত্রিকায় আবার উন্মাদ–এর মতো জনপ্রিয় ম্যাগাজিনের সম্পাদক আহসান হাবীবের লেখাও চেয়ে বসেন। আহসান হাবীব লেখা দিলে সেই লেখা ওইটুকু বয়সে সম্পাদনা করারও সাহস করেছিলেন তাঁরা। আদনান জানান, কিশোর আলো বের করতে গিয়ে এখনো তিনি আহসান হাবীবের কাছে লেখা চান।

নিজের গল্প বলতে গিয়ে কিশোর আলোর পাঠকদের উদ্দেশে বলেন, ‘তোমাদের যা ভালো লাগে করো। তাহলে “যত দূর যেতে চাও, তত দূর তোমার” কিশোর আলোর এই স্লোগানের মতো তোমরাও তত দূর যাবে।’

জন্মদিনের আয়োজনে কিশোর আলোকে শুভেচ্ছা জানান শিশুসাহিত্যিক আখতার হুসেন, চিকিৎসক ও কার্টুনিস্ট নাইমুর রহমান, বন্ধুসভার নির্বাহী সভাপতি মৌসুমী মৌ, বিজ্ঞানচিন্তার সহসম্পাদক উচ্ছ্বাস তৌফিক। আয়োজনটি উপস্থাপনা করেন জাহিন যাঈমাহ্ কবির ও আবু তালেব রাফি। সবাইকে নিয়ে কেক কাটার মধ্য দিয়ে শেষ হয় কিশোর আলোর ১২তম জন্মবার্ষিকীর আয়োজন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ