বিমা দাবি প্রত্যাখ্যান: কেন ঘটে, কীভাবে এড়ানো যায়
Published: 5th, October 2025 GMT
সাধারণ মানুষ ইন্স্যুরেন্স করেন সঞ্চয়ের পাশাপাশি বিপদের সময় আর্থিক ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে। তা ব্যক্তি, পরিবার বা ব্যবসাকে আকস্মিক কোনো দুর্ঘটনা, অসুস্থতা, মৃত্যু বা সম্পদের ক্ষয়-ক্ষতির সময় আর্থিক সুরক্ষা দেয়। সেইসঙ্গে একটা বাড়তি সুবিধা হলো, ইন্স্যুরেন্স আয়করমুক্ত।
এজন্য বিমাগ্রহীতারা বছরের পর বছর নিজেদের কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে নিয়মিত প্রিমিয়াম পরিশোধ করে যান। পলিসির মেয়াদ শেষে নির্ধারিত কাগজপত্রসহ আবেদনের পর সেই কাঙ্ক্ষিত অর্থ গ্রাহকের কাছে হস্তান্তর করে ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি।
তবে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রমও হয়। নানা কারণেই বিমা দাবি বাতিল হয়, যা গ্রাহকের জন্য এক ধরনের মানসিক ও আর্থিক ধাক্কা। বিশেষ করে, গুরুতর অসুস্থতা বা আর্থিক সংকটকালে বিমা দাবি পরিশোধ না করা পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তোলে।
আমরা মনে করি যে, ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলো বিমা দাবি পরিশোধ করতে চায় না। এর মাঝেও যারা বেশি বিমা দাবি পরিশোধ করে, তাদের মধ্যে শীর্ষে আছে গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড।
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দাবি বাতিল হওয়ার পেছনে গ্রাহকের অসতর্কতা বা নিয়ম না বোঝার বিষয়টি প্রধান ভূমিকা রাখে। আবার কখনো কখনো নিয়ম ভঙ্গ বা অসদুপায় অবলম্বনের কারণেও দাবি নাকোচ হয়। তাই, বিমা দাবি গ্রহণযোগ্য করতে হলে কেন দাবিগুলো প্রত্যাখ্যাত হয় এবং কীভাবে তা এড়ানো যায়, সে বিষয়ে গ্রাহকের স্পষ্ট ধারণা থাকা জরুরি।
কেন দাবি প্রত্যাখ্যাত হয়
ইন্স্যুরেন্স চুক্তি একটি আনুষ্ঠানিক দলিল, যেখানে শর্তাবলি স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকে। এসব শর্ত পূরণে ব্যর্থ হলেই জটিলতা দেখা দেয়।
গার্ডিয়ানের এর তথ্য অনুযায়ী, বিমা দাবি প্রত্যাখ্যানের সাধারণ কারণ
১.
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও চিকিৎসা ব্যয়ের রশিদ প্রদানে ব্যর্থতা
বিমা দাবি করার সময় সঠিক কাগজপত্র জমা দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময় দেখা যায়, গ্রাহক চিকিৎসা খরচের রসিদ বা হাসপাতালের বিল সংরক্ষণ করেন না কিংবা সেগুলো অসম্পূর্ণ থাকে। ফলে, কোম্পানি খরচের সত্যতা যাচাই করতে না পেরে দাবি নাকচ করে।
২. পূর্ব থেকে বিদ্যমান অসুস্থতা গোপন করা
পলিসি গ্রহণের আগে যেসব শারীরিক সমস্যা ছিল, সেগুলো যদি গ্রাহক লুকিয়ে রাখেন, তাহলে পরবর্তী সময়ে সেই অসুস্থতার কারণে করা দাবি গ্রহণযোগ্য হয় না। উদাহরণ: কেউ যদি হার্টের সমস্যা গোপন করে ইন্স্যুরেন্স নেন, পরে হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হলে কোম্পানি তা ‘প্রি-এক্সিস্টিং কন্ডিশন’ হিসেবে উল্লেখ করে দাবি বাতিল করতে পারে।
৩. কাগজপত্রে অসদুপায় অবলম্বন
কিছু গ্রাহক মিথ্যা তথ্য বা জাল কাগজপত্র জমা দেন। যেমন: হাসপাতালে ভর্তি না হয়েও ভর্তি খরচ দেখানো অথবা চিকিৎসার ব্যয় অতিরঞ্জিত করা। ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি তদন্তে এ ধরনের অসঙ্গতি পেলে পুরো দাবিই বাতিল করে দেয়।
৪. আইনবহির্ভূত কর্মকাণ্ড থেকে সৃষ্ট দাবি
যেসব দুর্ঘটনা বা ঘটনা বেআইনি কাজের সঙ্গে জড়িত, সেগুলো থেকে করা দাবি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি কখনো গ্রহণ করে না। যেমন: ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটলে, আত্মহত্যাজনিত মৃত্যু অথবা খুন-অপরাধে জড়িয়ে পড়লে, সেই দাবিগুলো সরাসরি প্রত্যাখ্যাত হয়।
৫. নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে দাবি না তোলা
পলিসির শর্ত অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দাবি জানাতে হয়। কিন্তু, অনেকেই অসচেতনতার কারণে দেরি করে আবেদন করেন। এতে দাবি বাতিল হয়ে যায়। ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলো সাধারণত স্পষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়। যেমন: ৩০ দিন বা ৬০ দিনের মধ্যে আবেদন করতে হবে। এই সময়সীমা অতিক্রম করলে বিমা দাবি নাকচ হয়ে যায়।
৬. চুক্তির আওতার বাইরের দাবি
সব দাবি ইন্স্যুরেন্সের আওতায় পড়ে না। পলিসিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকে কোন দুর্ঘটনা বা পরিস্থিতি কাভার হবে আর কোনগুলো হবে না। এ কারণে পলিসির বাইরে থাকা ঘটনায় বিমা দাবি করলে তা গ্রহণ করা হয় না।
কীভাবে এড়ানো যাবে
বিশেষজ্ঞদের মতে, কিছু পদক্ষেপ মেনে চললে দাবি প্রত্যাখ্যাত হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই কমানো সম্ভব।
প্রথমত, দাবি জমা দেওয়ার আগে পলিসির শর্তাবলি ও বর্জনীয় বিষয়গুলো ভালোভাবে পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। এতে গ্রাহক বুঝতে পারবেন, কোন দাবিগুলো গ্রহণযোগ্য আর কোনগুলো নয়।
দ্বিতীয়ত, ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলো নিয়মিত সচেতনতা সেশন আয়োজন করতে পারে, যেখানে গ্রাহকদের সঠিকভাবে নথিপত্র প্রস্তুতের পদ্ধতি শেখানো হবে।
এছাড়া, শুধু নিবন্ধিত চিকিৎসকের কাছ থেকে চিকিৎসা নেওয়া এবং সংশ্লিষ্ট সব কাগজপত্র সংরক্ষণ করা জরুরি। একইভাবে, দাবি জমা দেওয়ার সময় তথ্য সঠিক ও সম্পূর্ণভাবে দেওয়াও অপরিহার্য। অনেক সময় সামান্য ভুল তথ্যও পুরো দাবি প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, পলিসি নেওয়ার সময় গ্রাহকের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা-সংক্রান্ত সব তথ্য স্বচ্ছভাবে জানানো। পূর্ববর্তী অসুস্থতা গোপন করলে ভবিষ্যতে বিমা দাবি বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়।
পরিশেষে, বিমা দাবি প্রত্যাখ্যানের ঘটনা গ্রাহকের আস্থা নষ্ট করে এবং অনেক সময় পুরো খাতকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। অথচ সামান্য সচেতনতা ও স্বচ্ছতার মাধ্যমে এই পরিস্থিতি সহজেই এড়ানো সম্ভব। গ্রাহকের দায়িত্ব সঠিক তথ্য ও নথিপত্র প্রদান করা এবং কোম্পানির দায়িত্ব হলো গ্রাহককে নিয়ম সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দেওয়া। উভয় পক্ষ দায়িত্বশীল হলে ইন্স্যুরেন্স খাতকে আরো বিশ্বাসযোগ্য ও কার্যকর করা যাবে।
ঢাকা/রফিক
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইন স য র ন স ক ম প ন ক গজপত র গ র হক র দ র ঘটন পর শ ধ আর থ ক পল স র র সময়
এছাড়াও পড়ুন:
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা: কোটায় আবেদন ও ভর্তির শর্ত প্রকাশ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে প্রথম বর্ষ স্নাতক ও স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ভর্তি পরীক্ষায় কোটায় আবেদন ও ভর্তির শর্তাবলি প্রকাশিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী প্রার্থীরা ভর্তি পরীক্ষায় ন্যূনতম পাস নম্বর (৪০) পেলে তাদের জাতিভিত্তিক প্রত্যয়নপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি ও অন্যান্য অ্যাকাডেমিক কাগজপত্রসহ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী নির্বাচন কমিটির সভায় অবশ্যই সাক্ষাৎকারের জন্য নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে উপস্থিত হতে হবে।
আরও পড়ুনঅস্ট্রেলিয়া অ্যাওয়ার্ডস ফেলোশিপ, ৬ খাতে বিনা মূল্যে প্রশিক্ষণের সুযোগ১৭ নভেম্বর ২০২৫মুক্তিযোদ্ধার পুত্র বা কন্যা ভর্তি পরীক্ষায় ন্যূনতম পাস নম্বর (৪০) পেলে পিতা বা মাতার মুক্তিযোদ্ধা সনদপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি ও অন্যান্য অ্যাকাডেমিক কাগজপত্রসহ মুক্তিযোদ্ধার পুত্র বা কন্যা নির্বাচন কমিটির সভায় অবশ্যই সাক্ষাৎকারের জন্য (রাবি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত) নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে উপস্থিত হতে হবেন।
শারীরিক প্রতিবন্ধী প্রার্থী ভর্তি পরীক্ষায় ন্যূনতম পাস নম্বর (৪০) পেলে শারীরিক প্রতিবন্ধী হিসেবে প্রত্যয়নপত্র ও অন্য অ্যাকাডেমিক কাগজপত্রসহ শারীরিক প্রতিবন্ধী নির্বাচন কমিটির সভায় অবশ্যই সাক্ষাৎকারের জন্য (রাবি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত) নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে উপস্থিত হতে হবে।
খেলোয়াড় কোটায় ভর্তি-ইচ্ছুক প্রার্থী ভর্তি পরীক্ষায় ন্যূনতম পাস নম্বর (৪০) পেলে খেলোয়াড় নির্বাচন কমিটির সভায় (রাবি ওয়েবসাইটে প্রকাশিত) নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে বিগত দুই বছরের মধ্যে জাতীয় পর্যায়ের কোনো খেলায় অংশগ্রহণকারী খেলোয়াড়ের সমর্থনে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র উপস্থাপন করতে হবে।
সব প্রকার কোটার ক্ষেত্রে ভর্তি পরীক্ষায় ন্যূনতম পাস নম্বর (৪০) কোনোক্রমেই শিথিলযোগ্য হবে না।
সব প্রকার কোটার অন্তর্ভুক্ত প্রার্থীকে আবেদনের সময় অবশ্যই অনলাইনে প্রদত্ত নিয়মাবলি ও নির্দেশনা অনুসরণ করে প্রার্থিত কোটায় আবেদন করতে হবে। অন্যথায় তাদের কোটা ভুক্তির আবেদন গ্রহণযোগ্য হবে না।
আরও পড়ুনমেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষা: বিদেশি শিক্ষার্থীদের আসন বরাদ্দ, বেশি ভারতের১৭ নভেম্বর ২০২৫ভর্তিতে আবেদন শুরু কবে—রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে ভর্তিতে আবেদন ২০ নভেম্বর থেকে শুরু হবে। আগ্রহী শিক্ষার্থীরা আগামী ৭ ডিসেম্বর রাত ১১টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত আবেদন করতে পারবেন। ভর্তি পরীক্ষা হবে ১০০ নম্বরের এমসিকিউ পদ্ধতিতে। দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। ভর্তি পরীক্ষায় ৮০টি প্রশ্ন থাকবে। ভুল উত্তরের জন্য নম্বর কাটা যাবে।
এ-সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে প্রথম বর্ষ স্নাতক বা স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ভর্তির আবেদন আহ্বান করা যাচ্ছে। আবেদনকারীকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট -এ প্রকাশিত নিয়মাবলি অনুসরণ করে সংশ্লিষ্ট ইউনিটে অনলাইনে আবেদন করতে হবে। রাজশাহীসহ মোট ছয়টি বিভাগীয় শহরে এবারের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
আরও পড়ুননিউজিল্যান্ড আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের যে নতুন সুযোগ দিল ১৬ নভেম্বর ২০২৫কোন ইউনিটের পরীক্ষা কবেআবেদনকারীকে সংশ্লিষ্ট ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। আগামী ১৬ জানুয়ারি ‘সি’ ইউনিট (বিজ্ঞান), ১৭ জানুয়ারি ‘এ’ ইউনিট (মানবিক) ও ২৪ জানুয়ারি ‘বি’ ইউনিটের (বাণিজ্য) ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ভর্তি পরীক্ষার সময়সীমা হবে ১ (এক) ঘণ্টা। ভর্তি পরীক্ষা দুই শিফটে বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা ও বেলা ৩টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে। রাজশাহী, ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রংপুর ও বরিশাল অঞ্চলে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে।