বিসিবি নির্বাচন: কীভাবে নির্বাচিত হন পরিচালকেরা, কে হন সভাপতি
Published: 5th, October 2025 GMT
রাত পোহালেই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচন। নানা ঘটনাপ্রবাহে কয়েক দিন ধরে ক্রীড়াঙ্গনের আলোচিত বিষয়ই হয়ে উঠেছে এবারের নির্বাচন। এই নির্বাচনপ্রক্রিয়া কেমন, পরিচালক বা সভাপতি নির্বাচিত হন কীভাবে—চলুন জেনে নিই।কত বছর পরপর ভোট হয়, কতজন পরিচালক
বিসিবি পরিচালনা পর্ষদের ভোট হয় প্রতি চার বছর পরপর। বোর্ডে মোট পরিচালকের সংখ্যা ২৫। তিনটি ক্যাটাগরি থেকে আসেন পরিচালকেরা। ক্যাটাগরি-১–এ সাতটি বিভাগীয় ক্রিকেট সংস্থা থেকে ১০ জন পরিচালক নির্বাচিত হন।
ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনা—এই তিনটি বিভাগ থেকে দুজন করে ও রাজশাহী, রংপুর, বরিশাল, সিলেট বিভাগ থেকে একজন করে পরিচালক নির্বাচিত হন। ক্যাটাগরি-২ থেকে ঢাকা মহানগরের ক্লাবগুলোর প্রতিনিধিদের মধ্যে থেকে ১২ জন ও ক্যাটাগরি-৩–এ সাবেক অধিনায়ক, ক্রিকেটার ও কয়েকটি সংস্থার প্রতিনিধিদের মধ্য থেকে ১ জন পরিচালক নির্বাচিত হন। সব মিলিয়ে ২৩ জন পরিচালক নির্বাচন করে আসেন। এর বাইরে দুজনকে সরাসরি পরিচালক মনোনীত করে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ।
কীভাবে নির্বাচিত হন বিসিবি পরিচালকেরা, কারা দেন ভোটবিসিবি নির্বাচনে যে তিনটি ক্যাটাগরি রয়েছে, সব কটির ভোটারই আলাদা আলাদা। ক্যাটাগরি-১–এ প্রতিটি জেলা ও বিভাগ থেকে একজন করে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। তাঁদের মনোনয়ন দিয়ে থাকেন জেলা ও বিভাগীয় প্রশাসক। আগের নির্বাচনগুলোতে জেলা থেকে কাউন্সিলর নির্বাচনের কোনো মানদণ্ড ছিল না। তবে এবার জেলা ক্রীড়া সংস্থার অ্যাডহক কমিটির সদস্য হওয়ার বাধ্যবাধকতা রাখা হয়েছে।
জেলা ও বিভাগের কাউন্সিলরদের ভোটে শুধু নির্দিষ্ট ওই বিভাগের পরিচালকেরাই নির্বাচিত হন। সহজভাবে বললে—ঢাকা বিভাগের জেলাগুলোর প্রতিনিধিরা চট্টগ্রাম বা অন্য কোনো বিভাগের পরিচালক কে হবেন, সেই ভোট দিতে পারেন না। একই কথা প্রযোজ্য অন্য দুটি ক্যাটাগরির ক্ষেত্রেও—মানে ঢাকার ক্লাবের প্রতিনিধি বা ক্যাটাগরি-৩–এর ভোটাররা অন্য ক্যাটাগরির পরিচালকদের ভোট দিতে পারেন না।
আরও পড়ুনবিসিবির পরিচালক পদে প্রার্থী হলেন যাঁরা, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতলেন কারা০১ অক্টোবর ২০২৫ক্যাটাগরি-২–এ ভোট দেন নির্বাচন হওয়ার ঠিক আগের মৌসুমে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিভাগ ক্রিকেট লিগে খেলা ক্লাবগুলোর প্রতিনিধিরা। এই ক্লাবগুলোর ভোটে বিসিবির মোট ১২ জন পরিচালক নির্বাচিত হন। এবারের নির্বাচনে এই ক্যাটাগরিতে মোট ৭৬ জন ভোটার ছিলেন। তবে অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় তৃতীয় বিভাগ বাছাই পেরিয়ে আসা বিতর্কিত ১৫ ক্লাবের কাউন্সিলরশিপ স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট।
পরিচালকের বিপরীতে সবচেয়ে বেশি ভোটার ক্যাটাগরি-৩–এ। ৪৫ জন ভোটারের ভোটে এই ক্যাটাগরিতে নির্বাচিত হন ১ জন পরিচালক। জাতীয় দলের সাবেক ৫ অধিনায়ক ও সাবেক ক্রিকেটার ১০ জনও এই ক্যাটাগরির ভোটার। এর বাইরেও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড এবং কয়েকটি সংস্থার প্রতিনিধিরা এই ক্যাটাগরিতে ভোট দেন।
বিসিবি সভাপতি কীভাবে নির্বাচিত হনসভাপতি হওয়ার যোগ্যতা হিসেবে পরিচালক হওয়ার শর্ত আছে। অর্থাৎ নির্বাচিত হয়ে আসা ২৩ ও ক্রীড়া পরিষদের মনোনীত দুজন পরিচালকের মধ্য থেকেই কেউ সভাপতি হবেন। পরিচালকদের ভোটেই নির্বাচিত হবেন সভাপতি।
এবার নির্বাচনে প্রার্থী কারাবিসিবির এবারের নির্বাচনে ক্যাটাগরি-১–এ ভোট হবে শুধু ঢাকা, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে। চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আহসান ইকবাল চৌধুরী ও আসিফ আকবর, খুলনা থেকে আবদুর রাজ্জাক ও জুলফিকার আলী খান, সিলেট থেকে রাহাত সামস্ ও বরিশাল থেকে শাখাওয়াত হোসেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে গেছেন।
ঢাকা বিভাগ থেকে এবার নির্বাচনে লড়বেন বর্তমান বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম ও ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান নাজমূল আবেদীন.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
জবি ছাত্র জোবায়েদ হত্যা মামলায় ২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য জোবায়েদ হোসেন হত্যা মামলায় দুইজন সাক্ষী হিসেবে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
বুধবার (১৯ নভেম্বর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নিজাম উদ্দীন তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করেন।
আরো পড়ুন:
সখীপুরে মেয়েকে হত্যার পর নিজেকে শেষ করলেন মা
নেত্রকোণায় চালককে হত্যা করে মোটরসাইকেল ছিনতাই
সাক্ষীরা হলেন, জবি শিক্ষার্থী সৈকত হোসেন এবং সালাউদ্দিন স্পেশালাইজড হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. ওয়াহিদুর রহমান। সৈকত নিহত জোবায়েদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোট ভাই এবং ডা. ওয়াহিদ হত্যা মামলার অন্যতম আসামি বর্ষার মামা।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বংশাল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আশরাফ হোসেন সাক্ষীদের জবানবন্দি রেকর্ড করার জন্য আবেদন করেন।
জবানবন্দিতে সৈকত বলেন, “আমি জবির ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ফিন্যান্স বিভাগের শিক্ষার্থী ও জোবায়েদ ভার্সিটির বড় ভাই। আমি জোবায়েদ ভাইয়ের ক্লোজ ছোট ভাই হওয়াতে বর্ষা আমার নাম্বার জোবায়েদ ভাই থেকে নেয়। মাঝে মাঝে হোয়াটসঅ্যাপ হাই, হ্যালো কথাবার্তা হত। ২-৩ মাস আগে বর্ষা আমাকে ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠায়। তখন থেকে বর্ষার সঙ্গে আমার আর যোগাযোগ হয়নি। জোবায়েদ ভাই প্রায় ১ বছর ধরে বর্ষাকে বাসায় টিউশন পড়াত।”
তিনি বলেন, “ভার্সিটি এলাকায় থাকাকালে গত ১৯ অক্টোবর বিকেল ৫টা ৫৮ মিনিটের দিকে বর্ষা তাকে ম্যাসেঞ্জারে ম্যাসেজ দেয়, ‘ভাইয়া কই তুমি?’ আমি জানাই ক্যাম্পাসে। বর্ষা বলে, ‘স্যারের আম্মুর নাম্বার আছে?’ কারণ জানতে চাইলে বর্ষা বলে, ‘লাগবে।’ ভাইয়ের কিছু হয়ছে কি না জানতে চাইলে বর্ষা বলে, ‘ভাইরে (জোবায়দে) কে জানি মাইরা ফেলছে।’ আমি বলি, মাইরা ফেলছে বলতে? বর্ষা বলে, ‘খুন করে ফেলছে।’ তখন বর্ষাকে কল দেওয়ার চেষ্টা করি, কিন্তু তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি। এরপর বিষয়টি বড় ভাইদের জানাই।”
ডা. ওয়াহিদুর রহমান জবানবন্দিতে বলেন, “গত ১৯ অক্টোবর সাপ্তাহিক নৈশ্যকালীন ডিউটি থাকায় বাসায় অবস্থান করছিলাম এবং ড্রইং রুমে বসে টিভি দেখছিলাম। হঠাৎ আমার স্ত্রীকে দ্বিতীয় তলার চাচাতো ভাই ফোন করে জানায়, সিঁড়িতে কোনো একজন লোক পড়ে আছে। আমরা তখন সঙ্গে সঙ্গে দরজা খুলে দেখি সিঁড়ির মাঝামাঝি একজন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।”
তিনি বলেন, “তাদের চিৎকার চেঁচামেচিতে বাড়ির লোকজন জড় হয়ে যায় এবং সেখানে শনাক্ত হয় যে, আমার ভাগ্নি বর্ষার প্রাইভেট টিউটর জুবায়েদের মরদেহ। তাৎক্ষণিক ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে পুলিশকে অবহিত করি।”
বর্ষার মামা জানান, পরবর্তীতে তিনি জানতে পারেন তার ভাগ্নি বর্ষার সঙ্গে মাহির নামক এক ছেলের প্রেমের সম্পর্ক ছিল এবং জোবায়েদ মাস্টারের সঙ্গেও বর্ষার প্রেম ছিল। এই দ্বন্দ্বের কারণে মাহির রহমান, জোবায়েদ মাস্টারকে হত্যা করে ঘটনার দিন দৌড়ে পালিয়ে যায়।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, মো. জোবায়েদ হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি টিউশনি করতেন। প্রতিদিনের মতো গত ১৯ অক্টোবর বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বংশাল থানাধীন ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে নুর বক্স লেনের ১৫ নম্বর হোল্ডিং রৌশান ভিলায় বর্ষাকে পড়ানোর জন্য যান।
সন্ধ্যা ৫টা ৪৮ মিনিটের দিকে ওই ছাত্রী জোবায়েদ হোসেনের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোট ভাই সৈকতকে ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমে জানায়, “জোবায়েদ স্যার, খুন হয়ে গেছে। কে বা কারা জোবায়েদ স্যারকে খুন করে ফেলছে।”
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মো. কামরুল হাসান ৭টার দিকে জোবায়েদের ভাই এনায়েত হোসেনকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তথ্যটি জানান। এনায়েত তার শ্যালক শরীফ মোহাম্মদকে সঙ্গে নিয়ে মোটরসাইকেলে করে সাড়ে ৮টার দিকে ঘটনাস্থল রৌশান ভিলায় পৌঁছান। ভবনের নিচতলা থেকে ওপরে ওঠার সময় সিঁড়ি এবং দেয়ালে রক্তের দাগ দেখতে পান। ওই ভবনের তৃতীয় তলার রুমের পূর্ব পার্শ্বে সিঁড়িতে জোবায়েদের রক্তাক্ত মরদেহ উপুড় অবস্থায় দেখতে পান।
ঘটনার দুইদিন পর ২১ অক্টোবর জোবায়েদের ভাই এনায়েত হোসেন বংশাল থানায় মামলা করেন। তিনি অভিযোগ করেন, আসামিরা পরস্পর যোগসাজসে জোবায়েদকে পূর্বপরিকল্পিতভাবে ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলার ডান পাশে আঘাত করে হত্যা করেছে।
মামলায় বর্ষা, তার প্রেমিক মো. মাহির রহমান, মাহিরের বন্ধু ফারদীন আহম্মেদ আয়লান ২১ অক্টোবর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। বর্তমানে তারা কারাগারে রয়েছে।
ঢাকা/লিমন/মেহেদী