সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩ হাজার ১৭২ ফুট উঁচু কেওক্রাডং পাহাড়। সেখানে সারা দিন চলে মেঘের খেলা। পাহাড়ের ওপর দিয়ে চলে গেছে রুমা-বগা লেক-ধুপানিছড়া সড়ক। সেনাবাহিনীর নির্মাণ করা এই সড়ক দেশের সবচেয়ে উঁচু পাহাড়ি সড়ক। শিল্পীর তুলিতে আঁকা ছবির মতো কোথাও উঁচু পাহাড়ি ঢাল, কোথাও খাদের দিকে নেমে গেছে সড়কটি।

ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ায় কেওক্রাডংয়ের এই অপরূপ সৌন্দর্য দেখার সুযোগ মিলছে পর্যটকদের। সেই সঙ্গে হাসি ফুটেছে লালা বমের মতো পর্যটনশিল্পের সঙ্গে জড়িত উদ্যোক্তাদের মুখে। কেওক্রাডং পাহাড়চূড়ায় লালা বমের অবকাশযাপন কেন্দ্র প্রায় তিন বছর পর আবার পর্যটকে মুখর হয়ে উঠেছে। তিনি বললেন, ‘ঈশ্বর যেন আর এমন ক্ষতি না করেন। এখন থেকে যেন আর পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা না আসে। যাতে তিন বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারি।’

গত বৃহস্পতিবার দুপুরে লালা বমের সঙ্গে কেওক্রাডং পাহাড়চূড়ায় তাঁর অবকাশযাপন কেন্দ্রে বসে কথা হচ্ছিল। এর আগের দিন বুধবার থেকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কেওক্রাডং পাহাড়চূড়ায় পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়। নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পরপরই বগা লেক হয়ে কেওক্রাডং পাহাড়ে পর্যটকেরা আসতে শুরু করেছেন দল বেঁধে।

রুমা থানার পুলিশের হিসাবমতে, বুধ ও বৃহস্পতিবার কিছু স্থানীয় লোকসহ আড়াই হাজারের বেশি পর্যটক কেওক্রাডং পাহাড়ে গেছেন। সব ঠিকঠাক থাকলে মৌসুমে প্রতিদিন হাজারের বেশি পর্যটক আসবেন বলে মনে করছে পুলিশ। বগা লেক ও কেওক্রাডংয়ের পর্যটনশিল্পও দ্রুত ঘুরে দাঁড়াবে।

পর্যটকেরা আসায় লালা বমের মতো দার্জিলিংপাড়া, বগা লেকের পর্যটননির্ভর বম জনগোষ্ঠীর সবাই আনন্দিত। বগা লেকের ব্যবসায়ী আমং বম বললেন, পর্যটনের ওপর নির্ভর করে বগা লেক পাড়া গড়ে উঠেছে। প্রায় তিন বছর ধরে পর্যটক আসা বন্ধ থাকায় তাঁরা খুবই সংকটে পড়েছেন। গত ৬ জুন বগা লেকে পর্যটন খুলে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পর্যটকেরা শুধু বগা লেক ঘুরতে আসেন না, একই সঙ্গে কেওক্রাডং পাহাড়ের নৈসর্গিক সৌন্দর্যও উপভোগ করতে চান। এ জন্য কেওক্রাডং খুলে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শত শত পর্যটক আসতে শুরু করেছেন। এতে কটেজ, রিসোর্টে কোনো কক্ষ খালি নেই। খাবারের দোকান, বাগানের ফল, কোমরতাঁতের কাপড় বিক্রি হচ্ছে। টাকা কিছুটা হলেও হাতে আসছে। তবে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সময় লাগবে।

লালকিম বমের তিনটি অবকাশযাপন কেন্দ্রে ভালো পর্যটক আসছে। ১ থেকে ১১ অক্টোবর পর্যন্ত সব কটি কক্ষ আগাম বুক হয়ে গেছে। লালকিম বমও বললেন, দীর্ঘদিন পর্যটক না আসায় রিসোর্টের কাপড়চোপড়, বালিশ, দরজা-জানালা সবকিছু নষ্ট হয়ে গেছে। সেগুলো জোগাড় করতে বহু ধারদেনা হয়েছে। পর্যটক আসতে থাকলে ঘুরে দাঁড়াতে আরও কয়েক মাস লাগবে।

তবে কেওক্রাডং পাহাড়চূড়ার পাশের দার্জিলিংপাড়ার অবস্থা এখনো পুরোদমে স্বাভাবিক হয়ে ওঠেনি। কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) তৎপরতায় ৩০ পরিবারের পাড়ার অধিকাংশ বাসিন্দা পালিয়ে ছিলেন। পাড়ার কার্বারি (পাড়াপ্রধান) লাল লমসাং বম জানালেন, কেএনএফের তৎপরতা না থাকায় ২২টি পরিবার বাড়িঘরে ফিরেছে। এখনো আটটি পরিবার পাড়ায় ফিরতে পারেনি। তাদের পাড়ায় পর্যটকদের থাকার কটেজ ও হোমেস্টে ব্যবস্থা চালু করতে আরও কিছু সময় লাগবে। তবে দ্রুত চালু করার চেষ্টা করছেন বলে জানালেন কার্বারি।

রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচির দুর্গম এলাকায় কেএনএফ নামে নতুন একটি সশস্ত্র সংগঠনের তৎপরতায় ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে কেওক্রাডং পাহাড়ে প্রশাসন পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় ১ অক্টোবর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে।

বান্দরবানের রুমা উপজেলার কেওক্রাডং পাহাড়.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ভ রমণ

এছাড়াও পড়ুন:

ডাকসু সদস্য রাফিয়ার বাড়িতে রাতে ককটেল নিক্ষেপের ঘটনায় গ্রেপ্তার ৪

ময়মনসিংহে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সদস্য উম্মা উসওয়াতুন রাফিয়ার বাড়িতে ককটেল নিক্ষেপ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে পৃথক অভিযানে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।

গত বুধবার রাত তিনটার দিকে ডাকসু সদস্য উম্মা উসওয়াতুন রাফিয়ার ময়মনসিংহ নগরের ঢোলাদিয়া এলাকার বাসায় ককটেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে।

আরও পড়ুনডাকসু সদস্য রাফিয়ার ময়মনসিংহের বাড়িতে গভীর রাতে ককটেল নিক্ষেপ২০ নভেম্বর ২০২৫

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন নগরের কেওয়াটখালী এলাকার মো. মাসুদ রানা (৪৫), আকুয়া বোর্ডঘর এলাকার মো. আরিফ (৩০), মো. বিপুল (২১), আকুয়া ওয়্যারলেস গেট এলাকার মো. রাজন (১৯)। চারজনই কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।

পুলিশ জানায়, জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) ও কোতোয়ালি মডেল থানার সমন্বয়ে পরিচালিত যৌথ অভিযানে ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগে বৃহস্পতিবার রাতে নগরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ককটেল ছোড়ার ঘটনায় বৃহস্পতিবার বিকেলে রাফিয়ার ভাই খন্দকার জুলকারনাইন কোতোয়ালি মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। পরে সেটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়।

মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, বুধবার রাত ২টা ৫০ থেকে তিনটার মধ্যে বিকট শব্দে তাঁদের বাসার সবার ঘুম ভেঙে যায়। পরে সকালে ঘুম থেকে উঠে বাসার নিচে এসে দেখা যায়, বাসার গেটের একাংশ পুড়ে কালো হয়ে আছে এবং গেটের সামনে কিছু পোড়া ছাই পাওয়া যায়। বাসার গেটের আশপাশে কেরোসিন ও পেট্রলের গন্ধ পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে ময়মনসিংহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ডাকসু নেত্রী রাফিয়ার বাসভবনের গেটে দুষ্কৃতকারীদের অগ্নিসংযোগের ঘটনাটির পরপর পুলিশ তৎপরতা শুরু করে। ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চারজনকে গ্রেপ্তার করে আজ শুক্রবার বিকেলে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া এ ঘটনায় জড়িত অন্যদের বিষয়ে গোয়েন্দা তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে এবং গ্রেপ্তারের অভিযান চলমান আছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ডাকসু সদস্য রাফিয়ার বাড়িতে রাতে ককটেল নিক্ষেপের ঘটনায় গ্রেপ্তার ৪