মেঘে ঢাকা কেওক্রাডং পাহাড়ের টানে
Published: 6th, October 2025 GMT
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩ হাজার ১৭২ ফুট উঁচু কেওক্রাডং পাহাড়। সেখানে সারা দিন চলে মেঘের খেলা। পাহাড়ের ওপর দিয়ে চলে গেছে রুমা-বগা লেক-ধুপানিছড়া সড়ক। সেনাবাহিনীর নির্মাণ করা এই সড়ক দেশের সবচেয়ে উঁচু পাহাড়ি সড়ক। শিল্পীর তুলিতে আঁকা ছবির মতো কোথাও উঁচু পাহাড়ি ঢাল, কোথাও খাদের দিকে নেমে গেছে সড়কটি।
ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ায় কেওক্রাডংয়ের এই অপরূপ সৌন্দর্য দেখার সুযোগ মিলছে পর্যটকদের। সেই সঙ্গে হাসি ফুটেছে লালা বমের মতো পর্যটনশিল্পের সঙ্গে জড়িত উদ্যোক্তাদের মুখে। কেওক্রাডং পাহাড়চূড়ায় লালা বমের অবকাশযাপন কেন্দ্র প্রায় তিন বছর পর আবার পর্যটকে মুখর হয়ে উঠেছে। তিনি বললেন, ‘ঈশ্বর যেন আর এমন ক্ষতি না করেন। এখন থেকে যেন আর পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা না আসে। যাতে তিন বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারি।’
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে লালা বমের সঙ্গে কেওক্রাডং পাহাড়চূড়ায় তাঁর অবকাশযাপন কেন্দ্রে বসে কথা হচ্ছিল। এর আগের দিন বুধবার থেকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কেওক্রাডং পাহাড়চূড়ায় পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়। নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পরপরই বগা লেক হয়ে কেওক্রাডং পাহাড়ে পর্যটকেরা আসতে শুরু করেছেন দল বেঁধে।
রুমা থানার পুলিশের হিসাবমতে, বুধ ও বৃহস্পতিবার কিছু স্থানীয় লোকসহ আড়াই হাজারের বেশি পর্যটক কেওক্রাডং পাহাড়ে গেছেন। সব ঠিকঠাক থাকলে মৌসুমে প্রতিদিন হাজারের বেশি পর্যটক আসবেন বলে মনে করছে পুলিশ। বগা লেক ও কেওক্রাডংয়ের পর্যটনশিল্পও দ্রুত ঘুরে দাঁড়াবে।
পর্যটকেরা আসায় লালা বমের মতো দার্জিলিংপাড়া, বগা লেকের পর্যটননির্ভর বম জনগোষ্ঠীর সবাই আনন্দিত। বগা লেকের ব্যবসায়ী আমং বম বললেন, পর্যটনের ওপর নির্ভর করে বগা লেক পাড়া গড়ে উঠেছে। প্রায় তিন বছর ধরে পর্যটক আসা বন্ধ থাকায় তাঁরা খুবই সংকটে পড়েছেন। গত ৬ জুন বগা লেকে পর্যটন খুলে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পর্যটকেরা শুধু বগা লেক ঘুরতে আসেন না, একই সঙ্গে কেওক্রাডং পাহাড়ের নৈসর্গিক সৌন্দর্যও উপভোগ করতে চান। এ জন্য কেওক্রাডং খুলে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শত শত পর্যটক আসতে শুরু করেছেন। এতে কটেজ, রিসোর্টে কোনো কক্ষ খালি নেই। খাবারের দোকান, বাগানের ফল, কোমরতাঁতের কাপড় বিক্রি হচ্ছে। টাকা কিছুটা হলেও হাতে আসছে। তবে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সময় লাগবে।
লালকিম বমের তিনটি অবকাশযাপন কেন্দ্রে ভালো পর্যটক আসছে। ১ থেকে ১১ অক্টোবর পর্যন্ত সব কটি কক্ষ আগাম বুক হয়ে গেছে। লালকিম বমও বললেন, দীর্ঘদিন পর্যটক না আসায় রিসোর্টের কাপড়চোপড়, বালিশ, দরজা-জানালা সবকিছু নষ্ট হয়ে গেছে। সেগুলো জোগাড় করতে বহু ধারদেনা হয়েছে। পর্যটক আসতে থাকলে ঘুরে দাঁড়াতে আরও কয়েক মাস লাগবে।
তবে কেওক্রাডং পাহাড়চূড়ার পাশের দার্জিলিংপাড়ার অবস্থা এখনো পুরোদমে স্বাভাবিক হয়ে ওঠেনি। কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) তৎপরতায় ৩০ পরিবারের পাড়ার অধিকাংশ বাসিন্দা পালিয়ে ছিলেন। পাড়ার কার্বারি (পাড়াপ্রধান) লাল লমসাং বম জানালেন, কেএনএফের তৎপরতা না থাকায় ২২টি পরিবার বাড়িঘরে ফিরেছে। এখনো আটটি পরিবার পাড়ায় ফিরতে পারেনি। তাদের পাড়ায় পর্যটকদের থাকার কটেজ ও হোমেস্টে ব্যবস্থা চালু করতে আরও কিছু সময় লাগবে। তবে দ্রুত চালু করার চেষ্টা করছেন বলে জানালেন কার্বারি।
রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচির দুর্গম এলাকায় কেএনএফ নামে নতুন একটি সশস্ত্র সংগঠনের তৎপরতায় ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে কেওক্রাডং পাহাড়ে প্রশাসন পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় ১ অক্টোবর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে।
বান্দরবানের রুমা উপজেলার কেওক্রাডং পাহাড়.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ভ রমণ
এছাড়াও পড়ুন:
বরিশালে মা ইলিশ নিধন ঠেকাতে পাহারায় থাকবে ড্রোন
ইলিশের প্রজনন মৌসুম নির্বিঘ্ন রাখতে এবং মা ইলিশ সুরক্ষায় দেশের সবচেয়ে বড় ইলিশের অভয়াশ্রম বরিশালের মেঘনাসহ সন্নিহিত নদ-নদীতে ড্রোন দিয়ে নজরদারির উদ্যোগ নিয়েছে মৎস্য বিভাগ।
এর মধ্যে গতকাল শুক্রবার মধ্যরাত থেকে ইলিশের প্রজনন মৌসুমকে ঘিরে দেশের সব নদ-নদী ও সাগরে শুরু হয়েছে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা। তা বলবৎ থাকবে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত। এই সময়ে ইলিশ ধরা, বিপণন, পরিবহন ও মজুত দণ্ডনীয় অপরাধ।
বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য বিভাগ সূত্র জানায়, নিষেধাজ্ঞা চলাকালে বরিশালের হিজলা, মুলাদী, মেহেন্দীগঞ্জ, চাঁদপুরের হাইমচর থেকে শুরু করে ভোলার তেঁতুলিয়া পর্যন্ত নদ-নদী, মেঘনা অববাহিকা ও শাখানদীগুলোয় ছোট ছোট নৌকা নিয়ে প্রতিবছর ইলিশ শিকার করেন স্থানীয় কয়েক হাজার জেলে। তাঁদের সঙ্গে যোগ হয় মৌসুমি জেলেরাও।
মৎস বিভাগ সূত্র জানায়, এবার এই তৎপরতা রোধে মৎস্য বিভাগ প্রথম প্রযুক্তিগত সহায়তা নিয়ে মাঠে নামবে। মাছ ধরা ঠেকাতে বরিশালের মেঘনা নদীর ৮২ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা চলাকালে আকাশে নজরদারির জন্য ড্রোন ব্যবহার করা হবে। এ ছাড়া জেলার নদ–নদীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে যৌথ বাহিনীর তৎপরতা থাকবে কঠোরভাবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা এসব পয়েন্টে অবস্থান নেবেন। প্রয়োজনে সেনাবাহিনীকেও অভিযানে যুক্ত করা হবে। সঙ্গে থাকবেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক। নিষিদ্ধ সময়ে কেউ মাছ ধরলে তাঁকে দণ্ড দেওয়া হবে।
এ তথ্য নিশ্চিত করে হিজলা উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলম জানান, এই অভিযান কেবল নদীতেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, হাটবাজার, লঞ্চ ও বাস টার্মিনালগুলোতেও তল্লাশি ও নজরদারি চলবে।
মোহাম্মদ আলম বলেন, অভিযান পরিচালনার জন্য মাঠে থাকবেন ৩০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। যৌথ বাহিনীতে কোস্টগার্ড, নৌপুলিশ ও র্যাব সদস্যরা থাকবেন। এ ছাড়া সার্বক্ষণিক স্পিডবোট নিয়ে টহলও চলবে।
মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ওমর সানি বলেন, ‘মা ইলিশ রক্ষায় আমরা বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম করেছি। এবার সর্বশক্তি দিয়ে অভিযান পরিচালিত হবে।’
মা ইলিশ সংরক্ষণে ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম বাস্তবায়ন উপলক্ষে কীর্তনখোলা নদীতে নৌ শোভাযাত্রার আয়োজন করে জেলা প্রশাসন ও জেলা মৎস্য দপ্তর। শনিবার সকালে বরিশালের কীর্তনখোলা নদীতে