নিজেকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ‘মাস্টারমাইন্ড’ মনে করেন না তারেক রহমান
Published: 6th, October 2025 GMT
২০২৪ সালে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। লন্ডনে থাকলেও আন্দোলনের বিভিন্ন পর্যায়ে সক্রিয় ভূমিকা ছিল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের। সেই ভূমিকার জন্য গত এক বছরে কেউ কেউ তারেক রহমানকে এই আন্দোলনের ‘একমাত্র মাস্টারমাইন্ড’ হিসেবে উল্লেখ করে বক্তব্য দিয়েছেন। কিন্তু তারেক রহমান জানিয়েছেন, তিনি নিজেকে জুলাই অভ্যুত্থানের ‘মাস্টারমাইন্ড’ হিসেবে দেখেন না।
২০০৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে নির্বাসিত জীবন যাপন করছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বিবিসি বাংলাকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। দীর্ঘ ১৭ বছর পর এই প্রথম কোনো গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিলেন তিনি। সাক্ষাৎকারে এক প্রশ্নের উত্তরে তারেক রহমান বলেছেন, ‘কোনো দল বা ব্যক্তি নন, জুলাই আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী জনগণ।’
আরও পড়ুনখালেদা জিয়া, পরিবারের কেউ নির্বাচনে ভূমিকায় থাকবেন কি না, জানালেন তারেক রহমান১ ঘণ্টা আগেজুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর গত এক বছরে বিএনপির কোনো কোনো কেন্দ্রীয় নেতা তারেক রহমানকে এই আন্দোলনের ‘একমাত্র মাস্টারমাইন্ড’ হিসেবে উল্লেখ করে বক্তব্য দিয়েছেন। বিষয়টি উল্লেখ করে তারেক রহমানের কাছে বিবিসি বাংলার প্রশ্ন ছিল, তিনি নিজেকে এই আন্দোলনের ‘মাস্টারমাইন্ড’ হিসেবে দেখেন কি না?
উত্তরে তারেক রহমান বলেছেন, ‘না, আমি অবশ্যই এই জুলাই আন্দোলনে আমাকে কখনোই মাস্টারমাইন্ড হিসেবে দেখি না। এই আন্দোলন সফল হয়েছে জুলাই মাসে, কিন্তু এর প্রেক্ষাপট শুরু হয়েছে কিন্তু বহু বছর আগে থেকে। এই আন্দোলনে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর নেতা-কর্মীরা, সেটি বিএনপি হোক বা অন্য রাজনৈতিক দলগুলো হোক, যারা গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল বিভিন্নভাবে অবদান রেখেছে। বিভিন্নভাবে তাদের নেতা-কর্মীরা নির্যাতিত হয়েছে। আমি মনে করি, জুলাই-আগস্ট মাসে (২০২৪ সাল) এসে জনগণ সব গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের সঙ্গে অংশগ্রহণ করেছে।’
আরও পড়ুন১৭ বছর পর সাক্ষাৎকার: কবে ফিরবেন, নির্বাচনে অংশ নেবেন কি না, কী বললেন তারেক রহমান৩ ঘণ্টা আগেশুধু রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা নন, আরও নানা পর্যায়ের মানুষ জুলাই অভ্যুত্থানে অংশ নিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, ‘আমরা দেখেছি, সেদিন মাদ্রাসার ছাত্ররা, তাঁরা ছিলেন এই আন্দোলনের মাঠে। আমরা দেখেছি, গৃহিণীরা পর্যন্ত রাস্তায় নেমে এসেছেন সন্তানের পেছনে। আমরা দেখেছি, কৃষক, শ্রমিক, সিএনজিচালক, ছোট দোকান কর্মচারী বা দোকানমালিক থেকে আরম্ভ করে গার্মেন্টসকর্মী—তাঁরা নেমে এসেছিলেন। আমরা দেখেছিলাম, সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নেমে এসেছিলেন এই আন্দোলনে। এমন অনেক সাংবাদিক, যাঁরা স্বৈরাচারের অত্যাচারে নির্যাতিত হয়ে দেশ থেকে বাইরে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন, তাঁরা সম্পৃক্ত হয়েছিলেন এই আন্দোলনে। কাজেই কারও ভূমিকাকে আমরা ছোট করে দেখতে চাই না, খাটো করে দেখতে চাই না।’
তারেক রহমান বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন দৃঢ়ভাবে, সমাজের দল–মতনির্বিশেষে, শ্রেণিবিন্যাস–নির্বিশেষে প্রত্যেকটি মানুষের এই আন্দোলনে অবদান আছে। এই আন্দোলন ছিল বাংলাদেশের জনগণের আন্দোলন। যাঁরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন, তাঁরা এই আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড। কোনো দল, কোনো ব্যক্তি নয়, এই আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী জনগণ।
আরও পড়ুনগুপ্ত স্বৈরাচার থেকে দেশের মানুষকে রক্ষা করতে হবে: তারেক রহমান২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫জুলাই অভ্যুত্থান চলাকালে ছাত্রনেতৃত্বের সঙ্গে আপনার কতটা যোগাযোগ ছিল, বিবিসি বাংলা এই প্রশ্ন করে। উত্তরে তারেক রহমান বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবে আমি যেহেতু বাইরে থেকে কাজ করছি, আমাকে যোগাযোগটা অনলাইনের মাধ্যমে রাখতে হয়েছে। এবং সেই দিনগুলোতে আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে যে টেলিফোন সিস্টেম বা অনলাইন সিস্টেমের কী অবস্থা করেছিল স্বৈরাচার। আপনি যোগাযোগের যেটি কথা বলেছেন, এই যোগাযোগ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ বিভিন্নভাবে আমাদের করতে হয়েছে। বিভিন্ন মাধ্যমে করতে হয়েছে। যোগাযোগটা যে খুব স্মুথ সব সময় থেকেছে, তা নয়। প্রত্যেকে সহযোগিতা করেছি আমরা।’
জুলাই অভ্যুত্থানের কৃতিত্ব নিয়ে বিভিন্ন পক্ষের দাবি বা সংকীর্ণ স্বার্থ পূরণের যে চেষ্টা, সেখানে বিএনপির কোনো দায় আছে কি না, তা তারেক রহমানের কাছে জানতে চায় বিবিসি বাংলা। জবাবে তিনি বলেন, ‘দেখুন, ব্যাপারটা আমরা যদি একটু অন্যভাবে দেখি। বাংলাদেশের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত এটি একটি অবিস্মরণীয় ঘটনা। এই আন্দোলন, মানুষের এই আত্মত্যাগ, সাধারণত কোনো রাজনৈতিক আন্দোলনে বা স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে শিশু হত্যা হয় না, শিশু শহীদ হয় না, শিশু মৃত্যুবরণ করে না। কিন্তু আমরা দেখেছি, এই আন্দোলনে.
এ ব্যাপারে বিএনপির অবস্থান কী, তা বলতে গিয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘আমি বা আমার দলের অবস্থান হচ্ছে, আন্দোলন হয়ে গিয়েছে, আন্দোলনে জনগণ সফলতা লাভ করেছেন। আন্দোলনে স্বাভাবিকভাবেই দুটো পক্ষ আছে। একটি পক্ষ হচ্ছে মানুষ শহীদ হয়েছে। দুই হাজারের মতো মানুষকে হত্যা করা হয়েছে আন্দোলনে। আবার আরেকটি পক্ষ হচ্ছে প্রায় ৩০ হাজারের মতো মানুষ বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন, অন্ধ হয়ে গিয়েছেন। আমার মনে হয়, আমাদের উচিত হবে, এখন আমাদের সকলের উচিত হবে, রাষ্ট্রসহ, সরকারসহ রাজনৈতিক দলগুলোর যার যতটুকু সম্ভব, সেই পরিবারগুলোর পাশে গিয়ে দাঁড়ানো। যতটুকু সহযোগিতা তাদের করা যায়, যতটুকু সম্ভব তাদের পাশে দাঁড়ানো। তাদের এই আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান জানানো।’
বিবিসি বাংলার সম্পাদক মীর সাব্বির ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক কাদির কল্লোল তারেক রহমানের এই সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। সাক্ষাৎকারটির প্রথম পর্ব আজ সোমবার সকালে প্রকাশ করেছে বিবিসি বাংলা। এর দৈর্ঘ্য ৪৪ মিনিটের বেশি। সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় পর্ব প্রকাশ করা হবে আগামীকাল মঙ্গলবার।
আরও পড়ুনস্বৈরাচার পালিয়েছে, অদৃশ্য শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে: তারেক রহমান২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ত র ক রহম ন র ন ত র ক রহম ন স প ট ম বর ব এনপ র ক র জন যতট ক অবস থ র অবস
এছাড়াও পড়ুন:
জাপা নির্বাচনের সুযোগ পেলে গণঅধিকার পরিষদ তা বর্জন করবে: রাশেদ
জাতীয় পার্টিসহ (জাপা) স্বৈরাচারের দোসরদের আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হলে গণঅধিকার পরিষদ নির্বাচন বর্জন করবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান।
রাশেদ খান বলেছেন, ‘‘ভারতের মদদে আওয়ামী লীগের ডামি প্রার্থীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের চেষ্টা চালাচ্ছে। জাতীয় পার্টি ভারতের মদদে আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। ফ্যাসিস্টের দোসরদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ জনগণ মানবে না। প্রয়োজনে নির্বাচন কমিশনকে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে।’’
আরো পড়ুন:
জকসু নির্বাচন: নবীনদের ‘তরুণ শিক্ষার্থী ঐক্য’ প্যানেল ঘোষণা
জকসু: ছাত্রদলের বিদ্রোহীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার
মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) বিকেলে ঝিনাইদহের সদর উপজেলার বাজারগোপালপুর বাজারে নির্বাচনি গণসংযোগ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ সব কথা বলেন।
রাশেদ খান বলেন, ‘‘শেখ হাসিনাকে ভারত ফেরত না দিলে তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করা হবে। ভারত যদি বাংলাদেশে নতুন করে হাসিনার মতো কাউকে তাবেদার শাসক বানাতে চায়, তাহলে জনগণ তা প্রতিহত করবে। বাংলাদেশের জনগণ আর কখনো ভারতের তাবেদার সরকার মেনে নেবে না।’’
ভারতের সঙ্গে সমতা ও আত্মমর্যাদার ভিত্তিতে কূটনৈতিক সম্পর্ক গঠন করা হবে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ‘‘ভারতের দাদাগিরি আমরা আর মানব না। ভারত নির্বাচন বানচালের জন্য আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ডামি প্রার্থীদের স্বতন্ত্র সাজিয়ে ভোটের মাঠে নামাতে চাইছে। আমরা সেই ষড়যন্ত্র সফল হতে দেব না।’’
এর আগে বিকাল সাড়ে ৪টায় ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বাজারগোপালপুর বাজারে নির্বাচনী গণসংযোগে অংশ নেন রাশেদ খান। এ সময় জেলা গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি প্রভাষক মো. সাখাওয়াত হোসেন, সাধারণ সম্পাদক জাহিদ ইকবাল রাজন, ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি রিহান হোসেন রায়হান, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ দলটির নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/সোহাগ/বকুল