গাজা উপত্যকায় অবস্থানরত চিকিৎসকদের সঙ্গে আজ সকালে আমরা একটি ভিডিও কনফারেন্স করেছি। আমরা যাঁরা কনশানসে অবস্থান করছি, তাদের সবার জন্য এটি একটি আবেগঘন মুহূর্ত ছিল—একদিকে সেখানে (গাজা) এখনো সেবা দিয়ে যাওয়া মানুষের সাহসিকতা, অন্যদিকে তাঁরা যে নিষ্ঠুরতার মুখোমুখি হচ্ছেন, সে সম্পর্কে জেনেছি।

গাজার হাসপাতালে হামলার বিষয়ে সাবেক সহকর্মীদের বর্ণনা শুনে কনশানসে থাকা চিকিৎসক হ্যান বোসেলায়ের্স কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ দৃশ্য আমাকে মনে করিয়ে দিল যে আমাকে খুব সম্ভবত আমাদের সবাইকে বুঝতে হবে যে কেন এই অভিযান জরুরি।

এখানকার দৈনন্দিন জীবন কেমন, তা সম্পর্কে মানুষকে ধারণা দেওয়া প্রয়োজন। কনশানস জাহাজটি দীর্ঘ ভ্রমণের উপযোগী করে তৈরি হয়নি। এটি ১৯৭২ সালে বানানো একটি পুরোনো জাহাজ। মূলত অল্প দূরত্বে ভ্রমণের জন্য এটি নির্মাণ করা হয়েছে। তাই এখানে অনেক সীমাবদ্ধতা আছে।

১.

যাত্রীদের ঘুমানোর কোনো ব্যবস্থা নেই। কেবিনগুলো শুধু ক্রুদের জন্য সংরক্ষিত। কারণ, তাঁদেরই সবচেয়ে বেশি ঘুমানো প্রয়োজন। সে কারণে আমরা বাকিরা সবাই মেঝেতে থাকছি। আমরা স্লিপিং ব্যাগ এবং ছোট ছোট বালিশ এনেছিলাম। এ ছাড়া অন্য কিছু তেমন একটা নেই।

কারণ, প্রত্যেকে সাকল্য ১০ কেজি করে জিনিস আনতে পেরেছি। এখানে বিশুদ্ধ পানির খুব অভাব। সে কারণে প্রত্যেককে খুব হিসাব করে পানি ব্যবহার করতে হচ্ছে। পুরো জাহাজের কারোরই গোসল নেই।

২. যে ক্রুরা জাহাজটি চালাচ্ছেন, তাঁদের মধ্যে কোনো সার্ভিস স্টাফ নেই। সে কারণে জাহাজের ভেতর সব কাজ আমাদের নিজেদেরই করতে হচ্ছে। শৌচাগার পরিষ্কার থেকে শুরু করে পুরো জাহাজ পরিষ্কার, আবর্জনা পরিষ্কার, খাবার সরবরাহ, রান্নাঘর পরিষ্কারের মতো কাজগুলো করছি।

৩. অবশ্যই এখানে অতিরিক্ত নিরাপত্তার প্রয়োজন আছে। তাই আমাদের মধ্যে কেউ কেউ ড্রোন দিয়ে নজরদারি চালাচ্ছে। পাশাপাশি খুব কঠোর কিছু বিধিনিষেধও মেনে চলতে হচ্ছে।

আরও পড়ুনশহিদুল আলমদের জাহাজের ওপর দিয়ে উড়ে গেল ‘ইসরায়েলি সামরিক বিমান’১৯ ঘণ্টা আগে

৪. আমরা এখানে যাঁরা আছি, তাঁরা মূলত সাংবাদিক ও স্বাস্থ্যকর্মী। সে কারণে কীভাবে একটি জাহাজের কার্যক্রম চলে বা হামলার সময় কী করতে হবে, তা আমরা জানি না। তাই লাইফ জ্যাকেট ব্যবহার করা থেকে শুরু করে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সরার মতো বিষয়গুলো নিয়ে এখানে অনেক নিরাপত্তা মহড়া করা হয়।

যদি আমরা নিয়মগুলো ঠিকভাবে অনুশীলন না করি, তাহলে হামলার সময় ৯৬ জন মানুষ দ্রুত কোথাও যাওয়ার চেষ্টা করলে বিশৃঙ্খলা তৈরি হতে পারে। তাই প্রতিদিন একাধিক নিরাপত্তা মহড়া চালানো হয়।

৫. সমুদ্র কখনো কখনো খুবই উত্তাল হয়ে ওঠে। আমরা সাধারণত সমুদ্রযাত্রায় অভ্যস্ত নই, তাই আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ি। কেউ কেউ আবার অনেক বেশি অসুস্থ হয়ে যান। সৌভাগ্যের বিষয় হলো, এখানকার চিকিৎসাকর্মীদের দলটি খুব ভালো। তবে কেউ অসুস্থ হলে তাঁর দায়িত্ব অন্যদের ভাগ করে নিতে হয়, যা সব সময় সহজ হয় না।

৬. আমরা যাঁরা সাংবাদিক আছি, তাঁরা ছবি তুলছি, ভিডিও ধারণ করছি, নিবন্ধ লিখছি, জাহাজের মানুষের সাক্ষাৎকার নিচ্ছি এবং পাশাপাশি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দিচ্ছি। এত অনিশ্চয়তার মধ্যে এগুলো সময়মতো করাটা অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ছে।

গাজার হাসপাতালে হামলার বিষয়ে সাবেক সহকর্মীদের বর্ণনা শুনে কনশানসে থাকা চিকিৎসক হ্যান বোসেলায়ের্স কান্নায় ভেঙে পড়েন ছবি:

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর ষ ক র

এছাড়াও পড়ুন:

নোয়াখালীতে ব্যারাক থেকে পুলিশ সদস্যের মরদেহ উদ্ধার

নোয়াখালীর সেনবাগ থানার ব্যারাক থেকে মোহাম্মদ মোহন মজুমদার (৩৫) নামে এক পুলিশ সদস্যের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। 

শনিবার (৪ অক্টোবর) সেনবাগ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

নিহত কনস্টেবল মোহাম্মদ মোহন মজুমদার কুমিল্লা জেলার লালমাই উপজেলার বাগমারা ইউনিয়নের আলী মজুমদারের ছেলে।

সেনবাগ থানা সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার রাতের ডিউটি শেষে শনিবার ভোরে কনস্টেবল মোহন ব্যারাকে ফিরে আসেন। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে তিনি থানার ব্যারাকের চতুর্থ তলায় নিজ কক্ষে ঘুমাতে যান। বিকাল সাড়ে তিনটার পর সহকর্মীরা তাকে দুপুরের খাবারের জন্য ডাকাডাকি করলেও সাড়া পাননি। 

পরে বিষয়টি তারা থানার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানান। দ্রুত তাকে ব্যারাক থেকে সেনবাগ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

সেনবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, “প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। মরদেহের সুরতহাল শেষে আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।”

এদিকে পুলিশ কনস্টেবল মোহাম্মদ মোহন মজুমদারের অকস্মাৎ মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন নোয়াখালীর পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আবদুল্লাহ্‌-আল-ফারুক।

তিনি বলেন, “এ ঘটনায় আমি গভীর শোক প্রকাশ করছি। মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারবর্গ ও সহকর্মীদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি। সহকর্মীদের উপস্থিতিতে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয় এবং জানাজা শেষে মরদেহ গ্রামের বাড়িতে পাঠানো হয়।”

ঢাকা/সুজন/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নোয়াখালীতে ব্যারাক থেকে পুলিশ সদস্যের মরদেহ উদ্ধার