লক্ষ্মীপুরের রায়পুর শহরের বাসিন্দা আবদুর রব ছিদ্দিকী। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির এই গ্রাহক ঘরে চারটি বৈদ্যুতিক পাখা ও চারটি বাতি ব্যবহার করেন। ফ্রিজ, টেলিভিশন কিছুই নেই। তবু গত সেপ্টেম্বর মাসে তাঁর নামে বিদ্যুতের বিল আসে ৪ হাজার ৩৩ টাকা। আগের মাসেও এর কাছাকাছি ছিল বিদ্যুৎ বিল। অথচ জুলাই মাসে বিদ্যুৎ ছিল ৯৮৬ টাকা। এর আগের মাসগুলোতেও বিদ্যুৎ বিল এসেছে এক হাজার টাকার নিচে।

কেবল আবদুর রব ছিদ্দিকী নন, দু–তিন মাস ধরে একই অবস্থা লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলায় পল্লী বিদ্যুতের কয়েক হাজার গ্রাহকের। তাঁদের দাবি, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ কার্যালয়ে গিয়ে অভিযোগ করেও প্রতিকার মিলছে না।

উপজেলার দেনায়েতপুর এলাকার গ্রাহক ফয়েজ আহমেদ বলেন, ‘সাধারণত আমাদের মাসিক বিদ্যুৎ বিল থাকে ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৯০০ টাকার মধ্যে। সেপ্টেম্বর মাসে বিল এসেছে ৩ হাজার ৭৩ টাকা। এ বিষয়ে জানতে চেয়েও বিদ্যুৎ অফিসের লোকজনের কাছে কোনো সঠিক ব্যাখ্যা পাইনি।’

উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় পল্লী বিদ্যুতের ১ লাখ ৫ হাজার গ্রাহক রয়েছেন। এই গ্রাহকদের বিদ্যুৎ সরবরাহ করার জন্য প্রায় ১ হাজার ২০০ কিলোমিটার লাইন নির্মাণ করেছে পল্লী বিদ্যুৎ। গত মাসে রায়পুর কার্যালয় ১ কোটি ২৫ লাখ ইউনিট বিদ্যুৎ কিনে গ্রাহকদের সরবরাহ করেছে।

দেবীপুর গ্রামের আহমেদ কাউসারও একই অভিযোগ করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতি মাসে আমার ৭০০–৮০০ টাকা বিদ্যুৎ বিল আসে। কিন্তু সেপ্টেম্বর মাসে বিল এসেছে দেড় হাজার টাকা, যা প্রায় দ্বিগুণ। আমাদের গ্রামের সব গ্রাহকেরই সেপ্টেম্বর মাসের বিলে একই অবস্থা।’

চরপাতা, কেরোয়া ও সোনাপুর গ্রামের চারজন গ্রাহক প্রথম আলোকে বলেন, বিলের ভুল হিসাবের কারণে তাঁদের ভোগান্তি বেড়েছে। বিদ্যুৎ কার্যালয়ে গিয়েও সমাধান মিলছে না; বরং উল্টো হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।

রায়পুর বাজার বণিক সমতির সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, বিদ্যুতের বাড়তি বিলের বিষয়টি কয়েক মাস ধরে চলে আসছে। অনেক সময় অফিসে অভিযোগ জানালেও তা সংশোধনের কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না। এতে ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের ওপর আর্থিক চাপ বেড়েছে।

সাধারণত আমাদের মাসিক বিদ্যুৎ বিল থাকে ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৯০০ টাকার মধ্যে। সেপ্টেম্বর মাসে বিল এসেছে ৩ হাজার ৭৩ টাকা। এ বিষয়ে জানতে চেয়েও বিদ্যুৎ অফিসের লোকজনের কাছে কোনো সঠিক ব্যাখ্যা পাইনিফয়েজ আহমেদ, রায়পুরের দেনায়েতপুরের বাসিন্দা

গ্রাহকদের অভিযোগ, মিটার রিডিংয়ের ভুল অথবা অনিয়মিত রিডিংয়ের কারণে হঠাৎ বিল বেড়ে দ্বিগুণ থেকে তিন গুণ আদায় করা হচ্ছে। এর বাইরে মিটারের কোনো ত্রুটির কারণেও এটি হতে পারে বলে অভিযোগ তাঁদের।

লক্ষ্মীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির রায়পুর জোনাল কার্যালয়ের তথ্যমতে, উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় পল্লী বিদ্যুতের ১ লাখ ৫ হাজার গ্রাহক রয়েছেন। এই গ্রাহকদের বিদ্যুৎ সরবরাহ করার জন্য প্রায় ১ হাজার ২০০ কিলোমিটার লাইন নির্মাণ করেছে পল্লী বিদ্যুৎ। গত মাসে রায়পুর কার্যালয় ১ কোটি ২৫ লাখ ইউনিট বিদ্যুৎ কিনে গ্রাহকদের সরবরাহ করেছে। এর আগের মাসগুলোতে ৯০ থেকে ৯৫ লাখ ইউনিট বিদ্যুৎ কিনে গ্রাহকদের সরবরাহ করা হতো। গত মাস থেকে বিদ্যুতের ব্যবহার বেড়েছে।

পল্লী বিদ্যুৎ কার্যালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, ভুল রিডিংয়ের কারণে কিছু ক্ষেত্রে বিল বাড়ার আশঙ্কা তাঁরাও করছেন। এ ক্ষেত্রে গ্রাহকদের অভিযোগ দ্রুত যাচাই করে ভুল সংশোধন করা হচ্ছে।

জানতে চাইলে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির রায়পুর জোনাল কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক মো.

মোশারফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিল বেশি আসার কিছু অভিযোগ আমরা প্রায়ই পাচ্ছি। কিন্তু বিল বেশি করার কোনো সুযোগ নেই। কোনো কারণে ভুল হলে তা ধরা পড়ার পরপরই আমরা সংশোধন করি। আমরা চেষ্টা করছি যাতে নির্ভুল হিসাব অনুযায়ী বিল আসে।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স প ট ম বর ম স গ র হকদ র ব ল এস ছ র গ র হক গ র হক র উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

আগামী সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ জ্বালানি সরবরাহ

আগামী নির্বাচিত সরকারের সামনে জ্বালানি সরবরাহ সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে বলে মনে করছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। তাই এখন থেকেই এ খাতের নতুন বিনিয়োগ করা না হলে ২০৩১ সালে সরবরাহ সংকট দেখা দেবে। তাই এ খাতের ধারাবাহিক নীতি কাঠামোর দাবি জানান ব্যবসায়ীরা।

আজ বুধবার গুলশানের একটি হোটেলে বিদ্যুৎ খাতের বিনিয়োগ পরিবেশ নিয়ে এক সেমিনারে এ কথাগুলো বলেন বক্তারা। ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) ও পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশ এই সেমিনারের আয়োজন করে। এতে এ খাতের বিশেষজ্ঞ, ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতারা বক্তব্য দেন।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ তুলে ধরেন ইএমএ পাওয়ার লিমিটেডের পরিচালক আবু চৌধুরী। তিনি বলেন, ২০২৯ সালে দেশের বিদ্যুৎ চাহিদা ৩৫ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যাবে। তাই এখন থেকে নতুন বিনিয়োগ না করলে ২০৩১ সালে বিদ্যুৎ–সংকট দেখা দিতে পারে। বর্তমানে দেশের বিদ্যমান উৎপাদন সক্ষমতার ৪৮ শতাংশ আছে বেসরকারি খাতের হাতে। তাই নতুন নীতি তৈরিতে বেসরকারি খাতের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করতে হবে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম তামিম বলেন, আগামী সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে জ্বালানি সরবরাহ। শুধু সরকারি সংস্থা বাপেক্সের ওপর নির্ভরতায় গত ২০ বছরে সাফল্য আসেনি। তাই গ্যাস অনুসন্ধানে বিদেশি বিশেষজ্ঞদের আনা দরকার। এ নিয়ে এখন সিদ্ধান্ত না নিলে ২০৩১ সালে জ্বালানি সংকট তৈরি হবে।

চা–বাগানের ভূমি ব্যবহারের নীতি পরিবর্তন করা গেলে বাগান থেকে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে বলে মনে করছেন এমসিসিআইয়ের সভাপতি কামরান টি রহমান। তিনি বলেন, ১০ থেকে ১৫ বছরে রাস্তায় আমরা অনেক বৈদ্যুতিক গাড়ি দেখতে পাব। তখন বিদ্যুতের চাহিদা বাড়বে। তাই এ খাতে নীতি কাঠামো প্রয়োজন। বেসরকারি খাত বিনিয়োগ করতে প্রস্তুত।

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, বিনিয়োগের জন্য সামাজিক স্থিতিশীলতা প্রয়োজন। এটা সব দলের দায়িত্ব। নতুন বিনিয়োগ না হলে কর্মসংস্থান হবে না। এতে প্রতিবছর কর্মক্ষেত্রে যুক্ত হওয়া ২৫ লাখ তরুণ কাজ পাবে না। ফলে কাজ না পেয়ে সমাজে অস্থিরতা তৈরি হবে।

সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি মাহমুদ হাসান খান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর শুরা কাউন্সিলের সদস্য মোবারক হোসেনসহ ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধের হুমকি যুক্তরাষ্ট্রের
  • গ্রী গ্লোবাল বাংলাদেশের পার্টনারস মিট: কার্যক্রম আরও গতিশীল করতে দিকনির্দেশনা
  • ঢাকার কম্পিউটার বাজারে প্রসেসর সরবরাহে ঘাটতি
  • আগামী সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ জ্বালানি সরবরাহ