দারিদ্র্য পরিমাপ করার পদ্ধতির সমালোচনা করলেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘পাঁচ হাজার লোকের টেলিফোনে সাক্ষাৎকার নিয়ে বললেন, দারিদ্র্য বেড়ে গেছে। এগুলো তো আমি জানি।’

উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আমাকে একজন বলেছেন, স্যার, আপনি একটা পেপার লেখেন, একটা ফার্ম ২০ হাজার জনের জবাব দিয়ে দেবে কালকের মধ্যে। তবে দারিদ্র্য নিয়ে আমাদের চ্যালেঞ্জ আছে, এটা আমি স্বীকার করি।’

আজ মঙ্গলবার সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এ কথা বলেন।

বৈঠক শেষে দারিদ্র্যের হার বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘তাত্ত্বিক দিকে এখন যাব না। দারিদ্র্য বেড়ে গেছে, দারিদ্র্য আছে—এগুলো বলতে হলে অনেক বক্তব্য দিতে হবে। আমি তো জানি কীভাবে ওরা দারিদ্র্য পরিমাপ করে।’

অর্থ উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন একবার বলেছিলেন, খুব কঠিন দারিদ্র্য আমার পরিমাপ করতে হবে না। দরিদ্র লোক দেখলেই চিনতে পারবেন, তার চেহারা, তার ভাবে।’

সম্প্রতি বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) এক গবেষণায় বলা হয়েছে, দেশে এখন দারিদ্র্যের হার ২৭ দশমিক ৯৩ বা প্রায় ২৮ শতাংশ। সরকারি হিসাবেই ২০২২ সালে এ হার ছিল ১৮ দশমিক ৭।

অর্থনৈতিক দিক দিয়ে স্বস্তিতে আছেন বলে জানালেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেছেন, ‘অর্থনৈতিক দিক দিয়ে আমি স্বস্তিতে আছি। আমরা মোটামুটি একটু আত্মবিশ্বাসী।’

আগামী নির্বাচনের জন্য ৪২০ কোটি টাকা দিয়ে বডি ক্যামেরা কেনা হচ্ছে, তা অপচয় মনে করছেন কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘সেটা আপনারা পরে বুঝতে পারবেন।’

বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান বা নেপালের চেয়েও খারাপ—এমন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘মূল্যস্ফীতির হার ১১-১৪ শতাংশ ছিল। ৮ শতাংশে নামিয়ে এনেছি। যদি ৪ শতাংশে নামিয়ে আনতে পারতাম, তাহলে মহানন্দ হতো।’

বাংলাদেশ সরকার ২ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার খরচ করে চীন থেকে ২০টি যুদ্ধজাহাজ কিনছে, এ বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘এ নিয়ে আমি কোনো মন্তব্য করব না।’ কেন ফাইটার জাহাজের দরকার হচ্ছে—এমন প্রশ্ন করা হলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘ওটা ওদের ব্যাপার। এখন আমি এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারব না।’

১৩ অক্টোবর শুরু আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক সম্মেলনে যাওয়ার বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘আইএমএফের পাইপলাইনে আরও কিছু অর্থ আছে। এগুলো নিয়ে কথা হবে। ভবিষ্যতে আমাদের কী পরিকল্পনা আছে, এবার খোলামেলা আলোচনা হবে না।’

যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা পাল্টা শুল্ক নিয়ে করা এক প্রশ্নের উত্তরে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘শুল্ক ইতিমধ্যে কার্যকর।’

সরকারি চাকরিজীবীদের নতুন বেতনকাঠামো দিতে যাচ্ছেন কি না—এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘সেটা পরে একসময় আমি দেখব। যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার আগে একসময় আমি বলব।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ল হউদ দ ন আহম দ পর ম প সরক র এমন প

এছাড়াও পড়ুন:

মৌলভীবাজারে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগের সমন্বয় নিশ্চিত করল ডিনেট

মৌলভীবাজারের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য সুশাসন ও সরকারি সেবার মান নিশ্চিতে মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর ২০২৫) একটি পরিচিতি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ডিনেটের (Dnet) উদ্যোগে এবং মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে স্থানীয় হোটেল রেস্ট ইনের কনফারেন্স রুমে আয়োজিত এ সভার লক্ষ্য হলো—প্রকল্পের উদ্দেশ্য ও কর্মপরিকল্পনা আনুষ্ঠানিকভাবে উপস্থাপন, চাহিদা মূল্যায়ন প্রতিবেদনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উপস্থাপন এবং সফলভাবে বাস্তবায়নের জন্য মূল সরকারি বিভাগ ও স্থানীয় অংশীদারদের সহযোগিতামূলক সমর্থন নিশ্চিত করা।

সভায় বিশেষ অতিথি এবং প্যানেল আলোচনা অধিবেশনে সভাপতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মো. মামুনুর রশীদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (উন্নয়ন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা)। তিনি বলেছেন, “মৌলভীবাজারে দুটি বিষয়ে গুরুত্ব না দিয়ে উপায় নেই। প্রথমত, প্রযুক্তিগত আধুনিকায়ন, যা নিশ্চিত করবে যেন জনগণের বিকল্প কোনো পথের প্রয়োজন না হয়। দ্বিতীয়ত, চা শ্রমিকদের সন্তানদের শিক্ষার উন্নয়নে গুরুত্ব দেওয়া।” 

২৭ মাসব্যাপী ‘নাগরিক সমন্বয়’ প্রকল্পটি সুইস এজেন্সি ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কো-অপারেশন (এসডিসি) এবং গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডার (জিএসি) আর্থিক সহায়তায় সিভিক এনগেজমেন্ট ফান্ডের (নাগরিকতা) অধীনে পরিচালিত হচ্ছে। ডিনেট চারটি স্থানীয় সহযোগী সংস্থার সঙ্গে অংশীদারত্বে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। সংস্থাগুলো হলো—কমলগঞ্জে জনকল্যাণ কেন্দ্র (জে কে কে), শ্রীমঙ্গলে প্রগতি সমাজ উন্নয়ন সংস্থা (পিএসইউএস), কুলাউড়ায় নিঃস্ব সহায়ক সংস্থা (এনএসএস) এবং বড়লেখায় প্রচেষ্টা।

প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হলো—মৌলভীবাজারের চার উপজেলা—বড়লেখা, কুলাউড়া, কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গলের জীববৈচিত্র্যপূর্ণ এলাকার প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে নারী, যুব ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের জন্য ক্লাইমেট জাস্টিস এবং সরকারি সেবার সমতা নিশ্চিত করতে নাগরিক সমাজের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা।

সভার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য ছিল—প্রকল্পের চাহিদা মূল্যায়ন প্রতিবেদনের ফলাফল উপস্থাপন করা। এই গবেষণামূলক তথ্য স্থানীয় পর্যায়ে সরকারি সেবার ঘাটতি এবং নাগরিক অংশগ্রহণের চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্ণিত করেছে, যা সবার মধ্যে একটি অভিন্ন বোঝাপড়া তৈরি করবে এবং প্রকল্পের অ্যাডভোকেসি কৌশল নির্ধারণে মূল ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে।

সভায় উপস্থাপিত মূল গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, মৌলভীবাজার জেলায় অর্থনৈতিক বৈষম্য বেশ প্রকট। চা শ্রমিকদের ৫১ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর ৩৬ শতাংশ এখনো মারাত্মকভাবে অর্থনৈতিক বৈষম্যের শিকার। সামাজিক নিরাপত্তা ভাতা পেতেও নাগরিকদের জটিলতা পোহাতে হয়। জরিপে অংশগ্রহণকারী প্রায় ৫৩ শতাংশ নারী জানিয়েছেন যে, ভাতা পেতে তাদের ঘুষ (১০০ থেকে ৩০০ টাকা) দিতে হয়েছে। জলবায়ুগত ঝুঁকির ক্ষেত্রে দেখা গেছে, কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গলের মতো উপজেলাগুলোতে ৬৪ শতাংশ নারী বন্যা ও ভূমিধসের মতো জলবায়ু বিপর্যয়ের কারণে তাদের আয়ের প্রধান উৎস হারিয়েছেন।

ডিনেটের নির্বাহী পরিচালক মাহমুদ হাসান বলেছেন, “আগামী দুই বছরে আমাদের লক্ষ্য—মৌলভীবাজারে এমন কিছু সাফল্যের গল্প তৈরি করা, যা এই প্রকল্পের পরবর্তী ধাপের যাত্রাকে আরো শক্তিশালী করে তুলবে।”

নাগরিকতা ফান্ডের প্রতিনিধি ও জিএফএ কনসাল্টিং গ্রুপের লিড এক্সপার্ট– সিএসও সক্ষমতা উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনাবিষয়ক কর্মকর্তা জনাব নুরুল ইসলাম বলেছেন, “নাগরিকতা কর্মসূচির প্রথম পর্যায়ের লক্ষ্য— ২০২৭ সালের মধ্যে বাংলাদেশে ১৬ লক্ষ মানুষের কাছে পৌঁছানো। তাই, আমরা চেষ্টা করছি এই কর্মসূচি ভৌগোলিক ও জনমিতিকভাবে সকল শ্রেণির মানুষের অংশগ্রহণের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে।” 

নাগরিক সমন্বয়ের প্রকল্প পরিচালক আসিফ আহমেদ তন্ময় সভা পরিচালনা করেন।

ঢাকা/আজিজ/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ