ভ্রমণ মানেই আনন্দ, মুক্ত বাতাস আর নতুন অভিজ্ঞতা। তাই কোথাও ঘুরতে যাওয়ার আগে সবার মধ্যেই কাজ করে অন্য রকম এক উদ্দীপনা। আর নতুন কোনো জায়গায় ঘুরতে গেলে তো পরিকল্পনারও কোনো শেষ থাকে না। তবে বিপত্তি ঘটে তখনই, যখন কোথাও ভ্রমণকালীন হঠাৎ শরীর খারাপ হয়ে পড়ে। তখন সব পরিকল্পনাই যেন ভেস্তে যায়। তাই ঘুরতে যাওয়ার আগে সতর্ক থাকা জরুরি। কারণ, হুট করেই অজানা-অচেনা জায়গায় অসুস্থ হয়ে পড়লে অনেকেই হিমশিম খেয়ে যান। ভ্রমণের আগে এবং ভ্রমণের সময় কিছু সচেতনতা ও প্রস্তুতি থাকলে আপনি থাকতে পারবেন নির্ভার ও নিশ্চিন্ত।

ভ্রমণের আগে

ভ্রমণে বের হওয়ার সময় একটি ছোট ফার্স্ট এইড ব্যাগ সঙ্গে রাখা অত্যন্ত জরুরি। এতে প্যারাসিটামল, গ্যাসের ওষুধ, ব্যথানাশক, ব্যান্ডএইড, অ্যান্টিসেপটিক ক্রিম, অ্যালার্জির ওষুধ, স্যালাইন ইত্যাদি অতিপ্রয়োজনীয় অনুষঙ্গ রাখা ভালো। সঠিক প্রস্তুতির মাধ্যমে অনেক সমস্যা আগেভাগেই প্রতিরোধ করা যায়। যাঁদের নিয়মিত ওষুধ খেতে হয়, যেমন ডায়াবেটিস, অ্যাজমা বা রক্তচাপের রোগী, তাঁদের অবশ্যই প্রয়োজনীয় ওষুধ সঙ্গে রাখতে হবে। সেই সঙ্গে বিদেশে বা দুর্গম এলাকায় ভ্রমণে গেলে আগে থেকে নিকটস্থ হাসপাতাল বা ক্লিনিকের ঠিকানা জেনে রাখতে হবে।

ভ্রমণের আগে প্রস্তুতি প্রসঙ্গে পর্বতারোহী বাবর আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোথাও ভ্রমণে যাচ্ছেন, সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিতে হবে। পাহাড়ে গেলে প্রস্তুতি হবে একরকম, আবার সমুদ্রে গেলে আরেক রকম। জুতা ও জামাকাপড়ও সেই অনুযায়ী নির্ধারণ করতে হবে। এ ছাড়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, কোথাও যাওয়ার আগে অবশ্যই আবহাওয়ার পূর্বাভাস জেনে নিতে হবে। সেই সময় এবং আগামী কয়েক দিন সেখানকার আবহাওয়া কেমন থাকবে, তা আগে থেকেই জানা থাকলে অনাকাঙ্ক্ষিত অনেক বিপদ থেকেই সতর্ক থাকা যায়।’

ভ্রমণের সময়

ভ্রমণকালীন অনেকের নানা ধরনের সমস্যা দেখা যায়। এ প্রসঙ্গে বাবর আলী বলেন, ‘কোথাও যাওয়ার আগে কোন বাহনে সেখানে যাচ্ছেন, তা জেনে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে হবে। অনেকেরই বাসে দীর্ঘ পথ ভ্রমণে সমস্যা হয়, অনেকের জাহাজে, আবার অনেকের উড়োজাহাজেও সমস্যা হয়। সে অনুযায়ী পূর্বপ্রস্তুতি নিন। পাশাপাশি যেকোনো ধরনের জরুরি পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে।’

বাবর আলী স্মৃতিচারণা করে বলেন, ‘আমি নিজেই একবার জাহাজে মহেশখালী থেকে সেন্ট মার্টিন যাওয়ার পথে অসুস্থ হয়ে যাই। সেদিন সমুদ্র অনেক উত্তাল ছিল, মহেশখালী থেকে সেন্ট মার্টিন যাওয়ার পথটিও বেশ দীর্ঘ। কিন্তু যেহেতু আমি আগে থেকেই জানতাম জাহাজে আমার মোশন সিকনেস কাজ করে, তাই আমি আমার মাইন্ডসেট ঠিক করে রেখেছিলাম এবং পূর্বপ্রস্তুতিও ছিল। তাই আমি অসুস্থ হয়ে গেলেও যাত্রাটি ঠিকমতো শেষ করতে পেরেছিলাম।’

হঠাৎ অসুস্থ হয়ে গেলে

যথাযথ প্রস্তুতি থাকার পরও ভ্রমণের সময় নানা ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যায়। তবে এমন পরিস্থিতি দেখা দিলে বিচলিত হওয়া যাবে না। এ প্রসঙ্গে বাবর আলী বলেন, ‘হঠাৎ অসুস্থ হয়ে গেলে প্রথমেই দেখুন যাঁদের সঙ্গে ভ্রমণ করছেন, তাঁদের মধ্যে কেউ প্রাথমিকভাবে আপনাকে সহায়তা করতে পারেন কি না। এমন নয় যে তাঁর কাছেই আপনাকে সম্পূর্ণ চিকিৎসা নিতে হবে। প্রথমে পরিস্থিতি অনুকূলে নিয়ে আসার চেষ্টা করুন। এরপর আশপাশের চিকিৎসাকেন্দ্র থেকে চিকিৎসা নিন।’

সবশেষে বাবর আলী বলেন, শিশু আর বৃদ্ধদের সঙ্গে নিয়ে ঘুরতে গেলে অবশ্যই বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। তাঁদের প্রয়োজনীয় ওষুধ সঙ্গে নিতে ভোলা যাবে না। কারণ, কিছু ওষুধ সব জায়গায় পাওয়া যায় না।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রস ত ত ভ রমণ র অন য য় অন ক র সমস য র সময়

এছাড়াও পড়ুন:

আমরা এখনো সুষ্ঠু বিচার পাইনি: আবরারের বাবা

ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নির্মম নির্যাতনে নিহত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘‘আমরা এখনো সুষ্ঠু বিচার পাইনি। আপিল বিভাগে এখনো মামলা বিচারাধীন। সরকারের কাছে আবেদন, বিচারের কাজটি যেন দ্রুত শেষ করা হয়।’’

আজ মঙ্গলবার (৭ আক্টোবর) ছিল আবরার ফাহাদের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী। দিনটি ঘিরে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়নের রায়ডাঙ্গা গ্রামে স্মৃতিচারণসহ দিনব্যাপী নানা আয়োজন ছিল। ছেলেকে স্মরণ করে এ কথা বলেন আবরার ফাহাদের বাবা। 

আরো পড়ুন:

আবরারের রক্ত বৃথা যায়নি, জাতিকে জাগিয়ে তুলেছে

কুষ্টিয়ায় আবরার ফাহাদের কবর জিয়ারত করলেন এনসিপির শীর্ষ নেতারা

শহীদ আবরার ফাহাদ স্মৃতি গ্রন্থাগারের সাধারণ সম্পাদক মাসুম বিল্লাহ বলেন, ‘‘ছেলেটিকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়েছে। নিষ্ঠুরতম এ অপরাধ করার পরও নিহতের পরিবার এখনো এর সুষ্ঠু বিচার পায়নি। আমরা দ্রুত রায় বাস্তবায়নের দাবি জানাই।’’ 

আবরার বুয়েটের তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন তিনি। ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে ছাত্রলীগের এক নেতার কক্ষে নিয়ে নির্যাতন চালিয়ে তাকে হত্যা করা হয়। সেই ঘটনায় ক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে বুয়েট।

ওই ঘটনায় চকবাজার থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন আবরারের বাবা। সেই মামলার রায়ে ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর বুয়েটের ২০ শিক্ষার্থীকে মৃত্যুদণ্ড এবং ৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল। 

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানি শেষে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের হাইকোর্টের আপিল বেঞ্চ এ বছর ১৬ মার্চ সেই সাজাই বহাল রাখে।

আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বলেন, “হাই কোর্ট নিম্ন আদালতের রায় বহাল রেখেছেন। আশা করছি আপিল বিভাগেও হাই কোর্টের রায় বহাল থাকবে। এই সরকার রায় কার্যকর করবে।”

এ মামলায় দণ্ডিত ২৫ আসামির মধ্যে চারজন এখনো পলাতক। তাদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান বরকত উল্লাহ।

দিনটি উপলক্ষে রায়ডাঙ্গা গ্রামে আবরারের কবর জিয়ারত করেন এনসিপির নেতারা। দুপুর ২টায় এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠক নয়ন আহমেদের নেতৃত্বে দলটির নেতারা কবর জিয়ারতে অংশ নেন। এ সময় তারা আবরার ফাহাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।

এসময় এনসিপির কুষ্টিয়া জেলা শাখার প্রধান সমন্বয়কারী জান্নাতুল ফেরদৌস টনি, যুগ্ম সমন্বয়কারী কে এম আর শাহীনসহ দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

বিকেলে কুষ্টিয়া প্রেস ক্লাবের সামনে শহীদ আবরার ফাহাদের হত্যার সুষ্ঠু বিচার ও রায় দ্রুত কার্যকরের দাবিতে মানববন্ধন করে শহীদ আবরার ফাহাদ স্মৃতি গ্রন্থাগারের কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ছাত্র-জনতা। 

সন্ধ্যা ৭টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শহীদ আবরার ফাহাদের জীবন ও কর্মের ওপর আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
 

ঢাকা/কাঞ্চন/বকুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ