অনিয়মের সংবাদ প্রকাশ করায় সাংবাদিককে হুমকি বিএনপি নেতার
Published: 9th, October 2025 GMT
চাল বিতরণে অনিয়ম করায় ডিলারশিপ বাতিল হয়েছে শরীয়তপুরের এক বিএনপি নেতার। এ কারণে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন ডিলারশিপের মালিক নড়িয়া উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মতিউর রহমান সাগর।
বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় সাংবাদিককে হুমকি দিয়েছেন বিএনপি নেতা মতিউর রহমান সাগর। তিনি হুমকি দিয়ে বলেছেন, প্রকাশিত সংবাদ সরিয়ে না নিলে শরীয়তপুরের নড়িয়া থানা বা অন্যত্র যত রাজনৈতিক মামলা হবে, সব মামলায় আসামি করা হবে সাংবাদিক আশিকুর রহমান হৃদয়কে।
বুধবার (৮ অক্টোবর) সন্ধ্যায় এ ঘটনায় শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন ভুক্তভোগী সাংবাদিক আশিকুর রহমান হৃদয়।
ভুক্তভোগী আশিকুর রহমান হৃদয় জানান, অনলাইন নিউজ পোর্টাল বার্তা বাজারের শরীয়তপুর জেলা প্রতিনিধি তিনি। গত ৭ অক্টোবর বার্তা বাজার পত্রিকায় ‘চাউল বিতরণে অনিয়ম বিএনপি নেতার রোষাণলে ইউএনও’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ করা হয়। সংবাদে বিএনপি নেতা সাগর ও সাগর ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের সরকারি চাউল বিতরণের অনিয়মের খবর প্রকাশ হয়।
এর জের ধরে গত ৭ অক্টোবর রাত সাড়ে ১১টায় একটি মোবাইল নম্বর থেকে আশিকুর রহমান হৃদয়কে ফোন করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় হয়রানি করার হুমকি প্রদান করেন।
এছাড়াও সাংবাদিক হৃদয়কে বিভিন্ন রাজনৈতিক মামলায় জড়ানোসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেইসবুক) আমার বিরুদ্ধে নানারকম মিথ্যা তথ্য দিয়ে অপপ্রচার করার হুমকি প্রদান করেন সাগর।
খাদ্য বান্ধব কর্মসূচি চাল বিতরণে অনিয়ম করায় ডিলারশিপ বাতিল হওয়া মতিউর রহমান সাগরের হুমকিতে বর্তমানে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন সাংবাদিক আশিকুর রহমান হৃদয়।
বিষয়টি নিয়ে আশিকুর রহমান হৃদয় বলেন, “মতিউর রহমান সাগরের প্রতিষ্ঠানের ডিলারশিপ বাতিল করেছে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় আমাকে হুমকি ধামকি দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমি থানায় জিডি করেছি। আমি প্রশাসনের কাছে নিরাপত্তা চাই।”
এ বিষয়ে নড়িয়া উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, “আমি সাংবাদিক হিসেবে কাউকে কোন হুমকি দেইনি। গালিগালাজও করিনি। আশিকুর রহমান যাত্রাবাড়ীতে ছাত্রলীগ করতো। সে এখন আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা লেখালেখি করছে। তাই তাকে ফোন করে এসব না করার জন্য বলেছি। সে কোন সাংবাদিক নয়, সে ছাত্রলীগ নেতা।”
সাধারণ ডায়েরির বিষয়ে ভেদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.
নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল কাইয়ুম খান বলেন, “মতিউর রহমান নামের এক ব্যক্তির খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল বিতরণে নানা অনিয়মের অভিযোগের সত্যতা পেয়ে ওই ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে খাদ্য অধিদপ্তরে পাঠানো হয়। পরে খাদ্য অধিদপ্তর হতে তার ডিলারশিপ বাতিল করা হয়। এসব ঘটনা নিয়ে তিনি আমার উপরে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। এরইমধ্যে জানতে পেরেছি তিনি আমার বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের একটি অভিযোগ করেছেন। যদি বিভাগীয় কমিশনার স্যারের কাছে এ অভিযোগ করা হয়, তাহলে তারা তদন্ত করে দেখবেন। আশা করি আপনারাও তখন জানতে পারবেন।”
ঢাকা/আকাশ/এস
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ল ব তরণ উপজ ল ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
গাজায় জিম্মি ইসরায়েলিরা শনিবার মুক্তি পেতে পারেন
গাজায় যুদ্ধ বন্ধের জন্য মার্কিন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আগামী শনিবারের মধ্যেই ইসরায়েলি জিম্মিরা মুক্তি পেতে পারেন। চুক্তিটির বিস্তারিত জানেন এমন একটি সূত্র জানিয়েছে, চুক্তি স্বাক্ষরের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ওই ভূখণ্ড থেকে আংশিক সেনা প্রত্যাহারের প্রথম পর্ব শেষ করবে।
আজ বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের স্থানীয় সময় দুপুর ১২টায় গাজা যুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদ্যোগের প্রথম ধাপের চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ট্রাম্পের ঘোষণার পর ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিরা উল্লাস প্রকাশ করেছেন। এ ঘোষণার মাধ্যমে তাঁর পরিকল্পনার প্রথম ধাপে যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির বিষয়ে চুক্তিতে পৌঁছানো গেছে। গাজার এ যুদ্ধে ৬৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলের নির্বিচার হামলা গাজার মধ্যপ্রাচ্যের চিত্র বদলে দিয়েছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার জবাবে গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার হামলা চালানোর দ্বিতীয় বার্ষিকীর ঠিক এক দিন পরই দুই পক্ষে এই চুক্তি হলো। মিসরে পরোক্ষ আলোচনায় ট্রাম্পের ২০ দফা কাঠামোর প্রাথমিক পর্যায়ে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডটিতে শান্তি ফিরিয়ে আনার বিষয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছানো গেছে।
এই চুক্তি পুরোপুরি বাস্তবায়িত হলে দুই পক্ষকে আগের যেকোনো প্রচেষ্টার চেয়ে যুদ্ধ থামানোর কাছাকাছি নিয়ে আসবে। গাজায় ইসরায়েলি হামলা অনেকটা আঞ্চলিক সংঘাতে রূপ নিয়েছিল। ইরান, ইয়েমেন, লেবানন, এমনকি কাতারের মতো দেশে হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল।
দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস শহরের একজন বাসিন্দা আবদুল মাজিদ আবদ রাব্বো বলেন, ‘যুদ্ধবিরতি, রক্তপাত ও হত্যাকাণ্ড বন্ধ হওয়ার জন্য মহান আল্লাহকে ধন্যবাদ।’
রাব্বো বলেন, ‘শুধু আমি একা নই, পুরো গাজা উপত্যকা খুশি। সব আরব জনগণ, সারা বিশ্ব এ যুদ্ধবিরতি ও রক্তপাত বন্ধ হওয়ায় খুশি।’
তবে গতকাল বুধবার গভীর রাতে ট্রাম্পের ঘোষিত এই চুক্তির বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হয়নি বা এ সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি। ফলে অনেক অমীমাংসিত প্রশ্ন রয়ে গেছে। ওই সব প্রশ্নের মীমাংসা না হলে আগের শান্তি প্রচেষ্টার মতো এবারও চুক্তিটি ব্যর্থ হয়ে যেতে পারে।
ট্রাম্প নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যালে’ এক পোস্টে লিখেছেন, ‘আমি অত্যন্ত গর্বের সঙ্গে ঘোষণা করছি, ইসরায়েল ও হামাস—উভয় পক্ষই আমাদের শান্তি পরিকল্পনার প্রথম ধাপে স্বাক্ষর করেছে।’
ট্রাম্প আরও যোগ করেন, ‘এর অর্থ হলো সব জিম্মিকে খুব শিগগির মুক্তি দেওয়া হবে। একটি শক্তিশালী, টেকসই ও চিরস্থায়ী শান্তির প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ইসরায়েল তাদের সেনাদের নির্ধারিত সীমানায় ফিরিয়ে নেবে।’
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, চুক্তি অনুমোদনের জন্য তিনি আজ মন্ত্রিসভার বৈঠক ডাকছেন।
নেতানিয়াহু এক বিবৃতিতে বলেন, ‘পরিকল্পনার প্রথম ধাপ অনুমোদনের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সব জিম্মিকে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। এটি একটি কূটনৈতিক সাফল্য এবং ইসরায়েল রাষ্ট্রের জন্য একটি জাতীয় ও নৈতিক বিজয়।’
যুদ্ধ শেষ করার বিষয়ে চুক্তিতে পৌঁছানোর বিষয়টি নিশ্চিত করে হামাস বলেছে, এই চুক্তির মধ্যে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার ও জিম্মি-বন্দী বিনিময় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
হামাস বলেছে, ‘আমরা নিশ্চিত করছি, আমাদের জনগণের আত্মত্যাগ বৃথা যাবে না। আমরা আমাদের প্রতিজ্ঞার প্রতি বিশ্বস্ত থাকব। স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার অর্জন না হওয়া পর্যন্ত আমরা জনগণের জাতীয় অধিকার কখনো ত্যাগ করব না।’
জিম্মিদের কয়েক দিনের মধ্যে মুক্তি পাওয়ার আশা
হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে চুক্তি হচ্ছে, এমন ঘোষণার পর গাজায় আটক ইসরায়েলিদের পরিবারগুলো তেল আবিবের ‘হোস্টেজ স্কয়ারে’ জড়ো হয়।
জিম্মি মাতানের মা হাতান আনগ্রেস্ট বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আমরা তাঁকে ধন্যবাদ জানাই, তিনি ছাড়া আমাদের সন্তানেরা বাড়ি ফিরত না।’
হামাসের একটি সূত্র জানিয়েছে, ইসরায়েলি সরকার চুক্তি অনুমোদনের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জীবিত জিম্মিদের হস্তান্তর করা হবে। হামাস কর্মকর্তারা জোর দিয়ে বলেছেন, গাজার ধ্বংসস্তূপ থেকে মৃত জিম্মিদের মরদেহ উদ্ধার করতে আরও সময় লাগবে। তাঁদের সংখ্যা প্রায় ২৮ জন বলে মনে করা হচ্ছে।
ট্রাম্প গতকাল ফক্স নিউজের ‘হ্যানিটি’ অনুষ্ঠানে বলেন, জিম্মিদের সম্ভবত আগামী সোমবার মুক্তি দেওয়া হবে।