তিন উপদেষ্টা চান নীতি সুদহার কমুক
Published: 10th, November 2025 GMT
অন্তর্বর্তী সরকারের অন্তত তিনজন উপদেষ্টা বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি সুদের হার বিদ্যমান ১০ শতাংশ থেকে কমানোর পক্ষে মত দিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, এই হার বেশি থাকায় ব্যাংক খাতে বাণিজ্যিক ঋণের সুদহার উচ্চপর্যায়ে রয়েছে। এ কারণে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি কমে যাচ্ছে।
আজ সোমবার আর্থিক, মুদ্রা ও মুদ্রা বিনিময় হার–সংক্রান্ত সমন্বয় কাউন্সিলের বৈঠকে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন নীতি সুদহার কমানোর পক্ষে মত দেন। এ ব্যাপারে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য মনজুর হোসেনও জোরালো বক্তব্য দেন। অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, নীতি সুদহার কমানোর সময় এখনো আসেনি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে হারে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে স্বল্প মেয়াদে ঋণ দেয়, সেটাই হচ্ছে নীতি সুদহার। ইংরেজিতে একে বলে রেপো রেট। এটা বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য মুদ্রানীতির অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে পরিচিত। নীতি সুদহারের চেয়ে সাধারণত ৩ থেকে ৫ শতাংশ বেশি হয়ে থাকে ব্যাংকের ঋণের সুদের হার।
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে আরও অংশ নেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী, অর্থসচিব মো.
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, মূল আলোচনা সংশোধিত বাজেট নিয়ে হলেও বৈঠকের এক পর্যায়ে তা কেন্দ্রীভূত হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি সুদহারের ওপর। অর্থ উপদেষ্টা, পরিকল্পনা উপদেষ্টা, বাণিজ্য উপদেষ্টা এবং পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য আলোচনায় অংশ নিয়ে নীতি সুদহার কমানোর পক্ষে মত দেন। আলোচনায় উঠে আসে যে নীতি সুদের হার বেশি থাকার কারণেই ব্যাংক থেকে বেশি সুদে ঋণ নিতে হচ্ছে বেসরকারি খাতকে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত আগস্ট মাসে দেশের বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমে হয়েছে ৬ দশমিক ৩৫ শতাংশ, যা গত ২২ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, তিন উপদেষ্টার বক্তব্যের জবাবে গভর্নর বলেন, ‘নীতি সুদহার কমানোর সময় এখনো আসেনি। সরকার ব্যাংক খাত থেকে কম ঋণ নিলে বরং বেসরকারি খাত বেশি ঋণ নেওয়ার সুযোগ পাবে।’ এ ছাড়া গভর্নর সরকারের ব্যয় কমানোর পরামর্শ দেন।
প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা কমছে
২০২৫-২৬ অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা সামান্য কমানোর প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে বৈঠকে। এবারের বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। সংশোধিত বাজেটে তা ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হচ্ছে। এদিকে চলতি অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। এটি বাড়িয়ে করা হচ্ছে ৭ শতাংশ। তবে এগুলো চূড়ান্ত হবে ২০২৬ সালের মার্চে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) গত মাসে পূর্বভাস দিয়েছে, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৪ দশমিক ৯ শতাংশ। এই হার বিশ্বব্যাংক ৪ দশমিক ৮ শতাংশ এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ৫ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে।
তবে মূল্যস্ফীতি নিয়ে আইএমএফের প্রাক্কলন সরকারের চেয়ে বেশি। গত মাসে আইএমএফ বলেছে, চলতি অর্থবছর শেষে বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি হবে ৮ দশমিক ৮ শতাংশ। অন্যদিকে এই হার বিশ্বব্যাংক ৭ দশমিক ৪ শতাংশ ও এডিবি ৮ শতাংশ প্রাক্কলন করেছে।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের আকার ২০ হাজার কোটি টাকা কমানো হবে। ফলে বাজেটের আকার ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা থেকে কমে ৭ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকায় নেমে আসবে। আগামী ২০২৬-২৭ অর্থবছরের বাজেট নিয়েও প্রাথমিক আলোচনা করেছে কাউন্সিল। সেই বাজেটের আকার সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ১ লাখ কোটি টাকা বেশি হবে বলে জানা গেছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন উপদ ষ ট প রব দ ধ কম ন র প ব সরক র দশম ক
এছাড়াও পড়ুন:
আইএমএফকে বলেছি, এই মুহূর্তে ঋণের কিস্তির দরকার নেই: অর্থ উপদেষ্টা
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে এই মুহূর্তে ঋণের কিস্তির দরকার নেই বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। এ বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘আইএমএফকে আমরা বলেছি, এই মুহূর্তে আমাদের ঋণের কিস্তির দরকার নেই। তারা বরং আগে পর্যালোচনা করুক।’
আইএমএফের সঙ্গে চলমান ৫৫০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ কর্মসূচি থেকে ষষ্ঠ কিস্তির অর্থ পাওয়া প্রসঙ্গে আজ রোববার প্রথম মুখ খুললেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এদিন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ষষ্ঠ কিস্তির অর্থ নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করবে আইএমএফ। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে সংস্থাটির আরেকটি মিশন বাংলাদেশে আসবে। ওই সময় তারা পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে সিদ্ধান্ত নেবে।
নির্বাচিত সরকার কতটা ঋণ চায়, তা নিয়ে ফেব্রুয়ারির মিশনে আলোচনা করবে বলেও জানান অর্থ উপদেষ্টা। তিনি বলেন, আইএমএফ বলেছে, বাংলাদেশ ঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছে। তবে তাদের কিছু পরামর্শ আছে। যেমন বাংলাদেশকে রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে এবং ব্যয় বাড়াতে হবে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে। অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আগামী সরকারকে আইএমএফের ঋণ, সংস্কারের শর্তসহ সব বিষয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ প্যাকেজ তৈরি করে দেওয়া হবে।
বাংলাদেশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি আইএমএফ ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করে। পরে এ বছরের জুন মাসে আইএমএফের পর্ষদ বাংলাদেশের ঋণ কর্মসূচির মেয়াদ বাড়িয়েছে ছয় মাস এবং বাড়তি ৮০ কোটি ডলার যুক্ত করেছে। এভাবেই ঋণ কর্মসূচির মোট আকার এখন ৫৫০ কোটি ডলার।
আইএমএফ থেকে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার, একই বছরের ডিসেম্বরে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার, ২০২৪ সালের জুনে তৃতীয় কিস্তির ১১৫ কোটি ডলার এবং ২০২৫ সালের জুনে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির ১৩৩ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। অর্থাৎ পাঁচ কিস্তিতে বাংলাদেশ আইএমএফ থেকে পেয়েছে ৩৬৪ কোটি ডলার। বাকি আছে ১৮৬ কোটি ডলার।
গত ২৯ অক্টোবর থেকে দুই সপ্তাহের সফরে আইএমএফের একটি মিশন রয়েছে ঢাকায়। সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে বৈঠক করছে এ মিশন। ঋণ কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশ ‘পরিমাণগত কর্মক্ষমতা মানদণ্ড’ (কোয়ান্টিটেটিভ পারফরম্যান্স ক্রাইটেরিয়া বা কিউপিসি) কতটা পূরণ করছে, তা নিয়ে আলোচনা চলছে বলে জানা গেছে।
কিউপিসি হচ্ছে আইএমএফের বাধ্যতামূলক শর্ত। গত মে মাসে কিউপিসির কিছু শর্ত যুক্ত হয়েছে। এগুলো হচ্ছে বিদেশি ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে সীমা নির্ধারণ, জ্বালানি ও সার আমদানির বকেয়া পরিশোধ এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ। এ তালিকায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংরক্ষণের শর্তও আছে। এসব শর্ত পূরণ না হলে আইএমএফ পরের কিস্তি দেয় না। তবে আইএমএফের নির্বাহী পর্ষদ চাইলে কোনো কোনো শর্তের বিষয়ে পূর্ণ বা আংশিক অব্যাহতি দিতে পারে।