ডেঙ্গুতে আরও ৪ জনের মৃত্যু, নতুন আক্রান্ত ৭৮১ জন
Published: 9th, October 2025 GMT
দেশে ডেঙ্গুতে মৃত্যু বাড়ছেই। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় (গতকাল বুধবার সকাল আটটা থেকে আজ বৃহস্পতিবার সকাল আটটা পর্যন্ত) ৪ জন মারা গেছেন এডিস মশাবাহিত এই রোগে। আর এ সময় নতুন করে ৭৮১ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। চারজনেরই মৃত্যু হয়েছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকার হাসপাতালগুলোয়। আজ বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গু নিয়ে দেওয়া প্রাত্যহিক প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দেশে মোট ৫২ হাজার ৮৮৫ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ২২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ৫০ হাজার ২০৯ জন। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় দুজন মারা গেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, আর বাকি দুজন মারা গেছেন মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, নতুন আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ৬৭ দশমিক ৭ শতাংশই পুরুষ। গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২৬ থেকে ৩০ বছর বয়সীদের সংখ্যা।
এদিন ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন ২৭৮ জন। আর ঢাকার বাইরের জেলাগুলোয় ৫০৩ জন। ঢাকার দুই সিটির বাইরে সংক্রমণ বেশি হয়েছে বরিশাল বিভাগে, এ সংখ্যা ১৩০।
চলতি বছর ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ সংক্রমণ ও মৃত্যু হয়েছে গত সেপ্টেম্বর মাসে। তবে চলতি অক্টোবর মাসে এখন পর্যন্ত মৃত্যু ও সংক্রমণ আগের যেকোনো মাসের চেয়ে বেশি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘস্থায়ী বৃষ্টিপাত ও অপর্যাপ্ত মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের কারণে সংক্রমণ পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ক রমণ
এছাড়াও পড়ুন:
‘সেফ এক্সিট’ আর নেই কারোরই
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলমের বক্তব্যের সূত্র ধরে দেশের রাজনীতিতে এখন অন্যতম আলোচিত বিষয় ‘অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের সেফ এক্সিট (নিরাপদ প্রস্থান)’। আজ বৃহস্পতিবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে তথ্য উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলমের সামনে এ প্রসঙ্গ তুললেন লেখক–অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান। রসিকতা করে তিনি বলেছেন, ‘সেফ এক্সিট’ আর নেই কারোরই।
আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকায় প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ (পিআইবি) মিলনায়তনে ‘গণমাধ্যমে জুলাই ও তারপর’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন সলিমুল্লাহ খান। একই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। জুলাই গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে পিআইবির পাঁচটি প্রকাশনার (‘তারিখে জুলাই’, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ও রাজনৈতিক বুদ্ধিজীবিতা’, ‘নিরীক্ষা: অভ্যুত্থান মিডিয়া বয়ান’, ‘যে সাংবাদিকদের হারিয়েছি’ এবং ‘ঘটনাপঞ্জি ২০২৪’) প্রকাশনা উৎসব উপলক্ষে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
মাহফুজ আলমের আগে বক্তব্য দিতে গিয়ে সলিমুল্লাহ খান রসিকতা করে বলেন, সেফ এক্সিট আর নেই কারোরই। এ সময় মাহফুজের দিকে তাকিয়ে তিনি বলেন, ‘মাহফুজ, একটি রাজনৈতিক দলের নেতা বলছেন, মৃত্যু ছাড়া আর কোনো সেফ এক্সিট নেই।’ এরপর তিনি বলেন, ‘কম মানুষ তো প্রাণ দেয়নি। এত মানুষ যে প্রাণ দিল, এগুলো কি সংখ্যামাত্র? এগুলো একেকটা পরিবার।’
জুলাই গণ–অভ্যুত্থান নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমের অপপ্রচার নিয়ে গত মাসের শেষ সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে এক অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছিলেন, ‘তারা বলেছে, এরা তালেবান এবং এদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তারা এমনটাও বলেছে, আমিও একজন তালেবান। আমার দাড়ি নেই, মাত্রই তা বাড়িতে রেখে এসেছি।’ অধ্যাপক ইউনূসের এ বক্তব্যের কথা উল্লেখ করে সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘এটা না বললেই তিনি পারতেন।’
‘সেকেন্ড রিপাবলিক’–এর কথা মাহফুজ আলমরা বলা শুরু করলেও পরে বন্ধ করে দিয়েছেন, এ কথাও বক্তব্যে উল্লেখ করেন সলিমুল্লাহ খান। তিনি বলেন, ‘সেকেন্ড রিপাবলিক বলাটা যেন একটা পাপ। মোটেও না। ভিয়েতনাম যুদ্ধের পরে তিন-চারবার সংবিধান বদলেছে। কিন্তু আমরা এখনো বাহাত্তরের সংবিধানকে পুনরুদ্ধার করার সংগ্রামে এত দৃঢ় পায়ে দাঁড়িয়ে আছি, বাংলাদেশ যেন বঙ্গোপসাগরে পড়ে যাবে এই সংবিধান পরিবর্তন করা হলে। সংবিধান তো পরিবর্তিত হয়ে গেছে। কিন্তু আরেকটা নতুন সংবিধান নিতে আপনি এতই ভয় পাচ্ছেন যে এটাকে সংশোধন, পুনরুদ্ধারের কথা বলছেন। রাজবংশ ফিরিয়ে আনতে আর কয় দিন! বাংলাদেশকে রাজতন্ত্র ঘোষণা করে দিলে আমি বিস্মিত হব না।’
আলোচনা সভায় সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও চীনের বিপ্লবের ইতিহাস পড়লে দেখা যাবে, সেখানে বিপ্লবের পরে শত শত হত্যাকাণ্ড হয়েছে। তার তুলনায় আমাদের দেশে বিপ্লব-পরবর্তী হত্যাকাণ্ডের পরিমাণ অনেক কম। দয়া করে আমাকে হত্যাকাণ্ডের উৎসাহদাতা হিসেবে প্রচার করবেন না।’ তিনি এ কথাও বলেন, গত এক বছরে বাংলাদেশে যা দেখা গেছে, তা উৎসাহব্যঞ্জক নয়।
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে নানা প্রচারের বিষয়েও কথা বলেন অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান। তিনি বলেন, ‘অনেকে বলছেন, এই বিপ্লব হয়েছে সেক্যুলারিজমের বিরুদ্ধে। কিন্তু সেক্যুলারিজম মানে যদি বর্বরতা, অসভ্যতা বা দেশের অর্থ পাচার হয়, তাহলে আমি সেই সেক্যুলারিজম চাইব কেন?’
সলিমুল্লাহ খান আরও বলেন, পৃথিবীতে কোনো বিপ্লবই ষোলো আনা সফল হয় না। বিপ্লবে কিন্তু নানা রূপান্তর হয়। বিপ্লব স্মৃতি আকারেও ফেরত আসে। যে ঘটনা একবার ঘটে গেছে, এটা আর না করা যাবে না।
অনুষ্ঠানে সভাপ্রধান ছিলেন পিআইবির পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান ফিরদৌস আজিম। সলিমুল্লাহ খান ছাড়াও বিশেষ অতিথি ছিলেন অর্থনীতিবিদ মাহবুব উল্লাহ এবং লেখক ও গবেষক সাইমুম পারভেজ। এতে স্বাগত বক্তব্য দেন পিআইবির মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন পিআইবির তথ্য ও গবেষণা কর্মকর্তা সহুল আহমেদ মুন্না। পাঁচটি প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচন ও আলোচনার পাশাপাশি এই অনুষ্ঠানে পিআইবির ফ্যাক্টচেকিং উদ্যোগ ‘বাংলা ফ্যাক্টের’ ওয়েবসাইটও উদ্বোধন করেন তথ্য উপদেষ্টা।