পূর্ব সুন্দরবনের হাড়বাড়িয়া ইকো পর্যটনকেন্দ্রের ফুট ট্রেইলে দেখা মিলেছে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের। 

গতকাল শনিবার (১১ অক্টোবর) সকাল ১১টার দিকে পর্যটনকেন্দ্রের ফুট ট্রেইলে বিশালাকৃতির একটি বাঘকে বসে থাকতে দেখেন পর্যটকরা। 

এসময় তারা বাঘের বসে থাকার দৃশ্য মোবাইল ফোনে ধারণ করেন। পরে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) রেজাউল করিম চৌধুরী সেই ভিডিও নিজের ফেসবুক পেজে প্রকাশ করেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ২৯ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে দেখা যায়, বিশাল এক রয়েল বেঙ্গল টাইগার ফুট ট্রেইলের মাঝখানে শান্তভাবে বসে আছে। কিছু সময় বসে থাকার পর বাঘটি ফুট ট্রেইলে হাঁটা শুরু করে।

হারবাড়িয়া ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কেএম রমজান আলী কানন বলেন, “শনিবার পর্যটকরা যখন ফুট ট্রেইলে হাঁটছিলেন তখন তারা সেখানে একটি বাঘকে বসে থাকতে দেখেন। বাঘটি কিছু সময় বসেছিল। আমরা বাঘটিকে আবার বনে তাড়িয়ে দিই।”

বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী জানান, হাড়বাড়িয়া ইকো পর্যটন কেন্দ্র সুন্দরবনের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান। প্রতিদিনই সেখানে শত শত দেশি-বিদেশি পর্যটক ঘুরতে আসেন। এত কাছ থেকে বাঘ দেখা অত্যন্ত বিরল ঘটনা।

তিনি বলেন, “হাড়বাড়িয়া অঞ্চল সুন্দরবনের মূল বাঘের বিচরণক্ষেত্রের সন্নিকটে। তাই মাঝে মাঝে বাঘের উপস্থিতি দেখা যায়। পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা অতিরিক্ত সতর্কতা গ্রহণ করেছি।”

২০১৮ সালের শুমারি অনুযায়ী সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ছিল ১১৪টি। সর্বশেষ ২০২৪ সালের বাঘ গণনায় সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২৫টিতে। অর্থাৎ গত ছয় বছরে বাঘ বেড়েছে ১১টি।

ঢাকা/শহিদুল/এস

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ন দরবন র

এছাড়াও পড়ুন:

সুন্দরবনে হরিণ শিকার রোধে টানা অভিযান, তিন দিনে সাড়ে ৯ হাজার ফুট ফাঁদ উদ্ধার

মোংলার সুন্দরবনসংলগ্ন পশুর নদের তীরের কানাইনগর এলাকা। চারদিকে নোনা হাওয়া আর নদীর গন্ধে ভরা নীরবতা। গতকাল বুধবার দিবাগত রাত ১টার দিকে সেই নীরবতা ভাঙে কোস্ট গার্ড ও পুলিশের যৌথ অভিযানে।

গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে স্থানীয় একটি ঝুপড়ি থেকে উদ্ধার করা হয় ৩২ কেজি হরিণের মাংস, দুটি মাথা, আটটি পা ও আড়াই হাজার মিটার লম্বা ফাঁদ। ঘটনাস্থল থেকেই একজন শিকারিকে আটক করা হয়।

সুন্দরবনের বিভিন্ন টহলফাঁড়ি এলাকায় টানা অভিযান চলছে। গত তিন দিনে উদ্ধার করা হয়েছে ৯ হাজার ৪১০ ফুট ফাঁদ।

এ বিষয়ে কোস্ট গার্ডের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিয়াম–উল–হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘গোপন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করা হয়। আটক শিকারির সঙ্গে উদ্ধার হয়েছে সুন্দরবনের বন্য প্রাণী শিকারের নানা আলামত। ভবিষ্যতেও এ ধরনের অভিযান চলবে।’

বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বুধবার বন বিভাগের চরপুটিয়া টহলফাঁড়ির বনরক্ষীদের টহলে গহিন জঙ্গলের চরের খাল এলাকা থেকে উদ্ধার হয় ৮০০ ফুট লম্বা হরিণ শিকারের পেতে রাখা ফাঁদ। একই দিনে হুলার ভারানী ও সূর্যমুখী খালসংলগ্ন বনাঞ্চলে হেঁটে তল্লাশি চালিয়ে উদ্ধার করা হয় আরও ১৩৫ ফুট লম্বা ফাঁদ।

এর আগের দিন মঙ্গলবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চরপুটিয়া ফাঁড়ির টহলে উদ্ধার হয় আরও দুটি ফাঁদ—একটি ৫০০ ফুট লম্বা, আরেকটি বস্তায় ভরা অবস্থায়। একই দিনে শেলার চর এলাকার ভাঙ্গার খাল থেকে উদ্ধার করা হয় ৩০০ ফুট লম্বা ফাঁদ।

আরও পড়ুনসুন্দরবনের খালে নৌকায় ‘হিমায়িত’ ৪৮ কেজি হরিণের মাংস উদ্ধার১৪ অক্টোবর ২০২৫

সোমবার শেলার চর টহলফাঁড়ির বনরক্ষীরা আদানি–গুড়গুড়ি বনাঞ্চলে টহলের সময় কেওড়া ও গরানগাছের মাঝখানে মালা ফাঁদ দেখতে পান। প্রায় ২০০ ফুট লম্বা এসব ফাঁদ জব্দ করে ধ্বংস করা হয়। একই দিনে জোংড়া টহলফাঁড়ির বনাঞ্চল থেকে উদ্ধার হয় আরও ২৫০ ফুট ফাঁদ। তার আগের দিন ২৩ নভেম্বর মুচিরদোয়ানি খালের পাশের বনাঞ্চল থেকে ১৫০ মিটার ফাঁদ উদ্ধার করে বন বিভাগ।

স্থানীয় গ্রামবাসী ও শিকারি হিসেবে পূর্বে দণ্ডপ্রাপ্ত কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সুন্দরবনের যেখানে কেওড়াগাছ বেশি, সেসব এলাকায় হরিণ চলাচল তুলনামূলক বেশি। শিকারিরা দড়ি দিয়ে ‘ডোয়া’ নামে লম্বা ফাঁদ তৈরি করে হরিণের চলার পথে রাখে। এতে চলাফেরার সময় হরিণ আটকা পড়ে। ‘ছিটকে ফাঁদ’ নামে আরেক ধরনের ফাঁদে ধরা পড়ে হরিণ। শিকারিরা সাধারণত দড়ির বোঝা নিয়ে বনে ঢোকে এবং ভেতরেই ফাঁদ তৈরি করে। পরে এসব ফাঁদ বস্তায় ভরে মাটির নিচে লুকিয়ে রাখা হয়, বারবার ব্যবহারের জন্য।

আরও পড়ুনসুন্দরবনে ফাঁদে আটকে ছটফট করছিল প্রাণীটি১৯ অক্টোবর ২০২৫

সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, এখন ‘প্যারালাল লাইন সার্চিং’ পদ্ধতিতে সারিবদ্ধভাবে বনের ভেতর হেঁটে টহল দেওয়া হয়, যাতে চিরুনির মতো অগ্রসর হয়ে ফাঁদ দ্রুত শনাক্ত করা যায়। বাঘ–কুমিরের ঝুঁকি থাকলেও নিয়মিত কাউন্ট ও কথা বলতে বলতে বনের ভেতর দিয়ে এগোলে নিরাপত্তা থাকে। তিনি বলেন, ‘হরিণকে বাঁচাতেই হবে, না হলে বাঘও বাঁচবে না। হেঁটে টহল দেওয়ায় অনেক ফাঁদ আগেই শনাক্ত হচ্ছে, এতে বহু হরিণ রক্ষা পাচ্ছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকা থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় ১৮ বস্তা শামুক-ঝিনুক উদ্ধার
  • সুন্দরবনে হরিণ শিকার রোধে টানা অভিযান, তিন দিনে সাড়ে ৯ হাজার ফুট ফাঁদ উদ্ধার