প্রতি চারজনের মধ্যে তিনজন নারী স্বামীর সহিংসতার শিকার: জরিপ
Published: 13th, October 2025 GMT
দেশে প্রতি চারজন নারীর মধ্যে তিনজনের সঙ্গে জীবনে অন্তত একবার জীবনসঙ্গী বা স্বামী সহিংস আচরণ করেছেন।
শারীরিক, যৌন, মানসিক, অর্থনৈতিক সহিংসতা ও নিয়ন্ত্রণমূলক আচরণের শিকার হয়েছেন নারী। তবে সামগ্রিকভাবে এই সহিংসতার হার ২০১৫ সালের চেয়ে প্রায় ১৭ শতাংশ কমে এসেছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ও বাংলাদেশে জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের ‘নারীর প্রতি সহিংসতা জরিপ ২০২৪’-এ এমন তথ্য জানানো হয়েছে।
আজ সোমবার সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয়। ফলাফল তুলে ধরেন বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর উপপরিচালক মিনাক্ষী বিশ্বাস।
জরিপের ফলাফলে বলা হয়েছে, দেশের ৭৬ শতাংশ নারীকেই জীবনে অন্তত একবার জীবনসঙ্গীর সহিংসতার শিকার হতে হয়েছে। তাদের মধ্যে ৪৯ শতাংশ গত এক বছরে এ ধরনের সহিংসতার শিকার হয়েছেন। সহিংসতার শিকার হওয়া তিনজনের মধ্যে দুজন ভুক্তভোগী (৬২ শতাংশ) তাঁদের অভিজ্ঞতা কখনো প্রকাশ করেননি।
জরিপের ফলাফলে আরও বলা হয়েছে, ১৫ শতাংশ নারী ১৫ বছর বয়স থেকে সঙ্গী নন এমন ব্যক্তির মাধ্যমে শারীরিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন। ২ শতাংশের বেশি যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন। তবে স্বামীর সহিংস আচরণ ২০১৫ সালে ৬৬ শতাংশ থেকে কমে ২০২৪ সালে ৪৯ শতাংশে নেমে এসেছে।
জরিপে আরও বলা হয়, কম বয়স, যৌতুক প্রথা, স্বামীর মাদকাসক্তি বা বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক এবং শহুরে বস্তিতে বসবাস করা নারীরা স্বামীর মাধ্যমে বেশি সহিংসতার শিকার হন। স্বামীর উচ্চতর শিক্ষা সহিংসতার ঝুঁকি কমায়। কম বয়স, সীমিত শিক্ষা ও প্রতিবন্ধিতার কারণে নারীরা সঙ্গী নয় এমন ব্যক্তির কাছে বেশি সহিংসতার শিকার হন।
যৌন সহিংসতা বেশি
জরিপের ফলাফলে বলা হয়েছে, অর্ধেকের বেশি নারী (৫৪ শতাংশ) জীবদ্দশায় স্বামীর মাধ্যমে শারীরিক বা যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন। যৌন সহিংসতার শিকার নারীদের মধ্যে ৬০ শতাংশ গত ১২ মাসে একাধিকবার সহিংসতার সম্মুখীন হয়েছেন।
বিবাহিত নারীদের মধ্যে ৭ শতাংশের বেশি অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় শারীরিক সহিংসতা এবং ৫ শতাংশের বেশি যৌন সহিংসতার সম্মুখীন হয়েছেন।
ফলাফলে আরও বলা হয়েছে, শাশুড়ি ও পুরুষ আত্মীয়রা নারীর সঙ্গে শারীরিক সহিংসতার ঘটনায় বেশি জড়িত। আর পুরুষ আত্মীয়, বন্ধু ও পরিচিতজনের মাধ্যমে নারীরা বেশি যৌন সহিংসতার শিকার হন।
ডিজিটাল মাধ্যমেও সহিংসতা
জরিপের ফলাফল থেকে দেখা যায়, ৮ দশমিক ৩ শতাংশ নারী প্রযুক্তির মাধ্যমে জেন্ডার-ভিত্তিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন। এগুলো যৌন ব্ল্যাকমেল, ছবি নিয়ে অপব্যবহার ও নিয়ন্ত্রণমূলক আচরণের সঙ্গে সম্পর্কিত।
পরিষেবা চাওয়ার হার কম
জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, সহিংসতার শিকার নারীদের মধ্যে পরিষেবা চাওয়ার হার উদ্বেগজনকভাবে কম। জরিপের ফলাফল বলছে, মাত্র ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ সহিংসতার শিকার নারী চিকিৎসাসেবা নিয়েছেন। স্বামীর কাছে সহিংসতার শিকার নারীদের মধ্যে মাত্র ৭ দশমিক ৪ শতাংশ আইনি পদক্ষেপ নিয়েছেন এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই স্থানীয় নেতার কাছ থেকেই সহায়তা চেয়েছেন।
অন্যদিকে জীবনসঙ্গী নয়, সহিংসতার শিকার নারীদের মধ্যে মাত্র ৩ দশমিক ৮ শতাংশ আইনি পদক্ষেপ নিয়েছেন, এবং সবচেয়ে বেশি পুলিশের কাছ থেকেই আইনি সহায়তা চেয়েছেন।
কোথায় অভিযোগ জানাতে হবে ভুক্তভোগী নারীদের মধ্যে সেই সচেতনতাও কম। জরিপের ফলাফলে বলা হয়েছে, প্রতি দুজনের মধ্যে একজনেরও কম নারী (৪৮ দশমিক ৫ শতাংশ) জানেন না যে কোথায় সহিংসতার অভিযোগ জানাতে হয় এবং মাত্র ১২ দশমিক ৩ শতাংশ নারী সহিংসতার সহায়তাকারী হেল্পলাইন ১০৯ সম্পর্কে অবগত।
ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা কমিশনের আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য কাইয়ুম আরা বেগম। বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব আলেয়া আক্তার এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শবনম মোস্তারি। অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) বাংলাদেশ প্রতিনিধি ক্যাথরিন ব্রিন কামকং।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র প র ফল ফল য ন সহ দশম ক
এছাড়াও পড়ুন:
অক্সিজেনের বহুরূপী আচরণ
পৃথিবীতে প্রাণের বিকাশের জন্য অক্সিজেনের উপস্থিতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অক্সিজেন না থাকলে পৃথিবী প্রাণহীন হয়ে যাবে। তবে অক্সিজেনের অণু একই সঙ্গে আমাদের জীবনধারণের জন্য বন্ধু ও কোষের জন্য ক্ষতিকারক হিসেবে কাজ করে। নতুন এক গবেষণায় বিজ্ঞানীরা সেই প্রক্রিয়া উন্মোচন করেছেন। অক্সিজেন নানাভাবে তার বন্ধুত্বপূর্ণ ও ধ্বংসাত্মক রূপের মধ্যে পরিবর্তন ঘটায়।
বিজ্ঞানীরা একই অক্সিজেন অণুর দুটি ভিন্ন স্পিন অবস্থাকে আলাদা করার জন্য সিঙ্গলেট অক্সিজেন ও ট্রিপলেট অক্সিজেনের কথা জানিয়েছেন। ট্রিপলেট অক্সিজেন শান্ত ও স্থিতিশীল রূপ, যা আমরা শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করি। আর সিঙ্গলেট অক্সিজেন অত্যন্ত প্রতিক্রিয়াশীল ও ক্ষণস্থায়ী রূপ। এটি কোষ ও ব্যাটারির উপাদানের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক হতে পারে। এই সিঙ্গলেট অক্সিজেনের পূর্বসূরি সুপার অক্সাইড। এটি একটি অতিরিক্ত ইলেকট্রনসহ অক্সিজেন। যখন দুটি সুপার অক্সাইড একত্র হয়, তখন ডিসপ্রোপোরশনেশন প্রক্রিয়ায় একটি পার অক্সাইডে ও অন্যটি অক্সিজেন গ্যাসে পরিণত হয়। অস্ট্রিয়ার ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির বিজ্ঞানীরা কোন পরিস্থিতিতে ট্রিপলেট অক্সিজেন প্রভাবশালী থাকবে ও কখন ক্ষতিকারক সিঙ্গলেট অক্সিজেন তৈরি হয়, তা বের করেছেন। এ পরিবর্তনের মূল নিয়ন্ত্রণকারী উপাদান বিক্রিয়ার চালিকা শক্তি। নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, যখন চালিকা শক্তি বাড়তে থাকে, তখন ট্রিপলেট অক্সিজেন তৈরির গতি প্রথমে বাড়ে, তারপর অপ্রত্যাশিতভাবে কমতে শুরু করে। এ গতি কমে যাওয়ার ফলেই সিঙ্গলেট অক্সিজেন দ্রুত তৈরি হয়। উচ্চ চালিকা শক্তিতে বিক্রিয়ার এই বিপরীতধর্মী মন্থরতা মার্কাস তত্ত্বের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করা যায়। এই তত্ত্ব অনুসারে, বিক্রিয়ায় ধাক্কা খুব বেশি বেড়ে গেলে বিক্রিয়া ত্বরান্বিত হওয়ার স্বাভাবিক অঞ্চলের পরে একটি ওলটানো অঞ্চলে প্রবেশ করে, যেখানে গতি কম হয়। এ গবেষণা প্রমাণ করে চালিকা শক্তি কমিয়ে বা মাধ্যমের পুনঃসংগঠন শক্তি বাড়িয়ে তুললে নিরাপদ ট্রিপলেট অক্সিজেনের পথ তৈরি করা যায়।
আরও পড়ুনঅক্সিজেন কমে যাবে পৃথিবীতে২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫বিজ্ঞানীদের ধারণা, প্রাণী কোষের পিএইচ অক্সিজেনের ভাগ্য নির্ধারণ করে। এ বিষয়ে বিজ্ঞানী স্টেফ্যান এ ফ্রুনবার্গার বলেন, ‘আমরা এখনো জানি না খারাপ সিঙ্গলেট অক্সিজেন কীভাবে তৈরি হয়। কোষের অভ্যন্তরে পিএইচ বিভিন্ন অংশে ভিন্ন ভিন্ন হয়। লাইসোসোম অ্যাসিডিক আর মাইটোকন্ড্রিয়া সামান্য ক্ষারীয় হয়। পিএইচয়ের এ পরিবর্তন সুপার অক্সাইড বিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণকারী চালিকা শক্তিকে স্থানান্তর করে মাইটোকন্ড্রিয়াতে উচ্চ পিএইচ চালিকা শক্তিকে কম রাখে। সেখানে সিঙ্গলেট অক্সিজেন তৈরি হতে বাধা পায়। বিপরীতে অ্যাসিডিক অঙ্গাণুতে সিঙ্গলেট অক্সিজেন তৈরির সম্ভাবনা বেশি থাকে। পিএইচয়ের ছোট পরিবর্তন বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
আরও পড়ুনপৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের পরিমাণ বেশি কেন০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫বৈদ্যুতিক ব্যাটারিতে সিঙ্গলেট অক্সিজেনের প্রভাব দেখা যায়। অক্সিজেন ব্যাটারি চার্জ ও ডিসচার্জের সময় সুপার অক্সাইড ও পার অক্সাইড তৈরি করে। বিভিন্ন ডিভাইসে সিঙ্গলেট অক্সিজেনকে প্যারাসাইটিক বিক্রিয়ার প্রধান উৎস হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এ ধরনের অক্সিজেন ইলেকট্রোলাইট ক্ষয় করে। কিছু ইলেকট্রোলাইট ও লবণের ব্যবহার সিঙ্গলেট অক্সিজেন নির্গমনের সম্ভাবনা বাড়াতে বা কমাতে পারে। অক্সিজেনের বহুরূপী এ আচরণের নিয়ে এ গবেষণা ফলাফল নেচার সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে।
সূত্র: আর্থ ডটকম