পুঁজিবাজারে বন্ড খাতে তালিকাভুক্ত বেক্সিমকো গ্রুপের বেক্সিমকো গ্রিন সুকুক বন্ড আল ইসতানিয়ার অনিয়ম, দুর্নীতি ও সার্বিক কার্যক্রম তদন্ত শুরু করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। তবে সুকুক বন্ডটির মাধ্যমে সংগৃহীত তহবিল অপব্যবহার হয়েছে কি-না, তা অনুসন্ধানের লক্ষ্যে ইতিপূর্বে জারি করা বিএসইসির তদন্তের আদেশ বাতিল করে নতুন আদেশ জারি করা হয়েছে।

বেক্সিমকো গ্রিন সুকুক বন্ড আল ইসতানিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত সব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম অনুসন্ধান করার লক্ষ্যে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। গঠিত তদন্ত কমিটিকে আগামী ৬০ দিনের মধ্যে তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে কমিশন।

আরো পড়ুন:

বাটা সুর নতুন এমডি ফারিয়া ইয়াসমিন

ডিএসইতে সূচক বাড়লেও সিএসইতে কমেছে

সম্প্রতি বিএসইসির মার্কেট ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

২০২১ সালে বেক্সিমকো গ্রিন সুকুক বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে ৩ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করেছিল।তবে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ নির্ধারিত প্রকল্প ও খাতে বিনিয়োগ হয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখবে বিএসইসি। বিনিয়োগকারীদের তহবিল যথাযথ খাতে ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং পুঁজিবাজারে স্বচ্ছতা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখা-তদন্তের মূল লক্ষ্য।

বেক্সিমকো গ্রিন সুকুক বন্ড আল ইসতানিয়ার জন্য গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন-বিএসইসির অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান, উপ-পরিচালক আসিফ ইকবাল এবং সহকারী পরিচালক মো.

সাগর ইসলাম।

বিগত সরকারের আমলে আইন বা বিধি-বিধান লঙ্ঘন করা বন্ড ও সুকুকের বিরুদ্ধে তেমন কোনো কঠোর ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। তবে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পুনর্গঠিত বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন বন্ড ও সুকুকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে।

বিএসইসির তদন্ত আদেশ
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন বেক্সিমকো গ্রিন সুকুক বন্ড আল ইসতানিয়ার প্রবর্তক বেক্সিমকো লিমিটেডসহ তার সহযোগী (সাবসিডিয়ারি) প্রতিষ্ঠান তিস্তা সোলার লিমিটেড ও করতোয়া সোলার লিমিমিটেড, স্পেশাল পারপাস ভেরিকল (এসপিভি) বা বেক্সিমকো গ্রিন সুকুকের ট্রাস্ট, ট্রাস্টি ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) ও নিরীক্ষক এম.জে. আবেদীন অ্যান্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টসের ওপর বন্ড সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম সম্পর্কিত বিষয় এবং বেক্সিমকো গ্রিন সুকুক বন্ড আল ইসতানিয়ার মাধ্যমে উত্তোলিত অর্থের ব্যবহারের বিষয়ে অনুসন্ধান ও তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নির্দেশনা প্রদান করেছে। এ লক্ষ্যে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অ্যোদশ, ১৯৬৯ এর ধারা ২১ এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ আন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন, ১৯৯৩ এর ধারা ১৭ক এ প্রদন্ত ক্ষমতাবলে তিনজন কর্মচারীর সমন্বয়ে একটি অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটি গঠন করা হলো। অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটির সদস্যরা এই আদেশ জারির তারিখ থেকে ৬০ দিবসের মধ্যে অনুসন্ধান ও তদন্ত সম্পন্ন করে কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল করবে।

আগে এ বিষয়ে বিএসইসির চলতি বছরের ২৭ আগস্ট জারি করা তদন্তের আদেশ বাতিল করা হলো।

যেসব বিষয় খতিয়ে দেখবে তদন্ত কমিটি
গঠিত তদন্ত কমিটি বেক্সিমকো গ্রিন সুকুক আল ইসতিসনার প্রবর্তক বেক্সিমকো লিমিটেডসহ তার সহযোগী প্রতিষ্ঠান ভিস্তা সোলার, করতোয়া সোলার লিমিটেড, স্পেশাল পারপাস ভেরিকল (এসপিভি) বা বেক্সিমকো গ্রিন সুকুকের ট্রাস্ট, ট্রাস্টি ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) ও নিরীক্ষক এম.জে. আবেদীন অ্যান্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টসের সব কার্যক্রম অনুসন্ধান করে দেখবে।

বেক্সিমকো গ্রিন সুকুকের মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ প্রকল্প অনুযায়ী ব্যবহার করা হয়েছে কি না, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হয়েছে কি না, কিংবা কোনো অনিয়ম বা তথ্য গোপন করা হয়েছে কি না-তা যাচাই করবে গঠিত তদন্ত কমিটি।

এ বিষয়ে জানতে ‎বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র মো. আবুল কালামের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

এর আগে সুকুক ইস্যুর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিধিমালার কিছু বিধি থেকে বেক্সিমকো লিমিটেডকে কমিশন কর্তৃক অব্যাহতি প্রদান করা হয়। কিন্তু ওই অব্যাহতির প্রজ্ঞাপন সরকারি গেজেটে প্রকাশ হওয়ার আগেই ২০২১ সালের ২৩ জুন সুকুক ইস্যুর আবেদন অনুমোদন দেয় কমিশন। ওই বছরের ৮ জুলাই কমিশন কর্তৃক সম্মতিপত্র বা কনসেন্ট লেটারও ইস্যু করা হয়। পরবর্তী সময়ে ক্ষমতা অপব্যবহার করে ওই সুকুকের পাবলিক সাবস্ক্রিপশনের সময়সীমা ২৩ আগস্ট ২০২১ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১ পর্যন্ত বাড়ানো হয়।

এ ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার কারণে বেক্সিমকো গ্রুপের কর্ণধার ও আইএফআইসি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান এবং বিএসইসির তৎকালীন চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামকে পুঁজিবাজারে আজীবন অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে বিএসইসি। পাশাপাশি একইসঙ্গে সালমান এফ রহমানের ছেলে আহমেদ সায়ান ফজলুর রহমানকে আজীবন, বিএসইসির সাবেক কমিশনার শেখ সামসুদ্দিন আহমেদ ও আইএফআইসি ইনভেস্টমেন্টের সাবেক সিইও ইমরান আহমেদকে ৫ বছর পুঁজিবাজারে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া এছাড়া সালমান এফ রহমানকে ১০০ কোটি টাকা, তার ছেলে আহমেদ সায়ান ফজলুর রহমানকে ৫০ কোটি টাকা ও ক্রেডিট রেটিং প্রদানকারী ইমার্জিং ক্রেডিট রেটিংকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করেছে।

৩ হাজার কোটি টাকার ৫ বছর মেয়াদি বেক্সিমকো সিকিউরড কনভার্টিবল অর রিডিমেবল অ্যাসেট-ব্যাকড গ্রিন সুকুকের প্রস্তাব ২০২১ সালের ২৩ জুন অনুষ্ঠিত কমিশনের ৭৭৯তম কমিশন সভায় অনুমোদিত হয়। প্রস্তাবিত গ্রিন সুকুকটি ২ হাজার ২৫০ কোটি প্রাইভেট প্লেসমেন্টের (৭৫০ কোটি বিদ্যমান শেয়ারহোল্ডারদের কাছ থেকে এবং ১ হাজার ৫০০ কোটি বিদ্যমান শেয়ারহোল্ডারদের ব্যতীত অন্য বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে) মাধ্যমে এবং ৭৫০ কোটি প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে ইস্যুর জন্য অনুমোদিত হয়।

এ সুকুকের মাধ্যমে উত্তোলিত অর্থ বেক্সিমকো লিমিটেডের টেক্সটাইল ইউনিটের কার্যক্রম বর্ধিতকরণ এবং তার দুটি সাবসিডিয়ারি নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প তিস্তা সোলার লিমিটেড (২০০ মেগাওয়াট) ও করতোয়া সোলার লিমিটেডে (৩০ মেগাওয়াট) ব্যবহার করে পরিবেশ উন্নয়ন ও সংরক্ষণের কথা ছিল। ওই সুকুকের প্রতিটি ইউনিটের অভিহিত মূল্য ছিল ১০০ টাকা, ন্যূনতম সাবস্ক্রিপশন মূল্য ছিল ৫ হাজার টাকা।

ঢাকা/এনটি/এসবি

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ক উর ট জ ব এসইস র ইনভ স ট ব যবহ র লক ষ য আহম দ রহম ন

এছাড়াও পড়ুন:

নেগেটিভ ইক্যুইটি ও লস প্রভিশনিংয়ের সময় পাচ্ছে আরো ৮ প্রতিষ্ঠান

পুঁজিবাজারের মধ্যস্থতাকারী আরো ৮ প্রতিষ্ঠানের নেগেটিভ ইক্যুইটি ও আনরিয়েলাইজড লসের প্রভিশন সংরক্ষণ ও সমন্বয়ের জন্য শর্তসাপেক্ষে সময়সীমা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এই তালিকায় স্টকব্রোকার, ডিলার ও মার্চেন্ট ব্যাংকসহ একাধিক বাজার মধ্যস্থতাকারী রয়েছে।

মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে ৯৮৫তম কমিশন সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র মো. আবুল কালাম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

আরো পড়ুন:

ডিএসইতে সূচকের সামান্য পতন, সিএসইতে বড় উত্থান

পুঁজিবাজারে বড় উত্থান, লেনদেনে বেড়েছে গতি

প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- সিটি ব্রোকারেজ লিমিটেড, ওয়ান সিকিউরিটিজ লিমিটেড, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক সিকিউরিটিজ, বিডি সানলাইফ সিকিউরিটিজ লিমিটেড, আইএফআইসি সিকিউরিটিজ, এপেক্স ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেড, এবাসি ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড এবং সোনালী ইনভেস্টমেন্ট পিএলসি।

বিএসইসির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আটটি প্রতিষ্ঠানের নেগেটিভ ইক্যুইটি ও আনরিয়েলাইজড লসের প্রভিশন সংরক্ষণ ও সমন্বয়সংক্রান্ত অ্যাকশন প্ল্যান বিবেচনা করে শর্তসাপেক্ষে সময়সীমা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

গত ১৪ নভেম্বর ৯৮৪তম কমিশন সভায় ২৮ প্রতিষ্ঠানকে নেতিবাচক ইক্যুইটি ও অবাস্তব লোকসানের বিপরীতে প্রভিশন সংরক্ষণ ও সমন্বয়ের জন্য শর্তসাপেক্ষে সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি।
 

ঢাকা/এনটি/বকুল 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সিআইএ-এর সঙ্গে কাজ করেছিল ওয়াশিংটন ডিসিতে হামলাকারী
  • ধর্মেন্দ্রর সঙ্গে কেন দেখা করতে দেননি মুমতাজকে?
  • হোয়াইট হাউজের কাছে ন্যাশনাল গার্ডের দুই সদস্যকে গুলি
  • বাংলাদেশ ব্যাংক আর বিএসইসির শীর্ষ ব্যক্তিরাও ব্যাংকের এমডি হতে পারবেন
  • এখন অনলাইনেই সব নথি জমা দেওয়া যাবে
  • খসড়া আইপিও রুলস নিয়ে বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে বিএসইসির বৈঠক
  • নিরাপত্তা সঞ্চিতিতে ছাড় পেল ৮ ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংক
  • খসড়া আইপিও রুলস নিয়ে অংশীজনদের সঙ্গে বিএসইসির বৈঠক
  • নেগেটিভ ইক্যুইটি ও লস প্রভিশনিংয়ের সময় পাচ্ছে আরো ৮ প্রতিষ্ঠান