পিআর বুঝি না—এই কথা দায়িত্বশীলের হতে পারে না: মিয়া গোলাম পরওয়ার
Published: 13th, October 2025 GMT
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, পিআর বুঝি না—এই কথা কোনো রাজনৈতিক নেতা বা দায়িত্বশীলের কথা হতে পারে না। এই পদ্ধতি জনগণ চায় কি না, সেটা জুলাই চার্টারে অন্তর্ভুক্ত করে গণভোটে দিয়ে দেওয়া হোক। জনগণ যদি চায়, তবে সবাইকে মানতে হবে। আর জনগণ যদি না বলে, জামায়াতে ইসলামী সেটা মেনে নেবে।
আজ সোমবার খুলনা–৫ আসনের (ডুমুরিয়া–ফুলতলা) ডুমুরিয়া বাজারে নির্বাচনী গণসংযোগে মিয়া গোলাম পরওয়ার এ কথা বলেন।
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে মনোনয়ন–বাণিজ্য, চাঁদাবাজ, দখলবাজ, দুর্নীতিবাজদের সুযোগ থাকবে না। সে জন্য পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চায় না একটি রাজনৈতিক দল।
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ‘ইতিমধ্যেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ নির্ধারণ করা হয়েছে। আমরা ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও ভয়ভীতিমুক্ত গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে আসছি। আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা অনুযায়ী কালোটাকার ব্যবহার বন্ধ, ভোটকেন্দ্র দখল, পেশিশক্তি প্রদর্শন ও ভোটের বিভিন্ন অনিয়ম ও অপতৎপরতা বন্ধ, মানসম্পন্ন পার্লামেন্ট, দক্ষ আইনপ্রণেতা তৈরিসহ পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের জন্য জোর দাবি জানিয়ে আসছি। আমাদের দাবি বর্তমানে জনগণের দাবিতে পরিণত হয়েছে। জনগণের দাবিগুলো কার্যকর করার কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না।’
জামায়াতের এই নেতা বলেন, জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন এবং জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি ন্যায়ভিত্তিক ও জবাবদিহিমূলক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্ররূপে গড়ার লক্ষ্যে জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল আন্দোলন কর্মসূচি পালন করছে।
নির্বাচনী গণসংযোগের সময় মিয়া গোলাম পরওয়ারের সঙ্গে ছিলেন খুলনা জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মুন্সি মিজানুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি মিয়া গোলাম কুদ্দুস, কর্মপরিষদ সদস্য আবু ইউসুফ মোল্লা, ডুমুরিয়া উপজেলা আমির মোক্তার হোসেন, ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি আবদুর রশিদ, সহকারী সেক্রেটারি ফরহাদ আল মাহমুদ, ডুমুরিয়া উপজেলা ইসলামী ছাত্রশিবির সভাপতি আবু তাহের, ছাত্রশিবির পশ্চিম শাখার সভাপতি শামিদুল হাসান লিমন, উপজেলা হিন্দু কমিটির সাধারণ সম্পাদক দেবপ্রসাদ মন্ডল প্রমুখ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ ল ম পরওয় র
এছাড়াও পড়ুন:
পর্দায় আড়াল করা নীতি থেকে সরে আসুন
বিদেশি অতিথিরা এসে যাতে জনগণের দারিদ্র্য-মালিন্য দেখতে না পান, সে জন্য ‘রাজপথের ধারেকাছে দারিদ্র্যের যত চিহ্ন আছে’ সব আড়াল করার চল এ অঞ্চলে অনেক আগে থেকেই চালু আছে।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান কিশোরগঞ্জের ভৈরব স্টেশন সড়কে যাওয়ার পর সেখানে সেই ধরনের দৃশ্যপট দেখা গেছে। দেখা গেছে, উপদেষ্টা আসবেন বলে প্রধান সড়কের পাশের আবর্জনা পর্দা দিয়ে আড়াল করা হলো। আবর্জনা চোখের আড়ালে গেলেও দুর্গন্ধ রয়ে গেল। মানুষ নাক চেপে পার হলো। কিন্তু ছবিতে ধরা পড়ল ‘পরিচ্ছন্ন’ ভৈরব।
উপদেষ্টা নিশ্চিন্তে ফিরে গেলেন। পরের দিন পর্দা খুলে ফেলা হলো। একদিন পর সেখানে উঠল বেড়া। স্থায়ী আবরণে আবর্জনাকে চোখের আড়াল করা হলো। এই ঘটনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হাসিঠাট্টা হয়েছে। তবে ঘটনাটি নিছক হাস্যকর নয়; কারণ এটি বাংলাদেশের প্রশাসনিক সংস্কৃতির এক গভীর প্রতীকচিত্র।
এতে যে কারও মনে হতে পারে, আমরা এমন এক রাষ্ট্রে বাস করছি, যেখানে ‘পরিচ্ছন্নতা’ মানে ময়লা ও গন্ধ দূর করা নয়, বরং বিশেষ ও অভিজাত ব্যক্তিবিশেষের দৃষ্টিসুখ নিশ্চিত করা। এখানে উন্নয়নকে দেখা হয় প্রলেপের মতো যার গভীরে থাকে পচন, ওপরে থাকে উজ্জ্বল রংচং। এই নান্দনিক প্রতারণার উদ্দেশ্য নাগরিককে সন্তুষ্ট করা নয়; বরং সেই বিশেষ ব্যক্তির সন্তুষ্টি অর্জন।
ইউএনওর যুক্তি ছিল, ঘরে মেহমান এলে যেমন গৃহস্থ ঘর গুছিয়ে রাখে, তেমনি উপদেষ্টার সম্মানে আবর্জনাকে সাময়িক আড়াল করা হয়েছে। কিন্তু মনে রাখা দরকার, রাষ্ট্র নামক এই ঘরের মালিক উপদেষ্টা নন, জনগণ। আর উপদেষ্টা বা মন্ত্রীরা সেই ঘরের মেহমান নন। তাঁরা সেই ঘর গুছিয়ে রাখার কাজে নিয়োজিত বেতনভুক্ত পরিচারক।
সেই বিবেচনায় ভৈরবের আবর্জনার স্তূপ আড়াল না করে উল্টো উপদেষ্টাকে আরও ভালো করে তা দেখানো দরকার ছিল। এতে সরকার যাঁরা পরিচালনা করেন, তাঁরা মাঠপর্যায়ের সত্যিকার ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে ধারণা পেতে পারেন এবং সে অনুযায়ী তাঁরা সমস্যা সমাধানে ব্যবস্থা নিতে পারেন। এতে দিন শেষে তা নাগরিকের জন্যই কল্যাণকর হয়।
স্থানীয় সরকার ও প্রশাসনকে বুঝতে হবে, আবর্জনা আড়াল না করে শহরের জন্য স্থায়ী বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, সময়মতো বর্জ্য সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াকরণ জরুরি। এগুলো কোনো বিলাসিতা নয়, এগুলো নাগরিক জীবনের মৌলিক শর্ত। সেই আলোকে ভৈরব স্টেশন সড়কের বর্জ্য সমস্যার স্থায়ী সমাধান জরুরি।