Prothomalo:
2025-10-13@18:32:36 GMT

ইতিহাসের অভিনব পাঠ

Published: 13th, October 2025 GMT

বাংলাদেশের ইতিহাস–পাঠের ক্ষেত্রে হরহামেশা যে গলদ চোখে পড়ে, তা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকাঠামোর নিরিখে চিহ্নিত করা সম্ভব। ইতিহাসকে সাংস্কৃতিক রাজনীতির নিরিখে না দেখে কেবলই তা রাষ্ট্রীয় কিংবা নির্ধারিত ক্ষমতাকাঠামোর বিবেচনায় দেখার ঐতিহাসিক প্রবণতার কারণে অনেক সময় বৃহৎ জনসমাজ বিবেচনার বাইরে রয়ে যায়। সাংস্কৃতিক রাজনীতি যেসব বিষয় নিয়ে তার আলোচনা জারি রাখে তার মধ্যে অন্যতম সংস্কৃতি ও ক্ষমতা-সম্পর্ক। বাংলাদেশ-পাঠের ক্ষেত্রে রাফাত আলম এই দুই বিষয়ের মধ্যে সমন্বয়ের ওপর জোর দিয়েছেন।

এই গ্রন্থে ইতিহাসের যে ধারণা বা তত্ত্ব ব্যবহৃত হয়েছে, তা প্রথাগত কাঠামোবাদী ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে যে আলাদা তা বলা যায়। এখানে লেখক ঐতিহাসিক সমালোচনামূলক পদ্ধতির আশ্রয় নিয়েছেন।

প্রশ্ন উঠতে পারে, এই পদ্ধতি রাফাত আলম এই গ্রন্থে কীভাবে কার্যকর রেখেছেন? শেখ মুজিবুর রহমান প্রসঙ্গে লেখা প্রবন্ধটির দিকে নজর দিলে এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে। বাঙালি জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক আন্দোলনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমানকে বাংলাদেশ রাষ্ট্রে নির্দলীয় ইতিহাস-নির্মাণ বিবেচনায় না রেখে প্রায়ই তাঁকে দলীয় বিচার-বিবেচনায় বিচার করা হয়েছে। শেখ মুজিবুর রহমান যে তাঁর রাজনৈতিক জীবনের যাত্রা শুরু করেছিলেন পাকিস্তান আন্দোলনের ভেতর দিয়ে, তা অনেকেই চেপে যেতে চান। কিন্তু এই যে পাকিস্তান-আন্দোলন এবং তার সঙ্গে শেখ মুজিবুর রহমানের সম্পর্ক চেপে যাওয়া—একার্থে তা তাঁর সম্পর্কে প্রকৃত ইতিহাসকে এড়িয়ে একটি স্বার্থসংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক ইতিহাস নির্মাণ করা, যা সুবিধাবাদী ধারণার ভেতরেই প্রোথিত থাকে। এই গ্রন্থের “শেখ মুজিবের ‘পাকিস্তান-আন্দোলন’ পাঠ: আত্মজীবনীর দর্পণে” শীর্ষক প্রথম প্রবন্ধে জীবনী-সাহিত্যের পটভূমিকায় শেখ মুজিবুর রহমানের প্রথম জীবনের রাজনৈতিক কর্মতত্পরতার বিষয়টি বিশেষভাবে স্পষ্ট করার প্রবণতা লক্ষ করা যায়।

দ্বিতীয় প্রবন্ধের শিরোনাম: ‘মুনীর চৌধুরীর গল্পসাহিত্য: নবোদ্ভিন্ন বাঙালির জীবনভাষ্য’। প্রবন্ধটি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব মুনীর চৌধুরীর গল্প নিয়ে। কিন্তু এই প্রবন্ধের বিষয় কেবল গল্প নয়, বরং গল্পের সীমানা পেরিয়ে ঢাকায় নতুন রাষ্ট্র নির্মাণ-সময় আর সেই সময়ে যাপিত মানুষজনের কাছে নিয়ে যায়।

এই প্রবন্ধগ্রন্থের সর্বশেষ প্রবন্ধ অ্যাকাডেমিক সংগঠক মুহম্মদ আবদুল হাই: ‘পাকিস্তান’ থেকে ‘বাংলাদেশ’। যে কেউ আবদুল হাই সম্পর্কে জানতে গেলে এই সত্য খুঁজে পাবেন যে তিনি তাঁর জীবনের প্রথম দিকে তীব্রভাবে পাকিস্তানপন্থী ছিলেন। রাফাত আলম প্রবন্ধটিতে আবদুল হাইয়ের এই চিন্তা-ধারণা আর কর্মপরিসরের সক্রিয়তা বিষয়েই আলোচনা-সমালোচনার মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন।

গ্রন্থটির প্রতিটি প্রবন্ধে লেখকের এই দৃষ্টিভঙ্গি সক্রিয় থেকেছে। ইতিহাসের বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক ক্রিয়াশীলতার বিবেচনায় ‘বাংলাদেশ-পাঠ’ বিষয়টি তাই ভিন্ন মাত্রা অর্জনে সমর্থ হয়েছে। পাঠক গ্রন্থ পাঠের পর এই সত্য নিশ্চয় উপলব্ধি করতে পারবেন।

বাংলাদেশ পাঠ: সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক ক্রিয়াশীলতার অনুষঙ্গে
রাফাত আলম

প্রকাশক: ইউপিএল
প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি ২০২৫
প্রচ্ছদ: আল নোমান;
পৃষ্ঠা: ১৫৪; মূল্য: ৬০০ টাকা

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ খ ম জ ব র রহম ন র জন ত ক প রবন ধ গ রন থ জ বন র

এছাড়াও পড়ুন:

ইতিহাসের অভিনব পাঠ

বাংলাদেশের ইতিহাস–পাঠের ক্ষেত্রে হরহামেশা যে গলদ চোখে পড়ে, তা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকাঠামোর নিরিখে চিহ্নিত করা সম্ভব। ইতিহাসকে সাংস্কৃতিক রাজনীতির নিরিখে না দেখে কেবলই তা রাষ্ট্রীয় কিংবা নির্ধারিত ক্ষমতাকাঠামোর বিবেচনায় দেখার ঐতিহাসিক প্রবণতার কারণে অনেক সময় বৃহৎ জনসমাজ বিবেচনার বাইরে রয়ে যায়। সাংস্কৃতিক রাজনীতি যেসব বিষয় নিয়ে তার আলোচনা জারি রাখে তার মধ্যে অন্যতম সংস্কৃতি ও ক্ষমতা-সম্পর্ক। বাংলাদেশ-পাঠের ক্ষেত্রে রাফাত আলম এই দুই বিষয়ের মধ্যে সমন্বয়ের ওপর জোর দিয়েছেন।

এই গ্রন্থে ইতিহাসের যে ধারণা বা তত্ত্ব ব্যবহৃত হয়েছে, তা প্রথাগত কাঠামোবাদী ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে যে আলাদা তা বলা যায়। এখানে লেখক ঐতিহাসিক সমালোচনামূলক পদ্ধতির আশ্রয় নিয়েছেন।

প্রশ্ন উঠতে পারে, এই পদ্ধতি রাফাত আলম এই গ্রন্থে কীভাবে কার্যকর রেখেছেন? শেখ মুজিবুর রহমান প্রসঙ্গে লেখা প্রবন্ধটির দিকে নজর দিলে এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে। বাঙালি জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক আন্দোলনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমানকে বাংলাদেশ রাষ্ট্রে নির্দলীয় ইতিহাস-নির্মাণ বিবেচনায় না রেখে প্রায়ই তাঁকে দলীয় বিচার-বিবেচনায় বিচার করা হয়েছে। শেখ মুজিবুর রহমান যে তাঁর রাজনৈতিক জীবনের যাত্রা শুরু করেছিলেন পাকিস্তান আন্দোলনের ভেতর দিয়ে, তা অনেকেই চেপে যেতে চান। কিন্তু এই যে পাকিস্তান-আন্দোলন এবং তার সঙ্গে শেখ মুজিবুর রহমানের সম্পর্ক চেপে যাওয়া—একার্থে তা তাঁর সম্পর্কে প্রকৃত ইতিহাসকে এড়িয়ে একটি স্বার্থসংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক ইতিহাস নির্মাণ করা, যা সুবিধাবাদী ধারণার ভেতরেই প্রোথিত থাকে। এই গ্রন্থের “শেখ মুজিবের ‘পাকিস্তান-আন্দোলন’ পাঠ: আত্মজীবনীর দর্পণে” শীর্ষক প্রথম প্রবন্ধে জীবনী-সাহিত্যের পটভূমিকায় শেখ মুজিবুর রহমানের প্রথম জীবনের রাজনৈতিক কর্মতত্পরতার বিষয়টি বিশেষভাবে স্পষ্ট করার প্রবণতা লক্ষ করা যায়।

দ্বিতীয় প্রবন্ধের শিরোনাম: ‘মুনীর চৌধুরীর গল্পসাহিত্য: নবোদ্ভিন্ন বাঙালির জীবনভাষ্য’। প্রবন্ধটি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব মুনীর চৌধুরীর গল্প নিয়ে। কিন্তু এই প্রবন্ধের বিষয় কেবল গল্প নয়, বরং গল্পের সীমানা পেরিয়ে ঢাকায় নতুন রাষ্ট্র নির্মাণ-সময় আর সেই সময়ে যাপিত মানুষজনের কাছে নিয়ে যায়।

এই প্রবন্ধগ্রন্থের সর্বশেষ প্রবন্ধ অ্যাকাডেমিক সংগঠক মুহম্মদ আবদুল হাই: ‘পাকিস্তান’ থেকে ‘বাংলাদেশ’। যে কেউ আবদুল হাই সম্পর্কে জানতে গেলে এই সত্য খুঁজে পাবেন যে তিনি তাঁর জীবনের প্রথম দিকে তীব্রভাবে পাকিস্তানপন্থী ছিলেন। রাফাত আলম প্রবন্ধটিতে আবদুল হাইয়ের এই চিন্তা-ধারণা আর কর্মপরিসরের সক্রিয়তা বিষয়েই আলোচনা-সমালোচনার মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন।

গ্রন্থটির প্রতিটি প্রবন্ধে লেখকের এই দৃষ্টিভঙ্গি সক্রিয় থেকেছে। ইতিহাসের বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক ক্রিয়াশীলতার বিবেচনায় ‘বাংলাদেশ-পাঠ’ বিষয়টি তাই ভিন্ন মাত্রা অর্জনে সমর্থ হয়েছে। পাঠক গ্রন্থ পাঠের পর এই সত্য নিশ্চয় উপলব্ধি করতে পারবেন।

বাংলাদেশ পাঠ: সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক ক্রিয়াশীলতার অনুষঙ্গে
রাফাত আলম

প্রকাশক: ইউপিএল
প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি ২০২৫
প্রচ্ছদ: আল নোমান;
পৃষ্ঠা: ১৫৪; মূল্য: ৬০০ টাকা

সম্পর্কিত নিবন্ধ