ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সরকারি জায়গা মাপজোখে বাধা দেওয়া ও সার্ভেয়ারকে মারধরের অভিযোগে যুবদলের এক নেতাকে এক দিনের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ সময় তাঁকে এক হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। সোমবার রাতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সিফাত মো. ইশতিয়াক ভূঁইয়া ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে এই কারাদণ্ড দেন।

কারাদণ্ড পাওয়া যুবদলের নেতার নাম সোহেল জাহান (৩৫)। তিনি জেলা যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। জেলা শহরের গোকর্ণ ঘাটের বাসিন্দা হলেও সোহেল পরিবার নিয়ে শহরের কাজীপাড়ায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের কাজী মাহমুদ শাহ সড়কসংলগ্ন কাজীপাড়ার উত্তর দিকের ১ নম্বর খাত খতিয়ানভুক্ত ১৫ শতাংশ জায়গা রয়েছে। সেখানে বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) একটি প্রকল্প থেকে একটি ভবন নির্মাণ করা হবে।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সোমবার বেলা দেড়টার দিকে সদর উপজেলা ভূমি কার্যালয়ের সার্ভেয়ার রফিকুল ইসলাম, জারিকারক বোরহান উদ্দিন ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জায়গাটি মাপজোখ করতে যান। যুবদল নেতা সোহেল জাহান ঘটনাস্থলে গিয়ে মাপজোখে বাধা দেন। সেখানে নিজের জায়গা রয়েছে বলে সার্ভেয়ার রফিকুল ইসলাম ও জারিকারক বোরহান উদ্দিনকে জানান সোহেল। বাধা উপেক্ষা করে মাপজোখ করতে গেলে সার্ভেয়ার ও জারিকারকের সঙ্গে সোহেল জাহানের কথা–কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে জারিকারক বোরহান উদ্দিনের সঙ্গে যুবদল নেতা সোহেলের হাতাহাতি হয়। এতে বোরহান উদ্দিন আহত হন।

বিষয়টি জেনে সোমবার সন্ধ্যায় ইউএনও সিফাত মো.

ইশতিয়াক ভূঁইয়া কাজীপাড়া গিয়ে একটি ভাড়া বাসা থেকে যুবদল নেতা সোহেল জাহানকে আটক করেন। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে তাঁকে এক দিনের কারাদণ্ড ও এক হাজার টাকা জরিমানা করেন।

ইউএনও সিফাত মো. ইশতিয়াক ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি কর্মচারী জায়গা মাপতে গেলে বাধা প্রদান করা হয়। সরকারি কাজে বাধা প্রদানসহ সরকারি কর্মকারীকে মারধর করে আহত করা হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে আটক করা সোহেলকে দণ্ডবিধি ১৮৬০–এর ১৮৬ ধারায় এক দিনের কারাদণ্ড প্রদানসহ এক হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সদর উপজেলা ভূমি কার্যালয়ের সার্ভেয়ার রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে জানান, কাজীপাড়ার জায়গাটি মাপজোখ করতে গেলে সেখানে বাধা দেন সোহেল জাহান। একপর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে জারিকারক বোরহান উদ্দিনের সঙ্গে তাঁর হাতাহাতি হয়। বোরহান উদ্দিনের শার্টের বোতাম ছিঁড়ে ফেলা হয় এবং তাঁকে আহত করা হয়।

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আজহারুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি জায়গা মাপজোখে বাধা দেওয়াসহ সার্ভেয়ারের সঙ্গে সোহেল জাহানের হাতাহাতি হয়েছে। এ ঘটনায় সোমবার সন্ধ্যায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে তাঁকে এক দিনের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সদর উপজ ল য বদল ন ত কর মকর ত ল ইসল ম স মব র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

শিকলে বাধা শান্তর চিকিৎসায় ইউএনওর সহায়তা

কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার ছাতিয়ান গ্রামে টাকার অভাবে শিকলবন্দী জীবন কাটছে ১৪ বছর বয়সী শান্তর। জন্মের পর থেকেই মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। পরিবার তাকে চিকিৎসা করানোর চেষ্টা করে। তবে অর্থ সংকটে নিয়মিত চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে দিন–দিন অস্বাভাবিক আচরণ বাড়তে থাকে। সে কারণে রাতে ঘরে, আর দিনে গাছের সঙ্গে শিকলে বেঁধে রাখতে বাধ্য হন অভিভাবকরা।

গত রবিবার (২৩ নভেম্বর) দুপুরে শান্তর বাড়িতে যান নবাগত জেলা প্রশাসক মো. ইকবাল হোসেন। তিনি শিশুটির অবস্থা দেখে চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়ার আশ্বাস দেন।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার (২৬ নভেম্বর) বিকেলে শান্তর বাড়িতে প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা করার জন্য নগদ ১৫ হাজার টাকা শান্তর বাবা জসীম উদ্দীনের হাতে তুলে দেন মিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাজমুল ইসলাম। 

এসময় উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার পীযূষ কুমার, সমাজসেবা কর্মকর্তা জামশেদ আলী, মিরপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি মারফত আফ্রিদি।

এ ব্যাপারে শান্তর পিতা জসিম উদ্দিন জানান, ২০১১ সালে জন্ম নেওয়ার পর শান্ত সাড়ে তিন বছর বয়সে নানা অস্বাভাবিক আচরণ ও অখাদ্য খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলে। পরে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে গেলে দীর্ঘ পাঁচ বছর চিকিৎসা চালানোর পরামর্শ দেওয়া হয়।

দারিদ্র্যের কারণে নিয়মিত ওষুধ কিনতে না পেরে চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যায়। কিছুটা ভালো হওয়ার পর আবার সমস্যার পুনরাবৃত্তি হলে ২০১৮ সালে ফের চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। সেবারও পাঁচ বছর ধরে ওষুধ চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ আসে। কিন্তু দৈনিক ১০০-২০০ টাকার ওষুধ বাবদ খরচ মেটানো তার পক্ষে সম্ভব হয়নি।

জসিম আরো জানান, করোনাকালে গণমাধ্যমে শান্তর ভিডিও ভাইরাল হলে সেসময়ের পুলিশ সুপার তানভির আরাফাত চিকিৎসার দায়িত্ব নেন। পরে তিনি বদলি হলে চিকিৎসা থেমে যায়। বর্তমানে প্রতিবন্ধী ভাতার ২ হাজার ৬০০ টাকা তিন মাস পরপর পেলেও তা খাবার, কাপড় ও পরিচর্যায় শেষ হয়ে যায়। 

তিনি বলেন, “গত ২৪ নভেম্বর ডিসি স্যার শান্তকে দেখতে আসেন এবং চিকিৎসার সার্বিক সহযোগিতা দেওয়ার আশ্বাস প্রদান করেন। গতকাল ইউএনও স্যার ১৫ হাজার টাকা প্রদান করলেন এবং শান্তর চিকিৎসার দায়িত্ব নিলেন। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাও সার্বিক সহযোগিতা করবেন বলে জানিয়েছেন।”

মিরপুরের ইউএনও মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, “শান্তকে দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থতার কারণে শিকলে বেঁধে রাখা হয়। বিষয়টি জেলা প্রশাসকের নজরে আসার পর তিনি নিজে গিয়ে শিশুটির খোঁজ খবর নেন। আমরা প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসার জন্য ১৫ হাজার টাকা প্রদান করি। সরকারি সকল সহযোগিতা থেকে শান্তর চিকিৎসার সুব্যবস্থা করা হবে।”

ঢাকা/কাঞ্চন/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পাহাড়চূড়ায় ‘অতিকায় জাহাজ’, দূরে তাকালে সাগর, কোথায় এমন জায়গা
  • শিকলে বাধা শান্তর চিকিৎসায় ইউএনওর সহায়তা
  • ১৬৬ উপজেলায় নতুন ইউএনও
  • কেমন আছে রাজবাড়ী জেলার নদীগুলো