রাতের অন্ধকারে সুন্দরবনের গহিন বনে হরিণ শিকার করে মাংস নিয়ে ফিরছিলেন একদল শিকারি। সত্যপীরের খাল পেরিয়ে শাকবাড়িয়া নদী ধরে নৌকাটি যখন লোকালয়ের দিকে এগোচ্ছিল, তখন হাজির হন কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশনের বনরক্ষীরা। তাঁদের উপস্থিতি টের পেয়ে এক শিকারি নদীর তীরে লাফিয়ে পালিয়ে যান, আরেকজন ধরা পড়েন।

ওই নৌকা থেকে উদ্ধার করা হয় একটি ঝুড়ি ও চারটি কর্কশিটে বরফে রাখা প্রায় ৪৮ কেজি হরিণের মাংস ও ৮০ কেজি বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। গতকাল সোমবার মধ্যরাতে কয়রা উপজেলার শাকবাড়িয়া নদীর তীরে এ ঘটনাটি ঘটে। আজ মঙ্গলবার সকালে আটক ব্যক্তি ও উদ্ধার করা মাংস নিয়ে বনরক্ষীরা ফিরে আসেন কয়রার কাশিয়াবাদ ফরেস্ট কার্যালয়ে।

আজ সকালে কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশনের কর্মকর্তা নাসির উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা শাকবাড়িয়া নদীতে টহল দিচ্ছিলাম। নদীর এক পাশে লোকালয়, অন্য পাশে সুন্দরবন। হঠাৎ দেখি, একটি নৌকায় দুজন ব্যক্তি সন্দেহজনকভাবে বসে আছেন। কাছে যেতেই একজন নদীর তীরে লাফিয়ে পালান, অন্যজনকে আটক করি। নৌকায় বরফে ঢাকা পাত্রে হরিণের মাংস ও মাছ ছিল। সেখানে সুন্দরবনে মাছ ধরার বড় চরেপাতা জালও পাওয়া গেছে।’

আটক ব্যক্তির নাম দিদারুল ইসলাম (৩৫)। তাঁর বাড়ি কয়রার মহারাজপুর গ্রামে। পালিয়ে যাওয়া ব্যক্তি ১ নম্বর কয়রা গ্রামের মনিরুল ইসলাম সরদার। বন বিভাগ জানিয়েছে, এ ঘটনায় কয়রা বন আদালতে মামলা করা হচ্ছে। আদালতের নির্দেশে উদ্ধার করা হরিণের মাংস বিনষ্ট করা হবে। জব্দ করা মাছগুলো ইতিমধ্যে পচে নষ্ট হয়ে গেছে।

সুন্দরবনসংলগ্ন কয়রা এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, লোকালয়ের পাশের ছোট নদী পেরোলেই গহিন জঙ্গল। শিকারিরা সাধারণত কোনো প্রস্তুত ফাঁদ বহন করে নিয়ে যান না। মাছ ধরার জালের সঙ্গে দড়ি নিয়ে বনে যান। সেই দড়ি ব্যবহার করে নিজেরাই বানান ‘ডোয়া’ নামের ফাঁদ। হরিণের চলাচলের পথে এই ফাঁদ পেতে রাখা হয়। হরিণ ফাঁদে আটকা পড়লে তাঁরা বনরক্ষীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে জবাই করে মাংস লোকালয়ে এনে বিক্রি করেন। পরে ফাঁদগুলো মাটির নিচে পুঁতে রেখে যান, যাতে আবার ব্যবহার করা যায়।

সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা এ জেড এম হাছানুর রহমান বলেন, ‘হরিণ শিকারের বিষয়ে আমাদের অবস্থান সম্পূর্ণ “জিরো টলারেন্স”। শিকার হওয়ার পর মাংস উদ্ধার কোনো সাফল্য নয়, প্রকৃত সাফল্য হলো শিকার হওয়ার আগেই হরিণকে রক্ষা করা। আমরা হরিণের মাংসের ক্রেতা, বিক্রেতা ও শিকারিদের চিহ্নিত করছি এবং গোয়েন্দা তৎপরতা আরও জোরদার করেছি। অপরাধ উদ্‌ঘাটনে তথ্যদাতার পরিচয় গোপন রেখে পুরস্কার দেওয়ার ব্যবস্থাও রয়েছে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ন দরবন উদ ধ র ক

এছাড়াও পড়ুন:

সুন্দরবনের হাড়বাড়িয়া পর্যটনকেন্দ্রে বাঘের দেখা

পূর্ব সুন্দরবনের হাড়বাড়িয়া ইকো পর্যটনকেন্দ্রের ফুট ট্রেইলে দেখা মিলেছে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের। 

গতকাল শনিবার (১১ অক্টোবর) সকাল ১১টার দিকে পর্যটনকেন্দ্রের ফুট ট্রেইলে বিশালাকৃতির একটি বাঘকে বসে থাকতে দেখেন পর্যটকরা। 

এসময় তারা বাঘের বসে থাকার দৃশ্য মোবাইল ফোনে ধারণ করেন। পরে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) রেজাউল করিম চৌধুরী সেই ভিডিও নিজের ফেসবুক পেজে প্রকাশ করেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ২৯ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে দেখা যায়, বিশাল এক রয়েল বেঙ্গল টাইগার ফুট ট্রেইলের মাঝখানে শান্তভাবে বসে আছে। কিছু সময় বসে থাকার পর বাঘটি ফুট ট্রেইলে হাঁটা শুরু করে।

হারবাড়িয়া ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কেএম রমজান আলী কানন বলেন, “শনিবার পর্যটকরা যখন ফুট ট্রেইলে হাঁটছিলেন তখন তারা সেখানে একটি বাঘকে বসে থাকতে দেখেন। বাঘটি কিছু সময় বসেছিল। আমরা বাঘটিকে আবার বনে তাড়িয়ে দিই।”

বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী জানান, হাড়বাড়িয়া ইকো পর্যটন কেন্দ্র সুন্দরবনের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান। প্রতিদিনই সেখানে শত শত দেশি-বিদেশি পর্যটক ঘুরতে আসেন। এত কাছ থেকে বাঘ দেখা অত্যন্ত বিরল ঘটনা।

তিনি বলেন, “হাড়বাড়িয়া অঞ্চল সুন্দরবনের মূল বাঘের বিচরণক্ষেত্রের সন্নিকটে। তাই মাঝে মাঝে বাঘের উপস্থিতি দেখা যায়। পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা অতিরিক্ত সতর্কতা গ্রহণ করেছি।”

২০১৮ সালের শুমারি অনুযায়ী সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ছিল ১১৪টি। সর্বশেষ ২০২৪ সালের বাঘ গণনায় সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২৫টিতে। অর্থাৎ গত ছয় বছরে বাঘ বেড়েছে ১১টি।

ঢাকা/শহিদুল/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সুন্দরবনে হাড়বাড়িয়ায় ফুট ট্রেইলে বাঘ
  • রয়েল বেঙ্গল টাইগার রাজকীয় ভঙ্গিতে বসে ছিল ফুট ট্রেইলে
  • শান্ত-মারিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ভবনে একাডেমিক কার্যক্রমের উদ্বোধন
  • সুন্দরবনের হাড়বাড়িয়া পর্যটনকেন্দ্রে বাঘের দেখা