বিএনপি ৫ শতাংশ নারীকে মনোনয়ন দিতে পারে: সেলিমা রহমান
Published: 14th, October 2025 GMT
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেছেন, “আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরাসরি ভোটে দল থেকে কমপক্ষে ৫ শতাংশ নারী প্রার্থী মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। এর মাধ্যমে নারীরা নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবেন।”
মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) খুলনা প্রেস ক্লাবে ‘নারী ও শিশু অধিকার ফোরাম’ আয়োজিত খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলার সমন্বয় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আরো পড়ুন:
দুই স্ত্রীর বিবাদে প্রাণ গেল যুবদল নেতার
জামায়াতের ধারণা তারা ক্ষমতায় গেছে: দুলাল
বেগম সেলিমা রহমান বলেন, “দেশে নারী শিক্ষা ও পেশাজীবী অঙ্গনে নারীদের যে অবস্থান, তা জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার হাত ধরেই এগিয়েছে। এখন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে নারী জাগরণ ঘটবে।”
সভায় নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের সদস্য সচিব নিপুন রায় চৌধুরী বলেন, “আগামী নির্বাচনে বিএনপি অবশ্যই যোগ্য নারীদের দলীয় মনোনয়ন দেবে এবং তারা জনগণের ভোটে বিজয়ী হবেন।”
তিনি বলেন, “বিএনপি নারীদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের জন্য বদ্ধপরিকর এবং এই লক্ষ্য অর্জনে কাজ করে যাচ্ছে।”
অনুষ্ঠানে বিএনপির কেন্দ্রীয় তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল বলেন, “বিএনপি নারীর অধিকার রক্ষায় সবসময় সোচ্চার। আমরা বিশ্বাস করি, নারীদের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক মুক্তি ছাড়া দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়।”
খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, “বিএনপি নারীদের জন্য একটি নিরাপদ ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ গড়তে চায়। আমরা নারীদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থানের সুযোগ নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আগামী নির্বাচনে নারীদের ব্যাপক অংশগ্রহণের জন্য বিএনপি সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাবে।”
খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলার বিএনপির নারী নেত্রীরা সমন্বয় সভায় অংশগ্রহণ করেন। সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- খুলনা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বাবু জয়ন্ত কুমার কুন্ড, শফিকুল আলম মনা, এম এ সালাম, রহমত উল্লাহ পলাশ, মনিরুজ্জামান মন্টু, শফিকুল আলম তুহিন। সভা সঞ্চালনা করেন ফোরামের কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব নিপুন রায় চৌধুরী।
ঢাকা/নূরুজ্জামান/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ ব এনপ র রহম ন
এছাড়াও পড়ুন:
কিশোরদের নতুন দুনিয়া
শৈশবে স্কুলই ছিল আমাদের দুনিয়ার কেন্দ্র। পরীক্ষার নম্বর, হোমওয়ার্ক কিংবা ক্লাসের ছোটখাটো ঝামেলাও তখন মনে হতো ভয়ংকর গুরুত্বপূর্ণ। চেনা বেঞ্চ, পরিচিত ঘণ্টার শব্দ কিংবা খেলাধুলার আড্ডার মধ্যেই হঠাৎ হঠাৎ উঁকি দিত নতুন সব নাটকীয়তা। আদনান মুকিতের লেখা প্রথম কিশোর উপন্যাস—দ্য নিউ অ্যাডভেঞ্চার অব ফার্মের মুরগি সেই অভিজ্ঞতাগুলোই ফিরিয়ে আনে, মনে করিয়ে দেয় কিশোর বয়সের প্রতিটি দিন আসলে কতটা ঘটনাবহুল হয়ে উঠতে পারে।
এই উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র ইভান—দশম শ্রেণির ছাত্র। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, খেলাধুলা, গান শোনা কিংবা অবসরে বই পড়া—এভাবেই কাটে তার দিন। আবার পথের কুকুর–বিড়ালের প্রতি মমতা কিংবা বন্ধুদের পাশে দাঁড়ানোও তার নিত্য অভ্যাস। বাবা থাকেন দেশের বাইরে, মা আর নেই, তাই ইভান থাকে ফুফা–ফুফুর কাছে। এসব শূন্যতা সত্ত্বেও সে গড়ে তোলে নিজের মতো এক জগৎ। কিন্তু একদিন সকালে স্কুলে ঘটে যাওয়া এক অদ্ভুত ঘটনায় মুহূর্তেই ভেঙে পড়ে সেই দুনিয়া—সহপাঠীদের সামনে ইভানের ব্যাগ থেকে বেরিয়ে আসে একটি ছুরি! কেউ তাকে ফাঁসাতে চাইছে, কিন্তু কেন? এখান থেকেই শুরু হয় তার অভিযান, যেখানে যোগ দেয় বিচিত্র সহপাঠী রুশা ও প্রাণের বন্ধু রাহাতসহ অনেকে। প্রতিটি অধ্যায়েই গল্প বাঁক নেয় নতুন নতুন রহস্যে।
এই উপন্যাসের বড় শক্তি হলো সমসাময়িক কিশোরজীবনের বাস্তব চিত্রণ। শ্রেণিকক্ষের ঘটনা, সহপাঠীদের সঙ্গে সম্পর্ক, আড্ডা, এমনকি ফোন–সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার—সবকিছুই ধরা দিয়েছে পরিচিত অথচ নতুন এক আঙ্গিকে। সমাজের কিছু অপ্রিয় বাস্তবতার ইঙ্গিতও পাওয়া যায় বইতে। পাশাপাশি লেখক তুলে এনেছেন কিশোর বয়সের মানসিক টানাপোড়েনও। পারিবারিক সম্পর্কের উষ্ণতা যেমন দেখানো হয়েছে, তেমনি বাবার সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করা শীতল কথোপকথনও আমরা খুঁজে পাই বইতে। কিশোর বয়সের আবেগ আর মানসিক জটিলতার সূক্ষ্ম চিত্রণ বইটিকে করেছে আরও গভীর।
ইভানের চরিত্রে সবচেয়ে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে তার দয়া আর সহমর্মিতা। এলাকার অসহায় কুকুর–বিড়ালদের যত্ন নেওয়া, বন্ধুদের পাশে দাঁড়ানো, এমনকি যে তাকে ক্ষতি করতে চাইছে, তার প্রতিও সহানুভূতি দেখানো—ইভান যেন হয়ে ওঠে তরুণ প্রজন্মের ইতিবাচকতার প্রতীক। উপন্যাসজুড়েই প্রাণীদের প্রতি ভালোবাসা একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। বিপদে পড়া প্রাণীদের উদ্ধার, তাদের নিয়ে উদ্বেগ—পাঠকের মন ছুঁয়ে যাবে।
লেখক আদনানের লেখালেখির মূল শক্তির জায়গা তাঁর রম্য। এই বইতে সেই হাস্যরস পুরোপুরিভাবেই পাঠক খুঁজে পাবেন। তাঁর ঝরঝরে অথচ টান টান গদ্য পাঠককে সহজেই টেনে নেয় গল্পের ভেতরে। সংলাপগুলো একেবারেই বাস্তব কিশোরদের কথাবার্তার মতো—যা গল্পকে করেছে স্বাভাবিক ও প্রাণবন্ত। প্রতিটি অধ্যায়ে ছোট ছোট রহস্য, ক্লিফহ্যাঙ্গার আর চমক কিশোরদের পড়ার আনন্দকে দ্বিগুণ করবে। লেখক এই প্রজন্মের নাড়ির স্পন্দন বুঝেছেন; বরং অনেক প্রবীণ লেখকের মতো ‘আজকের ছেলেমেয়েরা কিছু বোঝে না’ ভাবেননি। তিনি দেখিয়েছেন, জেনারেশন জেড আসলে কতটা জানে, কতটা পরিপক্ব চিন্তাভাবনা করতে পারে। এ কারণেই তাঁর লেখা একদিকে যেমন মজাদার ও গতিময়, অন্যদিকে আবার আমাদের ছোটবেলার পড়া কিশোর উপন্যাসগুলোর মতোই একটা পরিচিত ক্ল্যাসিক আবহ তৈরি করে।
আমাদের দেশে বড় লেখকেরা সচরাচর কিশোরদের জন্য লিখতে আগ্রহী হন না, ফলে দীর্ঘদিন ধরে একধরনের শূন্যতা তৈরি হয়েছে। সেই জায়গায় এই বই নিঃসন্দেহে কিশোর পাঠকের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হতে পারে। এটি মিশ্র ঘরানার কিশোর উপন্যাস—এখানে যেমন আছে কিশোরদের সহজ–সরল দৈনন্দিন জীবন, তেমনি গোয়েন্দাগিরির আভাস, নানা রোমাঞ্চকর অভিযান, মনস্তত্ত্বের টানাপোড়েন, সামান্য ফ্যান্টাসির ছোঁয়া আর থ্রিলারের উত্তেজনা। এই বৈচিত্র্যই বইটিকে আলাদা মাত্রা দিয়েছে। কিশোর উপন্যাস হলেও এটি কেবল কিশোরদের অভিযান নয়, বরং আমাদের চারপাশের বাস্তবতার প্রতিফলনও বটে। যেসব ছেলেমেয়েকে আমরা ঠাট্টা করে ‘ফার্মের মুরগি’ বলে ডাকি, তারাই আসলে কতটা সক্ষম, কতটা বড় কিছু করতে পারে—উপন্যাসটি যেন সেটির একটি ঘোষণাপত্র। উপন্যাসটি যেমন কিশোরদের জন্য রোমাঞ্চকর এক অভিজ্ঞতা, তেমনি প্রাপ্তবয়স্ক পাঠকের কাছেও এটি হয়ে উঠতে পারে নতুন করে ভাবার উপলক্ষ।
দ্য নিউ অ্যাডভেঞ্চার অব ফার্মের মুরগি
আদনান মুকিত
প্রকাশক : প্রথমা প্রকাশন
প্রকাশ : জানুয়ারি ২০২৫
প্রচ্ছদ : আরাফাত করিম
পৃষ্ঠা : ১৬০
মূল্য : ৪২৫ টাকা