ভারত ও পাকিস্তানের ৯ বন্দীর মরদেহ দেশের তিনটি হাসপাতালের হিমঘরে ছয় মাস থেকে সাড়ে তিন বছর ধরে পড়ে আছে।

বারবার তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও ভারত ও পাকিস্তান নিজেদের নাগরিকদের মরদেহগুলো বুঝে নিচ্ছে না বলে জানিয়েছে কারা অধিদপ্তর। দিনের পর দিন মরদেহগুলো হিমঘরে সংরক্ষণে বাংলাদেশ সরকারের অর্থ যাচ্ছে।

কারা অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো.

মোতাহের হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এসব মরদেহ নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বারবার দেশ দুটির হাইকমিশনে চিঠি দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু তারা এখন পর্যন্ত মরদেহ নেয়নি। মরদেহ সংরক্ষণে অনেক টাকা খরচ হচ্ছে।’

কারা অধিদপ্তর জানায়, নয়জনের মধ্যে আটজন ভারতীয়, একজন পাকিস্তানি। তাঁদের মধ্যে ছয়জনের মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিমঘরে আছে। দুজনের মরদেহ আছে শরীয়তপুরের সদর হাসপাতালের হিমঘরে। আর খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিমঘরে আছে অপর মরদেহটি।

ঢাকার হিমঘরে ছয় মরদেহ

কারা অধিদপ্তরের তথ্যমতে, পাকিস্তানের নাগরিক মোহাম্মদ আলী ২০২১ সালের ১৮ জুন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। তিনি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের হেফাজতে ছিলেন। তাঁর বাবার নাম সালামত। বাড়ি পাকিস্তানের করাচি। অনুপ্রবেশের অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা থানায় মামলা হয়েছিল।

ভারতের নাগরিক ইমতাজ ওরফে ইনতাজের (৪৭) বাড়ি দেশটির উত্তর প্রদেশে। তাঁর বাবার নাম ফারুক আলী। নীলফামারী জেলায় তাঁর বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশের অভিযোগে মামলা হয়েছিল। নীলফামারী জেলা কারাগারে থাকা অবস্থায় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আনা হয়। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের হেফাজতে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০২১ সালের ১৪ জুলাই তিনি মারা যান।

তারেক বাইনের বাড়ি ভারতের বিহারে। বাবার নাম মরন বাইন। ২০২১ সালের ৮ জুলাই শরীয়তপুরের জাজিরা থানায় তাঁর বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশের অভিযোগে মামলা হয়েছিল। গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারের হেফাজতে স্থানীয় একটি হাসপাতালে তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন। ২০২২ সালের ৩০ অক্টোবর তিনি মারা যান। পরে তাঁর মরদেহ গোপালগঞ্জ থেকে এনে ঢাকা মেডিকেল কলেজের হিমঘরে রাখা হয়।

ভারতের নাগরিক খোকন দাসের বাড়ি দেশটির পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে। বাবার নাম অচিন দাস। ২০২২ সালের ৩ মার্চ খোকনের বিরুদ্ধে শরীয়তপুরের জাজিরা থানায় অনুপ্রবেশের অভিযোগে মামলা হয়েছিল। তিনি শরীয়তপুর জেলা কারাগার ছিলেন। অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। অসুস্থ হয়ে পড়লে ২০২৩ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

অশোক কুমারের বাড়ি ভারতের দিল্লি। তাঁর বাবার নাম মহেষ আগরওয়াল। অশোক নেত্রকোনা জেলা কারাগারে ছিলেন। অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। ২০২৩ সালের ২ আগস্ট ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

ভারতের নাগরিক কুনালিকার বাড়ি দেশটির ঝাড়খন্ড রাজ্যে। বাবার নাম শাম্মাদি। ২০১৮ সালে তাঁর বিরুদ্ধে লালমনিরহাটের আদিতমারী থানায় অনুপ্রবেশের অভিযোগে মামলা হয়েছিল। কুনালিকা লালমনিরহাট জেলা কারাগারে ছিলেন। অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আনা হয়। এই কারাগারের হেফাজতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। ২০২৩ সালের ২২ সেপ্টেম্বর তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

উল্লিখিত ছয়জনেরই মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিমঘরে আছে।

দুই মরদেহ শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের হিমঘরে

সতেন্দ্র কুমারের বাড়ি ভারতের দিল্লি। বাবার নাম চন্দ্র পাল। অনুপ্রবেশের অভিযোগে ২০২২ সালের ৮ অক্টোবর তাঁর বিরুদ্ধে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানায় মামলা হয়েছিল। তিনি শরীয়তপুর জেলা কারাগারে ছিলেন। অসুস্থ হলে তাঁকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০২৩ সালের ১৮ জানুয়ারি তিনি মারা যান। তাঁর মরদেহ হাসপাতালটির হিমঘরে আছে।

একই দেশের নাগরিক বাবুল সিং। অনুপ্রবেশের অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে শরীয়তপুরের জাজিরা থানায় মামলা হয়েছিল। তিনি শরীয়তপুর জেলা কারাগারে ছিলেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল তিনি শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে মারা যান।

খুলনা মেডিকেলের হিমঘরে এক মরদেহ

সুরাজ সিংহের বাড়ি ভারতের পশ্চিমবঙ্গে। বাবার নাম সুদ্ধ সিং। অনুপ্রবেশের অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে ঝিনাইদহের মহেশপুর থানায় মামলা হয়েছিল। সর্বশেষ তিনি খুলনা জেলা কারাগারে ছিলেন। তিনি খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০২৪ সালের ৭ জুলাই মারা যান।

কারা অধিদপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি, উন্নয়ন ও গণমাধ্যম) জান্নাত-উল-ফরহাদ প্রথম আলোকে বলেন, এই ৯ বিদেশি বার্ধক্যের কারণসহ অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

কারা সূত্র জানায়, বর্তমানে সারা দেশের ৬৮টি কারাগারে ৪৬৭ জন বিদেশি বন্দী আছেন। কোনো বিদেশি বন্দী মারা গেলে তাঁর লাশ হস্তান্তরের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দেশের হাইকমিশন বা দূতাবাসকে চিঠি দেওয়া হয়। নাম–পরিচয়-ঠিকানা যাচাই করে হাইকমিশন বা দূতাবাস পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করে। কিন্তু ২০২১ সালের ১৮ জুন থেকে ২০২৪ সালের ৭ জুলাই পর্যন্ত সময়ে মারা যাওয়া আট ভারতীয় ও এক পাকিস্তানি বন্দীর মরদেহ হস্তান্তরের বিষয়টি ঝুলে আছে। এসব মরদেহ নেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বারবার দেশ দুটির হাইকমিশনে চিঠি দেওয়া হলেও সাড়া মিলছে না।

কারা অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বিধি অনুযায়ী তিন মাসের মধ্যে লাশ কোনো দেশ বুঝে না নিলে তা আঞ্জুমান মুফিদুলের মাধ্যমে দাফন বা সৎকার করা হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে মানবিক বিবেচনায় তাঁরা লাশগুলো এখনো হিমঘরে সংরক্ষণ করছেন। তবে দেশ দুটি মহদেহগুলো গ্রহণ না করলে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম বা অন্য কোনো স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমে দাফন-কাফন বা সৎকারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হতে পারে।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন চক্রে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ কারা

অস্ট্রেলিয়াকে ৫ উইকেটে হারিয়ে সদ্যসমাপ্ত ২০২৩-২৫ আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। দীর্ঘ ২৭ বছরের ট্রফি খরা কাটিয়ে বিশ্বমঞ্চে ফিরেছে প্রোটিয়ারা। সেই চক্র শেষ হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই শুরু হতে যাচ্ছে নতুন মিশন।

আগামী ১৭ জুন গলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশ টেস্ট খেলেই শুরু করবে ২০২৫-২০২৭ চক্র। নতুন এই টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে ছয়টি সিরিজ খেলবে প্রতিটি দল। তিনটি ঘরের মাঠে, তিনটি বিদেশে। বাংলাদেশ খেলবে সর্বমোট ১২টি টেস্ট ম্যাচ, যা এই চক্রে সবচেয়ে কম ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা।

দেশ ছাড়ার আগে এই নতুন চক্র নিয়ে আশাবাদী ছিলেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘এই চক্রে অন্তত তিন কিংবা চার নম্বরে থাকতে চাই।’

টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শুরু থেকে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স ছিল ওঠানামার। প্রথম দুই চক্রে (২০১৯-২১ ও ২০২১-২৩) একটি করে ম্যাচ জিতেছিল টাইগাররা। তবে ২০২৩-২৫ চক্রে ঘুরে দাঁড়িয়েছে দলটি। ১২ ম্যাচে ৪টি জয়, তার মধ্যে পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করে সিরিজ জয়ের স্মরণীয় কীর্তিও আছে। তিন চক্র মিলিয়ে বাংলাদেশের মোট জয় এখন ৫, ড্র ২ এবং হার ২৪ ম্যাচে।

আগামী ১৭ জুন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গল টেস্ট খেলতে নামছে নাজমুল হোসেন দল। ২৫ জুন কলম্বোয় শুরু দুই দলের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট। এবারের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ চক্রে এটিই প্রথম সিরিজ।

নতুন চক্রে ২০২৫ সালে বাংলাদেশ একটি সিরিজই খেলবে। আগামী ১৭ জুন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গল টেস্ট খেলতে নামছে নাজমুল হোসেন দল। ২৫ জুন কলম্বোয় শুরু দুই দলের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট। ২০২৬ এর মার্চে ঘরের মাঠে পাকিস্তানকে আতিথেয়তা দিবে বাংলাদেশ। অক্টোবরে ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। নভেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকার মাঠে সিরিজ ও  ২০২৭ এর ফেব্রুয়ারিতে ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলবে বাংলাদেশ।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিদেশে শ্রমবাজার সম্প্রসারণসহ ৯ বিষয়ে সুপারিশের জন্য নতুন উপদেষ্টা কমিটি
  • ২০২৩ সালের ডিগ্রি পাস ও সার্টিফিকেট কোর্স দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষার সংশোধিত সময়সূচি
  • সাকিবের যে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তামিম
  • ‘আমি একা হয়ে গিয়েছিলাম’—তামিমের আবেগঘন স্বীকার
  • ১৫ মাসে খেলাপি ঋণ বেড়ে তিন গুণ
  • টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন চক্রে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ কারা
  • শাহরুখের পারিশ্রমিক ৪২৩ কোটি টাকা!
  • অন্য বছরের চেয়ে এই জুনে ডেঙ্গু বেশি
  • ইরানকে পরমাণু জগতে ঠেলে দিয়েছে ইসরায়েলই
  • সামরিক শক্তিতে ইরান-ইসরায়েলের মধ্যে কে এগিয়ে